‘কৃষ থ্রি’ সিনেমায় হৃতিক-কঙ্গনা। তখন নাকি প্রেম ছিল। এখন শুরু হয়েছে আইনি আকচাআকচি।
ক ঙ্গনা রানাউত ব্রেক-আপের পর নাকি ১৪৩৯টা ই-মেল করেছেন হৃতিক রোশনকে। এ তো ই-মেল ই-মেল নয়, ই-মেলা! মেলাই ই-মেল আর কী! কঙ্গনা ই-মেল করে গেছেন আর হৃতিক সময় মতো সেগুলো মিডিয়ার কাছে ফাঁস করে দিয়েছেন। ১৪৩৯টা ই-মেল? এক একটা ই-মেলে যদি ২৫০ শব্দও ধরে নিই, তা হলে হেসেখেলে লাখ চারেক শব্দ। বাহাদুরির ব্যাপার মশাই। জীবনে একটা পর্বে এসে বাঙালি লেখক যে কোনও লেখাকে শব্দসংখ্যা দিয়ে বিচার করে। ১৫০০/২০০০ শব্দ মানে কভার স্টোরি, ছোটগল্প। ৫০,০০০ মানে পুজো সংখ্যার উপন্যাস। আর ৪ লক্ষ মানে? সটান ধারাবাহিক। মাসে দুটো করে কিস্তি হলে, দু’বছর টানা মানুষের অন্দরমহলে খাওয়ার টেবিল থেকে বিছানা অবধি ঘুরে বেড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা। মানে অনেক অনেক গভীর পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলা! তা, যখন এতটাই গভীর খনন, তখন তাকে কেন বলব না— এ হল হৃতিকের প্রতি কঙ্গনার বিরহ-সম্পাত? হলই বা সেগুলো ‘হেট মেল’, হলই বা ‘অ্যাবিউসিভ’?
সে একটা সময় ছিল যখন আমরা সবাই দেখেছি ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে প্রেমের আগেই প্রেমের বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে আছে বিরহ! প্রেম তো সব সময়ই বিরহ থেকে দূরে থাকতে চায়, কিন্তু বিরহ?
তার সমস্ত শরীর ভেজা, চুল থেকে জল পড়ছে, তার খয়েরি চেকশার্ট, তার হাত ফসকে গেল বাসের হ্যান্ডেল থেকে। তার কোনও প্রণয়তৃষা নেই, ভ্যালেন্টাইন’স ডে নেই, তার কোনও হলিডে রিসর্ট নেই, সে শুধু প্রেমের পিছু নেয়। সে প্রেমের প্রেমিক।
কিন্তু ইদানীং বিরহকে আর কোথাও তেমন দেখা যায় না। শেষতম টেক্সট’টা ঢুকেছে ফোনে, মেয়েটা পিঠ বেঁকিয়ে অফিসে নিজের কিউবিক্লের মধ্যে ছটফট করতে করতে খুলে পড়ছে সেই টেক্সট। তার স্যান্ডেল ছিঁড়ে যাচ্ছে রিভলভিং চেয়ারের চাকায়, কিন্তু তার কাঁধের ওপর দিয়ে মুখ বাড়াচ্ছে না কোনও বেদনা, যা বিরহের চেহারা নিতে পারত শিগগিরই। প্রেম ছিল হয়তো, কিন্তু প্রেমের কমিটমেন্টগুলো ছিল না। এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ল, প্রেম করাকে আজকাল বলে ‘যাওয়া’?
বছর ছয়েক আগের কথা। এক দিন আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট একটা মেয়ে এসে বলল, ‘জানো, আমার দাদাভাই না একটা পঞ্জাবি মেয়ের সঙ্গে যাচ্ছে!’
‘যাচ্ছে’? শুনে আমার ভেতরটা যেন দুলে উঠল। যাচ্ছে মানে কী? দুজন, একটি ছেলে, একটি মেয়ে, তারা পরস্পরের হাত ধরে দূর থেকে দূরের গ্রহান্তরের দিকে একটা স্রোতের মধ্যে দিয়ে আপন মনে ভেসে চলে যাচ্ছে? যেন সেই চলে যাওয়ার কোনও শেষ নেই, থমকে যাওয়া নেই। কিন্তু তার পরই চারিদিকে ‘যাচ্ছে, যাচ্ছে’ শুনে বুঝতে পারলাম এ যাওয়ার অর্থ প্রেম করা। প্রেমেরই ঘটনা, কিন্তু প্রেমের যাবতীয় ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ-কে এয়ারপোর্টের আন-অ্যাটেন্ডেড লাগেজের মতো ফেলে রেখে দিয়ে যাচ্ছে বলে— তার ঘাড়ের ওপর কেউ আজকাল আর প্রেমের চিরাচরিত মাহাত্ম্যের বোঝাটা চাপিয়ে লজ্জা দিতে চাইছে না। তাই ব্রেক-আপের টেক্সটটা ভাল করে পড়ে ওঠার আগেই সজোরে এসে আমাদের এই মেয়েটির মাথার মধ্যে ধাক্কা মারছে অপমান। ‘...এত প্রেম এত সাধ করে অপমান!’
