Utpal Dutt

আজও সমান ধারালো টিনের তলোয়ার

তাতে মরচের নামগন্ধও নেই। এ বারেই উৎপল দত্তর সেই প্রবাদপ্রতিম নাটকের পঞ্চাশ বছর। যাত্রা, পেশাদারি রঙ্গালয়ের প্রথম যুগ এবং ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই সেখানে মিলেমিশে একাকার।

Advertisement

অংশুমান ভৌমিক

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ০৭:২৬
Share:

মাইলফলক: ‘টিনের তলোয়ার’-এর এক দৃশ্যে মধ্যমণি উৎপল দত্তর সঙ্গে অন্যান্য কুশীলব।

সত্যজিৎ রায় নাকি ‘টিনের তলোয়ারকে’-কে ‘আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারের সর্বোচ্চ শিখর’ বলে বাহবা দিয়েছিলেন। সত্যজিৎ এ বার একশো পেরোলেন। পঞ্চাশ পেরোনোর কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে ‘টিনের তলোয়ার’-এর। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১২ অগস্টের সন্ধেয় কলকাতার রবীন্দ্র সদনে এই প্রযোজনার পথ চলা শুরু। প্রযোজনা হিসেবে এমন একটা দর হেঁকে গেছে ‘টিনের তলোয়ার’, যে তাকে বাদ দিয়ে বাংলা থিয়েটার তো বটেই, আধুনিক ভারতনাট্যের ইতিহাসও লেখা যাচ্ছে না। এমন নাটকের সুবর্ণজয়ন্তী এক অর্থে আমাদের নাট্য-সংস্কৃতিরই বিজয় উৎসব।

Advertisement

কলকাতা জুড়ে তখন হইহই রইরই! এক দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, খুনখারাপি। অন্য দিকে চলছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, তার আঁচ লাগছে পশ্চিমবঙ্গের গায়ে। আয়ুবশাহির সঙ্গে লড়াইয়ে দুই বাংলা তখন এক। সংস্কৃতিকর্মীরা তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। বস্তুত ‘টিনের তলোয়ার’-এর ক’দিন আগেই রবীন্দ্র সদনে প্রিমিয়ার হচ্ছে পিপলস লিটল থিয়েটারের ‘ঠিকানা’-র। তাতে লড়াই করে চলা মুক্তিসেনাদের সংহতি জানানো হয়েছে। ও দিকে সাধারণ রঙ্গালয়ের বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা বানিয়ে ফেলেছে নান্দীকার। রঙ্গনা-য় প্রতি বৃহস্পতি-শনি-রবি নাটক করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। ‘তিন পয়সার পালা’-র নাম লোকের মুখে মুখে ফিরছে। পিছিয়ে নেই বহুরূপী। পয়লা মে দলের জন্মদিনে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে তাঁরা ‘পাগলা ঘোড়া’ ছুটিয়েছেন। প্রতি রবিবার সেখানে মহড়া চলছে ‘অপরাজিতা’-র, সেপ্টেম্বরের গোড়ায়
নামবে বলে। বিজয় তেন্ডুলকরের মরাঠি নাটক ‘শান্ততা কোর্ট চালু আহের’ বাংলা তরজমা মঞ্চে আনার কাজও চলছে জোরকদমে। সমবায়ী গরজে বাংলা নাটমঞ্চ প্রতিষ্ঠা সমিতির কাজও চলছে। সেখানে বহুরূপী-নান্দীকারের সঙ্গে জোট বেঁধেছে রূপকারের মতো দল। এবং রমরমিয়ে চলছে সাধারণ রঙ্গালয়।

অথচ উৎপল দত্তর নতুন দল পিপলস লিটল থিয়েটার-এর ভাঁড়ে মা ভবানী। সাধের লিটল থিয়েটার গ্রুপ ক’বছর হল ভেঙে চুরমার। মিনার্ভা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছেন দত্ত-দম্পতি। পাশে গোনাগুনতি অনুগতজন। বিবেক যাত্রাসমাজ গড়ে এক মরসুম যাত্রার তাত পুইয়ে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন চিৎপুর পাড়ায় যাত্রার দল চালানো তাঁদের কম্মো নয়। ‘শোন রে মালিক’, ‘রাইফেল’-এর মতো পালা সত্ত্বেও নয়। ও দিকে পিএলটি-র ব্যানারে ‘বর্গী এল দেশে’ নেমে গেছে। সেই আমলে উৎপলের ছায়াসঙ্গী অসিত বসু এক বার বলেছিলেন— ‘যাত্রার ফরম্যাটটাকে নিয়ে পোস্টার ড্রামার অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ চলছে। ছোট ছোট কল শো পাচ্ছি। সেই সময়ে রঙমহলে একটা শো পেয়েছি। ৯৫০ সিট। হাতে করে টিকিট বিলিয়েছি। কিন্তু মধ্যগগনের উৎপল দত্তকে দেখতে তিনশো সিটও ভরেনি। এটাকে আর্টিস্ট উৎপল দত্ত মেনে নিতে পারেননি। এটাও ক্রাইসিস। নানা রকম ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। তখন বাংলা পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের একশো বছরের অনুষ্ঠান আসছে। আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে যে ‘ভূতের রাজা দিল বর’ গোছের একটা কিছু করতে হবে! নইলে হবে না।’

Advertisement

তা বলে ‘টিনের তলোয়ার’কে মোটেই ভূতের রাজার ভেলকি বললে হবে না। তার পেছনে একটা প্রস্তুতিপর্ব ছিল। ছ’মাস একনাগাড়ে মহড়া দেওয়ার আগেও নাটক লেখার একটা নিঃসঙ্গ পর্ব ছিল। এ হল নিভৃত যতনে আত্মসমীক্ষার কাল। মনের মন্দিরে বেণীমাধব চাটুজ্যের আদিকল্পকে আবিষ্কারের কাল। মিনার্ভা থিয়েটার লিজ় নেওয়ার সময় যে উৎপল চাইতেন দর্শকসাধারণের সঙ্গে ‘গভীরভাবে, অন্তরঙ্গভাবে একাত্ম হতে’ এবং ‘তাঁদের কাছ থেকে শিখে আমাদের শত সহস্র ত্রুটি সংশোধন করতে’, সেই উৎপল যেন আসন্ন সংগ্রামের আগে রণকৌশল ঠিক করতে মনোযোগী ছিলেন।

এই পর্বে উৎপলের পাশে শোভা সেন তো ছিলেনই, পিপলস লিটল থিয়েটার-এর সে আমলের প্রোডাকশন ম্যানেজার অসিত বসুও ছিলেন। এক দিন ৪ নং বাসে করে বাগবাজার থেকে টালিগঞ্জ নেমে মিনিট পনেরো হেঁটে উৎপলের নতুন বাড়িতে গিয়ে পৌঁছতে উৎপল তাঁকে বলেছিলেন, ‘গিরিশবাবুদের ওই সময়টার সঙ্গে এখনকার একটা প্যারালাল টানা যায়, জানো? এই যে অ্যাটাক অন দ্য সোসাইটি এখন চলছে, তখনকার চেয়ে চেহারাটা হয়তো আলাদা হয়েছে, কিন্তু বেসিকটা পাল্টায়নি। থিয়েটার নিয়ে কতরকমের প্রোটেস্ট হয়েছে ভাবো! গিরিশবাবুরাই তো করেছেন। সিরাজদ্দৌলা, মীরকাশিম, এমনকি পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে নাটকগুলোতে কী মাস্টারলি আর কী ইন্টেলিজেন্টলি সোশ্যাল প্রবলেমগুলোকে সুগারকোট করে গেছেন। দর্শককে সাইলেন্টলি ইনজেক্ট করে গেছেন। আমাদের এরকম একটা কাজ করতে হবে।’

