ফাইল ছবি।
যত দ্রুত সম্ভব টিকা না নিলে ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কতটা, কোভিড-সহ কী কী রোগ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, এমনকি মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে— এটা বোঝাতে পারলে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আমজনতার ভয়ভীতি, অনাগ্রহ, উদাসীনতা কমানো যায়। গবেষণা দেখিয়েছে, ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কার কথা না বলে এক জনের টিকা না নেওয়ার ফলে অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে লকডাউন ঘোষণা করতে হয়, যার পরিণতি মানুষের রুটি-রুজিতে টান পড়া। এই সব বোঝানো হলে কিন্তু টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আমজনতার উদাসীনতা ততটা কমানো যায় না যতটা না ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির কথা বললে কমে। সেই ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আমজনতার উ়ৎসাহ ততটা বাড়ে না। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকা ল্যানসেট পাবলিক হেল্থ-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র এই কথা জানিয়েছে।
শুধুই কোভিড নয়, যে কোনও টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেই মানুষের ভয়ভীতি, অনাগ্রহ নতুন নয়। কোভিড টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যাচ্ছে। অথচ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণে দ্রুত লাগাম টানতে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সকলকে টিকা দেওয়ানো উচিত। সকলের টিকা নেওয়া উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত আমেরিকায় যেখানে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ এবং ব্রিটেনে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, সেখানে ভারতে টিকা পেয়েছেন মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৮ শতাংশ মানুষ। এর অবশ্য অনেকগুলি কারণ রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি টিকা নেওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের অনাগ্রহ।
গবেষকরা ব্রিটেনে টিকা না নেওয়া মানুষদের ১০টি বিভাগে ভাগ করে দেখেন, যাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির কথা আলাদা করে বোঝানো হয়েছিল, তাঁরা টিকা নিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। একেবারে অনাগ্রহীদের থেকে। একেবারে অনাগ্রহীদের সূচক ধরা হয়েছিল ৩৫। ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির কথা আলাদা ভাবে বোঝানোর পর যাঁরা টিকা নিতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেখা গিয়েছে তাঁদের সূচক ২৭.০৪। আর যাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির কথা না বলে সামাজিক দায়িত্ববোধের কথা বোঝানো হয়েছিল বলে টিকা নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এমন মানুষের সূচক দাঁড়ায় ২৮.৫৩।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইকোলজিস্ট ড্যানিয়েল ফ্রিম্যান বলেছেন, এমন গবেষণা আরও বড় আকারে চালিয়ে যেতে হবে। আরও তথ্যাদি জোগাড় করতে হবে। তখন বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।