ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

অচেনা স্রোত

কস্তুরী ফোনে প্রিয়তোষকে জানায়, সে কাটোয়া থেকে একটু ভেতরে একটা স্কুলে পড়ায়, বাড়ি ভাড়া করে থাকে। সে সন্ধের পর লেখালিখি করে, আগের রাতে হ্যারিকেনের আলোয় একটা গল্প লিখছিল, একটা জায়গায় আটকে গিয়েছে।

Advertisement

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৪০
Share:

ছবি: পিয়ালী বালা

পূর্বানুবৃত্তি: হৃষিতার গিটার নেই, তাই রৌনক নিজের একটা গিটার ওকে দিতে চায় বাড়িতে প্র্যাকটিসের জন্য। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়, রৌনক গিটার বাজিয়ে ‘রিমঝিম গিরে সাওন’ গাইতে থাকে। কস্তুরী ফোনে প্রিয়তোষকে জানায়, সে কাটোয়া থেকে একটু ভেতরে একটা স্কুলে পড়ায়, বাড়ি ভাড়া করে থাকে। সে সন্ধের পর লেখালিখি করে, আগের রাতে হ্যারিকেনের আলোয় একটা গল্প লিখছিল, একটা জায়গায় আটকে গিয়েছে।

Advertisement

Advertisement

ঠিক বলেছেন। আমারও এ রকম হয়। হয়তো একটা জিনিস ভেবে লিখতে আরম্ভ করলাম, তার পর লেখাটা কখন যেন নিজের খাতে বইতে আরম্ভ করে। লেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিজেই যখন পড়ি, আশ্চর্য হয়ে যাই, এ ভাবে ঘটনাটা আমি ভাবতে পারলাম কী ভাবে?’’

‘‘আচ্ছা, তুমি বললে এখন যে গল্পটা তুমি লিখছ, সেটায় আটকে গিয়েছ। এ রকম হলে তুমি কী কর কস্তুরী?’’

‘‘যতটুকু লিখেছি, সেটুকুই বারবার পড়ি। একা বাড়িতে থাকি তো, তাই জোরে জোরে পড়ি। আটকে যাওয়া শেকলটা একটা সময় ঠিক
ছিঁড়ে যায়।’’

চোখটা চকচক করে উঠল প্রিয়তোষের। বাইরে ঝাপট দেওয়া বৃষ্টির মধ্যেও যেন একটা দিশা দেখতে পেলেন। বললেন, ‘‘চমৎকার। তোমার গল্প যেখানে বেরোবে, জানিও। আমি নিশ্চয়ই পড়ব।’’

কস্তুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘‘আপনি আর আমি? কী যে তুলনা করেন! আমার গল্প কোথাও কোনও দিন বেরোবে কি না জানি না। আজকেও কোনও কাগজে বেরোয়নি। আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি।’’

‘‘না না। আশা ছেড়ো না। লিখে যাও। দেখবে, ঠিক একটা রবিবারের সুন্দর সকালে তোমার গল্প বেরোবে কোনও না কোনও কাগজে।’’

কস্তুরী শুকনো হাসল, ‘‘আমি আপনার কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। আপনি যে ভাবে উৎসাহ দেন! আচ্ছা, আমাকে একটা সাহায্য করবেন? আমার যে গল্পটা আটকে গিয়েছে, একটু শুনবেন? একটু সময় হবে আপনার?’’

উৎসাহী গলায় প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই! বলো।’’

গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে কস্তুরী বলতে শুরু করল, ‘‘প্রথমেই বলি, এই গল্পটা আমি আপনার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখতে আরম্ভ করেছি। ট্রামের বদলে ট্রেন। একটা ছোট্ট রেল স্টেশন। একই সময় একটা আপ ট্রেন আর একটা ডাউন ট্রেন যায়। একটা ছেলে আপ ট্রেনটায় যায়। আর একটা মেয়ে ডাউন ট্রেনটায়। দু’জনের মধ্যে আলাপ নেই। কিন্তু উলটো দিকের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছেলেটা রোজ মুগ্ধ হয়ে মেয়েটাকে দেখে। ভীষণ ইচ্ছে করে মেয়েটার সঙ্গে আলাপ করতে। শেষ পর্যন্ত এক দিন ঠিক করে মেয়েটার প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলবে।’’

প্রিয়তোষ তারিফ করলেন, ‘‘বাহ্‌! খুব সুন্দর। তার পর?’’

‘‘এইখানেই আটকে গিয়েছি। মানে, এ রকম হতে পারে। ওদের আলাপটা হল। সে দিন ছেলেটা মেয়েটার সঙ্গে উলটো দিকের ট্রেনটায় উঠে পড়ল। গল্পটা এগোবে। কিন্তু অদ্ভুত একটা কারণে গল্পটা এখানে যেন লাল সিগনালে আটকে আছে।’’

‘‘কেন?’’

‘‘চরিত্রগুলোর নাম ঠিক করে দিতে পারছি না। ওই যে আপনি বললেন না, চরিত্ররা গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যায়! চরিত্র মানে কয়েকটা নাম। ছেলেমেয়েদু’টোর নাম ঠিক করে না দিতে পারলে গল্পটা আর এগোনো যাবে না। আমার যে ক’টা নাম মনে পড়ছে, সেটা কোনও না কোনও গল্পে ব্যবহার করে ফেলেছি। আমার ছাত্রছাত্রীদের নামগুলো দিয়ে ভাবলেই ওদের ছায়া চলে আসছে। আপনি একটু চরিত্রগুলোর নাম দিয়ে দেবেন?’’

প্রিয়তোষ যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছেন। বললেন, ‘‘মেয়েটার নাম শ্রীতমা হলে তোমার লাল সিগনালটা কি সবুজ হবে কস্তুরী?’’

‘‘শ্রীতমা,’’ কস্তুরীর গলায় খুশি ফুটে উঠল, ‘‘খুব সুন্দর নাম! শুনলেই মনে হচ্ছে শান্ত, ধীময়ী।’’

প্রিয়তোষের যেন সম্বিৎ ফিরল। যে শ্রীতমার নামটা স্বল্প ক্ষণের পরিচয়ে তিনি মনে রেখেছেন, তার চরিত্র মোটেই কস্তুরীর মানসপটে আঁকা ছবির মতো শান্ত, ধীময়ী নয়। তা ছাড়া মেয়েটা সামাজিক সম্পর্ককে গ্রাহ্য করে না। কোনও যুক্তি নেই, শুধু মন বলছে, কস্তুরীর গল্পের নারীচরিত্রটার মধ্যে বেশ একটা পবিত্রতা আছে। শ্রীতমা! নামটা ব্যবহার না করার জন্য ভেতর থেকে কে যেন সাবধান করে উঠল। প্রিয়তোষ তাড়াতাড়ি বললেন, ‘‘শ্রীতমা নয়, আমি আর একটু ভাল নাম মনে করার চেষ্টা করি।’’

‘‘না না। আমার শ্রীতমাটাই বেশ মনে হচ্ছে।’’

নাম। নাম। নামে কী এসে যায়? শেক্সপিয়র জুলিয়েটের মুখে প্রশ্নটা করিয়েছিলেন, হোয়াট’স ইন আ নেম? গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তার সুবাস একই থাকে। প্রিয়তোষ মাথা ঝাঁকালেন। শেক্সপিয়র যা-ই বলে থাকুন না কেন, গল্প লিখতে গেলে গল্পের শীর্ষনামের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রের নামগুলোও যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, বুঝতে পারলেন। এক-একটা নাম যেন এক-একটা অচেনা স্রোত। যে গল্পগুলো লিখতে লিখতে লাল সিগনালে আটকে আছে, মনে হচ্ছে, চরিত্রগুলোর ঠিকঠাক নাম দিতে পারলে তরতর করে এগিয়ে যাবে। কিন্তু মনের মতো নাম কোথায় পাবেন?

নাতিটা যখন হল, তখন সুতপা একটা চটি বই কিনেছিল। বাচ্চাদের হরেক নাম। ছেলে, মেয়ে, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান। সুতপা মনের মতো নামগুলোর পাশে টিক দিয়ে রাখত। ‘আর্য’ নামটা খুব পছন্দ ছিল সুতপার। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাচ্চার নামটা রোশনিই রেখেছিল। রেহান। ইন্টারনেটে নাকি হাজার হাজার নামের ওয়েবসাইট আছে। সেখান থেকেই রোশনি বার করেছিল নামটা। সুতপা একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিল। বইটার আর প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু কয়েকটা সুন্দর সুন্দর নাম ওতে দাগ দেওয়া ছিল। সুতপা বইটা ফেলে দিয়েছিল কি? এ বাড়িতে কি বইটা নিয়ে এসেছে?

