চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বিক্রম ল্যান্ডার। ছবি: ইসরো।
চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চন্দ্রযান-২। মঙ্গলবার সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে প্রথম ডিঅরবিটিং হল বিক্রম ল্যান্ডারের। গতকালই অরবিটার থেকে আলাদা হয় ল্যান্ডার। এরপর আগের কক্ষপথ থেকে ১৫ কিলোমিটার চাঁদের দিকে এগিয়ে গেল। এরপর পর্যাক্রমে আরও কয়েক ধাপ পেরিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদে নামবে বিক্রম ল্যান্ডার।
একটি কক্ষপথ থেকে নির্দিষ্ট আর একটি কক্ষপথে যাওয়াকেই বলে ডিঅরবিটিং। সেই পথে পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে বিক্রম ল্যান্ডার। গতকাল ১১৯x১২৭ কিলোমিটারের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ছিল অরবিটার ও ল্যান্ডার। বিক্রম ল্যান্ডারের ভেতরেই রয়েছে প্রজ্ঞান রোভার। কিন্তু সোমবার অরবিটার ও ল্যান্ডার আলাদা হলেও তারা সামনে পিছনে অবস্থান করে একই কক্ষপথে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছিল। এবার সেখান থেকে ল্যান্ডারকে চাঁদের মাটিতে নামানোর দিকে আরও এক ধাপ সফলভাবে এগিয়ে গেল ইসরো।
পূর্ব পরিকল্পনা মতো ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ল্যান্ডারের প্রপালশন চালু করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ১০৪x১২৮ কিলোমিটারের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে। অর্থাত্ এক্ষেত্রে চাঁদ থেকে ল্যান্ডারের সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ১০৪ কিলোমিটার ও সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১২৮ কিলোমিটার। ডিঅরবিটিংয়ের এই প্রক্রিয়ার জন্য মাত্র ৪ সেকেন্ড সময় লাগে। তবে অরবিটার আগের (১১৯x১২৭ কিলোমিটারের) কক্ষপথেই থাকবে। অরবিটারের ভিতর আটটি যন্ত্র বসানো রয়েছে, সেগুলি ইতিমধ্যেই কাজও শুরু করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন : ব্যবসায়ীর বুদ্ধিতে জরিমানা চেয়ে বিপাকে সরকারি আধিকারিক!
মহাকাশ গবেষণায় এটাই প্রথম উদাহরণ, যেখানে দু’টি মহাকাশ যানকে একই কক্ষপথে রাখা হয়েছিল। এর আগে সব ক্ষেত্রেই অরবিটার থেকে ল্যান্ডার আলাদা হলে তাদের কক্ষপথও আলাদা করে দেওয়া হত। ভারতীয় সময় ২ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে অরবিটার থেকে সফল ভাবে আলাদা করা হয়। কিন্তু ইসরো অরবিটার ও ল্যান্ডারকে আলাদা করলেও ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত একই কক্ষপথে রেখেছিল।
আরও পড়ুন : চাঁদে হাঁটছেন মহাকাশচারী, পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল অটোরিকশা!
প্রথম সফল ডিঅরবিটিংয়ের পরের ধাপ আগামিকাল ৪ সেপ্টেম্বর চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগোবে ল্যান্ডার। এক্ষেত্রে বুধবার ভারতীয় সময় ভোররাত ৩টে ৩০ মিনিট থেকে ভোর ৪টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ডিঅরবিটিংয়ের পরিকল্পনা করেছে ইসরো। সেক্ষেত্রে ল্যান্ডার ৩৭x১০৯ কিলোমিটারের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে চলে যাবে। অর্থাত চাঁদ থেকে ল্যান্ডারের সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ৩৭ কিলোমিটার আর সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১০৯ কিলোমিটার।
বিক্রম ল্যান্ডারকে প্রচুর স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে ইসরো। এমন ভাবে ল্যান্ডারটিকে প্রোগ্রামিং করেছে যাতে, সে নিজেই ঠিক করতে পারবে চাঁদের উপর ঠিক কোনও জায়গায় অবতরণ উচিত। শেষ ধাপে চন্দ্র পৃষ্ঠে নামতে ল্যান্ডারের লাগবে ১৫ মিনিট। অবতরণ ক্ষেত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ল্যান্ডার খতিয়ে দেখবে ভূমিটি সমতল কিনা, যাতে চারটি পা একসঙ্গে ভূমি স্পর্শ করতে পারে। সেই সঙ্গে দেখবে ভূমিটি যাতে ১২ ডিগ্রির কম ঢালু হয়।
ইসরো আগে বলেছিল, এই শেষ অবতরণের ক্ষেত্রে কোনওরকেটও চালু রাখা হবে না। কিন্তু এখন ইসরো জানিয়ে, যাতে ল্যান্ডার চাইলে পাশাপাশি সরে গিয়ে উপযুক্ত জমি খুঁজে নিতে পারে তার জন্য একটি রকেট চালু রাখা হবে।
ইজরায়েলের চন্দ্রযান ‘বেরিশিফ্ট’ ১১ এপ্রিল ১৫০ মিটার ওপর থেকে চাঁদে পড়ে যায়। বিক্রম ল্যান্ডারের ক্ষেত্রে যদি এমন কিছু হয় তার একটি গণনা করেছেন কলকাতায় ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা, দেশের অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, যদি বিক্রম ল্যান্ডারের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি কোনও ভাবে কাজ না করে, সেক্ষেত্রে যদি ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে তবে চন্দ্র পৃষ্ঠে ১৮-২০ মিটারে একটি গর্ত তৈরি হতে পারে। যে গর্ত পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাবে না। সেক্ষেত্রে হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যেতে পারে।