হু হু করে মেঘ নেমে আসছে নীচে? যেন আমাদের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়বে! ঢেকেঢুকে দেবে আমাদের। জীবন, যাপন। হালকা হয়ে যাচ্ছে মেঘ, তুলোর মতো? পাতলা হয়ে যাচ্ছে মেঘ? চেহারায় ছোট হয়ে যাচ্ছে মেঘ, আড়ে ও বহরে? সেই ধীরে ধীরে নীচে নেমে আসা মেঘ আমাদের জাপটে ধরবে আরও বেশি করে? ফাঁস হয়ে বসবে গলায়?
একেবারে হালের একটি গবেষণার ফলাফল থেকে এই উদ্বেগের কথা, গায়ে কাঁটা দেওয়া সেই ভবিষ্যতের আভাস দিয়েছে নাসা।
অথচ, এক দিন এই মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার কী নেশাই যে ছিল আমাদের! এখনও নেই, তাই-বা বলল কে? শিলং, চেরাপুঞ্জি, সিমলা, দার্জিলিঙে গিয়ে উনুনের ধোঁয়ার মতো মেঘ ধরা-ছোঁওয়ার খেলা আমরা কতই না করেছি! চার পাশে মেঘ। যেন মেঘের মধ্যে দিয়ে সাঁতার কাটছি! কেটেই চলেছি। নব আনন্দে জাগো!
গত ১৫ বছর ধরে পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের আকাশে মেঘের আকার-আকৃতি, আচার-আচরণ দেখে, মেঘেদের মেপে-টেপে মহাকাশে পাঠানো নাসার ‘টেরা’ উপগ্রহ জানিয়েছে, মেঘ বোধহয় ধীরে ধীরে নেমে আসছে। হামলে পড়তে চলেছে আমাদের ওপর! যেন মেঘই তাদের ‘ছায়া’য় ঢেকেঢুকে দেবে আমাদের জীবন, যাপন!
খুব ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে আমরা যেমন গায়ে চাদর জড়াই, বিছানায় শোওয়ার সময় রাতে গায়ে টেনে নিই কম্বল, ঠিক তেমনই প্রখর সূর্যের তাপ আর মারাত্মক বিকিরণের হাত থেকে একেবারে ‘কম্বলে’র মতোই আমাদের আগলে রাখে মেঘ। ছায়া দেয়, শীতলতা দেয়, দেয় কিছুটা প্রাণজুড়োনো শান্তিও।
বর্ষার মেঘ (ওপরে), বজ্রবিদ্যুতের মেঘ (নীচে)
কিন্তু শীতের দুপুরে ছাদে অনেক ক্ষণ ধরে গায়ে কম্বল জড়িয়ে রোদ পোহালে যেমন কিছু পরে কম্বলটা তেতে ওঠে, রোদ যতই হোক ‘মিঠেকড়া’, ঠিক তেমনই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য উত্তরোত্তর তেতে উঠছে ভূপৃষ্ঠ। অসম্ভব রকমের গরম হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল। চার পাশ। তাতে আমাদের মাথার ওপরে আকাশে থাকা ‘কম্বল’ মেঘটাও সেই ঝলসানো গরমে, প্রখর সূর্যতাপে গরম, বড়ই গরম হয়ে যাচ্ছে। আর অল্প সময়েই মেঘেদের সেই গরম হয়ে পড়ার হারটা বাড়ছে উত্তরোত্তর। বিশ্ব জুড়েই। শুকনো, খটখটে, মরুভূমির মতো এলাকা বা আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে সেটা অনেক বেশি। তুলনায় কম গরমের এলাকা বা দেশগুলিতে আবার সেটা বেশ কম। যদিও মেঘেদের ‘জ্বর’ মাপার কোনও যন্ত্র বা প্রযুক্তি এখনও পর্যন্ত হাতে আসেনি আমাদের। এখনও এটা শুধুই গবেষকদের অনুমান।
নাসার একটি গবেষণার ফলাফল বলছে, মেঘ একটু একটু করে আমাদের ঘাড়ের ওপরে এসে যাচ্ছে। পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ছোট হয়ে যাচ্ছে। চেহারায় খাটো হয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে উজ্জ্বলতাও। তবে সেটাও যে খুব নিয়ম মেনে হচ্ছে, তা নয়। পৃথিবীর সর্বত্রই হচ্ছে, এমনটাও নয়। কখনও হচ্ছে, কখনও তা হচ্ছে না। কোথাও হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও তা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে, খুব সঠিক ভাবে যে তা বোঝা যাচ্ছে না, সেটাও কবুল করেছেন নাসার গবেষকরা।