যেমন কথা তেমন কাজ। উৎপল দত্ত বলে কথা! ফলে লেখাপড়া শুরু হল কষে। সাধারণ রঙ্গালয়ের উন্মেষপর্ব নিয়ে যা জানা ছিল ঝালিয়ে নিলেন। যা জানা ছিল না তলিয়ে বুঝে নিলেন। আঁতিপাঁতি করে গিরিশ ঘোষের নাটক পড়া হল। সুপ্রকাশ রায়ের ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ’ ক’বছর আগেই বেরিয়েছে। ‘তীর’-এর প্রস্তুতিপর্ব থেকেই কৃষক আন্দোলনের ভেতরকার দুনিয়াকে চিনতে শুরু করেছিলেন উৎপল। সুপ্রকাশের বই তার ঐতিহাসিক ভিত গড়ে দিল। বদরুদ্দীন উমরের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক’ বই হয়ে বেরোতে তখনও এক বছর, কিন্তু তাঁর লেখালিখি কলকাতায় আসতে শুরু করেছে। সে সব পড়ছেন উৎপল, আলাপ আলোচনা করছেন। ওয়াহাবি আন্দোলন যে স্রেফ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নয়, তার পেছনে যে পুরনো-নতুন সব রকমের জমিদারের লাগামছাড়া শোষণের বয়ান আছে, চব্বিশ পরগনার নারকেলবেড়িয়ার কৃষকদের গণপ্রতিরোধের আভাস আছে, এই বোধে ক্রমে থিতু হচ্ছেন। তিতুমিরের বাঁশের কেল্লায় গণপ্রতিরোধের বীজতলি পাচ্ছেন। ১৮৭৬-এর নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনকে ঘিরে কলকাতার বাঙালি সমাজের যে দ্বিধাবিভাগ, তার মধ্যে নাটকীয় সংঘাতের সূত্র খুঁজছেন। যে কলকাতার বুকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বঙ্কিমচন্দ্রের সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ভিত্তিক রচনা ‘আনন্দমঠ’-এর (১৮৮২) সক্রিয় ভূমিকা ছিল, সেই বঙ্কিমকে আনছেন একাধারে লেখক ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচয়ে। আর পটভূমি হিসেবে সাজিয়ে নিচ্ছেন শোভাবাজার এলাকার এক সাধারণ রঙ্গালয়কে। এই রঙ্গালয়ের মধ্যে চেনা ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ আর ‘গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার’-এর অনেক উপকরণ থাকলেও এটা উৎপলের নিজস্ব উদ্ভাবন— দ্য গ্রেট বেঙ্গল অপেরা।

তার পর নাটক লিখতে বসছেন। এমন এক নাটক, যা তিনি আগে লেখেননি। ১৯৫২-তে পানু পালের ‘ভোটের ভেটে’ অভিনয় করে অ্যাজিটপ্রপ ড্রামায় হাতেখড়ি যে উৎপলের, তিনি যেন ‘টিনের তলোয়ার’-এ থেকেও নেই। ক’বছর আগেই নকশালপন্থার ‘তীর’ নাটকের চিহ্নপথে চলে পুরনো কমরেডদের অনেকের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছিলেন উৎপল। তাই কোনও ইশতেহারের ভার তাঁকে বইতে হচ্ছে না। আজকালকার লব্‌জে জনসংস্কৃতির দাবিদাওয়া মাফিক বিনোদনী খোরাক জোগাতে তাঁর অত আপত্তি নেই। যাত্রা করতে গিয়ে তিনি টের পেয়েছেন বিপুল জনতার আদালতে সওয়াল করার মজা কেমন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষে-মানুষে যোগসাধনের নতুন কৃৎকৌশল বার করার নেশায় মেতেছেন তিনি।

বিষয়ের দিক থেকে তো বটেই, তার চেয়েও বেশি আঙ্গিকের দিক থেকে অভিনব ছিল ‘টিনের তলোয়ার’। এর বছরখানেক পর, ১৯৭২ সালে দিল্লি থেকে বেরোনো ‘ইন্যাক্ট’ পত্রিকার জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে উৎপল সাফ জানিয়েছিলেন যে, নাটকের গড়ন থেকে শুরু করে তার অভিনয়শৈলী, দু’দিক থেকেই যাত্রার অভিজ্ঞতাকে আত্মস্থ করে তাকে প্রসেনিয়াম আর্চে প্রয়োগ করার পরীক্ষণাগার ছিল ‘টিনের তলোয়ার’।

