ছবি: পিয়ালী বালা
পূর্বানুবৃত্তি: নীহার সরখেলের বাড়িতে বিয়ার আর তাসের আড্ডায় সোমনাথ রসিয়ে রসিয়ে হৃষিতা আর রৌনকের প্রেম করার গল্প বলতে থাকে। লিফটে টুইটির দেখা হয় হৃষিতার সঙ্গে। টুইটি লুকিয়ে কুড়ি তলারও উপরের ছাদে যাচ্ছে, সেখানে টিটানের আসার কথা। টিটান টুইটিকে চমকে দেবে বলে লুকিয়ে ছিল, পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে টুইটিকে। ছাদের এক পাশে বসে দু’টি অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে কথা বলতে থাকে।
টিটান পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে বলল, ‘‘নে। তোর জন্য।’’
টুইটি খুব খুশি হয়ে উঠল, ‘‘ওয়াও! ফ্রুট অ্যান্ড নাট! আমার ফেভারিট। কী করে জানলি?’’
‘‘সুইটহার্টের কী পছন্দ জানতে হয়। হোমওয়ার্ক করতে হয়।’’
টুইটি মোড়কটা খুলে অর্ধেক চকলেট ভেঙে টিটানকে দিয়ে বলল, ‘‘নে, তুইও খা। তা আরও হোমওয়ার্ক করে এসেছিস নাকি?’’
‘‘ক্রমশ প্রকাশ্য।’’
টুইটি চকলেটটা আয়েশ করে খেতে শুরু করল। টিটান টুইটির দিকে কিছু ক্ষণ অপলক চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘‘একটা পারমিশন দিবি?’’
টুইটি চোখ পাকাল, ‘‘প্রথম দিনেই যদি বলিস কিস করবি, তা হলে বুঝব তুই ভীষণ ফিজিক্যাল। তোর মধ্যে সত্যিকারের ভালবাসা নেই।’’
‘‘আমাকে কি বলতে দিলি তুই? আগেই ভেবে নিলি তোকে কিস করতে চাইছি।’’
‘‘তা হলে?’’
‘‘তোর কোলে একটু মাথা দিয়ে শোব? প্লিজ। ভীষণ ইচ্ছে করছে তোর কোলে মাথা রেখে আকাশটা একটু দেখি।’’
‘‘কত ক্ষণ?’’
টিটান আকাশের দিকে তাকাল। দূরে একটা প্লেন দেখা যাচ্ছে। সেটা দেখিয়ে বলল, ‘‘ওই প্লেনটা যত ক্ষণ ও দিক থেকে এ দিকে উড়ে যাবে।’’
টুইটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টিটান ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। খিলখিল করে হেসে উঠল টুইটি, ‘‘অ্যাই ওঠ, ওঠ! তোর মাথার খোঁচা-খোঁচা চুলগুলোতে কাতুকুতু লাগছে।’’
টিটান টুইটির আপত্তি শুনল না। এক স্বর্গীয় সুখের মধ্যে সে ডুবিয়ে নিয়েছে নিজেকে। নিউটাউনের একেবারে কাছেই এয়ারপোর্ট। প্লেনগুলো টেক-অফ করার পর উঁচু টাওয়ারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিরাট বড় লাগে দেখতে। মেঘলা আকাশে প্লেনের ইঞ্জিনের গর্জনও সে রকম। সেই আওয়াজে ঢেকে গেল টুইটির হাসি আর কথা।
‘‘এ বার ওঠ। প্লেনটা চলে গিয়েছে।’’
টিটান তবু উঠল না। চোখ মটকে বলল, ‘‘এই রে! সবাই দেখে ফেলল।’’
‘‘কে!’’ টুইটি আঁতকে উঠল।
‘‘প্লেনের ভেতর সিটবেল্ট বেঁধে যারা বসেছিল, সবাই।’’
‘‘উফফ! তুই না...’’ টুইটি টিটানের চুল ধরে ঝাঁকাল, ‘‘চল। ওঠ এ বার।’’
‘‘আর একটু, প্লিজ। কী যে শান্তি তোর কোলে মাথাটা রেখে শুতে,’’ টিটান ওর হাতের আংটিটা খুলে বলল, ‘‘বাড়িতে সব সময় বাবা-মা’র ঝগড়া, অশান্তি। আর ভাল লাগে না রে টুইটি। এক দিন এটা ঠিক তোর আঙুলে পরিয়ে দিয়ে তোকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।’’
আংটিটা দেখতে দেখতে টুইটি টিটানের চুলে বিলি কাটতে থাকল, ‘‘মনখারাপ করিস না। তোর আংটিটা দেখে মনে পড়ল, কালীপুজোর পরেই দাদাইয়ের এনগেজমেন্ট। মা আংটি কিনে এনেছে। জানিস, আমার না দাদাইয়ের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।’’
‘‘কেন?’’
‘‘দাদাইয়েরও তোর মতো কষ্ট। দাদাইও একটা মেয়েকে খুব ভালবাসে। কিন্তু বাবা জোর করে এক জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছে। দাদাই কিচ্ছু বলতে পারছে না। চুপ করে মুখ বুজে সহ্য করছে।’’
‘‘কেন?’’
‘দাদাইয়ের পার্সোনালিটিই ও রকম। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। আর বাবা সব সময় আভিজাত্য, আভিজাত্য, অ্যারিস্টোক্রেসি করেই লাফাচ্ছে। একটা অ্যারিস্টোক্র্যাট বউ আনছে দাদাইয়ের জন্য।’’
‘‘ও রকম পার্সোনালিটি হলে আর কী করা যাবে! কিন্তু এ সব আমাকে শোনাচ্ছিস কেন?’’
‘‘এমনি। আমার দাদাই কিন্তু খুব সুইট। এ বার চল উঠি।’’ টুইটি টিটানের মাথা সরিয়ে উঠে দাঁড়াল।
টিটান বলে উঠল, ‘‘টুইটি প্লিজ, আর একটা মিনিট দাঁড়া। তোর খুব ফেভারিট একটা জিনিস নিয়ে এসেছি।’’
টিটান পকেট থেকে একটা ছোট সাবানজলের কৌটো বার করল। আংটিটা নিয়ে সাবানজলে চুবিয়ে ফুঁ দিতে থাকল। একরাশ বুদ্বুদ ছড়িয়ে পড়তে থাকল আকাশে। তার পর হাওয়ায় ভেসে ভেসে ছড়িয়ে যেতে থাকল।
টুইটি অবাক হয়ে গেল। জিমে টিটানকে এক দিন বলেছিল, ছোটবেলায় সোপ-বাব্ল করতে ওর দারুণ লাগত। টিটানের হাত থেকে আংটিটা কেড়ে নিতে বলে উঠল, ‘‘দে, আমাকেও একটু দে!’’
১০
‘‘আরে মলয়বাবু! এই তো আপনাকে পেয়ে গেলাম। ওয়ান্ডারফুল।’’
শপিং মলের ক্যাশ কাউন্টারের লম্বা কিউতে দাঁড়িয়ে ছিল মলয়। পিছন থেকে নিজের নামটা শুনে ফিরে দেখল, সোমনাথ বিশ্বাস। সোমনাথ বয়সে অনেকটাই বড়, তবে বেশ সম্মান দিয়ে কথা বলেন। নামের পিঠে ‘বাবু’ বলে সম্বোধন করেন। সোমনাথের হাতে-বগলে দু’টো বড় কোল্ড ড্রিংকের বোতল, আর একটা মাখনের প্যাকেট। লম্বা লাইনের একেবারে শেষে দাঁড়িয়ে আছেন।
সোমনাথ এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘আপনি এখানে! তাই আজ মাছের বাজারে দেখতে পেলাম না। একটু তাড়া ছিল, আপনার সঙ্গে আমার বিলটা করে নেবেন প্লিজ? আমি ক্যাশ দিয়ে দিচ্ছি।’’
