গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ঠিক যেন জিগ্শ পাজল! চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার সময় শেষ মুহূর্তে চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর ঠিক কী হয়েছিল? সেই ধাঁধায় এ বার নতুন সূত্র যোগ করলেন চেন্নাইয়ের তরুণ ইঞ্জিনিয়র সন্মুগ সুব্রহ্মণ্যন। শনিবার টুইট করে সন্মুগ দাবি করেন, ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর পেটে থাকা রোভার ‘প্রজ্ঞান’ অক্ষত রয়েছে। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর ধ্বংসাবশেষ থেকে ওই যানটি বেরিয়ে কয়েক মিটার দূরে গিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও রবিবার সেই দাবি থেকে কিছুটা হলেও সরে যান সন্মুগ। একটি টেলিভিসন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘দু’টি সম্ভাবনা হতে পারে। হয় আছড়ে পড়ার পর ল্যান্ডার থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে রোভার, না হলে আপনাআপনিই বেরিয়েছে।’’ গোটা বিষয়টি ইসরোকেও জানিয়েছেন সন্মুগ।
২০১৯-এর ২২ জুলাই চাঁদের দেশে পাড়ি দিয়েছিল চন্দ্রযান ২। উৎক্ষেপণের পর সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডোবে। চাঁদের মাটিতে নামার আগের মুহূর্তে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর সঙ্গে পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। কিছু দিন অপেক্ষা করার পর বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দেন, উপগ্রহের মাটিতে আছড়ে পড়েছিল (হার্ড ল্যান্ডিং) ‘বিক্রম’।
এর পরই শুরু হয় ওই চাঁদের মুলুকের ওই দুর্ঘটনার পুনর্নির্মাণের পালা। ঠিক যেন গোয়েন্দা কাহিনি। ফলাফল দেখে ঘটনার সূত্রপাত কী ভাবে তার আন্দাজ করার চেষ্টা। প্রথম সূত্র মেলে নাসার ছবিতে। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৪ এবং ১৫ অক্টোবর এবং ১১ নভেম্বরে এলআরও-র তোলা বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে গবেষণা ও চর্চা করেন সন্মুগ। তা থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠে ৭৫০ মিটার জুড়ে পড়ে থাকা ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করে দেন তিনি। তাঁর কাজের প্রশংসা করে নাসা এবং ইসরোও। এ বার সেই ব্যর্থ অভিযানের প্রায় এক বছরের মাথায় নতুন একটা সূত্র তুলে ধরেছেন সেই সন্মুগ। টুইটে তিনি লিখেছেন, রোভার প্রজ্ঞান অক্ষত এবং চন্দ্রপৃষ্ঠেই রয়েছে। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে ওই যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে কয়েক মিটার গড়িয়ে গিয়েছে বলেও দাবি তাঁর।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত অমিত শাহ, ভর্তি হাসপাতালে
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে নাসার ছবি প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন সন্মুগ। সে গুলি চলতি বছরের ৪ জানুয়ারির। টুইটারে সন্মুগ লিখেছেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে কয়েক দিন ধরেই ল্যান্ডারকে কম্যান্ড পাঠানো হয়েছিল এবং একটা ভিন্ন সম্ভাবনাও রয়েছে যে ল্যান্ডারটি সেই সিগন্যাল গ্রহণ করে রোভারকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ল্যান্ডার পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।’’
যদিও দিনের শেষে নিজের সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন সন্মুগ। একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘দু’টি সম্ভাবনা হতে পারে। হয় আছড়ে পড়ার পর ল্যান্ডার থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে রোভার, না হলে আপনাআপনিই বেরিয়ে এসেছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘ছবিতে যে গতিপথ (ট্র্যাক) দেখা গিয়েছে তা এক মাত্র রোভারেরই হওয়ার সম্ভাবনা। তার কারণ ওই ট্র্যাকটি ছবিতে খুব উজ্জ্বল।’’ বিক্রম-রহস্যে নয়া এই সূত্রের কথা ইসরোকেও জানিয়েছেন সন্মুগ। তাঁর তত্ত্ব খতিয়ে দেখা হচ্ছে হলে জানিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
আরও পড়ুন: রাজনীতি তীব্র সুশান্তের মৃত্যু ঘিরে, মুখোমুখি সঙ্ঘাতে দুই রাজ্য
জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী অবশ্য সন্মুগের এই দাবিকে মান্যতা দিচ্ছেনা না। তাঁর মতে, ‘‘ল্যান্ডারে যে রেডিয়ো অ্যান্টেনা পাঠানো হয়েছিল তা উল্টো কড়াইয়ের মতো অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখনকার ছবিতে যা ধরা পড়েছে তাতে অ্যান্টেনাটি সোজা অবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ হার্ড ল্যান্ডিংয়ের ফলে তা ঝাঁকুনিতে উল্টে গিয়েছে। এই সময়ে সূর্য একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে আসায় সেই ছবি ধরা পড়েছে নাসার ফ্লাইবাই-এর মাধ্যমে।’’ চন্দ্রপৃষ্ঠে রোভারের গতিপথের দাগ দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন সন্মুগ। সন্দীপ চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওই দাগ রোভারের চলাফেরার দাগ নয়। ল্যান্ডারে থাকা কোনও জ্বালানি ভর্তি সিলিন্ডার গড়িয়ে গিয়ে ওই দাগ তৈরি করতে পারে।’’ তবে ‘বিক্রম’-এর অন্তর্ধান রহস্যে সন্মুগ সুব্রহ্মণ্যন যে ফের নতুন একটি সূত্র তুলে ধরেছেন তা বলছেন ওই জ্যোতির্বিজ্ঞানী।