ছবি: ইনস্টাগ্রাম
আড়ালে থাকা ‘চাঁদ-মুখ’ প্রকাশ্যে এল। আর দেখা গেল চাঁদের সেই মুখে কলঙ্ক প্রায় নেই বললেই চলে! গড়ন একটু কঠোর হতে পারে। কিন্তু তা বলে সূর্যের আলোর চাকচিক্য একটুও কম নয় চাঁদের অপরপ্রান্তে। যাকে এতদিন চাঁদের ‘ডার্কার সাইড’ বা অন্ধকার দিক বলেই জানত সকলে, নাসার প্রকাশিত ছবি বলছে সেই দিকটিও সূর্যালোকে একই রকম ঝলমল করে।
সম্প্রতি নাসা এই ছবি পোস্ট করেছে তাদের ইনস্টাগ্রাম পেজে। সেখানেই তারা বিশদে জানিয়েছে, চাঁদের অ-দেখা দিকের গল্প। নাসা লিখেছে, ‘‘এই হল চাঁদের সেই মুখ, যা আমরা পৃথিবী থেকে দেখতে পাই না। তবে একে চাঁদের ‘অন্ধকার দিক’ বলে অভিহিত করা সর্বার্থে ভুল। কারণ সূর্যের আলো যতখানি চাঁদের চেনা প্রান্তে পড়ে, ততটাই আলোকিত করে চাঁদের না-দেখা অংশটিকেও।’’
চাঁদের এই প্রান্তটি দেখতে কেমন, তার বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছে নাসা। তারা জানিয়েছে, চাঁদের এই প্রান্তের জমি অনেক বেশি অমসৃণ এবং কঠিন। কিন্তু এই প্রান্তে ‘মারিয়া’র পরিমাণও অনেক কম। ‘মারিয়া’ হল চন্দ্রপৃষ্ঠে থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশালাকৃতি সামান্য নীচু সমতল ভূমি। যা আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের লাভা থেকে তৈরি হয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান। এই এলাকাগুলির ‘মাটি’তে লোহার উপস্থিতি বেশি হওয়ায় এই জায়গাগুলি থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলন করে কম। ফলে সাধারণ চোখে এগুলিকে চাঁদের গায়ে কালচে ছোপের মতো মনে হয়। এগুলিই হল চাঁদের ‘কলঙ্ক’। যাকে এককালে সমুদ্র ভেবে ভুল করেছিলেন মহাকাশচারীরা। তাদের সেই ভুল থেকেই এই জায়গাগুলির নাম দেওয়া হয় ‘মারিয়া’। ল্যাটিনে যে শব্দের অর্থ সমুদ্র। এই ‘মারিয়া’ চাঁদের দৃশ্যমান প্রান্তের ১৬ শতাংশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। যে খানে নাসার নতুন ছবিতে স্পষ্ট, উল্টোপিঠে এই ‘মারিয়া’ বা চাঁদের কলঙ্কের ভাগ অনেকটাই কম।
তবে কলঙ্ক কম থাকলেও চাঁদের অ-দেখা মুখে ক্রেটার বা ছোট বড় গর্তের সংখ্যা কম নয়। চাঁদের দৃশ্যমান প্রান্তের মতোই অজস্র ক্রেটার ছড়িয়ে রয়েছে চাঁদের অন্য পৃষ্ঠ জুড়ে। যা দেখে অনেকেই বুধের পৃষ্ঠদেশ বা বৃহস্পতির দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ক্যালিস্টোর সঙ্গে মিল পেয়েছেন।
উল্লেখ্য চাঁদের সঙ্গে পৃথিবী যে আকর্ষণ ক্রিয়ায় যুক্ত, তার নাম মহাকর্ষীয় প্রবাহবদ্ধতা বা ‘টাইডাল লকিং’। এর ফলে চাঁদের একটি দিকই পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে। অন্য দিকটি থাকে পৃথিবীর বাসিন্দাদের চোখের আড়ালে। উপগ্রহের সাহায্য নিয়ে চাঁদের উল্টোপিঠের ছবি তুলেছিল নাসা। সেই ছবিই সম্প্রতি প্রকাশ করেছে তারা।