ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৭

অচেনা স্রোত

রৌনক মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। হৃষিতাও চুপ করে গেল। দু’জনের মধ্যে যেন থমকে আছে সময়।

Advertisement

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:৩০
Share:

ছবি: পিয়ালী বালা

পূর্বানুবৃত্তি: রেস্তরাঁয় প্রিয়তোষ জন্মদিনের কেক কাটেন। ঈপ্সিতা পাশের টেবিল থেকে রৌনক আর হৃষিতাকেও ডেকে আনে। ঈপ্সিতা পুরো ঘটনাটা ফেসবুক লাইভ করে। রৌনক হৃষিতাকে বাইকে চড়িয়ে বলে, আজ ওরা লাঞ্চ করতে রৌনকের মায়ের বাড়িতে যাবে। রৌনক বলে, সে হৃষিতার প্রেমে পড়েছে। হৃষিতা রৌনককে বোঝায়, সে একটু তাড়াতাড়িই একটা বন্ধুত্বকে সম্পর্কের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

Advertisement

হৃষিতা ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল, ‘‘কোথায় ফিরে যাব?’’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রৌনক বলল, ‘‘কেন? নিউটাউনে।’’

‘‘আর যে ভদ্রমহিলা তোমার কথায় সকাল থেকে রান্না করে বসে আছেন, তাঁর কী হবে?’’

খানিক ক্ষণ চুপ করে থেকে রৌনক বলল, ‘‘কিছু হবে না। বহু বছর ধরে তাঁর এটা অভ্যাস আছে। দিনের পর দিন প্রিয় মানুষের জন্য তাঁর প্রিয় পদগুলো রান্না করে অপেক্ষা করেছেন। লোকটা আসেনি। জাস্ট আসেনি। আসতে পারছে না বলে একটা খবর পর্যন্ত পাঠায়নি।’’

‘‘তুমি কি তাঁর থেকে বেটার কিছু? একই জিনিস তুমিও আজ তোমার মায়ের সঙ্গে করতে যাচ্ছ। ইউ আর টেকিং ইয়োর মাদার ফর গ্রান্টেড।’’

রৌনক চুপ করে থাকল।

হৃষিতা বলতেই থাকল, ‘‘আর কেন মায়ের কাছে যাচ্ছ না? আমার ওপর অভিমান হয়ে গেল বলে। অভিমান করে বললে, অসম প্রেমে পড়ে যাওয়া মানে বন্ধুত্বটাকেও হারানো। তুমি অসম শব্দটা বললে কেন জানতে পারি?’’

ঠোঁট টিপে রৌনক বলল, ‘‘আমি কোনও অভিমানের কথা বলিনি। এক জন পিতৃপরিচয় অস্বীকার-করা, চালচুলোহীন, স্টুডিয়োতে চাকরি করা মানুষের সঙ্গে এক জন উচ্চ বংশের, উচ্চশিক্ষিতা... সামাজিক ব্যবধান তো অস্বীকার করা যায় না।’’

হৃষিতা রেগে উঠল, ‘‘অসম! সামাজিক ব্যবধান! শেষ পর্যন্ত তুমিও! এই থার্ডক্লাস বাংলা সিনেমার পচা সেন্টিমেন্টের গল্পটা যে এক দিন তোমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে এটা আমি কখনও ভাবিনি রৌনক। তোমাকে অন্য রকম ভেবেছিলাম।’’

‘‘কী রকম?’’

‘‘একটু ফ্লার্ট করতে ভালবাস। জোভিয়াল। উইটি। গিটার বাজিয়ে দারুণ গান করো। ইউ হ্যাভ সো মেনি কোয়ালিটিজ। এনিওয়ে, চলো ওঠো। যাওয়া যাক।’’

হৃষিতা উঠে দাঁড়াতে রৌনক বলল, ‘‘প্লিজ আর একটু বসবে? তোমার কাছে কয়েকটা কথা কনফেস করতে চাই।’’

‘‘রৌনক প্লিজ। আমি আর কোনও সেল্ফ-পিটির গল্প শুনতে চাই না।’’

‘‘কোনও সেল্ফ-পিটির গল্প বলব না, কথা দিচ্ছি। আই উইল নট টেক মাচ অব ইয়োর টাইম।’’

‘‘হোয়াট ফর? আমাকে আরও বোঝাবে?’’

রৌনক একটু ছটফট করে বলে উঠল, ‘‘হয়তো আমার মনের ভেতর ট্রু ফিলিংসটা ক্যারেড অ্যাওয়ে হয়ে তোমাকে দুম করে বলে ফেললাম। কিন্তু অ্যাকচুয়ালি তোমাকে বলতে চাই, মায়ের কাছে তোমাকে কেন নিয়ে যেতে চাইছিলাম। প্লিজ!’’

হৃষিতা ভুরুটা অল্প কুঁচকে বসে পড়ল, ‘‘কেন?’’

‘‘অনেস্টলি স্বীকার করছি, খুব সেলফিশ একটা কারণে। তোমার মনে আছে, তুমি যে দিন প্রথম আমার ফ্ল্যাটে এসেছিলে, আমার ছাত্রদের সম্পর্কে তোমাকে কী বলেছিলাম? ওদের মায়েরা দু’জনই আমার মায়ের ছাত্রী। ওরা নিউটাউন সল্টলেক অঞ্চলে থাকে। ভবানীপুরটা দূর হয়ে যায়। ওরাই ধরেছিল, যদি রবিবার সকালগুলো বাচ্চাদু’টোকে এখানে কিছু শেখাতে পারি। আসলে ওরা কিন্তু নিজের থেকে আসেনি। মা’ই ওদের জোর করে পাঠিয়েছিল। রবিবার সকালগুলোয় ওরা যাতে আমার কাছে মিউজিক ক্লাস করে। আসলে আমার মা চায়, আস্তে আস্তে আমারও যেন ওই ফ্ল্যাটে একটা স্বাভাবিক জীবন হয়। মিউজিক, হইচই, মজা। আমি রাজি হয়েছিলাম। কারণ মা’কে আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, আমি খুব ভাল আছি। তার পর তুমি শিখতে এলে আমার কাছে। মা’কে বলেছি তোমার কথা। আজ মা’কে দেখাতে চেয়েছিলাম, আমার জীবনেও একটা সম্পর্কর কুঁড়ি ফুটেছে। আমি স্যরি।’

‘‘নিজেকে জাস্টিফাই করতে চাইছ? তুমি নিজেই আসলে খুব কনফিউজড রৌনক। কখনও ক্যারেড অ্যাওয়ে হয়ে বলছ, তুমি আমার প্রেমে পড়েছ। কখনও অভিমান করে বলছ অসম সম্পর্কে জড়াচ্ছ। কখনও ভেবেচিন্তে বলছ, তোমার মায়ের কাছে তুমি ভাল আছ বোঝাতে, কারও সঙ্গে তোমার একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে দেখাতে আমাকে ইউজ করছ।’’

রৌনক অসহায়ের মতো মাথা ঝাঁকাল, ‘‘সত্যি আমি কনফিউজড। তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারছি না, কী ভাবে আমি আমার জীবনে অনেক সমস্যার উত্তর তোমার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি। একটা ঘেঁটে-থাকা জীবন থেকে মুক্তি চাইছি।’’

হৃষিতা অসহিষ্ণু হয়ে বলে উঠল, ‘‘কে কাকে মুক্তি দিতে পারে রৌনক? তোমাকে আবার বলছি, তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না।’’

রৌনক আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, ‘‘মা সব জেনেও একটা সম্পর্ক তৈরি করে নিজের জীবনটাকে তিল তিল করে নষ্ট করে ফেলেছে। ছোটবেলা থেকেই প্রেম শব্দটা নিয়ে আমি ভীষণ সেনসিটিভ। কখনও রাগ হয়, কখনও ঘেন্না হয়, কখনও ভয় হয়। অথচ তুমি প্রথম যে দিন আমার বাড়িতে এলে, তোমাকে দেখে, তোমার কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল, জীবনটাকে তো এ ভাবেও শুরু করা যায়। যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময় থেকে মনের আসল ইচ্ছেটাকে অনুসরণ করে। যেমন তুমি গিটার শিখতে চেয়েছ। মনে হয়েছে, এ ভাবেই তো ওপ্‌ন স্ট্রিং থেকে একটা একটা মিঠে কর্ডে রিদ্‌ম ধরে ধরে জীবনটাকে ছন্দে ফিরিয়ে আনা যায়। এ ভাবেই তো জীবনে প্রেম একেবারে অন্য রকম মানে হয়ে আসতে পারে।’’

হৃষিতা মাথা ঝাঁকিয়ে নিচু গলায় বলল, ‘‘নিজে ঘেঁটে থাকলে, কনফিউজড থাকলে জীবনকে ছন্দে ফিরিয়ে আনা এত চট করে যায় না রৌনক। আগে নিজেকে কম্পোজ করো। ঠিক করো, নিজে কী চাও।’’

রৌনক মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। হৃষিতাও চুপ করে গেল। দু’জনের মধ্যে যেন থমকে আছে সময়। হৃষিতা আস্তে আস্তে বলল, ‘‘জীবন নিয়ে আসলে আমরা সবাই কমবেশি কনফিউজড। একটু আগে টেলর সুইফ্টের লাভ স্টোরির গানের কথাগুলো বললাম, সেই গানটাতেই পরে আছে, আই ক্লোজ মাই আইজ অ্যান্ড দ্য ফ্ল্যাশব্যাক স্টার্টস। আয়াম স্ট্যান্ডিং দেয়ার অন আ ব্যালকনি ইন সামার এয়ার… আমারও মাঝে মাঝে জীবনটাকে রিওয়াইন্ড করে আবার নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমরা পারি কি? হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের ফিরে পেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পাই কি? তখন নতুন বন্ধুদের মধ্যে সেই পুরনো বন্ধুদের খুঁজে বেড়াই। সে রকম বন্ধু পেলে, যার সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বের হাত ধরে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে, সেখানেও আমি খুব সতর্ক থাকি। নিজের চার দিকে একটা গণ্ডি টেনে রেখেছি। যখন বুঝি ভেসে সম্পর্কটার বাইরে চলে যাচ্ছি, আই চেক মাইসেল্ফ। আর এক বার একই ভুল করব না। সেই গণ্ডির মধ্যে কোথাও আমি তোমার মধ্যে আমার ছোটবেলার বন্ধুত্বের ছেলেমানুষি ফিলিংসগুলো পেয়েছিলাম।’’

কিছু ক্ষণ বাইরের দিকে চেয়ে এক সময় হৃষিতা বলল, ‘‘চলো উঠি। তোমার মা অপেক্ষা করছেন। আমার মনে হয় আজ আমাদের যাওয়া উচিত। তার পর কিছু দিন মেলামেশাটা বন্ধ থাক। সম্পর্কটাকে একটু স্পেস দেওয়া দরকার।’’

১৮

‘‘এ কী! এত বড় একটা এঁচোড়!’’ বাজারের থলিটা উলটে সেবন্তী চিৎকার করে উঠল।

মলয় চোখ গোল করে বলল, ‘‘শেপটা দেখেছ? ফাটাফাটি। একেবারে সাইজ জিরো হিরোইনের মতো।’’

‘‘এটা বলিউডের কোন হিরোইনের বডির মত শেপ? এটা তোমার ভুঁড়ির মতো শেপ। যাও এটা নিয়ে গিয়ে তোমার ভুঁড়ির ওপর লকেট করে ঝুলিয়ে রাখো।’’

মলয় বুঝতে না পেরে বলল, ‘‘ঝুলিয়ে রাখব মানে?’’

সেবন্তী গলাটা আর এক পরদা চড়াল, ‘‘ঝুলিয়ে রাখবে মানে, ঝুলিয়ে রেখে হাত বুলিয়ে পাকিয়ে কাঁঠাল করবে। তার পর ওই কাঁঠাল তোমার মাথায় ভাঙব। তোমাকে কত বার বলেছি গোটা এঁচোড় আনবে না! আগেও এক বার এনেছিলে, মনে আছে সে বার কপালে কী জুটেছিল?’’

শেষ কবে গোটা এঁচোড় এনে কী লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছিল, মনে করতে না পেরে মলয় বলল, ‘‘আরে এঁচোড় তো কিনতে চাইনি, তুমি লিস্টে লিখে দিয়েছিল ছাড়ানো মোচা। লিটনকে বলতে ও বলল, দাদা, রবিবার ছাড়িয়ে দেওয়ার একটু চাপ আছে। আর ক’দিন আগে এক বার বৃষ্টি হয়ে গেল না! মোচা সব পচে গিয়েছে। তার চেয়ে আজ এঁচোড়টা নিন। খাসা জিনিস। জাপানি কোয়ালিটি, চাইনিজ দাম। বউদিকে বলবেন মাখনের মতো পিস পিস করে কাটবেন আর কড়াইতে ছাড়বেন, কাটবেন আর ছাড়বেন। কচি পাঁঠার মতো খাবেন। আমারও দেখে বেশ মনে ধরে গেল। জানো, এঁচোড়টা যখন লিটন দিচ্ছে, রঘুবাবু জুলজুল করে তাকিয়ে ছিল। একটাই এ রকম এঁচোড় ছিল কিনা! আমি না বললেই খপ করে নিয়ে নিত। তুমি ছুরিটা দাও। আমি কেটে দিচ্ছি। এ আর এমন কী?’’

রান্নাঘরে সেবন্তীকে পাশ কাটিয়ে ছুরিটার দিকে এগোতেই সেবন্তী খুন্তিটা তুলে বলল, ‘‘একদম হাত দেবে না বলছি। যাও গিয়ে মেয়েটাকে পড়াতে বসাও। সামনের সপ্তাহে জিয়োমেট্রির ক্লাস টেস্ট আছে। পলিগনটা কিচ্ছু পারছে না। ক্লাস ওয়ার্কের খাতাটা দেখো গিয়ে। ইন্টার্নাল আর এক্সটার্নাল অ্যাংগলগুলো কিচ্ছু পারছে না। স্কুলের টিচারগুলো কী ছাতার মাথা বোঝায় কে জানে! তুমি একেবারে ধরে ধরে ভাল করে বুঝিয়ে দাও। এর পর আমি আর একটাও ভুল দেখতে চাই না।’’

‘‘ইন্টার্নাল অ্যাংগল?’’ মলয় ঢোক গিলে কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, ‘‘যাচ্ছি।’’ তার পরেই চোখটা চকচক করে উঠল, ‘‘আরে, আসল ব্যাপারটাই তো তোমাকে বলা হয়নি। এ দিকে তো পুরো একটা ঝিঙ্কু কেস হয়েছে। তোমার মনে আছে, তোমাকে বলেছিলাম সোসাইটির একটা কমিটি তৈরি হচ্ছে! ওই যে গো, সেই নীহারদা একটা কমিটি করছে আর তীর্থময় গাঙ্গুলি একটা পালটা কমিটি করার চেষ্টা করছে। আমাকে অবশ্য দু’পক্ষই...’’

সেবন্তী বিরক্ত হয়ে মলয়ের ওপর গলা চড়াল, ‘‘উফ, আবার অ্যাঁ-উঁ করে! ভূমিকাটা কম করে মোদ্দা কথা কিছু বলার থাকলে বলো, না হলে মেয়েটাকে গিয়ে পড়াতে বসাও।’’

‘‘সেটাই তো বলছি। পুরো ঝিঙ্কু কেস। দু’পক্ষ নীহারদার ক্লাবে বসে একটা গোপন মিটিং করেছে। সব নিজেদের মধ্যে সেটিং করে নিতে চায়।’’

‘‘তোমাকে তো ডাকেনি যথারীতি?’’

‘‘বেঁচে গিয়েছি বুঝেছ, ডাকেনি বলে বেঁচে গিয়েছি। এই এক হয় বুঝেছ, চারটে বাঙালির মাথা এক হলে রাজনীতি হয়। পলিটিকাল পার্টির ঝান্ডা ওড়ে। কাজের কাজ কিছু হয় কি?’’

‘‘বুঝেছি। তোমার কিছু বলার নেই। অ্যাঁ-উঁ করে যাচ্ছ।’’

‘‘না না, বলার আছে। শোভাবাজার ছেড়ে এ আমরা কোথায় এলাম গো! এ যে প্রেমের বৃন্দাবন! একটু চা’টা বসাও দেখি। মাথাটা খেলিয়ে তোমাকে সব ডিটেলসে বলি।’’

প্রেমের বৃন্দাবন শুনে সেবন্তী বুঝল, কিছু মশলা আছে। রবিবার সকালের বাজারটা আনার পর এক কাপ চা মলয়ের প্রাপ্য। চায়ের জল চাপিয়ে বলল, ‘‘টু দ্য পয়েন্ট বলবে।’’

একটা টুল টেনে নিয়ে রান্নাঘরের দরজার কাছে বসে মলয় বলতে শুরু করল, ‘‘নীহারদার পক্ষে সৌমিত্র দত্ত, অতনু পাল, হিমাংশু ঘোষ আর ওই হারামজাদা সোমনাথ বিশ্বাস। আমার সেই মাখন আর কোল্ড ড্রিংকের টাকাটা এখনও দেয়নি। বেমালুম মেরে দিল। দেবাঞ্জনবাবু বলছিলেন...’’

‘‘আহ্‌! টু দ্য পয়েন্ট কিছু বলবে কি?’’

‘‘সেটাই তো বলছি। একটু গুছিয়ে না বললে ধরতেই পারবে না সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো। বিপক্ষে তীর্থময় গাঙ্গুলি, রাজেশ মণ্ডল আর চিরঞ্জয় মজুমদার। ওদের পরদার পিছনে আবার পালের গোদা প্রদীপ বর্মন। নীহারদার দিকে অবশ্য আর এক জনকেও টেনে রেখেছে, প্রিয়তোষ চাটুজ্যে। তাকে আবার সে দিন মিটিং-এ রাখেনি কেন কে জানে। ভাল কথা, বিকাশ ডাক্তার আবার বলে দিয়েছে, ও এ সবের মধ্যে নেই। আসলে থাকবে কী করে? মেয়েটাকে নিয়ে যা কেচ্ছা রটেছে!’’

সেবন্তী অসহিষ্ণু হয়ে পড়ল, ‘‘তোমার ওই সিনেমার টাইটেল কার্ড মুখস্থ বলা ছেড়ে আসল ব্যাপারটা বলবে? আচ্ছা, জিজুর ক্লাবে মিটিং-এ দিদিভাই গিয়েছিল?’’

‘‘না, অল জেন্টস মিটিং।’’ ভারিক্কি গলায় মলয় বলল।

‘‘আর দিদিভাই আমাকে বলে, জিজুবাবু নাকি দিদিভাইকে ছাড়া ক্লাবে একটা পা’ও রাখে না। যাকগে, বলো।’’

‘‘সেই পুজোর কেস দিয়ে শুরু। নীহারদা নাকি প্রথমেই তীর্থময় গাঙ্গুলিকে চার্জ করেছে, কেন আপনি পুজো করার জন্য অবজেকশন দিয়েছিলেন? চিরঞ্জয় মজুমদার তাতে বলেছে, ও ভাবে কোনও পুজোর কমিটি না করে কয়েক জন মিলে সবার বাড়ি থেকে চাঁদা তুলে পুজো হয় নাকি? পাবলিক মানি।’’

‘‘উফ, হিস্ট্রিটা কমিয়ে লেটেস্ট কিছু হয়ে থাকলে বলো।’’

‘‘আরে হিস্ট্রি দিয়েই তো শুরু। সেই থেকেই তো লেটেস্ট ক্যাচাল। একটার পর একটা প্রেম আর তার মাঝে মাঝে ঝিঙ্কাচাকা ঝিঙ্কাচাকা অসির ঝনঝনানি। চা’টা দেখো না গো!’’

‘‘দিচ্ছি বাবা দিচ্ছি।’’ মলয়ের হাতে চা দিতেই সে স্বভাবমত ডিশে চা ঢালতে ঢালতে বলল, ‘‘হ্যাঁ, ঝুলি থেকে একটা একটা করে বেড়াল বেরোতে আরম্ভ করেছে। সিকিয়োরিটির কনট্র্যাক্টটা শুনলাম প্রদীপ বর্মন তীর্থময় গাঙ্গুলির সঙ্গে বসেই ঠিক করেছে। ওই কোম্পানিটা নাকি তীর্থময় গাঙ্গুলির কারখানাতে সিকিয়োরিটি সাপ্লাই করে। আমাদের সিকিয়োরিটির ছেলেগুলো নাকি সব পার্টি-করা সিন্ডিকেটের ছেলে। সেখান থেকেই কেসের শুরু।’’

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement