দক্ষিণ কলকাতার এক নামী স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন ভদ্রমহিলা। বছর ৩৫ বয়স। ভিতরে মেয়ের পরীক্ষা চলছে। একেবারে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাড়ি যাবেন। দু’ঘণ্টার পরীক্ষা। অনেক অভিভাবকই তাই বাড়ি ফেরেননি। স্কুলের বাইরে আড্ডা চলছে। কিন্তু ওই মহিলা যেন খানিকটা দলছুট। জ্বরে তাঁর গা পুড়ে যাচ্ছে। এ ভাবে কত ক্ষণ অপেক্ষা করবেন তিনি? আশপাশের অনেকেই সেই প্রশ্ন করছিলেন। ক্লান্ত স্বরে তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি ছাড়া কে রয়েছে ওর? আমাকেই তো করতে হবে।’ অনেকে ভাবলেন, মেয়েটির বাবা হয়তো কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। কেউ ভাবলেন, মহিলার স্বামী হয়তো মারা গিয়েছেন। সৌজন্যের বশে কৌতূহল প্রকাশ করলেন না কেউই। মিনিট কয়েক পরে মহিলা নিজেই জানালেন, মেয়ের এক বছর বয়সে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে তাঁর। বললেন, ‘বহু কষ্টে এই স্কুলে ভর্তি করাতে পেরেছি। বাবা নেই বলে কিছুতেই নিতে চাইছিল না। অন্য দিন আমি অফিসে থাকি। স্কুলের পর আয়ার কাছে মেয়ে। আজ আয়াও আসেনি। আর আয়ার ছুটি মানে আমারও অফিস ছুটি।’ কাছাকাছি কোনও আত্মীয় নেই, কিংবা প্রতিবেশী, যাদের কাছে মেয়েকে প্রয়োজনে কয়েক ঘণ্টা রাখা যাবে? কিংবা যারা মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে যাবে? ম্লান হাসলেন তিনি। বললেন, ‘আমার নিজের মা, ভাইরাই আছে। কিন্তু ওরা বলে দিয়েছে মেয়েকে একা বড় করার জেদ যখন দেখিয়েছি, তখন দায়িত্বের পুরোটাই আমাকে নিতে হবে। কেউ সাহায্য করবে না।’
এখন ‘সিংগল’ মায়েদের নিয়ে নানা আলোচনা চলছে চারপাশে। এই শহরেই শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছায় ও একার দায়িত্বে সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সাহস দেখাচ্ছেন কেউ কেউ, শুধু পৃথিবীতে আনা নয়, সেই মাতৃত্বকে রীতিমতো উদ্যাপনও করছেন তাঁরা। সে সব দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, এতটাই কি সহজ হয়ে গিয়েছে সব কিছু? এত মসৃণ আজ একলা-মায়েদের চলার রাস্তাটা? আমাদের এই সমাজ রাতারাতি এতটা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেল যে, কারও স্বাধীন ইচ্ছাকে তারা প্রশ্নহীন ভাবে মর্যাদা দেবে?
স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মায়ের ম্লান, ক্লান্ত মুখ দেখে সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। সন্তানকে একা পৃথিবীতে আনার ইচ্ছা তো দূরের কথা, পরিস্থিতির চাপে পড়ে সন্তানকে একা মানুষ করার সিদ্ধান্তকেও স্পর্ধা বলে মানার মজ্জাগত অভ্যাস কি এত তাড়াতাড়ি বদলানোর? যাঁরা স্বেচ্ছায় সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকছেন, সেই সব ‘স্বেচ্ছা-সিংগল’ অভিভাবকদের কি সত্যিই বরদাস্ত করে নিচ্ছি আমরা?
