বিচারের বাণী ফ্যাঁচফ্যাঁচ

বললে কেউ বিশ্বাস করবেন না, বছর দুই পেরিয়ে গেলেও তরুণ তেজপাল কেস-এ প্রকৃত অর্থে বিচার শুরুই হয়নি। টিভির প্রাইম টাইমে হুল্লোড় হয়েছে গুচ্ছের, ফাস্ট-ট্র‌্যাক কোর্টে দ্রুত বিচারের ঢক্কানিনাদে কানে তালা, সাত মণ তেল পুড়েছে, কিন্তু শ্রীরাধিকা নাচেন নাই। রায়-টায় তো দূরস্থান, এখনও এক জন সাক্ষীরও সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:০৩
Share:

বললে কেউ বিশ্বাস করবেন না, বছর দুই পেরিয়ে গেলেও তরুণ তেজপাল কেস-এ প্রকৃত অর্থে বিচার শুরুই হয়নি। টিভির প্রাইম টাইমে হুল্লোড় হয়েছে গুচ্ছের, ফাস্ট-ট্র‌্যাক কোর্টে দ্রুত বিচারের ঢক্কানিনাদে কানে তালা, সাত মণ তেল পুড়েছে, কিন্তু শ্রীরাধিকা নাচেন নাই। রায়-টায় তো দূরস্থান, এখনও এক জন সাক্ষীরও সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।

Advertisement

এত দেরি কেন? কারণ খুবই সিম্পল। বিচারের শুরুতে অভিযুক্তের পক্ষ থেকে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রতিলিপি চাওয়া হয়েছিল। সিসিটিভির ফুটেজ আর সেলফোনের ক্লোন কপি ঝটপট দিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেত। কিন্তু সব ঘি-ই অত সোজা আঙুলে উঠে গেলে পাগলা খাবে কী। তাই প্রথমে পুলিশ ইত্যাদিরা বার বার ‘যা দিয়েছি ওতেই হবে, আবার কী চাই’ জাতীয় হাবভাব দেখিয়ে নানা আদালতে চাপাচাপি করেন। ভাবখানা এ রকম, যেন, ন্যায়বিচার একটি খেলনা, আদালত মামার বাড়ি, তদন্তকারীরা ভগবান, তাঁরা যাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন সে-ই অপরাধী, এ নিয়ে আর সময় ব্যয় অনর্থক। এ হেন ফিল্মি হিরোর মতো হাবভাব আর টালবাহানায় সুপ্রিম কোর্টে চিঁড়ে না ভেজায়, অবশেষে সরকারি ‘এক্সপার্ট’রা জানিয়েছেন, সেলফোনের প্রতিলিপির উপায় তাঁদের জানা নেই। অতঃপর সম্পূর্ণ ট্র‌্যাফিক জ্যাম। সাক্ষ্যপ্রমাণ অভিযুক্তকে দেওয়া যাচ্ছে না, সে বস্তু অভিযুক্তরা না পেলে বিচারও শুরু করা যাবে না, অতএব ন্যায়বিচার বিশ বাঁও জলে, তাড়াতাড়ি শুরু হওয়ার বিশেষ চান্স নেই।

আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কেস যতই হাই প্রোফাইল হোক, ইন্ডিয়া যতই শাইন করুক, ভাবগতিক তো পৌরাণিক আমলের। সবই হয় অপদার্থতার চারণভূমি, নয় গয়ংগচ্ছ, হচ্ছে-হবের কারবার। সিস্টেমটি চমৎকার। এখানে লাখে লাখে কেস জমা পড়ে থাকে আদালতের গোলচক্করে। এক দিকে দাপুটে দাদারা স্রেফ অভিযোগকারীর নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েই নাকের-জলে-চোখের-জলে করে ছাড়তে পারেন। অন্য দিকে ছিঁচকে চুরির অপরাধে অভিযুক্ত, দোষী হলেও যার মেরেকেটে কয়েক মাস সাজা হতে পারে, জেলের ভিতর ‘বিচারাধীন’ হয়ে বসে থাকে বছরের পর বছর। ব্যাটারা উচ্চ আদালতে যায় না কেন? যে জন্য ফরাসি বিপ্লবের আগে চাষার ব্যাটারা রুটির অভাবে কেক খেতে পারত না, অবিকল একই কারণে। ন্যায়বিচার জিনিসটা খেতে ভাল হলেও মোটেই সস্তা না, উকিল ভাড়ার খচ্চা প্রচুর।

Advertisement

সিস্টেম এ রকমই। হাই-প্রোফাইল কেসেও অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। ব্যবস্থা এমনই যে, ইউনিভার্সিটির অঙ্কের মাস্টার দুয়ে দুয়ে যোগ করতে কনফিউশনে পড়লে নির্ঘাত চাকরি যাবে, কিন্তু যে দেশ মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠাচ্ছে, তার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা একটা সেলফোনের বিষয়বস্তুর প্রতিলিপি বানাতে নাকানিচোবানি খাবেন, এবং তার পরেও ‘এক্সপার্ট’ তকমা সহ কলার তুলে ঘুরে বেড়াবেন। আর বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে একটু ফাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে নেবে। প্রথামাফিক এই কেস এখন অনায়াসে দু-দশ বছর চললেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

bsaikat@gmail.com

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement