Science News

জলে ভাসছে বৃহস্পতি-শনির চাঁদ, প্রাণ মিলতে পারে এনসেলাডাস-এ

জল, শুধু জলে ভাসছে এই সৌরমণ্ডলের অন্য একটি গ্রহের দু’টি চাঁদ। ‘গুরুগ্রহ’ বৃহস্পতিই শেষমেশ দেখাল আলোর দিশা! বোধহয় একেই বলে গুরুকৃপা! আদিগন্ত, অতলান্ত জলে ভেসে যাচ্ছে বৃহস্পতির দুই চাঁদ ‘ইউরোপা’ আর ‘গ্যানিমিদ’। আজ, বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি ভাবে এই ঘোষণা করবে নাসা।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ১০:০০
Share:

বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। ভাসছে সমুদ্রে।

জল, শুধু জলে ভাসছে বৃহস্পতি ও শনির চার চারটি চাঁদ।ইউরোপা,গ্যানিমিদ,টাইটান আর এনসেলাডাস-এ। এর মধ্যে প্রথম দুটি চাঁদ বৃহস্পতির বাকি দুটি শনির। এদের মধ্যে ইউরোপা আর এনসেলাডাস-এ অদূর ভবিষ্যতে প্রাণের হদিশ মেলার সম্ভাবনা যথেষ্টই জোড়ালো। পৃথিবীর থেকে সবচেয়ে কাছে বলে এদের দিয়েই শুরু হবে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধান। ওয়াশিংটনে আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে নাসার তরফে একথা জানান হয়েছে।

Advertisement

নাসা জানাচ্ছে, যত সমুদ্র আর যত অতলান্ত মহাসাগর রয়েছে পৃথিবীতে, তার অনেক অনেক গুণ বেশি সমুদ্র আর মহাসাগরে ভেসে যাচ্ছে বৃহস্পতির ওই দুই চাঁদ। তরল জলে টইটম্বুর ইউরোপা আর গ্যানিমিদ। পৃথিবীর গভীরতম প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়েও অন্তত ১০০ গুণ বেশি গভীর মহাসাগর রয়েছে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায়। সুবিশাল সমুদ্র আর মহাসাগরে ভেসে যাচ্ছে বৃহস্পতির অন্য চাঁদ গ্যানিমিদেরও অন্তর-অন্দর। এত জল পৃথিবী দেখেনি কখনও। আর সেই তরল জলের মহাসাগরগুলি ঢাকা রয়েছে পুরু বরফের চাদরে। বিশাল বিশাল সমুদ্র আর মহাসাগরে ভেসে যাচ্ছে শনির দুই চাঁদ ‘টাইটান’ আর ‘এনসেলাডাস’ও। তবে সেই মহাসাগরগুলি ভাসছে তরল হাইড্রোকার্বনে। মিথেন ও ইথেনের সাগর, মহাসাগর। নাসা জানিয়েছে, এনসেলাডাস ও ইউরোপায় পুরু বরফের চাদরের তলায় লুকিয়ে থাকা তরল জলের মহাসাগরগুলোর একেবারে নীচে প্রচণ্ড তাপে জল বাস্পীভূত হয়ে ধোঁয়ার মতো উপরে উঠে আসছে। কোনও সমুদ্রের তলায় প্রাণ না থাকলে বা কোনও জৈবনিক ক্রিয়া না ঘটলে এটা সম্ভব হত না। এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে জলে ভেসে যাওয়া ইউরোপা আর এনসেলাডাস-এর মহাসাগরগুলির তলায় প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা যথেষ্টই জোড়ালো।শুধু তাই নয় এও দেখা গিয়েছে, ওই মহাসাগরগুলির তলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস। আর এই গ্যাসগুলি সাম্যাবস্থায় নেই। এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে বেঁচে থাকার জন্যে ওই গ্যাসগুলি থেকেই রসদ জোগাড় করছে জলজ প্রাণ।


বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। বেরিয়ে আসছে ফুটন্ত জলের ধোঁয়া।

Advertisement

এই সাংবাদিক সম্মেলনের আগেই ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতর থেকে আনন্দবাজারকে জানানো হয়েছিল, ‘‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও শনিতে পাঠানো নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি-হাইগেন্স’ যে সব ছবি ও তথ্যাদি পাঠিয়েছে, তা গত তিন বছর ধরে খতিয়ে দেখে ও বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতির দুই চাঁদ ইউরোপা ও গ্যানিমিদে তরল জলের সুবিশা়ল, অতলান্ত মহাসাগরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। সুনিশ্চিত হওয়া গিয়েছে শনির দুই চাঁদ টাইটান ও এনসেলাডাসের সুবিশাল হাইড্রোকার্বনের সমুদ্র সম্পর্কেও।’’


ইউরোপার দক্ষিণ মেরুতে পাওয়া মহাসাগরের হদিশ, হাবল স্পেস টেলিস্কোপে

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সূর্য থেকে ৫০ কোটি মাইল দূরে থাকা বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা চওড়ায় ১ হাজার ৯০০ মাইল বা ৩ হাজার ১০০ কিলোমিটার। মানে, আমাদের চাঁদের চেয়ে কিছুটা ছোট। বৃহস্পতিকে তা পাক মারে সাড়ে তিন দিনে। তার একটা পিঠ সব সময় থাকে বৃহস্পতির সামনে। আমাদের চাঁদের মতোই। আমাদের জোরালো বিশ্বাস, ইউরোপায় পুরু বরফের চাদরের তলায় লুকিয়ে রয়েছে যে সুবিশাল, অতলান্ত মহাসাগরগুলি, তার জলের সঙ্গে ওই চাঁদের পাথুরে ম্যান্টলেরও যোগাযোগ রয়েছে। যেখানে থাকতে পারে প্রচুর পরিমাণে লোহাও। ফলে, তরল জলের সঙ্গে সেখানে অবাক করা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্টই। যা প্রাণের জন্ম ও বিকাশকে সাহায্য না করলেই অবাক হতে হবে। ২০১২ সালে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের স্পেকট্রোগ্রাফেই ধরা পড়েছিল ইউরোপার ভূপৃষ্ঠ (সারফেস) থেকে উঠে আসছে ফুটন্ত জলের ধোঁয়া (প্লিউম)। ফুটন্ত জলের কেটলির মুখ থেকে যেমন ভাবে বেরিয়ে আসে ধোঁয়া। বৃহস্পতির অসম্ভব জোরালো অভিকর্য বলের জন্যই এটা হচ্ছে বলে আমাদের এখনও পর্যন্ত অনুমান।’’

ছবি সৌজন্যে: নাসা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement