চন্দ্রযান থেকে আলাদা হয়ে গেল বিক্রম ল্যান্ডার। ছবি ইসরোর সূত্রে
পথটা প্রায় দেড় মাসের। সেই দীর্ঘ পথ সফল ভাবে পাড়ি দেওয়ার পর এ বার চূড়ান্ত পর্যায়ে চাঁদের মাটিতে নামার প্রস্তুতি শুরু করল চন্দ্রযান ২। অরবিটার থেকে আলাদা হয়ে গেল বিক্রম ল্যান্ডার। এই ল্যান্ডারের মধ্যে আবার রয়েছে প্রজ্ঞান রোভার। প্রকৃতপক্ষে ল্যান্ডার এবং রোভার দু'টিই আলাদা হয়ে গিয়েছে অরবিটার থেকে। ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ল্যান্ডার এবং রোভার দু'টিরই স্বাস্থ্য ভাল আছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রোভার-সহ অবতরণ করবে এই ল্যান্ডার।
যাত্রা শুরু হয়েছিল ২২ জুলাই। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে দুপুর ২টো ৪৩ মিনিটে বাহুবলি রকেটে চেপে চাঁদের উদ্দেশে উড়ে যায় চন্দ্রযান-২। পৃথিবীর কক্ষপথ পার হওয়ার পর ঢুকেছে চাঁদের কক্ষপথে। তার পর চাঁদের কক্ষপথেও পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে অবশেষে আলাদা হয়ে গেল বিক্রম ল্যান্ডার।
ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আজ ২ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে অরবিটার থেকে সফল ভাবে আলাদা হয়ে গিয়েছে। এর পর আরও দুটি ছোট বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের মাটিতে নামবে এই ল্যান্ডার। ইসরো জানিয়েছে, বর্তমানে ল্যান্ডারটি ১১৯ X ১২৭কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এর অর্থ চাঁদের মাটি থেকে ল্যান্ডারের সবচেয়ে বেশি দূরত্ব ১২৭ কিলোমিটার এবং সবচেয়ে কাছের দূরত্ব ১১৯ কিলোমিটার। অর্থাৎ এখনও কক্ষপথ পুরোপুরি বৃত্তাকার হয়নি।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, শ্রীহরিকোটার মিশন অপারেশনস কমপ্লেক্স এবং বেঙ্গালুরুর ট্র্যাকিং অ্যান্ড কম্যান্ড নেটওয়ার্ক থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বেঙ্গালুরুর কাছে বায়ালুর ইন্ডিয়ান ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের অ্যান্টেনারও। চন্দ্রায়ন-২ এর অরবিটার এবং ল্যান্ডারের সব কিছুর স্বাস্থ্য ভাল আছে।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ মানল পাকিস্তান, কুলভূষণের সঙ্গে দেখা ভারতীয় কূটনীতিকের
এর পরের ধাপ কী?ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রথমত, চাঁদের কক্ষপথ থেকে বার করতে হবে ল্যান্ডারকে। সেই কাজ করা হবে দু’টিপর্যায়ে। আগামিকাল মঙ্গলবার এবং বুধবার পর পর দু'দিন গতি বাড়িয়ে কক্ষপথ থেকে ঠেলে বাইরে বের করে দেওয়া হবে। তার পর শুরু হবে অবতরণের প্রক্রিয়া। সেই পর্যায়ে ল্যান্ডারের গতি কমাতে কমাতে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে। সব শেষে ৭ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রিত ধাক্কা দিয়ে চাঁদের মাটিতে নামাতে হবে ল্যান্ডারকে। সেটাও এমন নিখুঁত ভাবে করতে হবে, মসৃণ ভাবে প্রায় পালকের মতো গিয়ে চাঁদের মাটিতে বসে পড়বে ল্যান্ডার। এই প্রক্রিয়া ১৫ মিনিটের। আর এই ১৫ মিনিটই কার্যত অগ্নিপরীক্ষা। ইসরোর বিজ্ঞানীদের ভাষায় '১৫ মিনিটস অব টেরর' বা 'আতঙ্কের ১৫ মিনিট'।
আরও পডু়ন: দফায় দফায় বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, বিজেপির বন্ধ ঘিরে উত্তেজনা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে
চন্দ্রযানের নির্ধারিত যাত্রাপথ অনুসারে ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করার পর তার থেকে রোভারটি আলাদা হয়ে যাবে। এই রোভারটি ৬ চাকার একটি যন্ত্রযান, যা চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধের মাটিতে ঘুরে বেড়াবে। চাঁদের এক দিন অর্থাৎ পৃথিবীর ১৪ দিন ধরে চাঁদের মাটিতে ঘুরবে এই রোভার। অন্য দিকে অরবিটারটি চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে থাকবে আরও প্রায় এক বছর।