অপমান শব্দটাই তখন ফ্ল্যাশ করছে বার বার মেয়েটির মনে! আস্তে আস্তে সমস্ত মন পুড়ে যাচ্ছে অপমানে। দোলের দিন বিকেলে পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকা সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর রাস্তা ধরে সেই হাতে হাত দিয়ে হেঁটে যাওয়াটা তখন মনে হচ্ছে—
‘...হাড়কৃপণ একটা, সেই বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাঁটিয়েছে, ছুটে গিয়ে একটা ট্যাক্সিও ধরতে জানে না। আর রোজ মানিব্যাগ ফেলে আসা কি আমি বুঝি না, এমন হাড়হাভাতে এক দিনও একটা ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল না। রেস্টুরেন্টের বিল তো দিতাম আমি? জীবনে কেলভিন ক্লাইন পরেছে? আরমানি মেখেছে? সব আমি দিয়েছি।’ এ সবই যে মেয়েটি মনে মনে বলছে, না-ও হতে পারে। ফোন করে বলতেও পারে কমন বন্ধুকে! তখন অপমানই পথ দেখাচ্ছে। ফলে হিট ব্যাক উইদ হেট্রেড। তবু এত কিছু সত্ত্বেও ভাবতে ভাল লাগে, ‘কঙ্গনা মাস্ট হ্যাভ বিন মিসিং হৃতিক ব্যাডলি, ইউ সি?’ কারণ আমিও কি এ রকম করিনি কখনও? ব্রেক-আপের সাত মাস পর হঠাৎ মাঝরাতে ওকে লিখে পাঠাইনি নাকি, ‘তোমার সর্বনাশ হোক!’
এখন, এই ‘আমি’ মানে কিন্তু আমিও হতে পারি, আপনিও হতে পারেন। যে কোনও লেখা লিখতে বসে বন্দুকের নল নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে নেই। কিন্তু কিছু কিছু লেখকের কলমে অভিশাপ থাকে। যা আড়াল করলেই ভাল হত, তা-ই লিখে ফেলতে তার কলম তাকে উসকানি দেয়। যে লেখা লেখার আগেই নিষিদ্ধ হয়ে বসে আছে তা-ই সে পা টিপে টিপে গিয়ে লিখে রেখে আসে। যেই ব্রেক-আপের ওপর আমার কাছে লেখা চাওয়া হল, আমার মনে হল আমার ব্রেক-আপ’গুলো না লিখলে চলে?
তবে আমাদের সময়ে ব্রেক-আপ
টেক-আপ বেশ যাত্রাপালার মতো ছিল— এ কথা আপনাকেও মানতে হবে। ক্ল্যারিনেট বেজে উঠল, মধ্যমঞ্চ থেকে গলা কাঁপিয়ে এমন কিছু বলা হল যা বেশ মনে গেঁথে যায়। প্রেম চুকেবুকে গেলেও মনে একটা দাগ রেখে যাওয়ার চেষ্টা! অথচ এখন এই স্লিম ফিট মননের যুগে সবই খুব সাট্ল। সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে গেল, কিন্তু কেউ কিছু বুঝতেই পারল না। শুধু হোয়াট্সঅ্যাপের প্রোফাইল পিকচারটা থেকে অন্য জনকে ঘ্যাচাং ফু! সঙ্গে স্টেটাস’টা চেঞ্জ করে ‘সিংগল, রেডি টু মিংগল’ লিখে দিলেই হয়ে গেল।
আমার জীবনের অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা অভিজ্ঞতা খুবই ইউনিক। সেটা হল, যাকে বলা যায়, ‘দু’মাসের প্রেম, কিন্তু ছাব্বিশ বছরের ব্রেক-আপ!’