বই-ভর্তি চারটে প্যাকিং বাক্স এখনও খোলা হয়নি। খাটের তলায় আছে। বাক্সগুলো খোলার কথাও না। প্রিয়তোষের মতোই বাক্সগুলোরও অস্থায়ী ঠিকানা এই ফ্ল্যাট। বাক্সগুলো মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে এ ভাবেই ফেরত যাওয়ার কথা। প্রিয়তোষ খাটের তলা থেকে বাক্সগুলো একটা একটা করে বার করে খুলে বইটা খুঁজতে থাকলেন।

এক মেঝে বই ছড়িয়ে থাকতে দেখে ঝর্না মুখ গম্ভীর করে বলল, ‘‘আমার কিন্তু ঝাঁট দেওয়া হয়ে গেছে। আর ধুলো পরিষ্কার করতে পারব না।’’

ঝর্নার কথায় কর্ণপাত করলেন না প্রিয়তোষ। ঘরময় বই ছড়িয়ে আঁতিপাঁতি করে চটি বইটা খুঁজতে থাকলেন। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলেন না। একটা হতাশা গ্রাস করল। ছড়িয়ে থাকা বইগুলো আর প্যাকিং বাক্সে গুছিয়ে তুলে রাখার উৎসাহ পেলেন না। আজ রবিবার, কলেজ স্ট্রিটে সব বইয়ের দোকান বন্ধ। না হলে এখনই কলেজ স্ট্রিট চলে যেতেন। ছটফট করছে মনটা। ইন্টারনেটে হাজার হাজার নামের ভিড়ের ডেটাবেস নয়, একটা বই চাই। যার পাতায় পাতায় ছাপানো থাকবে মুক্তোর মতো এক-একটা নাম।

হঠাৎ মনে হল, কাছের শপিং মলটায় একটা ঝাঁ-চকচকে বইয়ের শো-রুম আছে। সব বই র‌্যাক থেকে পেড়ে নিজের হাতে দেখা যায়। যদিও ইংরেজি বই-ই বেশি, কিন্তু হরেক কিসিমের বই রয়েছে। নামের বই নিশ্চয়ই ওখানে পাওয়া যাবে। আর দেরি করলেন না। মানিব্যাগটা পাঞ্জাবির পকেটে ভরে ফোল্ডিং ছাতাটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলেন।

লিফ্‌টের সামনে এসে থমকে গেলেন প্রিয়তোষ। মুখোমুখি দু’টো লিফ্‌ট, তার একটাতেও আলো জ্বলছে না। সুইচটা কয়েক বার টেপাটিপি করেও কোনও ফল হল না। অন্য সময় হলে ফ্ল্যাটেই ফিরে যেতেন। কিন্তু এখন মনের মধ্যে অদ্ভুত এক তাড়না। বইটা কিনতেই হবে। এগারো তলা বড় কম উঁচু নয়। তবে ওঠা তো নয়। নামা। সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকলেন প্রিয়তোষ।

কয়েকটা তলা নেমে একটু হাঁপ ধরল। হাঁটুতে অল্প ব্যথাও হতে শুরু করল। যুক্তি দিয়ে ভাবার চেষ্টা করলেন। আবেগতাড়িত হয়ে কাজটা ঠিক হচ্ছে কি? বইটা কিনে আনার পর তখনও যদি লিফটটা ঠিক না হয়, এতগুলো তলা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠবেন কী ভাবে?

ঠিক তখনই একটা বন্ধ দরজার এক পাশে চোখে পড়ল একটা জিনিস। একটা ছাতা। কী আশ্চর্য ছাতাটার রং! হালকা বেগুনির মধ্যে গাঢ় লাল রঙের জংলা ফুল। ‘অপেক্ষা’ গল্পটার সঙ্গে অবিকল এ রকম একটা ছাতাই এঁকেছিলেন শিল্পী। প্রিয়তোষ অদ্ভুত আকর্ষণে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন ছাতাটার দিকে। তার পর বন্ধ দরজাটার সামনে পা দু’টো থেমে গেল। দরজার ও পারে গিটার বাজিয়ে একটা ছেলে অপূর্ব গলায় গান করছে, ‘যব ঘুঙ্গরো সি... বাজতি হ্যায় বুন্দে... আরমান হামারে... পলকে না মুন্দে... ক্যায়সে দেখে সপ্‌নে নয়ন... সুলগ সুলগ যায়ে মন...’

