বদলে যাচ্ছে বর্ষা ও বৃষ্টির গতিপ্রকৃতি। বাড়ছে হঠাৎ ভারী বৃষ্টি, হড়পা বান। কিন্তু কেন? এটাই কপালে ভাঁজ ফেলছে বিজ্ঞানীদের। আইআইটি কানপুরের এক দল বিজ্ঞানীর গবেষণা বলছে, বর্ষা ও বৃষ্টির এই খামখেয়ালিপনার অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ। দিন দিন বায়ু দূষণ যে হারে বাড়ছে, তার জেরেই বদলে যাচ্ছে বর্ষার প্রকৃতি। বিশেষ করে অ্যারোসল অর্থাৎ বায়ুস্তরে ভাসমান বিশেষ কিছু তরল কণার বৃদ্ধিই বর্ষার চরিত্র বদলের পিছনে একটা বড় কারণ। তাঁদের এই গবেষণাপত্রটি শুক্রবার ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক আইআইটি কানপুরের সেন্টার ফর এনভায়র্নমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক এস এন ত্রিপাঠী। তাঁর ছাত্র চন্দন সারঙ্গিই মূল লেখক। অন্য লেখকেরা হলেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় কানাওয়াড়, আবিন টমাস ও কানপুর আইআইটির দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়।
স্থলভাগের প্রায় ১৬ হাজার বর্গ-কিলোমিটার জুড়ে মেঘের গতিপ্রকৃতির বদল, তার প্রভাব নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য তাঁরা গত ১৬ বছরের উপগ্রহ ও ‘অ্যাটমোস্ফেরিক কম্পিউটার মডেল’-এর তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, বায়ুস্তরে অতিরিক্ত ভাসমান তরল কণা এবং ধুলো, ধোঁয়া ও কারখানার বর্জ্যের মতো ভাসমান কঠিন কণা মেঘের আকার-আয়তন ও অন্য বহু বৈশিষ্ট্য বদলে দিচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এর মাত্রা আরও বাড়ছে। যার জেরে বর্ষার মরসুমে বৃষ্টি খামখেয়ালি হয়ে পড়ছে দেশে।
‘‘এমনটা চলতে থাকলে আগামী দিনে বর্ষার মরসুমে সামগ্রিক ভাবেই বৃষ্টি কমতে থাকবে,’’ বলছেন এস এন ত্রিপাঠী। তাঁর কথায়, ‘‘মেঘ তৈরির জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাতাসে ভাসমান তরল কণা। আসলে এটা না থাকলে মেঘ তৈরি হতে পারে না আর মেঘ না-তৈরি হলে বৃষ্টিও হবে না। কিন্তু আমরা সকলেই জানি যে, কোনও কিছু অতিরিক্ত হলেই মুশকিল। আর সেটাই এখন ঘটছে। বায়ুস্তরে ভাসমান তরল কণার উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার ফলেই মারাত্মক ভাবে বাড়ছে বায়ু দূষণ। যার প্রভাব পড়ছে বৃষ্টির গতিপ্রকৃতির
উপরেও।’’ এ বছর রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে ধুলোর ঝড় ও বৃষ্টির বলি হয়েছেন শতাধিক মানুষ। গ্রীষ্মে এত তীব্র ঝড়বৃষ্টির পিছনে বাতাসে ভাসমান তরল কণার বাড়বাড়ন্তকেই খলনায়ক মনে করছেন কানপুরের এই গবেষকরা।