যে মেঘে বজ্রপাত (ওপরে), শরতের মেঘ (নীচে)
গত ১৫ বছর ধরে পৃথিবীর দিকে মোট ৯টি ক্যামেরাকে তাক করে রেখে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহটিকে চক্কর মেরে গিয়েছে নাসার ‘টেরা’ উপগ্রহ। আর বিভিন্ন কৌণিক অবস্থান থেকে ওই ৯টি ক্যামেরায় তোলা মেঘেদের ছবি বিশ্লেষণ করেছে উপগ্রহটির ‘মাল্টি-অ্যাঙ্গেল ইমেজিং স্পেকট্রো-রেডিওমিটার (এমআইএসআর) ইনস্ট্রুমেন্ট। ছবিগুলি তোলা হয়েছে দৃশ্যমান আলো ও কাছের অবলোহিত রশ্মির (নিয়ার-ইনফ্রারেড) চারটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে (ওয়েভলেংথ)।
মাটি থেকে উচ্চতার নিরিখে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রার হেরফের
প্রশান্ত মহাসাগরে লা-নিনা ও এল-নিনোর প্রভাব
১৯৯৯ সালে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিল এমআইএসআর। মেঘেদের ওপর নজর রাখতে। সেই এমআইএসআর-এর পাঠানো প্রথম ১০ বছরের ডেটা নিয়ে ২০১২-য় তাঁর গবেষণাপত্রে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাকলে-গ্ল্যাভিশ চেয়ার’ প্রফেসর রজার ডেভিস দেখিয়েছিলেন, গত এক দশকে পৃথিবীর কোথাও কোথাও মেঘ নেমে আসছে আমাদের ঘাড়ের ওপর। কোনও কোনও বছরে বা বছরের বিশেষ কোনও সময়ে। পরের ৫ বছরের ডেটা যদিও দেখিয়েছে, এই ওঠা-নামার কোনও নির্দিষ্ট ধারবাহিকতা (ট্রেন্ড) নেই। তবে এক বছর থেকে অন্য বছরে মেঘেদের উচ্চতা যে পৃথিবীর কোনও কোনও অঞ্চলে কমছে, তা নিয়ে অন্তত কোনও সন্দেহ নেই। মেঘ নীচে নেমে আসছে আগের বছর থেকে পরের বছরে।
মেঘ কেন কখনও-সখনও কোথাও কোথাও নেমে আসছে নীচে?
বায়ুমণ্ডলের ওপর, মধ্য ও নীচের স্তর আর তাদের তাপমাত্রা
আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে মূল গবেষক, অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার ডেভিস ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘প্রশান্ত মহাসাগরে লা-নিনা আর এল-নিনোর প্রভাবেই মেঘেদের এই নামা-ওঠা হচ্ছে। মেঘেদের উচ্চতার ওপর এদের প্রভাবটাই সবচেয়ে জোরালো। আমরা দেখেছি, ২০০৮ সালে লা-নিনার দরুন বিশ্ব জুড়ে মেঘ নেমে এসেছে গড়ে ১৩০ ফুট বা, ৪০ মিটার। তার মানে, প্রায় ১১ তলা বাড়ির মতো। আবার এল-নিনোই আমাদের ওপর হামলে পড়া মেঘকে ঠেলেঠুলে ওপরে তুলে দিচ্ছে। মেঘেদের এই নামা-ওঠায় বেশ কিছুটা ফারাকও দেখেছি আমরা উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে। সেই তারতম্যটা দেখেছি একই গোলার্ধের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যেও। আর দেখেছি, ওই সব কিছুর পিছনেই কলকাঠি নাড়ছে লা-নিনা এবং এল-নিনো।’’
পৃথিবীর ‘জ্বর’ (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) বাড়ছে বলেই কি মেঘ হামলে পড়ছে আমাদের ঘাড়ে?
পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজি’র আবহবিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমার তা মনে হয় না। উষ্ণায়নের ফলে ভূপৃষ্ঠ আরও বেশি করে তেতে উঠলে বাতাসে তো জলীয় বাষ্পের (ওয়াটার ভেপার) পরিমাণ আরও বাড়বে। কেটলির জল যেমন বেশি ফোটালে বেশি ধোঁয়া বেরিয়ে আসে কেটলির মুখ থেকে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। যেমন হালে দেখা গিয়েছে, বঙ্গোপসাগর, বিযূব রেখার (ইক্যুয়েটর) আশপাশের এলাকার ভারত মহাসাগরের পৃষ্ঠভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অন্য মহাসাগরগুলির তুলনায় এক দশকে গড়ে ০.১ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লেই মেঘ ভারী হবে। বাড়বে তার ঘনত্ব (থিকনেস), উচ্চতাও। কারণ, বাষ্প বা গ্যাস মহাকর্ষীয় বলকে অগ্রাহ্য করে আরও ওপরে উঠতে পারে তরল জল বা কঠিন বরফের চেয়ে।’’
উচ্চতার নিরিখে বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে থাকে কোন মৌল, কোন যৌগ
একই কথা খাটে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লেও। সে ক্ষেত্রে বাড়ে জলের স্তর। নিচু এলাকা ভেসে যায়। বৃষ্টি হয় বেশি। মেঘ নীচে নেমে এলে, পাতলা হয়ে গেলে তো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমছে বলে ধরতে হবে। কিন্তু ২০০৬ সালে বিশিষ্ট ভারতীয় আবহবিজ্ঞানী বি এন গোস্বামীর গবেষণাপত্রই প্রথম দেখিয়েছিল, মধ্য ভারতে ‘একস্ট্রিম রেন’-এর প্রবণতা বাড়ছে। পাতলা মেঘ থেকে তো আর ভারী বৃষ্টি হতে পারে না। তার জন্য মেঘকে অনেক ঘন হতে হবে। তার উচ্চতাও বেশি হতে হবে।বাড়ছে খুব বেশি গরম ও খুব বেশি ঠাণ্ডার পরিমাণও।
পার্থসারথিবাবুর কথায়, ‘‘প্রশান্ত মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে, ক্যালিফোর্নিয়ায় বছরভর সমুদ্রপৃষ্ঠ ঠাণ্ডা থাকে। সেখানকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে থাকে অন্তত ২/৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। কানাডা, আলাস্কা সহ গোটা উত্তর আমেরিকার অবস্থাটা প্রায় সেই রকমই। এটাকে বলে ‘জোন অফ লো-ক্লাউড’। বাতাসে জলীয় বাষ্পের জোগান তখন কম হয় বলে মেঘ সেখানে পাতলা হয়ে য়ায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছে থাকা জলীয়। বাষ্প ঠাণ্ডায় জমাট বেঁধে জল হয়ে যায় বলে মেঘ সেখানে নীচে নেমে আসে। শীতে কুয়াশা পড়লে যা হয়। মেঘ শিশির হয়ে ঝরে পড়ে।’’
দেশের বিশিষ্ট আবহবিজ্ঞানী সুলোচনা গ্যাডগিলের কথায়, ‘‘মেঘেদের উজ্জ্বলতা কমছে বলে যে দাবি করেছেন গবেষকরা, সেটা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হচ্ছে। মেঘ সাধারণত থাকে বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর ট্রপোস্ফিয়ারে। মাটি থেকে তিন কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে। বর্ষার মেঘ অনেক বেশি ঘন হয়। উঁচুও। থাকে মাটি থেকে ১০/১২ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে। সেই মেঘ নীচে থাকলে তা আরেকটু বেশি কালো রংয়ের হবে। যেহেতু সেই মেঘ জলে ভরা (পড়ুন, জলীয় বাষ্প) থাকে। কিন্তু যত ওপরে উঠবে সেই মেঘ, তত বেশি ঠাণ্ডায় সেই জলীয় বাষ্প কণাগুলি জমে বরফ হয়ে যাবে। আর সেই বরফ কণাগুলি কেলাসের চেহারায় আটকে থাকবে সেই মেঘের মধ্যে। আর তার ওপর সূর্যের আলো পড়ায় তা আরও বেশি করে প্রতিফলন ঘটাবে। ফলে, সেই মেঘগুলিকে অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। তেমন ঝকঝকে উজ্জ্বল মেঘ কিন্তু আগের চেয়ে কমই দেখা যাচ্ছে এখন। হতে পারে, মেঘ ততটা ওপরে উঠছে না, যতটা ওপরে উঠলে তাকে বেশি ঝকঝকে দেখায়। তা বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সাইক্লোনের মেঘ যেমন মাটি থেকে আরও অনেক বেশি উঁচুতে উঠতে পারে। ১৫ কিলোমিটার উচ্চতাও ছুঁয়ে যায় কখনও কখনও। মানে, দু’টো এভারেস্ট শৃঙ্গকে একে অপরের ওপর বসালে যতটা উঁচু হয়, ততটাই!’’
মেঘ কি উষ্ণায়নের কারণ হয়ে উঠতে পারে?
পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজি’র প্রাক্তন তদারকি অধিকর্তা রাঘবেন্দ্র কৃষ্ণণ বলছেন, ‘নাসার এই গবেষণা মাত্র ১৫ বছরের পর্যবেক্ষণের ফলাফল। আবহাওয়া, জলবায়ু সম্পর্কে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে অন্তত ১০০ বছর লাগে। কম করে ৩০ বছরের হিসেব নিলেও কিছুটা কাছাকাছি পৌঁছনো যায় কোনও সিদ্ধান্তের। কম্পিউটারে সিম্যুলেশন করে কৃত্রিম ভাবে মেঘেদের গতিবিধি খুব একটা বোঝা যায় না। তাই মেঘ সত্যি-সত্যিই উষ্ণায়নের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, তা এখনই সঠিক ভাবে বলাটা একটু মুশকিলই। তবে যে মেঘগুলি মাটি থেকে অনেক উঁচুতে থাকে আর অনেকটাই পাতলা হয় (সাইরাস ক্লাউড), বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরটা বেশি ঠাণ্ডা হয় বলে সেই মেঘগুলি ভরে থাকে বরফের কেলাসে। মনে করা হয়, এই মেঘগুলিই মাটিকে গরম করে তোলে। তাতিয়ে দেয়। কী ভাবে? ওই মেঘগুলিতে আসলে আটকে তাকে সৌর বিকিরণ। সেগুলিই তরঙ্গের মতো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। নীচে নেমে এসে মাটিকে তাতিয়ে দেয়। বরফের কেলাসে ভরা থাকে বলে সাইরাস ক্লাউড কিছুটা ঠাণ্ডা থাকলেও তার মধ্যে আটকে থাকা সৌর বিকিরণ তাকে বেশি ক্ষণ ঠাণ্ডা থাকতে দেয় না। মানে, বরফের কেলাসগুলি ওই মেঘকে যতটা ঠাণ্ডা করে, সৌর বিকিরণ তাকে তার চেয়ে অনেক বেশি গরম করে তোলে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ল না কমল, কতটা কমা-বাড়া হল, সে সব মাপার জন্য মেঘেদের উচ্চতা বাড়া-কমাটার ওপর নজর রাখাটা খুবই জরুরি। তাই আরও ১৫ বছর নজর রাখাটা জরুরি বলেই আমার মনে হয়।’’
আরও পড়ুন- বিগ ব্যাং-এর পরের সেকেন্ডে পৌঁছে কী দেখলেন বিজ্ঞানীরা?
উত্তর আমেরিকার যে এলাকাগুলিকে বলা হয় ‘লো-ক্লাউড জোন’
একই কথা বলেছেন মূল গবেষক রজার ডেভিসও।
কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ কুমার দাসের কথায়, ‘’১৫ বছরের হিসেবে চট করে কিছু বলা সম্ভব নয়, অন্তত আবহাওয়া, জলবায়ুর ক্ষেত্রে। আরও অন্তত ১৫ বছরের পর্যবেক্ষণ খুবই প্রয়োজন।’’
কেন বলা হচ্ছে, লা-নিনা, এল-নিনোর ওপর অনেকটাই নির্ভর করে মেঘেদের নামা-ওঠা?
পার্থসারথিবাবু বলছেন, ‘‘এটাকেই বলে ন্যাচারাল ভেরিয়াবিলিটি। লা-নিনায় প্রশান্ত মহাসাগরের চিলি, পেরু উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। আর এল-নিনোয় ঠিক তার উল্টোটা হয়। ফলে, লা-নিনা বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। আর তা কমলে মেঘ পাতলা হয়ে যাবে। নীচে নেমে আসবে। তাই হয়তো কোথাও কোথাও, কোনও কোনও বছরে মেঘ নীচে নেমে আসতে দেখেছেন গবেষকরা। আবার এল-নিনোর দরুন প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় মধ্য ভাগ পর্যন্ত টাইফুনের কবলে পড়লে ভারত মহাসাগর আর তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানে, মেঘ ওই সব জায়গায় জলীয় বাষ্পের অভাবে পাতলা হয়ে যায়।’’
মেঘ আসলে সময়ের নিরিখে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া! অল্প সময়ের ছোট্ট ‘ট্র্যাক’-এ তার মতিগতি বোঝাটা বড়ই দুষ্কর!
মেঘ সত্যি-সত্যিই আমাদের ওপর হামলে পড়ছে কি না, বলা যাবে আরও অন্তত ১৫ বছরের সময়সীমার ‘ট্র্যাক’-এ তাকে দৌড় করানোর পর!
তথ্য সহায়তা: ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজি, পুণে