—প্রতীকী চিত্র।
চাঁদ ছুঁতে তৈরি হচ্ছে ওরা।
সর্বশেষ চাঁদের মাটিতে মানুষের পা পড়েছিল ১৯৭২ সালে। ‘অ্যাপোলো ১৭’— নাসার ১১তম অ্যাপোলো অভিযান এবং ষষ্ঠ তথা শেষ চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের অবতরণ। এর পর অর্ধশতাব্দী কেটে গিয়েছে, আর চাঁদে যায়নি মানুষ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ফের পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। শুধু তারাই নয়, ভারতের ইসরো-ও এই দৌড়ে রয়েছে। তৈরি হচ্ছে তারাও। তবে চাঁদ ছোঁয়ার এই প্রতিযোগিতায় চাঞ্চল্য ছড়াচ্ছে নতুন একটি দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া। গত বছর চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে তাদের চন্দ্রযান ‘দানুরি’। যাত্রাপথে তার একটি ক্যামেরা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তা-ও এই অভিযান সফল বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ ইতিমধ্যেই বেশ চমকপ্রদ তথ্য পাঠিয়েছে দানুরি। এ সপ্তাহে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয় ‘আমেরিকান জিওফিজ়িক্যাল ইউনিয়ন’-এর সম্মেলনে উঠে এসেছে সেই সব তথ্য।
গত বছর ৪ অগস্ট চাঁদে পাড়ি দেয় কোরিয়ান মহাকাশযানটি। ১৬ ডিসেম্বর কক্ষপথে পৌঁছয় সে। চাঁদের কক্ষপথ থেকেই উপগ্রহকে প্রদক্ষিণ করবে ‘কোরিয়া পাথফাইন্ডার লুনার অরবিটার’ (কেপিএলও), আনুষ্ঠানিক নাম দানুরি। দু’টি কোরিয়ান শব্দের সমন্বয়ে এই নাম। ‘দাল’ শব্দের অর্থ চাঁদ, ‘নুরিদা’ শব্দের অর্থ আনন্দ। এই দু’টি শব্দ মিলিয়ে দানুরি। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম লুনার অরবিটার। চাঁদের মাটিতে বরফ রয়েছে কি না, ইউরেনিয়াম, হিলিয়াম-৩, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম আছে কি না, তার সন্ধান করবে চন্দ্রযানটি। চাঁদের একটি ভৌগোলিক মানচিত্রও তৈরি করবে দানুরি। ভবিষ্যতে চাঁদের কোথায় মহাকাশযান নামবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে এই মানচিত্র।
কিন্তু যা পরিকল্পনা ছিল, তার থেকেও বেশি কিছু পাওয়া গিয়েছে এই অভিযানে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই অভিযানে যুক্ত রয়েছে নাসা ও অন্য কয়েকটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এই অভিযানের প্রধান নেতা, বিজ্ঞানী এনহিইউক কিম বলেন, ‘‘যা জানতে পারছি, তা কল্পনাও করিনি!’’
দানুরি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে একটি গামা-রে স্পেকট্রোমিটার। এটি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ধেয়ে আসা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ মেপে দেখছে। এটির সাহায্যে চাঁদের মাটির কোথায় কেমন রাসায়নিক গঠন, কী খনিজ রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছে দানুরি।
‘কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্স অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস’-এর বিজ্ঞানী কেয়ং জা কিম জানিয়েছেন, চমকে যাওয়ার মতো বিষয় হল, চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে মহাশূন্যের অন্য জায়গাতেও গামা-রশ্মির সন্ধান পেয়েছে দানুরি। যেমন, ১৯০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে একটি ছায়াপথে এক প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ ঘটেছে। তার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ২০২২ সালের অক্টোবরে পৃথিবীর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। দানুরি-র বিশেষ যন্ত্রে উজ্জ্বলতম গামা-রশ্মি ধরা পড়েছে তখনই। এ ছাড়া, সৌরঝড় চলাকালীন সূর্য থেকে ধেয়ে আসা গামা-রশ্মি, কিংবা দূরের কোনও তারা থেকে আসা গামা-রশ্মি চিহ্নিত হয়েছে।
নাসার একটি ক্যামেরা রয়েছে এই চন্দ্রযানে। তাতে চাঁদের মেরু অঞ্চলের বেশ কিছু ছবি ধরা পড়েছে। সেই সব জায়গা অন্ধকারাচ্ছন্ন, সূর্যের আলো পৌঁছয় না। নাসার পাঠানো বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাটি (শ্যাডোক্যাম) সামান্য আলোক বিচ্ছুরণও ফ্রেমবন্দি করতে পারে।
তবে সবচেয়ে চমকে দিয়েছে চাঁদের তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র। দানুরির পাঠানো তথ্যে দেখা গিয়েছে, চাঁদের যে অংশ পৃথিবীর থেকে দূরে, সেখানে তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বেশি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া-র বিজ্ঞানী ইয়ান গ্যারিক-বেথেল বলেন, ‘‘তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বেশি হওয়ার অর্থ চাঁদের ওই অংশ বেশি গরম। অতএব ওই জায়গায় মাটির নীচে জল থাকতে পারে।’’ কিন্তু ইয়ানের প্রশ্ন, চাঁদের একটা অংশে তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র বেশি শক্তিশালী কেন? এর কোনও জবাব নেই বিজ্ঞানীদের কাছে।