অধ্যাপক দেবশ্রী ঘোষ। -নিজস্ব চিত্র।
বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বড় স্বীকৃতি আরও এক বাঙালির। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব কোয়ান্টাম মলিকিউলার সায়েন্স (আইএকিউএমএস)-এর দেওয়া বিজ্ঞান-সম্মান পেলেন শ্রীরামপুরের দেবশ্রী ঘোষ। কোয়ান্টাম রসায়নবিদ্যায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এই পুরস্কার।
পুরস্কারের ৫৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ভারতীয় পেলেন এই সম্মান। যে পুরস্কারপ্রাপকদের তালিকায় রয়েছে বহু নোবেলজয়ীর নাম। দেবশ্রী কলকাতার ঐতিহ্যবাহী বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (আইএসিএস) -এর স্কুল অব কেমিক্যাল সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
শ্রীরামপুরের স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর রসায়নে অনার্স নিয়ে দেবশ্রী পড়তে ঢোকেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে (অধুনা বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৯৯ সালে। তার পর এমএসসি করেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি) থেকে। ২০০৫ সালে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান। তার পর ২০০৯ থেকে ২০১২, পোস্ট ডক্টরাল করেন আমেরিকারই সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারতে ফিরে তাঁর প্রথম চাকরি পুণেতে। সিএসআইআর-এর ন্যাশনাল কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে। কলকাতার আইএসিএস-এর স্কুল অব কেমিক্যাল সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হন ২০১৭-য়।
আরও পড়ুন
লকডাউনের নিয়ম শিথিল হওয়ায় আপনি কি উদ্বিগ্ন? এই মানসিক চাপ কী ভাবে সামলানো যায়
আরও পড়ুন
বর্তমান টিকা সারা জীবন নিরাপত্তা নাও দিতে পারে, আশঙ্কা চিকিৎসকদের
দেবশ্রীর গবেষণা মূলত বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে প্রয়োজনীয় মানবদেহের বিভিন্ন প্রোটিন এবং মেলানিনের মতো জৈব অণু নিয়ে। ডিএনএ নিয়েও। সূর্যের আলো শরীরে ঢোকার পর কী ভাবে সেগুলির আকার, আকৃতি, আচরণ বদলে যায়, তারা সূর্যের আলোকে কী পরিমাণে গ্রহণ করে, আলোর সঙ্গে তাদের কী কী ধরনের বিক্রিয়া হয় তা বুঝতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মেশিন-লার্নিং পদ্ধতির ব্যবহারই দেবশ্রীর তূণীরে সবচেয়ে ধারোল তির।
দেবশ্রীর কথায়, “আলো ও বিভিন্ন পদার্থের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। সেটা করতে আমি মূলত জৈব অণুগুলিকে বেছে নিয়েছি। আলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর সেগুলি মানবদেহে কতটা বদলে যায় তা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে আগামী দিনে বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়া ও তার ত্রুটিবিচ্যূতিগুলি বোঝা সহজ হয়। ত্বকের মেলানিন নিয়ে কাজ করেছি। সবটাই করছি তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে। দেখেছি, এখন যে সানস্ক্রিনগুলি বাজারে রয়েছে তার কয়েকটি তেমন কার্যকরী হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, তা আমার গবেষণা বুঝতে সাহায্য করেছে অনেকটাই।”
দেবশ্রী যা নিয়ে গবেষণা করেন, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এর অধিকর্তা অধ্যাপক তাপস চক্রবর্তীরও গবেষণার ক্ষেত্র তার খুব কাছাকাছি। ফারাকটা হল, দেবশ্রী যা করেন তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, তাপস সেটা পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করেন গবেষণাগারে। আর একটা ফারাক, দেবশ্রীর কাজ মূলত জৈব অণু নিয়ে। আর তাপসের কাজ পরিবেশ দূষণের পর সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন কণা ও পদার্থকে কী ভাবে বদলে দিচ্ছে সেটা বোঝা।
তাপস বললেন, “দেবশ্রীর কাজের অভিনবত্ব হল, তিনি তাত্ত্বিক ভাবে একটি মডেল তৈরির চেষ্টা করছেন। যে কাজ শেষ করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অন্য বিজ্ঞানীদেরও লাগবে। তবে সেই মডেল তৈরি করা গেলে বিভিন্ন জৈব অণুর উপর সূর্যের আলোর প্রভাব বোঝার কাজটা সহজতর হবে।”