প্রতীকী ছবি।
ব্যর্থ অবতরণের পর তে-রাত্তির কেটে গেলেও বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। তারা জানিয়েছে, চেষ্টা চলছে। কিন্তু সাফল্য আসেনি। বিক্রম যে আছড়ে পড়েছে (হার্ড ল্যান্ডিং), তা রবিবারই জানিয়েছেন ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবন। কিন্তু তার অবস্থা কী, তা এখনও ইসরো জানতে পারেনি। এই সুযোগে বিক্রমকে নিয়ে গুজবের বন্যা বইছে।
সোমবার একটি সংবাদ সংস্থা ইসরোর সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, চন্দ্রপৃষ্ঠে বিক্রম সামান্য কাত হয়ে রয়েছে। কিন্তু তার ক্ষতি হয়নি। এর পরেই বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায়। পরে শিবন অন্য একটি সংবাদ সংস্থাকে জানান, বিক্রম কেমন রয়েছে, তা তাঁরা এখনও জানেন না। ওই খবরটির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শিবনের নামেও একাধিক টুইটার ও ফেসবুক প্রোফাইল থেকে খবর ছড়ানো হচ্ছে। এ দিন ইসরো বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শিবনের কোনও ব্যক্তিগত প্রোফাইল নেই।
চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই ইসরোকে নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদের জিগির’ তোলা হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। আর তারই অঙ্গ হিসাবে ‘সাফল্যের’ ভুয়ো খবর ও ছবি ছড়ানো হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা ইসরোর সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, বিক্রম কাত হয়ে থাকলেও ছবি দেখে মোটামুটি অক্ষত বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু এই মনে হওয়া কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইসরো সূত্রের খবর, চন্দ্রযানের অরবিটার নিজস্ব কক্ষপথে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে। সে বর্তমানে যেখানে রয়েছে, সেখান থেকে বিক্রমের ছবি তোলা সম্ভব নয়। সে এক বার পাক খেয়ে বিক্রমের মাথার উপরে এলে ছবি তোলা হবে। এখনও পর্যন্ত বিক্রমের তাপচিত্র বা থার্মাল ইমেজ ইসরোর কাছে রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে বিক্রমের ক্ষয়ক্ষতি বোঝা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, বিক্রম অক্ষত থাকলেও তার অ্যান্টেনা, সৌরপাত বা সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক রয়েছে কি না, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। সেগুলি ঠিক না থাকলে বিক্রমের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর হিসেবে টানা ১৪ দিন ধরে চাঁদে সূর্যের আলো থাকে। সেই হিসেবে সৌরশক্তিচালিত বিক্রমের কার্যকাল ছিল ১৪ দিন। অবতরণ ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ১৪ দিন হওয়া পর্যন্ত ইসরো বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ওই ১৪ দিন পেরিয়ে গেলে সব আশা শেষ। আছড়ে পড়ার অভিঘাতে বিক্রমের যন্ত্রপাতির ক্ষতি হলে বেঙ্গালুরুর কন্ট্রোল রুম থেকে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করাও যাবে না। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেই আশঙ্কা। কেউ কেউ বলছেন, বিক্রম কাত হয়ে থাকলেও লাভ নেই। কারণ, তার নিজের সোজা হওয়ার মতো ক্ষমতা বা প্রযুক্তি নেই। হিসেব মতো তার খাড়া অবস্থায় অবতরণ করে সোজা দাঁড়ানোর কথা ছিল। সেটা হয়নি বলেই আশঙ্কা।