আসলে, বহু দিন পর্যন্ত ‘সিংগল পেরেন্ট’ বলতেই কোনও উদ্বিগ্ন মহিলার করুণ মুখটা সবচেয়ে আগে মনে হত। স্বামীর মৃত্যুর পরে বা স্বামী অন্য মহিলার সঙ্গে চলে যাওয়ার পরে সন্তানকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একলা মা! গল্প-উপন্যাস-সিনেমার চেনা প্লট। এ ক্ষেত্রে তবু সমাজ সহানুভূতি দেখাতে রাজি থাকে। কিন্তু স্বামী মারা যাননি, বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দেননি এক ছাদের তলায় থাকার মতো যথেষ্ট বনিবনা হচ্ছে না বলে যাঁরা সন্তান নিয়ে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের বরদাস্ত করা এখনও বেশ কঠিন, অনেকের কাছেই।
সেই কবে নিজের দায়িত্বে সন্তানকে পৃথিবীতে এনে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন নীনা গুপ্ত। সুস্মিতা সেনও একার দায়িত্বে দুটি মেয়ে দত্তক নিয়েছেন। কখনও কখনও আবার কোনও পুরুষকে ভালবেসে নয়, স্পার্ম ব্যাংক থেকে শুক্রাণু নিয়ে সন্তানকে পৃথিবীতে আনছেন তাঁরা। সেই বৃত্তান্ত নিঃসংকোচে সকলকে জানাচ্ছেনও। এঁরাও সিংগল মাদার! তবে এঁরা সমাজে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। হাজারও দুশ্চিন্তার ছাপ কপালে ফেলা ম্লান মুখের মা নন, এঁরা ঝলমলে, হাসিখুশি। যখন যেমন সমস্যা আসবে, তখন সে ভাবে তার মোকাবিলা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু এটা কি ওপরের মোড়ক? না কি ভেতরেও? সত্যি সত্যি ভেতরেও ঝলমলে ভাবটা ধরে রাখতে পারেন ক’জন? যাঁরা ‘সেলেব্রিটি’ নন, তাঁদের কাছেও কি পথটা এতটা সহজ?
স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিদেশ থেকে একমাত্র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় ফিরেছিল একটি মেয়ে। শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে এখন সে ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। ছেলে তার প্রাণ। কিন্তু তার কাজটাকেও সে ভীষণ ভালবাসে। ভালবাসে রাত জেগে পড়াশুনো। বন্ধুদের সঙ্গে দেদার আড্ডা। কিন্তু মেয়েটিকে রোজ বিকেল তিনটের মধ্যে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতে হয়। কারণ, তার ছেলেকে স্কুলবাস তখনই নামিয়ে দিয়ে যায় ক্যাম্পাসে। খালি ফ্ল্যাটে তালা খুলে ঢুকবে ওই একরত্তি ছেলে? মায়ের বুক কাঁপে। তাই মা-ও চলে আসে। ক্যাম্পাসে কুকুরদের খুব দৌরাত্ম্য। মা না থাকলে ছেলেটা ভয় পাবে তো! মায়ের তাড়াতাড়ি ফেরা নিয়ে কথা ওঠে কলেজে। কিন্তু মা নিরুপায়। মায়ের কাজের স্বীকৃতি আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ভিন রাজ্য থেকে নানা সেমিনারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ আসে। কিন্তু কী ভাবে যাবে সে ছেলেকে ফেলে? বেশির ভাগ সময়েই তাই যাওয়া হয় না। কারণ একটাই, তার কোনও ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ নেই।
আর এক জন একলা-মায়ের কথা জানি। বেসরকারি সংস্থায় উঁচু পদে চাকরি করে। বাড়ি, সন্তান, অফিস এটাই জীবন। কোনও দিন হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও গেছে সে। সেখানে তুমুল আড্ডা চলছে। বন্ধুরা তড়িঘড়ি প্ল্যান ছকে ফেলছে, রাতটা সেখানেই থেকে যাবে। তারও খুব ইচ্ছা হয় থাকতে। কত, কত দিন তো সে এমন নির্ভেজাল আড্ডার স্বাদ পায়নি... বাড়িতে তার মা রয়েছেন। মেয়ে না ফিরলে সানন্দে সেই রাতটা নাতির দেখাশোনার দায়িত্ব নেবেন তিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সে নিজের মন বদলায়। ভাবে, ‘বাড়িতে ছেলেটা থাকতে আমি এখানে থেকে যাব, আমি কি খুব স্বার্থপর মা হয়ে যাচ্ছি?’ ভাবে, ‘আমি তো নিজের সিদ্ধান্তে ওকে নিয়ে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ও যাতে বাবার অভাব অনুভব না করে, সেটা দেখার দায়িত্বও তো আমার।’
এঁদের জীবনে যখন অন্য কোনও পুরুষ আসেন, তখন পরিস্থিতিটা আরও জটিল হয়ে যায়। কারও এতটুকুও অসুবিধে না ঘটিয়ে, কাউকে একটুও কষ্ট না দিয়ে, শুধু নিজের ভাল লাগার কিছু মুহূর্ত রচনা করতে গেলেই হাজার অপরাধবোধ এসে ছেঁকে ধরে। সব সময় যে বাইরের কেউ পিছন থেকে টেনে ধরে তা নয়। অনেক সময়েই বাধাটা আসে নিজের মনের ভিতর থেকে।
শুধু মেয়েরা নয়, স্বেচ্ছায় সিংগল-পেরেন্টের জীবন বেছে নেওয়া পুরুষও আছেন আমাদের চারপাশে। তাঁদের অসুবিধাটাও কোনও অংশে কম নয়। বাবা-মা’র ছাড়াছাড়ি হলে ছেলে বা মেয়ে যাঁর কাছে থাকে, তাঁর দায়িত্ব এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যায়। একাধারে বাবা এবং মা দুই-ই হয়ে ওঠার জেদ থাকে। নিজের কাছে নিজে হেরে গেলে চলবে না। প্রতি দিন মনে মনে এটা আওড়াতে আওড়াতে দিনটা শুরু করেন তাঁরা। সিংগল পেরেন্টহুড-এর এই চাপ নিজেরাই নিজেদের মানতে বাধ্য করেন। ‘সুপারড্যাড’ বা ‘সুপারমম’ হওয়ার বাসনা অজান্তেই তাঁদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে।
বিকল্প পথে একক পিতৃত্বও চাইছেন অনেকে। যেমন অনেক আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর মেয়ে বিয়ে নামের সম্পর্কে জড়াতে চায় না, অথচ সন্তান চায় তাদের জন্য আছে স্পার্ম ব্যাংক, তেমনই, ডিম্বাণু নিয়ে সারোগেট মাদারের সাহায্যে বাবা হচ্ছেন পুরুষরাও। এক বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসকের চেম্বারে এসেছিলেন ভদ্রলোক। কিছুটা আড়ষ্ট। একা-একাই নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। চেম্বারে তখন বহু মহিলার ভিড়। সন্তানহীনতার সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা প্রায় সকলেই। অধিকাংশের সঙ্গেই তাঁদের স্বামীরা এসেছেন। শুধু ওই ভদ্রলোক যেন দলছুট।
চেম্বারে ডাক পড়তে ডাক্তারকে নিজের চাহিদাটা বুঝিয়ে বললেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে বিয়েতে আগ্রহীও নন। কিন্তু তাঁর সন্তান চাই। সন্তানের ‘বায়োলজিক্যাল ফাদার’ হওয়ার জন্য তিনি চান কোনও দাতার ডিম্বাণুর সঙ্গে তাঁর শুক্রাণু নিষিক্ত করে তৈরি হোক ভ্রূণ। তার পরে তা প্রতিস্থাপিত হোক কোনও সারোগেট মায়ের গর্ভে।
ডাক্তার হতবাক। এমন প্রস্তাব তাঁর জীবনে প্রথম। ভদ্রলোককে অনেক বোঝালেন তিনি। ‘সিংগল ফাদার’ হওয়া যে মুখের কথা নয় তা নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু ভদ্রলোক অনড়। এর বছর দেড়েক পর ভদ্রলোকের সঙ্গে ফের দেখা। ওই ডাক্তারের চেম্বারেই। কোলে একরত্তি শিশু। সে দিন অবশ্য ডাক্তারের সাংবাদিক সম্মেলন চলছিল। ওই ‘একক পিতা’-কে নিয়েই!
সে দিন ফেসবুকে এক বাবা-মেয়ের ঝলমলে হাসিমুখের বেশ কিছু ছবি দেখছিলাম। জানুয়ারির শেষে টানা কয়েক দিন ছুটির আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করেছেন তাঁরা। কখনও বাড়িতে অলস দুপুরে লুডো খেলে, কখনও ভাল রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ খেয়ে, আবার কখনও মেয়েকে পার্লারে নিয়ে গিয়ে তার মেক ওভার-এ ব্যস্ত থেকে। ছবিগুলো খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, একটা পরিপূর্ণ পরিবারের ছবিই দেখছি। বাবা-মেয়ের সংসার, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু আপাত ভাবে সেই সংসারে কোনও ‘ইমোশনাল’ অভাববোধ চোখে পড়েনি। ফেসবুকে দেখা সেই বাবা কিন্তু দিব্যি মেয়েকে ছুটির দিনে রান্না করেও খাওয়াচ্ছেন, খেলছেন, সিনেমা দেখছেন আবার মেয়ের রূপচর্চাতেও সাহায্য করছেন।
সমস্যা হল, দুই-এর বদলে তিন নন বলে তাঁদের হয়তো কোনও অভাববোধ নেই। কিন্তু সেই অভাববোধ তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমাদের চারপাশে ‘উদ্যোগী’ লোকজনেরও অভাব নেই।
সমাজে একক বাবা-মায়েরা সংখ্যায় আগের চেয়ে বাড়ছেন। কিন্তু আমরা বদলাচ্ছি কি? বাবা এবং মা নয়, বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জন রয়েছেন জেনেও কি বাচ্চাকে ডেকে আমরা হামেশাই জানতে চাই না অন্য জনের কথা? একটি মেয়ের কথা জানতাম, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, ছেলেকে নিয়ে একাই থাকে সে। বাড়িতে কোনও আত্মীয়/ বন্ধু/ পরিচিত পুরুষ এক বারের জায়গায় দু’-তিন বার এলেই প্রতিবেশীরা অনেকে বাচ্চাটাকে ডেকে জানতে চাইত, ‘লোকটা কে রে? তোর নতুন বাবা?’
আমাদের এখানে সমালোচনার জন্য যত মানুষ মুখিয়ে থাকেন, সাহায্যের জন্য বাড়ানো হাত তার একশো ভাগের এক ভাগও নেই। যে শিশুদের বাবা কিংবা মা নেই, তাদের ডেকে এনে সেই ‘নেই’-এর কারণ বিশ্লেষণ করার জন্য সময় আছে অনেকের। কিন্তু তাদের সঙ্গে খানিকটা সুস্থ সময় কাটানোর মানুষ বড় কম।
নেই অন্য পরিকাঠামোও। ডে-কেয়ার সেন্টার বিকেল ফুরোতেই বন্ধ হয়ে যায়। চাকরি-করা মা অফিস থেকে প্রাণপণে ছুটতে ছুটতেও সেখানে সময়মত পৌঁছতে পারেন না। অফিসের আশপাশে ক্রেশ চালু করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গালভরা আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে ওঠে না। পান থেকে চুন খসলে চারপাশের লোকেরাই বলেন, ‘এতটুকু সংযম নেই, তবু এত বড় দায়িত্ব নিতে গেল!’ বলেন, ‘মা-বাবার জেদে বাচ্চাটা একটা সুস্থ জীবন পেল না।’
কোনটা সুস্থ জীবন? কোন পরিবার আদর্শ? তা কে ঠিক করে দেবে? পরিবারের সংজ্ঞাটাই তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। পরিবার মানে একটা বাড়িতে বাবা-মা-সন্তানের হাসিমুখের ছবিই হতে হবে, এমন কথা কি এখন নিশ্চিত করে বলা যায়? ‘সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে’ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানান অনেক দম্পতি। বাবা-মা আলাদা হয়ে গেলে নাকি সন্তানের জীবনে ঝড় নেমে আসবে... এক ছাদের নীচে থেকে, প্রতি দিন বিশ্রী, কর্কশ ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে সম্পর্কটা যাচ্ছে যখন তার নীরব সাক্ষী থাকার সময়ে ওই সন্তানের মনের মধ্যে কী চলে, তা কেউ ভাবছে? একক অভিভাবকের কাছে থাকার অভিজ্ঞতার চেয়ে এই জীবন তার কাছে আরও দুর্বিষহ কি না, সে কথা তার কাছে কেউ জানতে চায় না।
ইদানীং স্কুলের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ-এর ক্লাস নিয়েও বিব্রত হচ্ছেন বহু একক-অভিভাবকই। একটা বাড়িতে পাশাপাশি দাঁড়ানো বাবা-মা-বাচ্চার ছবি দেখিয়ে যখন পরিবারের ধারণাটা বোঝানো হয়, তখন এই একক বাবা-মায়েদের সন্তানদের চোখ কি নিজের অজান্তেই ক্লাসরুমের জানলা দিয়ে অনেক দূরে চলে যায় না? ক্লাসে তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসা ছেলে বা মেয়েটি যখন তিন জনের ছবি আঁকছে, তখন নিজের আঁকা দুজনের ছবি লুকিয়ে ফেলতে চাইছে বহু শিশুই। বাড়ি ফিরেও সে কিছু বলতে চাইছে না। গুমরে থাকছে। তার পরিবার যে একটা ‘স্বাভাবিক’ পরিবার নয়, তা তার মাথায় ঢোকানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছেন আমাদের চারপাশের মানুষরাই।
কবে এই ‘স্বাভাবিকত্ব’-র ধারণা থেকে বেরবো আমরা? আদৌ বেরবো কি?
somatitas@gmail.com