সে প্রেম ছিল আমার পনেরো-ষোলোর ‘বাসস্টপে তিন মিনিট’। কিংবা ‘লাইব্রেরির মাঠে এক ঝলক’। পাড়ার যে বাচ্চাটাকে আমি খুব ভালবাসি, কোলে নিয়ে ঠাকুর দেখাই, ও সেই বাচ্চাটাকেই আদর করলে, ফাইভ স্টার দিলে যে প্রেমটা হয়, সেই প্রেম। দু’মাস পর আমার অন্য কাউকে ভাল লাগল। কিন্তু ১৯৯০ থেকে ২০১৬, ঝনঝন ঝনঝন সেই ব্রেক-আপের শব্দ আজও আমাদের দুজনের জীবনে, আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনের মধ্যে শুনতে পাওয়া যায়। শুনতে পাওয়া যায় পাড়ার সেলুনে, শুনতে পাওয়া যায় অল্পবয়সিদের আড্ডায়। এমনকী আমার উনিশ বছরের ছেলেকে পর্যন্ত চকোলেট-ব্রাউনির মতো দেখতে কিন্তু আসলে অভিমানে পাথর হয়ে যাওয়া সেই ব্রেক-আপের সামনে সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়াতে হয়। ‘মা, জানো তো, ভীষণ আপসেট ছিল। আর কোনও দিন তোমার সঙ্গে কথা বলবে না বলেছে। আমি বলেছি, আরে ফরগেট অ্যাবাউট দ্যাট গার্ল। এখন সে তো এক জন মধ্যবয়স্কা মহিলা। নো চার্ম লেফ্ট। ভীষণ খিটখিটে।’
একটা কোনও দিন কথা না বলার প্রতিজ্ঞা থেকে আর একটা কোনও দিন কথা না বলার প্রতিজ্ঞা। ছাব্বিশ বছর ধরে একটা প্রেম ভাঙছে!
কঙ্গনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্রেক-আপের পর নিজের ডিগনিটিটা ধরে রাখার শিক্ষা আমাদের অনেকেরই নেই। সম্পর্ক উজাড় হয়ে গেছে, কিন্তু সারা জীবনে তৃতীয় পক্ষের কাছে একটা বিরুদ্ধ-বাক্য উচ্চারণ করেনি— এ রকম লোক আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। অনেকেরই সফিস্টিকেশনের মুখোশ এ সব সময় খুলে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। ব্ল্যাকমেলিং, থ্রেট্নিং, নোংরা নোংরা টেক্সট, বাড়িতে হানা, অফিসে হানা, চেনা পরিচিতের মধ্যে বদনাম করা— এ সব তো খুব কমন ব্যাপার। উলটোটাও করে অনেকে। খুব মিস করে, মন থেকে ব্রেক-আপটা মেনে নিতে না পেরে বার বার যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে, জন্মদিনে উইশ করে, গিফ্ট কিনে পাঠায়, ফেসবুকে গিয়ে বার বার এক্স-এর প্রোফাইল চেক করে। দেখে, এক্স তাকে আনফ্রেন্ড করার করুণাটুকুও দেখায়নি। নতুন এক জনের সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর ছবি পোস্ট করেছে!
দু’ক্ষেত্রেই আসলে মানুষ নিজের দিকেই ছুড়ে মারে ভাঙা কাচ। রক্তাক্ত হয়। এক বিখ্যাত বাঙালি লেখক এক বার এ রকম এক প্রেমিকার পাল্লায় পড়েছিলেন। লেখক যে তাকে আর চান না, তা সেই মেয়েটি কিছুতেই মানবে না। সে তখন নিজেকে বনলতা সেন ভাবছে, নীরা ভাবছে, ভাবছে জাঁ দুভাল। লেখক তাকে কিছুতেই কাটাতে পারেন না। সে অফিস যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। বাসে চড়ে অফিস অবধি যায়। শেষ অবধি লেখকটি শরণাপন্ন হলেন নিজের স্ত্রীর। অতঃপর তাঁর স্ত্রীই তাঁকে পাহারা দিয়ে অফিসে দিয়ে-আসতে নিয়ে-আসতে, দু’দিন চার দিন পর, আবার বাসস্ট্যান্ড ফাঁকা হয়ে গেল।
অসংখ্য সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে যে গেছে, তার কাছে হয়তো একটা প্রেমের ভেঙে যাওয়া মানে সামান্য একটা টালমাটাল, দুটো নিদ্রাহীন রাত, দু’মিনিটের জন্য ব্যালকনি থেকে শরীর ঝুলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু সত্যিকারের প্রেমের অপমৃত্যু হলে মানুষ ঠিক কী করবে, তা সে নিজেও জানে না। প্রথমে আসে আত্মহত্যার ইচ্ছে। তার পর খুন করতে ইচ্ছে হয়। এ দুটোর পর আসে প্রতিশোধস্পৃহা। এক জন সাধারণ প্রেমিক এগুলোর বদলে শেষ অবধি যেটা করে সেটাই অবশ্য সবচেয়ে মর্মান্তিক। তার মধ্যে আত্মহত্যা খুন প্রতিশোধ সব আছে।
সেই প্রেমটাকে ভুলতে সে যখন অন্যের হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দেয় সম্পূর্ণ অসাড় একটা মন নিয়ে, যখন সে অন্যের কণ্ঠলগ্ন হয়ে মুখের দিকে তাকায় আর কাউকেই দেখে না এমনকী প্রাক্তনকেও নয়, দেখে শুধু নিজেকে, দেখে কী ভাবে অপচয় হল ভালবাসার, বুকের দেউটির সব আলো চাপা দিল কেউ, হৃদয়ের সোনার ফসলে ধস লাগল, তখনই খুন, আত্মহত্যা প্রতিশোধ সব নেওয়া হয়ে যায় তার, আর ব্রেক-আপের পর এই একটাই জিনিস মানুষ এত নিঃশব্দে করে যে, কতিপয় দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কেউ সে সবের খবর রাখে না।
এক প্রিয়তম কবির গল্প দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই। মেয়েটির সঙ্গে ফাইনাল ছাড়াছাড়ির পর কবি আমাকে ফোন করলেন। বললেন, ‘আমি ওকে চলে যেতে দিলাম, কিন্তু শোনো, আমি তো ওকে ছাড়া বাঁচব না। মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। চার মিনিট সাতাশ সেকেন্ড পর একটা ট্রেন ঢুকবে। আমি ঝাঁপ দেব। দেখো এই মধ্যচল্লিশে আমার সমস্ত সামাজিক ব্যর্থতার ওপর ও একটা বুনো ফুল হয়ে ফুটেছিল। এই সুড়ঙ্গ থেকে আমি আর বেরব না।’
সে দিনের সেই কথোপকথন আমার সম্পূর্ণ মনে আছে। তখন দুপুর তিনটে। সাড়ে চার মিনিট সময়ে এক জন কী-ই বা করতে পারে? বললাম, ‘ঠিক আছে। শুধু এটুকু বলুন, তার পরের ট্রেনটা কখন?’
বললেন, ‘মিনিট দশেক পর।’
ভাবলাম, হাতে একটু সময় পাওয়া গেল অন্তত। বললাম, ‘আপনি যখন আমাকে ফোন করেছেন, তখন আমার দু’-একটা কথা আপনাকে শুনতে হবে!’
চুপ করে রইলেন। বললাম, ‘একটু সরে এসে দাঁড়ান।’
কেঁদে ফেললেন। ‘তুমি কী করে জানলে আমি খুব কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম?’
বললাম, ‘আচ্ছা এই ছেড়ে বাঁচতে না পারার মানে কী? এর মধ্যে একটা সময়ের মাত্রা আছে না?’
‘যে সময়টায় আর ও নেই! চলে গেছে। আর কথা বলা যাবে না, আর ফোন আসবে না, দেখা হবে না!’ বললেন উনি।
‘সে তো একটা বড় সময় সামনে। আপনি কি আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা বাঁচতে পারবেন ওকে ছাড়া?’
‘আমি কি ছেলেমানুষ, সঙ্গীতা? তুমি আমায় বুঝ দিচ্ছ?’
‘আপনি আমার কথা শুনুন। এক ঘণ্টা পর আমি ফোন করব।’
এক ঘণ্টা পর যখন ফোন করলাম, বললেন, অত ক্ষণ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো যায় না। লোকে সন্দেহ করে। তাই অফিসে ফিরে এসেছেন। বললাম, ‘এক ঘণ্টা দিয়েছেন, আর এক ঘণ্টা দিন।’
সে দিন প্রতি ঘণ্টায় ফোন করেছিলাম। পরের তিন-চার দিন কখনও চার ঘণ্টা, কখনও আট ঘন্টা পর পর। সাত দিন পর বললেন, ‘আর পারছি না। কত দিন দেখিনি।’
‘আর সাতটা দিন, প্লিজ!’
সাত দিন সাত দিন করে সাত বছর কেটে গেছে। কবির জীবনে সেই প্রেমের আর কোনও চিহ্ন নেই এখন। কোনও হ্যাংওভার নেই। মাঝে যা হয়, একটা পরদা পড়ে যায়। কেউ আমরা আর সেই প্রেমটার কোনও উল্লেখও করি না এমনকী একান্ত আলাপচারিতায়। শুধু আমি জানি, ‘ছেড়ে বাঁচতে না পারা’-র মধ্যে থেকে এক ঘণ্টা দু’ঘণ্টা করে শুধু সময়ের ডাইমেনশন’টাকে ভেরিয়েব্ল করে দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছেদের পর মানুষের সামনে যে সময় পড়ে থাকে, তা অনন্ত ভেবেই মানুষ এত ভয় পেয়ে যায়। তখনই ছোট ছোট টুকরো করে ভাগ করে ফেলতে হয় ময়াল-দানব সেই সময়কে। যাতে ‘আর কোনও দিন দেখা হবে না’-র বদলে মনে হয় ‘দেখা হবে, অচিরেই দেখা হবে’, হয়তো কাল, হয়তো পরশু...
amakekhujona@gmail.com