মলয় চোখ বোলাল। দূরে সেবন্তীকে দেখা যাচ্ছে। পাশেই শপিং মলের ট্রলিটা। তাতে মাসকাবারি বাজারে উপচে পড়ছে। বাড়ির কাছেই শপিং মল। সেবন্তী মাসকাবারি চাল, তেল-মশলা কিনতে নিজে আসে। মলয়কে ভরসা করতে পারে না। মলয়কে লিস্ট করে হাতে ধরিয়ে দিলেও গুঁড়ো মশলা আর গোটা মশলায় গোলায়। জিরে আনতে দিলে মৌরির প্যাকেট নিয়ে আসে, বেসন বললে ময়দা। অফার বেছে বেছে মশলা, বিস্কুট, টুথপেস্ট নিজে ঘুরে ঘুরে একটা-একটা করে কেনে সেবন্তী। কিন্তু রাজ্যের বিরক্তি আসে ক্যাশ কাউন্টারে পেমেন্ট করার সময়। যখন বোঝে বাজারটা মোটামুটি আশি শতাংশ হয়ে এসেছে, তখন মলয়কে পাঠিয়ে দেয় ক্যাশ কাউন্টারের লাইন ধরতে।
লম্বা লাইনের পিছন থেকে এগোতে এগোতে সামনে আর দু’টো মাত্র লোক। সেবন্তী ঠিক সময়ে চলে আসবে। মলয় সোমনাথকে বলল, ‘‘দিন।’’
ভিড় ঠেলে সোমনাথ মলয়ের পাশে এসে কোল্ড ড্রিংকের বোতল আর মাখনের প্যাকেট সামলে বলল, ‘‘আপনি কি কার্ডে পেমেন্ট করবেন না ই-ওয়ালেটে?’’
‘‘কার্ডেই ভেবেছি।’’
‘‘ই-ওয়ালেটে করুন, ই-ওয়ালেটে। এক্সট্রা ক্যাশব্যাক পাবেন।’’
‘‘তাই? কিন্তু আমার তো ই-ওয়ালেটে অত ব্যালেন্স নেই।’’
‘‘তাতে কী হয়েছে? লাইনটা ক্যাশিয়ার পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে কার্ড দিয়ে ওয়ালেটটা চট করে ভরে নিন। ১০% ক্যাশব্যাক গ্যারান্টেড। ভাগ্য ভাল থাকলে ১০০% ক্যাশব্যাক পেতে পারেন।’’
সামনের লোকটা এ বার পেমেন্ট ডেস্কে মালপত্তর তুলছে। মলয় তাড়াতাড়ি মোবাইল বার করে ওয়ালেট অ্যাপটা খুলল। তার পর পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ডটা বার করল। সোমনাথ মলয়ের কানের কাছে মুখটা ঝুঁকিয়ে নিচু গলায় বললেন, ‘‘আচ্ছা, আপনি নীহারদার এগেন্সটে যাচ্ছেন কেন বলুন তো? উনি তো আপনার ভায়রা।’’
মলয়ের অল্প অস্বস্তি হল। কার্ডের সিভিভি নম্বরটা পিছন থেকে সোমনাথ দেখছেন। আমতা আমতা করে বলল, ‘‘আমি?’’
সামনের লোকটার পেমেন্ট হয়ে গেল। মলয়ের পিছনের লোকটা তাড়া দিল, ‘‘দাদা এগোন।’’
মলয় অসহায়ের মত আর এক বার মলের ভেতরের দিকে চোখ বোলাল। হঠাৎ করেই অল্প স্বস্তিও পেল। অপ্রত্যাশিত একটা দৃশ্য। সেবন্তীর সামনে শ্রাবন্তী। দু’বোন কথা বলছে। অভিমান করে কয়েক সপ্তাহ শ্রাবন্তীর সঙ্গে কথা বন্ধ ছিল সেবন্তীর। এমনকী সেবন্তী বিজয়াটা পর্যন্ত এখনও করতে যায়নি দিদির বাড়ি।
‘‘দিন।’’ ক্যাশিয়ার জিনিসপত্র চাইল।
দু’টো কোল্ড ড্রিংকের বোতল আর মাখনের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলেন সোমনাথ।
‘‘কার্ড না ক্যাশ?’’
উত্তরটা সোমনাথই দিলেন, ‘‘ওয়ালেট।’’ তার পর মলয়কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কই, আপনার জিনিস কই?’’
‘‘মানে...’’
ক্যাশিয়ার মোবাইল নম্বরটা জেনে নিয়ে বলল, ‘‘পিন নম্বরটা বলবেন।’’
বলতে বলতেই পিন নম্বরের এসএমএসটা চলে এল। সেটা বলতে ক্যাশিয়ার বিলটা এগিয়ে দিল। পিছনের লোকটা আবার তাড়া দিল, ‘‘দাদা, হয়ে গেলে এগিয়ে যান। জ্যাম করবেন না।’’
সোমনাথও বোধহয় খেয়াল করেছিলেন সেবন্তী আর শ্রাবন্তীকে। বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে শপিং শেষ হয়নি। লাইনটা ছেড়ে দিতে হবে। আসুন, বাইরে একটা সিগারেট খাই। তা ছাড়া আপনার সঙ্গে বিজয়ার কোলাকুলিটাই তো হল না।’’
মলয়ের অসহায় ভাবটা কাটল না। সোমনাথ এখনও বিলের টাকাটা দেননি। খানিকটা সেটা উদ্ধারের আশায় সোমনাথের পিছন পিছন রাস্তায় বেরিয়ে এল মলয়। মলয়কে একটা সিগারেট অফার করে, নিজে একটা ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে সোমনাথ বলতে শুরু করলেন, ‘‘এ বার বলুন, আপনি ও পক্ষে ঝুঁকলেন কেন?’’
ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করল মলয়, ‘‘কোন পক্ষ?’’
‘‘ওই প্রমোটারদের পক্ষ। দেখুন মলয়বাবু, সোজা কথা বলি। আমি অফিসে রাজনীতি করা লোক। চোখের পাতা ফেলার আগে বুঝে যাই কার মাথায় কী চক্কর চলছে।’’
‘‘না, আমি তো ওদের পক্ষে কিছু বলিনি!’’
‘‘মশাই, সব সময় বলার দরকার হয় না। মনোভাবটা বোঝার দরকার হয়। রাজনীতির পোশাকটা কিন্তু আমি অফিসে ছেড়ে আসি। যে জায়গায় থাকব, সেখানে কোনও রাজনীতি থাকবে না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকব। কিন্তু রাজনীতি-করা মাথাটার তো বিশ্রাম নেই। বুঝতে পারছেন না, ওরা কোন ভেস্টেড ইন্টারেস্ট নিয়ে একটা সোসাইটির কমিটি করতে চাইছে? প্রমোটার যে কাজগুলো এখনও কমপ্লিট করে উঠতে পারেনি, সেগুলো আর কোনও দিন করবে না। সিসিটিভি চালু হয়েছে? সিকিয়োরিটির লোক বাড়িয়েছে? প্রত্যেক রবিবার লিফট মেন্টেনেন্স করার দরকার হচ্ছে কেন? দেখবেন এ বার মান্থলি মেন্টেনেন্স বাড়িয়ে দেবে। এ সব তো সবাই মিলে সলভ করতে হবে। আপনি কাকে চান খোলসা করে বলুন তো? আপনার ভায়রাকে, না প্রদীপ বর্মনের বকলমে তীর্থময় গাঙ্গুলিকে?’’
মলয় সিগারেটে টান দিয়ে বলল, ‘‘একটা কমিটি আপনারা পুজোর আগে করেছেন বলেছিলেন।’’
সোমনাথের মুখে অর্থবহ হাসি ফুটল, ‘‘এই তো, আপনার মনে আছে। কিন্তু আপনি সে দিকে না এসে উলটো দিকে ঝুঁকছেন। আরে মশাই, তীর্থময় গাঙ্গুলিকে চেয়ারম্যান করবেন ভেবেছেন, তাকে নাচানোর সুতোগুলো কার হাতে থাকবে? সবই তো বোঝেন। আর কে সেক্রেটারি? চিরঞ্জয় মজুমদার। ওটা একটা সেক্রেটারি হওয়ার মত লোক? আর আপনাকে কী পোস্ট দেবে এখনও তো খোলসা করে বলেইনি, আপনি রাজি হয়ে গেলেন?’’
