২০২০ সালে ভারতে সেরা বিজ্ঞান সম্মান ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার’ পান অভিজিৎ।
IIT Kharagpur

১৩৩ বছরে প্রথম ভারতীয়! কালীঘাটের অভিজিৎ এখন জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার ফেলো

২০২০ সালে ভারতে সেরা বিজ্ঞান সম্মান ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার’ পান অভিজিৎ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ১২:৪৭
Share:

অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। -নিজস্ব চিত্র।

বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের স্বীকৃতি এক বঙ্গসন্তানের। ‘জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা (জিএসএ)’-র ‘ফেলো’ হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন কালীঘাটের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ১৩৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ভারতীয় জিএসএ-র ফেলোশিপ পেলেন। ভূপদার্থবিদ্যায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে। এই বিরল সম্মান ভারতে এল এক বঙ্গসন্তানের দৌলতেই। ২০২০ সালে ভারতে সেরা বিজ্ঞান সম্মান ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার’ পান অভিজিৎ।

Advertisement

১৮৮৮ সালে যার গোড়াপত্তন, সেই জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা এ বছর বিশ্বের যে বিশিষ্ট ৩০ জন ভূপদার্থবিদকে ফেলোশিপ দিয়েছে, খড়্গপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)’-র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অভিজিৎ তাঁদের অন্যতম। নির্বাচনের ভিত্তিতেই দেওয়া হয় এই সম্মানজনক ফেলোশিপ।

অভিজিতের গবেষণার মূল বিষয়— নানা ভাবে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের দূষণ। তা সে আর্সেনিক বা ফ্লোরাইড যৌগের দরুনই হোক অথবা শিল্পবর্জ্য বা শৌচকর্মের জন্য। সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র- সুবিশাল এই তিনটি নদ-নদীর অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের দূষণ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করে চলেছেন খড়্গপুর আইআইটি-র জিওলজি এবং জিওফিজিক্স বিভাগের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অভিজিৎ।

Advertisement

তাঁর সেই সব কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছেন অভিজিৎ। ২০১৬-য় রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নেন ‘ন্যাশনাল জিওসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড’। তিনি ইংল্যান্ডের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি’-রও ‘ফেলো’।

অভিজিৎ বললেন, “আমার গবেষণার এলাকাগুলির মধ্যে যেমন পড়ে লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ, তেমনই তা সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত। আমার গবেষণায় পরিসংখ্যানবিদ্যা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও সাহায্য নিয়ে থাকি প্রায়শই। ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের দূষণ নিয়ে আমি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং চিন-সহ ১২টি দেশে গবেষণা করেছি। ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের দূষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ‘জলশক্তি মিশন’-এর সঙ্গে তো বটেই, কাজ করেছি, করে চলেছি নাসা, ইসরো, ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে, ইউএস জিওলিজক্যাল সার্ভের সঙ্গেও।”

আরও পড়ুন

দেশে সামান্য কমল দৈনিক সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু বেড়ে হাজারের কাছে

আরও পড়ুন

কোভ্যাক্সিন ৭৭ শতাংশের বেশি কার্যকর, দাবি

কালীঘাটে জন্ম অভিজিতের। সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুল থেকে পাশ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক। তার পর অনার্স নিয়ে বিএসসি করেন কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে। এমএসসি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার পর মাস্টার অব সায়েন্স (এমএস) এবং পিএইচ ডি করতে অভিজিৎ যান আমেরিকার কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচ ডি শেষ করেই তিনি পোস্ট ডক্টরেট করেন অস্টিনে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে ফেরার আগে কিছু দিন ফিজিক্যাল হাইড্রোজিওলজিস্টের চাকরি করেন কানাডার অ্যালবার্টা জিওলজিক্যাল সার্ভে-তে। দেশে ফিরেই খড়্গপুর আইআইটি-তে শুরু হয় তাঁর শিক্ষক,তা।

ভারতীয়দের মধ্যে অভিজিতের এই বিরল সম্মান প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত খড়্গপুর আইআইটি-র অধিকর্তা অধ্যাপক বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি বলেছেন, “১০০ বছরেরও বেশি ঐতিহ্যবাহী এই ফেলোশিপ এর আগে আর কোনও ভারতীয় পাননি। বিশ্বের বিশিষ্ট ভূপদার্থবিদদের মধ্যে অভিজিতকে ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের ভিত্তিতে। এটা শুধু খড়্গপুর আইআইটি-র পক্ষেই গৌরবজনক খবর নয়, ভারতের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছেই একটি প্রাপ্তি-সংবাদ।”

৫০ বছর বয়সের নীচে থাকা দেশের ৫০ জন সেরা বিজ্ঞানীর তালিকাতেও অভিজিতের নাম রেখেছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement