Food

Parsi Food: ঝাঁপ বন্ধ পার্সি ভোজের শতবর্ষ পেরোনো ঠিকানার

বন্ধ হয়ে গেল কলকাতা শহরে পার্সি খাবারের আদি ঠিকানা ‘মানেকজি রুস্তমজি পার্সি ধর্মশালা’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৫০
Share:

১৯০৯ সালে শুরু হয়েছিল যাত্রা। কলকাতা শহরে তখন প্রায় এক লক্ষ পার্সির বাস। অনেকেই ছিলেন শিল্পপতি-ব্যবসায়ী। ফাইল চিত্র।

সে কলকাতার অনেক কিছুই আজ আর নেই। সেই তালিকায় এ বছর যুক্ত হল আরও একটি নাম।

Advertisement

বন্ধ হয়ে গেল কলকাতা শহরে পার্সি খাবারের আদি ঠিকানা ‘মানেকজি রুস্তমজি পার্সি ধর্মশালা’।

কলকাতা ধর্ম আপন করে নেয় কি নেয় না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে খাদ্য আপন করে নিতে সময় নেয় না। কখনওই নেয়নি। সাহেবদের বিলিতি কাটলেট হোক, কি মোগলাই বিরিয়ানি-রেজালা। এ শহরের অলি-গলিতে নানা ধরনের খাবারের ঠিকানা ছিল। রেস্তঁরায় গিয়ে বাঙালি রান্না খাওয়ার চল অনেক পর হয়েছে এ রাজ্যে। কিন্তু রেস্তঁরায় যাওয়ার চল বহু কাল আগে থেকেই আছে। যেমন কোথাও গিয়ে চপ-কাটলেট খাওয়া হত, মানেকজি রুস্তমজিদের এই পার্সি খাবারের ঠিকানায় গেলে মিলত সল্লি চিকেন, চিকেন পোলাও ডাল, লাগান নু কাস্টার্ডের মতো খাবার।

Advertisement

মানেকজি রুস্তমজিদের পার্সি খাবারের ঠিকানায় গেলে মিলত সল্লি চিকেন, চিকেন পোলাও ডাল, লাগান নু কাস্টার্ডের মতো খাবার। প্রতীকী ছবি।

১৯০৯ সালে শুরু হয়েছিল যাত্রা। কলকাতা শহরে তখন প্রায় এক লক্ষ পার্সির বাস। অনেকেই ছিলেন শিল্পপতি-ব্যবসায়ী। সামাজিক দায়িত্ব পালনে পার্সিদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে সব সময়ে। বঞ্চিত হয়নি এ শহরও। এই ধর্মশালা তুলে ধরেছে সেই দায়িত্ববোধের দৃষ্টান্ত। দেড়শো বছরেরও বেশি আগে তিন পার্সি ব্যবসায়ী, মানেকজি রুস্তমজি, নওরোজি পেন্টনজি এবং কাওয়াসজি পেন্টনজি পার্সি বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করেছিলেন একটি ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্টের অধীনেই ছিল এই ধর্মশালা।

ধর্মশালার হেঁশেলটি বরাবরই কলকাতাবাসীর বেশ প্রিয়। সময়ের সঙ্গে নানা ধরনের পরিবর্তন এলেও মটন ধনসাক, পত্রানি মচ্ছির মতো সাবেকি সব পদ ধরে রেখেছিল কলকাতার মন। গত কয়েক বছর ধরে ধর্মশালার হেঁশেলের দায়িত্বে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব হানসোতিয়া দম্পতি।

ধর্মশালার হেঁশেলটি বরাবরই কলকাতাবাসীর বেশ প্রিয়। সময়ের সঙ্গে নানা ধরনের পরিবর্তন এলেও মটন ধনসাক, পত্রানি মচ্ছির মতো সাবেকি সব পদ ধরে রেখেছিল কলকাতার মন। ফাইল চিত্র।

এ কোনও রেস্তঁরা নয়। তাই পার্সি রান্না চেখে দেখতে হলে দু’দিন আগে ফোন করে জানাতে হত সেখানে। অতিথিদের পছন্দের সব রান্না সাজিয়ে বসে থাকতেন মেহের হানসোতিয়া। গত ৩ জানুয়ারি ধর্মশালা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমদাবাদে নিজেদের বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। সেখান থেকে ফোনে মেহের জানালেন, ট্রাস্টের অন্দরে কিছু অসুবিধার কারণে পার্সি আহারের সেই ঠিকানা বন্ধ করতে বাধ্য হলেন তাঁরা। মেহের বলেন, ‘‘আপাতত বন্ধই থাকছে ধর্মশালা। পরে সুযোগ-সুবিধা হলে নিশ্চয়ই আবার খোলার চেষ্টা হবে।’’

এ দিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কলকাতার খাদ্য-রসিকদের চোখে জল। কেউ মাঝেমাঝে সেখানে যেতেন, কারও বা যাওয়ার ইচ্ছা এখনও পূর্ণ হয়নি। তেমনই এক জন হলেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সুমন্ত্র সান্যাল। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিল পার্সি খাবার খাওয়ার। করোনা আবহের কারণে যাওয়া হচ্ছিল না। এ বার তো বুঝি আর ইচ্ছাপূরণ হবেই না!’’ আর এক খাদ্যপ্রেমী কলেজছাত্রী দিশা রায় এই খবরে রীতিমতো হতাশ। দিশা বলেন, ‘‘পার্সি খাবার আরও কিছু জায়গায় পাওয়া যায়। এখন তো পার্সি খাবারের সাজানো রেস্তঁরাও হয়েছে কলকাতায়। কিন্তু বো ব্যারাকের পার্সি ধর্মশালা ছিল অন্য রকম। পুরনো বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে বসে পার্সি রান্না খাওয়ার অভিজ্ঞতাই ছিল আলাদা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement