আইনস্টাইন পাশ করলেন আরও এক কঠিন পরীক্ষা

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলে ‘রেড শিফ্ট’। কারণ, প্রতি সেকেন্ডে কম তরঙ্গ সৃষ্টি করে ছড়ালে আলো লাল রঙের দিকে এগোয়। 

Advertisement

পথিক গুহ

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০১:৪০
Share:

আবার পরীক্ষায় পাশ। এবং দারুণ রেজাল্ট। ছাত্রের নাম আলবার্ট আইনস্টাইন। বিজ্ঞানীদের তরফে সদ্য প্রকাশিত তথ্য জানাচ্ছে, ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরেও নক্ষত্রের আলো খবর দিচ্ছে আইনস্টাইনের ‘জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’ অক্ষরে-অক্ষরে ঠিক।

Advertisement

১০২ বছর আগে প্রকাশিত তাঁর তত্ত্বে বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন, প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় টান যে এলাকায় বিদ্যমান, সেখানে আলো প্রতি সেকেন্ডে কম তরঙ্গ সৃষ্টি করে ছড়াবে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলে ‘রেড শিফ্ট’। কারণ, প্রতি সেকেন্ডে কম তরঙ্গ সৃষ্টি করে ছড়ালে আলো লাল রঙের দিকে এগোয়।

মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে উপস্থিত এবং সূর্যের চেয়ে ৪০ লক্ষ গুণ বেশি ভারী এক ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘এস-টু’ নামের এক তারা ঠিক ওই রকম ঘটনার সম্মুখীন কি-না, তা জানার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। ওঁদের নেতৃত্বে ছিলেন জার্মানির গার্শিং-এ অবস্থিত ‘ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ফিজিক্স’-এর বিজ্ঞানী রেইনহার্ড গেনজেল। জার্মানির তো বটেই, ফ্রান্স, পর্তুগাল, সুইৎজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আমেরিকা এবং আয়ারল্যান্ডের কয়েকশো বিজ্ঞানী প্রায় তিন দশক ধরে ওই ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে ‘এস-টু’-র চলন লক্ষ করছিলেন চিলিতে অবস্থিত অবজারভেটরি থেকে।

Advertisement

গেনজেল আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রচণ্ড ভারী ওই ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে যখন ‘এস-টু’ ছুটছিল সেকেন্ডে ৭৬০০ কিলোমিটার বেগে, তখন তার আলো পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সে আলো লালের দিকে ঘেঁষে যাচ্ছে ঠিক ততটা পরিমাণে, যতটা ‘জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’তে আইনস্টাইন অনুমান করেছিলেন।

পৃথিবীর চারপাশে যেহেতু প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় প্রভাব নেই, তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুঁজতে হয়েছিল এমন এক ব্ল্যাক হোল, যা সূর্যের তুলনায় অনেক ভারী। এমন ব্ল্যাক হোল যে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে আছে, তা বিজ্ঞানীরা জানেন। আর দরকার ছিল, এমন এক নক্ষত্রের, যা ও রকম ভারী ব্ল্যাক হোলের পাশ দিয়ে যাবে। ‘এস-টু’ হল, সে রকমই এক তারা।

১৯৯০ সাল থেকে গবেষকেরা ওই তারার চলন লক্ষ্য করেছেন। দূর থেকে ব্ল্যাক হোলের কাছে এসে আবার দূরে চলে যাবে ‘এস-টু’। কাছে এবং দূরে, মহাকর্ষীয় টানের প্রভেদে কতটা বাড়ছে-কমছে, ‘এস-টু’ থেকে নির্গত আলোর লাল রঙের দিকে ঘেঁষা, তা পরীক্ষা করাই ছিল বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য।

এখনও শেষ হয়নি ওঁদের পরীক্ষা। চলবে আগামী মাসেও। তবে, ২৮ বছর ধরে পরীক্ষাতেও ‘জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’ যখন সসম্মানে পাশ করেছে, তখন কি আর তা কোনও দিন ভুল প্রতিপন্ন হবে? গেনজেল এবং তাঁর সতীর্থরা উড়িয়ে দিচ্ছেন তেমন সম্ভাবনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement