ছবি সৌজন্যে: শাটারস্টক।
একটা সময় ছিল যখন সূর্যের হানাদারির হাত থেকে চাঁদই আমাদের বাঁচাতো। আকারে ছোট হলেও চাঁদেরও ছিল নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র। পৃথিবীর সঙ্গে তার চৌম্বক ক্ষেত্র ভাগাভাগি করতো চাঁদ। আর সেই ভাবেই ভয়ঙ্কর সৌরবিকিরণ, সৌরবায়ুর ঝাপ্টা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতো তার উপগ্রহ।
নাসার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। ১৪ অক্টোবর।
সেই সময় চাঁদ আমাদের অনেক কাছাকাছি ছিল। এখন যে দূরত্বে রয়েছে (২ লক্ষ ৩৮ হাজার মাইল), তখন তার তিন ভাগের এক ভাগ দূরে ছিল চাঁদ। আমাদের থেকে দূরত্ব ছিল মাত্র ৮০ হাজার মাইল।
আরও পড়ুন- আইনস্টাইনের সংশয় দূর করেই পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল রজার পেনরোজের, সঙ্গে আরও দুই
আরও পড়ুন- আমার বন্ধু রজার
গবেষকরা জানিয়েছেন সেটা ছিল সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগেকার কাহিনী। পৃথিবীতে তখনও প্রাণের জন্ম হয়নি। সূর্যেরও তখন প্রায় শৈশব। সৌরবিকিরণ আর সৌরবায়ুর ঝাপ্টা তখন আরও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। সৌরবিকিরণে তখন পৃথিবীর গা এতটাই জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিল যে সেই পরিবেশে কোনও প্রাণের জন্ম নেওয়াই সম্ভব নয়। প্রাণের বিকাশ তো আরও দূরের কথা।
তাতে কী লাভ হয়েছিল?
মূল গবেষক নাসার চিফ সায়েন্টিস্ট জিম গ্রিন বলছেন, ‘‘তখন পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম হয়নি। তাই এর ফলে, প্রাণ সরাসরি উপকৃত হওয়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু উপকৃত হয়েছিল পরোক্ষে। পরে। কারণ, চাঁদ ওই উপকারটা করেছিল বলেই সূর্যের তাপ আর ভয়ঙ্কর সৌর বিকিরণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল হাপিশ হয়ে যায়নি। চাঁদ তার নিজের চৌম্বক ক্ষেত্রকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়ে সূর্যের যাবতীয় হানাদারির হাত থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে বাঁচিয়েছিল। না হলে এখন যা মঙ্গল, শুক্রের দশা, জন্ম থেকেই যে দশা বুধ গ্রহের, পৃথিবীরও সেই দশাই হতো। বায়ুমণ্ডল না থাকলে প্রাণের জন্ম সম্ভবই হতো না পৃথিবীতে।’’
চাঁদেরও ছিল চৌম্বক ক্ষেত্র। ছবি সৌজন্যে: নাসা।
নাসার গবেষণা জানিয়েছে এই অবস্থাটা অবশ্য খুব বেশি দিন চলেনি। সাড়ে ৪০০ কোটি বছর থেকে সা়ড়ে ৩০০ কোটি বছর আগে পর্যন্ত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিত্রাতা হিসাবে ভূমিকা ছিল চাঁদের। সেই সময় পৃথিবীও বাঁচিয়েছে চাঁদের বায়ুমণ্ডল।
একটা সময় পর পৃথিবীও আর পারেনি। আজ থেকে দেড়শো কোটি বছর আগেই চাঁদের যেটুকু অল্পস্বল্প বায়ুমণ্ডল ছিল তার প্রায় পুরোটাই উবে গিয়েছিল। সৌর বিকিরণে। লোপ পেয়েছিল তার চৌম্বক ক্ষেত্রও। ফলে, চাঁদের পক্ষে আর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিত্রাতার ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়নি।