কোভিড টিকা তৈরির নয়া পদ্ধতির উদ্ভাবন। -ফাইল ছবি।
ঠিক যেখানে পৌঁছনোর কথা, একেবারে সেখানেই পৌঁছবে। সার্স-কোভ-২ হোক বা অন্য যে কোনও ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের অ্যান্টিজেনকে নির্ভুল ভাবে চিনিয়ে দেবে। মানবদেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চটজলদি হানাদারদের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে পারবে। লড়াইয়ে শামিল করাতে পারবে।
কোভিড তো বটেই, যে কোনও ধরনের ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ ১০০ শতাংশ সফল ভাবে রোখার লক্ষ্যে একটি অভিনব পদ্ধতিতে বানানো হল টিকা। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা বা ন্যানো পার্টিকল দিয়ে।
আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ওরিগন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির নজরকাড়া যৌথ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস' (পিনাস)’-এ। মঙ্গলবার।
যে সব কাগজে আমরা লিখি, তারা যতটা পুরু তার এক লক্ষ ভাগের এক ভাগকে বলা হয় এক ন্যানোমিটার। কোনও ন্যানো পার্টিকলের ব্যাস হয় গড়ে এক থেকে ১০০ ন্যানো মিটার। কোনও একটি পদার্থের ন্যানো পার্টিকল তার চেয়ে বড় আকারের ন্যানো পার্টিকলের চেয়ে রাসায়নিক ধর্মে অনেকটাই আলাদা হয়, তা একই পদার্থের হলেও। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকা বলেই এদের মাধ্যমে নানা ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি চালুর ভাবনা শুরু হয়েছে গত দু’দশকে। মানবশরীরে এদের নির্ভুল লক্ষ্যে পাঠানো যায় বলে এদের নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়ে।
গবেষকরা দেখিয়েছেন, এই ন্যানো পার্টিকল দিয়ে টিকা বানানো হলে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সক্রিয় করে তোলা যাবে একটি পর্বেই। সেই অ্যান্টিবডি অনেক বেশি পরিমাণে তৈরি হবে। তাদের কোভিড-সহ যে কোনও ধরনের সংক্রমণ রোখার ক্ষমতা থাকবে অনেক বেশি দিন পর্যন্ত।
ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ১০০ শতাংশ সফল হয়েছেন গবেষকরা। যে ইঁদুরদের ভয়াবহ কোভিডে সংক্রমিত করিয়ে এই ন্যানো পার্টিকল শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছিল, তাদের কারও ফুসফুসে কোনও ক্ষতি হয়নি সংক্রমণের দরুন। আর যাদের এই ন্যানো পার্টিকল ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়নি, তারা ১৪ দিনের মধ্যেই মারা গিয়েছে।
এই পদ্ধতিতে বানানো টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্ফেরিক্যাল নিউক্লিক অ্যাসিড' (এসএনএ) টিকা। ইঁদুরের দেহে ৬০ রকমের কোষে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন গবেষকরা।
গবেষকরা ইঁদুরের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ট্রিপল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিতে টিকা দিয়ে সফল হয়েছেন। গবেষকদের আশা, অন্য ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও আগামী দিনে সফল হবে এই পদ্ধতিতে বানানো টিকা। ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের অ্যান্টিজেন এবং ডিএনএ-র একটি বিশেষ সজ্জা দিয়ে এসএনএ টিকা বানানো হয়েছে।