মলয় আবার আমতা আমতা করতে লাগল, ‘‘না, আমি...মানে...’’
‘‘শুনুন, খেয়াল করে দেখেছেন কী, ওরা এখনও কোনও ট্রেজারারের নাম বলেছে কি না। আপনি জানেন না, আপনাকে বলেনি কিন্তু ভেতরে ভেতরে সব ঠিক হয়ে আছে। জেনে নিন নামটা আমার কাছে, রাজেশ মণ্ডল। এক্কেবারে প্রদীপ বর্মনের খাস লোক। আরে মশাই, আমরাও তো অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এখনও ঠিক করিনি। আপনাকে অফার করছি। সেক্রেটারি আর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, দুই ভায়রা। খাপে খাপ। ক্ষমতার এভারেস্টে চলে যাবেন।’’
মলয় একটু আনমনা হল। সোমনাথ বিশ্বাস অনেক কথা জানলেও, সবটা জানে না। ওদের সঙ্গে যোগাযোগ সবই সমীরণের মাধ্যমে। যেটুকু খবর পেয়েছে সমীরণই দিয়েছে। তবে এখনও পোস্ট দেওয়ার কোনও প্রস্তাব আসেনি। মলয়ই উলটে সমীরণকে বলেছে যদি কোনও পোস্ট পাওয়া যায়। আর এখন সোমনাথ বিশ্বাস যা বলছে, তা মেঘ না চাইতেই জল। একেবারে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি!
সোমনাথ জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এখান থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে আবার বাজারে আসবেন না কি?’’
মলয় ঘড়ি দেখে বলল, ‘‘না।’’
‘‘তা হলে চলে আসুন না আপনার ভায়রার বাড়িতে। আজ খুব জরুরি মিটিং আছে। সব সেট করে দিচ্ছি। কোল্ড ড্রিংকগুলো তো সে জন্যই নিয়ে যাচ্ছি। কোলারাম হবে। একটু খেয়েও যাবেন।’’
এখনও টাকাটার কথা কিছু উচ্চারণ করছেন না সোমনাথ। মলয়ের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ‘‘আর মাখনটা...’’
মোবাইল বেজে উঠল। সেবন্তী। ধরতেই খ্যারখ্যারে গলায় বলল, ‘‘বাইরে কী করছ?’’
‘‘কই না তো?’’
‘‘আবার মিথ্যে কথা! কাচের দরজা দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সোমনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে ফুঁকতে ফুঁকতে আড্ডা দিচ্ছ। লাইনে দাঁড়াতে বলেছিলাম, কী হল?’’
‘‘আসছি।’’ ফোন ছেড়ে সোমনাথকে বলল, ‘‘ওর হয়ে গিয়েছে। আমি আসছি।’’
‘‘ওক্কে! ওই কথাই রইল। আপনি চলে আসছেন নীহারদার বাড়িতে। ক্যাশব্যাকটা কত পেলেন দেখে নেবেন। প্রোপোরশনেটলি অ্যাডজাস্ট করে টাকাটা তা হলে ওখানেই দিয়ে দেব।’’
ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগোতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল মলয়ের। সব ক’টা কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। তার একটার একদম পিছনে মালপত্র-বোঝাই ট্রলিটা নিয়ে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে সেবন্তী। মলয় ঢোক গিলল। তার পরেই এ সব ক্ষেত্রে যে রকম ভুল করে ফেলে, ঠিক সেটাই করল। ভেবেছিল, বেশ কিছু দিন পর দু’বোনের দেখা, কথা হল, এই পরিস্থিতিতে ওই প্রসঙ্গটাই অনুকূল হবে। গলাটা ঝেড়ে পরিষ্কার করে মোলায়েম গলায় প্রশ্নটা করল, ‘‘দিদিভাই চলে গিয়েছে?’’
ক্রমশ