প্রিয়তোষ মোহিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। এমন সময় পাশের ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলে বেরিয়ে এলেন এক জন। ইনিও মুখচেনা, তবে আলাপ নেই। ভদ্রলোক অবশ্য চেনা-অচেনার ধার ধারলেন না। প্রিয়তোষকে দেখেই বলতে শুরু করলেন, ‘‘দেখেছেন তো, কী সাউন্ড পলিউশন! আপনিও পারছেন না তো ফ্ল্যাটে থাকতে? দিন নেই রাত নেই যখন-তখন জগঝম্প বাজছে। মাঝরাতেও ঘুমোতে পারছি না। আমার ছেলেটার সামনের ফেব্রুয়ারিতে আইএসসি। এ রকম আওয়াজে পড়াশোনাটা করবে কী ভাবে বলুন তো?’’

প্রিয়তোষ কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক গজগজ করতে করতে কলিং বেলটা টিপে দিলেন।

হাতের তাসগুলো সাজিয়ে নেওয়ার পর সোমনাথ বিশ্বাসের ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠল। সেন্টার টেবিলে তিনটে একশো আর একটা পঞ্চাশ টাকার নোট অ্যাশট্রে চাপা দেওয়া আছে। টাকাগুলো দেখে সোমনাথের মনে হল, সময়ের অপেক্ষা। ওগুলো নিজের বুকপকেটেই ঢুকবে। গত রবিবার দু’শো হেরেছিলেন। আজ সেটা পুষিয়ে লাভই থাকবে। নীহার সরখেলের কাছে জুয়ার দেনাটা অনেকটাই শোধ দিয়ে দেওয়া যাবে।

তাসগুলো গুটিয়ে উলটে রেখে বিয়ারের মগে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘ওহ্‌! গেল রোববারের ক্যাঁচালের গল্পটাই তো বলা হয়নি!’’

অতনু পাল নিজের তাসগুলোর ওপর থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন, ‘‘ভাই সোমনাথ! এক ডজন গপ্প তো এসে থেকে বলে দিয়েছ। এখন আবার আসল গপ্প ফেঁদে মনঃসংযোগ গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কেন?’’

‘‘বেশ, তা হলে এই রাউন্ডটার পরেই বলছি।’’

নীহার সরখেল বললেন, ‘‘বলেই ফেলো। তবে বিশ্বকর্মাপুজোর দিনে খাস গল্প না হলে তোমার পরের কোটার বিয়ারটা আমরা তিন জনে খাব। কী বলো হিমাংশু?’’

হিমাংশু কিছু বলে ওঠার আগেই সোমনাথ গলা চড়ালেন, ‘‘বউদি!’’

শ্রাবন্তী বললেন, ‘‘আসছে, আসছে। ডিপ ফ্রাইয়ে বসিয়েছি।’’

‘‘আরে ডিপ ফ্রাই ছাড়ুন। আগে শুনে যান। আপনার সিরিয়ালের চেয়েও ইন্টারেস্টিং গল্প।’’

শ্রাবন্তী অ্যাপ্রনের পকেট থেকে হ্যান্ড-টাওয়েলটা বার করে হাত মুছে ড্রয়িংরুমের দিকে আসতে আসতে বললেন, ‘‘আবার নিশ্চয়ই আপনার কোনও বোকা-বোকা গল্প। আগের বারেরটায় একটুও হাসি পায়নি। আপনারা কিন্তু মলয়কে নিয়ে যা-তা ইয়ার্কি মেরেছেন। হাজার হোক ও আমার ভগ্নিপতি।’’

নীহার সরখেল নিচু গলায় মন্তব্য করলেন, ‘‘খাসা নাম দিয়েছ। সানডে স্পেশাল লোকাল ট্রেন। রবিবার হলেই বউ আর বাজার। যাচ্ছে আর আসছে, যাচ্ছে আর আসছে।’’

সবাই হেসে উঠল। সোমনাথ বললেন, ‘‘এই এলিফ্যান্টা হাউজিং সোসাইটিতে সানডে স্পেশাল একটাই নয় দাদা। আরও স্পেশাল আছে। গত রোববার সেই নিয়েই তো কী ক্যাঁচাল কী ক্যাঁচাল।’’

শ্রাবন্তী বললেন, ‘‘তাড়াতাড়ি বলুন। মাছটা বেশি ফ্রাই হয়ে গেলে তেতো হয়ে যাবে।’’

‘‘আরে, প্রেমলীলা ধরা পড়েছে!’’

‘‘ও মা, তাই! কোথায়?’’ শ্রাবন্তী সোৎসাহে জিজ্ঞেস করলেন।

‘‘বলছি। জানেন তো, টাওয়ার‌-এ’তে গত রোববার মেনটেনেন্সের জন্য একসঙ্গে দু’টো লিফ্‌টই বসিয়ে দিয়েছিল এগারোটা থেকে?’’

সৌমিত্র দত্ত বললেন, ‘‘মনে আছে। পয়েন্টটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। লিফ্‌টের মেনটেনেন্স তো ওয়ান বাই ওয়ান হওয়ার কথা। এ রকম হলে তো মুশকিল! আমার ফ্ল্যাট তেরো তলায়। তা ছাড়া রবিবার কোনও মেনটেনেন্স করার কথাই নয়!’’

সোমনাথ বললেন, ‘‘তা হলে আর বলছি কী! যত দিন ওরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখবে, এ রকমই চলবে। একটা হাফ-ডে প্রাইভেট কলে দু’টো মেনটেনেন্স করাবে। একসঙ্গে বসাচ্ছে।’’

শ্রাবন্তী বলে উঠলেন, ‘‘এই যদি আপনাদের ইন্টারেস্টিং গল্প হয়, আমি কিচেনে চললাম।’’

সোমনাথ বিশ্বাস তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, ‘‘আরে না না। আপনি বসুন না একটু বউদি। প্রেমলীলার গল্প বলছি। হৃষিতাকে চেনেন তো?’’

‘‘কে বলুন তো?’’

‘‘আরে ডক্টর বিকাশ বাগচীর মেয়ে।’’

সৌমিত্র দত্ত বিয়ারের মগ হাতে তুলে মন্তব্য করলেন, ‘‘মেয়েটা সেক্সি আছে। কী ফিগার!’’

নীহার সরখেল চোখ বড় বড় করলেন, ‘‘ভায়া, আস্তে। বিকাশ বাগচী শুনতে পেলে অ্যানাসথেসিয়া না দিয়ে তোমার চোখদু’টো উপড়ে নেবে।’’

শ্রাবন্তী বিরক্ত হয়ে উঠলেন, ‘‘আহ্‌! ওকে বলতে দাও না। বলুন তো সোমনাথদা!’’

সোমনাথ বিয়ারের মগে আর একটা লম্বা চুমুক দিলেন, ‘‘আরে টাওয়ার-এ’র নাইন বি’তে এক ছোকরা থাকে। সে নাকি গিটার-ফিটার বাজায়। রবিবার করে কিছু ছাত্রছাত্রীও আসে। নাইন এ’তে মৃত্যুঞ্জয় কাঞ্জিলাল থাকে। কাঞ্জিলালের ছেলে সামনের বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। দিনে-রাতে পাশের ফ্ল্যাটে এত জোরে জোরে গানবাজনা হয়, ছেলেটা পড়াশোনা করতে পারে না। কাঞ্জিলাল ব্যাপারটা নিয়ে আগেও বলেছিল। আমি বলেছিলাম, দেখছি।’’

শ্রাবন্তী বললেন, ‘‘অ্যাই এক মিনিট। আমি মাছগুলো নিয়ে আসি।’’

অতনু পাল বললেন, ‘‘দেখছি ইজ দ্য মোস্ট ডিপ্লোম্যাটিক ওয়ার্ড। আমার ডিরেক্টর লোকটা চিরকাল দেখছি দেখছি বলেই কাটিয়ে গেল। কিছুই আর দেখে উঠতে পারল না।’’

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement