লার্সেন-সি আইস শেল্ফের সেই ভয়ঙ্কর ফাটল। ছবি- এএফপি।
যেন ৩২টা কলকাতা শহর একই সঙ্গে ভেঙে পড়েছে অ্যান্টার্কটিকায়!
অত বিশাল একটা এলাকা জুড়ে থাকা হিমশৈল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে ওয়েড্ডেল সাগরে। ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ ধস নেমেছে অ্যান্টার্কটিকার ‘লার্সেন-সি’ আইস শেল্ফের ‘এ-৬৮’ হিমশৈলে। ভেঙে যাচ্ছে সেই সুবিশাল হিমশৈল। ভেঙে ভেঙে লাগোয়া ওয়েড্ডেল সাগরে এসে পড়ছে, মিশছে বৃহত্তম হিমশৈলগুলির অন্যতম ‘লার্সেন-সি’র বরফ। আরও নিখুঁত ভাবে বললে, বরফের ভারী ভারী থাক বা শেল্ফ। খুব পুরু সেই বরফের তাক। এক কিলোমিটারের মতো। চার-চারটে লন্ডন শহরকে জুড়লে যতটা জায়গা হয় ততটা বিশাল ওই হিমশৈল। আকারে-আয়তনে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আস্ত একটা ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো দ্বীপ। ইউরোপের লুক্সেমবার্গের দু’গুণ।
‘লার্সেন-সি আইস-শেল্ফ’-এর যে অংশটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে, সেই হিমশৈলটিকে গত মাসেও ‘সুতো থেকে ঝোলা’র মতো অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিভিন্ন উপগ্রহ। ওই ভেঙে পড়া হিমশৈলটির ওজন প্রায় এক লক্ষ কোটি টন! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুনই ওই হিমশৈলটি ভেঙে পড়ছে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রহ থেকে গ্লেসিয়ার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আন্না হগ বলেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে এটা বিশাল একটা ঘটনা। আজ থেকে ১৭ বছর আগে, ২০০০ সালে এই হিমশৈলের চেয়ে (যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এ-৬৮’) আকার, আয়তনে দ্বিগুণ আরও একটি হিমশৈল (বি-১৫) ভেঙে পড়েছিল অ্যান্টার্কটিকায়। ‘বি-১৫’ ভেঙে পড়েছিল অ্যান্টার্কটিকার রস আইস শেল্ফ থেকে। তবে অ্যান্টার্কটিকার ১০টি বৃহত্তম হিমশৈলের অন্যতম বুধবার ভাঙতে শুরু করা হিমশৈল ‘এ-৬৮’।’’
আরও পড়ুন- গবেষণা বলছে, কেমো বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্যানসার, সত্যিই তাই?
উপগ্রহের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকেই একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করেছিল হিমশৈল ‘এ-৬৮’। মে মাসের ২৫ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে সাত দিনে ফাটলটা বেড়েছিল নয় নয় করে ১৭ কিলোমিটার! আর তার পর জুনের ২৪ থেকে ২৭, এই চার দিনে ফাটলটা বেড়েছিল হু হু করে। দিনে গড়ে ১০ মিটারেরও বেশি হারে।
তবে এই হিমশৈলটি ভেঙে পড়ায় সমুদ্রতলের তারতম্য হবে না বলেই জানিয়েছেন হগ। যদিও শুধু অ্যান্টার্কটিকায় যতটা বরফ রয়েছে, তার সবটুকুই যদি গলে যায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাতে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়বে কম করে ৬০ শতাংশ। তাতে সভ্যতার যে সাড়ে সর্বনাশ সুনিশ্চিত, দ্বিধাহীন ভাবে সে কথাও জানিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।