মানবমস্তিষ্ক। -ফাইল ছবি।
শরীরে রক্ত সংবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে হৃদপিণ্ডের লাব-ডুব শব্দও। চিকিৎসক লিখে দিয়েছেন ডেথ সার্টিফিকেট। তবু তার পরেও সচল থাকে মানবমস্তিষ্ক। রীতিমতো সক্রিয় থাকে মস্তিষ্কের বেশ কিছু রহস্যময় কোষ।
শুধু সক্রিয়ই থাকে না, মানুষের মৃত্যুর পর তাদের কর্মক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় তাদের কাজকর্মের গতি।
যেন তাদের কেউ নির্দেশ দিতে ভুলে গিয়েছে ‘আর কাজের দরকার নেই। এখন সব কাজের ইতি’! অথবা কোনও ডাইনি মন্ত্রে যেন সেই কোষগুলি ফিরে পেয়েছে প্রাণ! রসিকতা করে তাই বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘জোম্বি সেল’। এগুলি আদতে মানবমস্তিষ্কের ‘গ্লায়াল সেল’।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা সেই রহস্যময় কোষগুলিকে চিনতে পেরেছে। এই প্রথম। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ।
গবেষণা জানাচ্ছে, মানুষের মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টা ধরে কাজ করে যায় এই কোষগুলি। সেই কাজের গতিও আগের চেয়ে অমেক বেশি। মানুষের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর শেষমেশ তাদের কাছে যেন নির্দেশ আসে ‘আর কাজ চালিয়ে যাওয়ার দরকার নেই’। তার পর সেই কোষগুলিও মরে যায়। তখন আর মানবমস্তিষ্কে চার পাশে ঘিরে থাকা মৃত কোষ, কলাগুলির থেকে তাদের আলাদা করা সম্ভব হয় না।
মানুষের মৃত্যুর পরেও কাজ করে যায় মস্তিষ্কের এই গ্লায়াল কোষগুলি। ছবি- গবেষকদের সৌজন্যে।
মূল গবেষক ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক জেফ্রি লোয়েব ও তাঁর সহযোগীরা দেখেছেন, মানুষের মৃত্যুর বহু ক্ষণ পরেও মস্তিষ্কের এই রহস্যময় কোষগুলি নতুন নতুন শুঁড় বার করে। সেগুলি খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে।
গবেষকরা জানিয়েছেন এর আগে বেশির ভাগ গবেষণাই দেখিয়েছে, হৃদযন্ত্রের কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেই মানবমস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেল, তা নয়। তার পরেও সক্রিয় থাকে মানবমস্তিষ্কের কয়েকটি কোষ। তাদের সক্রিয়তা আরও বেড়ে যায়।
মূল গবেষক লোয়েবের কথায়, ‘‘আশা করি এই গবেষণা আগামী দিনে অটিজম, অ্যালঝাইমার্স, স্ক্রিজোফ্রেনিয়ার মতো কয়েকটি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্ক কী ভাবে কাজকর্ম করে তা বুঝতে সাহায্য করবে। এখন সেটা ইঁদুর সহ বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্ক দিয়ে বোঝার চেষ্টা হয়। কিন্তু মানবমস্তিষ্কের সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর মস্তিষ্কের কাজকর্মের অনেক ফারাক রয়েছে বলে গবেষকদের কাজটা জটিল হয়ে পড়ে।’’
গবেষকরা কাজটা করেছেন ১২ ঘণ্টা আগে মৃত মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে। তাঁরা দেখেছেন, মৃত্যুর পর মস্তিষ্কে এই কোষগুলির সক্রিয়তা মানুষের বয়স বা কোন রোগে ভুগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তার উপর নির্ভর করে না।