চাঁদের পিঠের গহ্বর। ছবি সৌজন্যে: নাসা
না। ‘বিক্রম’-এর খোঁজ মিলল না। চাঁদের বুকে তন্নতন্ন তল্লাশির পরেও। তবে অবতরণের ৩৮ দিন পর ল্যান্ডার বিক্রম নিখোঁজ থাকলেও, চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার চাঁদের পিঠে অজানা অনেক গহ্বরের ছবি খুব কাছ থেকে আগের চেয়ে অনেক নিখুঁত ভাবে তুলতে পেরেছে।
ভারতীয় সময় গত ৬ সেপ্টেম্বর (ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৭ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে দু’টো নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা ছোঁয়াতে যাওয়ার সময় চন্দ্রযান-২-এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ল্যান্ডার বিক্রম এখন ঠিক কোথায় রয়েছে, কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানা গেল না। চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা নাসার মহাকাশযান ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার (এলআরও)’ বহু চেষ্টা চালিয়েও খুঁজে পায়নি বিক্রমকে।
নাসার ‘এলআরও মিশনে’র প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট নোয়া এডওয়ার্ড পেট্রো বলেছেন, ‘‘চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যে এলাকায় সেপ্টেম্বরে আলতো ভাবে পা ছোঁয়ানোর (সফ্ট ল্যান্ডিং) কথা ছিল বিক্রমের, কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময় গত ১৪ অক্টোবর সেই বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি তুলেছে এলআরও। কিন্তু কোনও ছবিতেই ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার বিক্রমের হালহদিশ জানা সম্ভব হয়নি।’’
চাঁদে পাঠানো ইসরোর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ছবি সৌজন্য়ে: ইসরো
নাসার তরফে এও জানানো হয়েছে, এ বছরের গোড়ার দিকে চাঁদে নামার সময় মুখ থুবড়ে পড়া ইজরায়েলি ল্যান্ডার ‘বেরেশিট’-এর খোঁজ পরে যে প্রযুক্তিতে মিলেছিল, সেই পদ্ধতি ও প্রযুক্তিরই সাহায্য নেওয়া হয়েছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামা বিক্রমের খোঁজ পেতে। কিন্তু তাতেও হদিশ মেলেনি বিক্রমের।
কেন বিক্রমকে দেখতে পেল না এলআরও?
এলআরও মিশনের ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট জন কেলার বলেছেন, ‘‘যে এলাকায় নামার কথা ছিল ইসরোর ল্যান্ডার বিক্রমের, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সেই এলাকা ছায়াতেই ঢাকা থাকে বেশি। তাই হয়তো এলআরও হদিশ পায়নি বিক্রমের।’’
এর আগেও ১৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ওই এলাকার উপর দিয়ে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করেছিল নাসার মহাকাশযান এলআরও। সেই সময়ও বিক্রমের দেখা পায়নি নাসার মহাকাশযান।
চাঁদে বিভিন্ন গহ্বরের ছবি তুলল চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার
ইসরো অবশ্য একটি সুখবর দিয়েছে। জানিয়েছে, চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে খুব ভাল কাজ করছে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার। অরবিটারে থাকা সর্বাধুনিক ‘ডুয়াল-ফ্রিকোয়েন্সি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (ডিএফ-এসএআর)’ চাঁদের পিঠে বেশ কয়েকটি অজানা, অচেনা গহ্বরের ছবি খুব কাছ থেকে তুলতে পেরেছে। যেগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে কয়েকশো কোটি বছরের পুরনো গহ্বর, তেমনই রয়েছে হালে তৈরি হওয়া কয়েকটি গহ্বরও।
চাঁদে দু’ধরনের গহ্বর রয়েছে। এক ধরনের গহ্বর তৈরি হয়েছে আগ্নেয়গিরি থেকে। যে আগ্নেয়গিরিগুলি এখন মৃত। এই গহ্বরগুলিকে বলা হয় ‘ভলক্যানিক ক্রেটার’।
আরও পড়ুন- ‘আমার তত্ত্বের ফাঁকফোকর খুঁজছি, তোমরাও খুঁজে দেখ’, এখনও বলেন জিম পিবল্স
আরও পড়ুন- মিলে গেল বাঙালির পূর্বাভাস, ভিন মুলুকের বার্তা নিয়ে সৌরমণ্ডলে ঢুকল ‘পাগলা ঘোড়া’!
আর এক ধরনের গহ্বর রয়েছে, যেগুলি তৈরি হয়েছে কয়েকশো কোটি বছর ধরে চাঁদের পিঠে বিভিন্ন দিক থেকে আসা উল্কা, উল্কাপিণ্ড বা গ্রহাণু আছড়ে পড়ায়। এই ধরনের গহ্বরগুলিকে বলা হয় ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’।
চাঁদের বুকে তৈরি হওয়া ইমপ্যাক্ট ক্রেটার
বহু বহু দূর থেকে প্রচণ্ড গতিবেগে ছুটে এসে উল্কা বা গ্রহাণু আছড়ে পড়ার ফলে চাঁদের বুকে তৈরি হওয়া ইমপ্যাক্ট ক্রেটারগুলির গভীরতা অনেকটাই বেশি হয় ভলক্যানিক ক্রেটারের চেয়ে।
তাই চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার চাঁদের বুকে এই ধরনের অজানা, অচেনা ইমপ্যাক্ট ক্রেটারের ছবি নিখুঁত ভাবে তুলতে পারায় চাঁদের বুকের অন্দরে কী কী পদার্থ রয়েছে, কতটা জল রয়েছে এখনও তার সন্ধান করার কাজটা সহজতর হতে পারে বলে মনে করছেন ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা।
ছবি ও গ্রাফিক সৌজন্যে: ইসরো ও নাসা