তত দিনে আরও তিনটে যাত্রার দলের জন্যে ‘দিল্লি চলো’, ‘নীলরক্ত’, ‘ভুলি নাই প্রিয়া’ লিখে তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। এক দিকে সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ঐতিহাসিক চরিত্র, নীল বিদ্রোহের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা, অন্য দিকে শেক্সপিয়রের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’— দ্রুত হাতে লিখে, মাঝেরটা বাদ দিয়ে বাকি দুটো নির্দেশনা দিয়ে যাত্রার অন্দরমহলে ঢুকে পড়েছেন। ১৯৭১-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি, দিল্লিতে সঙ্গীত নাটক অকাদেমির ডাকে নাট্যসম্মেলন। ‘দ্য যাত্রা অ্যান্ড ইটস রেলিভ্যান্স’ নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দিচ্ছেন উৎপল। মনে রাখতে হবে, সে আমলে ‘থিয়েটার অব রুটস’ একটু একটু করে শিল্প আন্দোলনের চেহারা নিচ্ছে। গিরিশ কারনাড ‘হয়বদন’ লিখছেন, নিভৃতে ‘চাঁদ বণিকের পালা’ লিখে ফেলেছেন শম্ভু মিত্র। তার ওপর ‘তিন পয়সার পালা’ করে পালাগানের আদলকে নেড়েঘেঁটে বাংলায় ব্রেখট প্রযোজনার একটা ধরন দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘টিনের তলোয়ার’-এ তাই তুরুপের তাস খেলে দিলেন উৎপল। যাত্রার আসরের ‘প্রাকৃত’ উত্তেজনার আঁচ আমদানি করলেন রবীন্দ্র সদনের ‘শালীন’ মঞ্চে। যাত্রা আর ফাত্রার গেরো তত দিনে ফস্কে গেছে। ১৯৬১ সালের পুজোর মরসুমে শোভাবাজার রাজবাড়িতে যাত্রা উৎসবের সাফল্য চিৎপুরের সঙ্গে ‘ভদ্রলোক’ কলকাতার দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদকে খেতাব দিয়েছে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো যাত্রা-অন্ত-প্রাণ আর থাকতে না পেরে ‘মঞ্জরী অপেরা’ লিখে ফেলেছেন। তার থেকে ছায়াছবিও তৈরি হয়েছে উত্তমকুমার-সাবিত্রীকে নিয়ে। ১৯৭০-এর ২৭ নভেম্বর কলকাতার উত্তরা-পূরবী-উজ্জ্বলায় ‘মঞ্জরী অপেরা’ রিলিজ় করছে যখন, উৎপল তখন ‘টিনের তলোয়ার’-এর মকশো করছেন।

স্বদেশি আন্দোলনের সময় চারণকবি মুকুন্দদাস ও তাঁর স্বদেশি যাত্রার মধ্যে ‘টিনের তলোয়ার’-এর তুঙ্গমুহূর্তের রসদ চিনে নিয়েছিলেন উৎপল। যাত্রা ও জনজাগরণের যে গাঁটছড়া ইতিহাসের পাতা থেকে চিনে নিয়েছিলেন তিনি, প্রকৃত প্রস্তাবে তার ফলিত প্রয়োগের রসায়নাগার হয়ে উঠেছিল প্রসেনিয়াম আর্চ। তখন রবীন্দ্র সদনেই টানা শো করে গেছে পিপলস লিটল থিয়েটার।

সে আমলে প্রসেনিয়ামের সামনে একটা অর্কেস্ট্রা পিট ছিল রবীন্দ্র সদনে। আর রিভলভিং ডাবল ডিস্ক ছিল চালু অবস্থায়। পুরনো আমলের দৃশ্য পরিবর্তনের আমেজ আনতে ওই ঘূর্ণায়মান মঞ্চের পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা উশুল করে ছেড়েছিলেন উৎপল। প্রসেনিয়ামের দু’ধারে আলোক প্রক্ষেপণের জন্য বরাদ্দ ঝুলবারান্দাকে প্রাইভেট বক্স বানিয়ে নেওয়ার মতো উদ্ভাবন তো ছিলই। একশো বছর আগের-পরের স্টেজ কনভেনশনকে যত রকম ভাবে মেলানো সম্ভব ছিল, ততটাই করেছেন তিনি। মঞ্চ সাজানোয় সুরেশ দত্তর লাস্ট মিনিট সাজেশন, তাপস সেনের আলোক পরিকল্পনা আর যাত্রার আসর থেকে সোজা উঠে আসা প্রশান্ত ভট্টাচার্যের সুর সংযোজন তাকে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় তুলে দিল। মঞ্চের ওপর নানা চালের নানা ঢঙের নাট্যভাষের মেলা বসিয়ে দিলেন উৎপল।

প্রথম দৃশ্যের কথাই ধরুন। মুদ্দফরাস মথুর নালার গর্ত থেকে উঠে এসে এক বালতি ময়লা ঢেলে দিয়েছেন গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের সবেধন কাপ্তেনবাবু তথা ‘বাংলার গ্যারিক’ বেণীমাধব চাটুজ্যের গায়ে। তাঁর সাধের মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ‘ইন্ডিয়ান মিরর’, মায় পাবলিক থিয়েটারকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে ‘আমাদের বাইজির খেমটা’, ‘আমাদের বস্তির রামলীলে’র গুণ গাইছেন মথুর। কতক-ঘাবড়ে-যাওয়া বেণীমাধবকে হাতের সামনে পেয়ে ‘মুকে অং মেকে চক্করবেড় ধুতি পরে, লালনীল জোড় আর ছত্রি পরে অমন রাজাউজির এইসব সাজো কেন, অ্যাঁ? এত্ত নেকাপড়া করে, খিকখিক, টিনের তলোয়ার নিয়ে ছেলেমানুষি করো কেন?’ বলে দাবড়ে দিচ্ছেন।

উনিশ শতকের কলকাতার ‘সরস্বতীর ইতর সন্তান’দের গলা তোলার জায়গা ছিল বটতলার বই। কলেজ স্ট্রিট বা ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটের সঙ্গে তার মনোজাগতিক দূরত্ব আলোকবর্ষের। ‘টিনের তলোয়ার’-এর প্রস্তাবনাপর্বেই সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলেন উৎপল। বাইনোকুলারের দেখার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে কাঠগড়ায় তুলে দিলেন ‘বাবু’দের সকের থেটার থেকে শুরু করে বানিয়া-মুৎসুদ্দিদের খামখেয়ালে চলা সদ্যোজাত পাবলিক থিয়েটারকে। এত বড় অন্তর্ঘাত ঘটানোর জন্য কোনও রকম গেরামভারী চাল লাগল না তাঁর।

তার পর ১৮৭৫-৭৬ সালের কলকাতাকে তার ত্রৈমাত্রিকতায় চেনাতে চেনাতে চললেন। দাবার বোর্ডে ঘুঁটি সাজানোর মতো করে এক-একটা চরিত্রকে সামনে আনলেন। তাঁদের ঘিরে জাল বুনতে লাগলেন। গিরিশ ঘোষকে অন্য এক থিয়েটারের সর্বেসর্বা বানিয়ে রাখলেও বেণীমাধবের মধ্যে গৈরিশ আদল বুনে দিলেন। যাত্রার পরম্পরা থেকে অল্প অ্যাকাডেমিক পুঁজি নিয়ে উঠে আসা এই প্রতিভাবান নট ও নাট্যশিক্ষককে অল্পস্বল্প গড়েপিটে নেওয়ায় গিরিশচরিতের বোঝা ঘাড় থেকে নেমে গেল। ময়নার মধ্যে উৎপল রেখে দিলেন বিনোদিনীকে। বসুন্ধরা ওরফে আঙুরের ভেতর থেকে উঁকি দিলেন তিনকড়ি-এলোকেশীদের আদি প্রজন্ম। থেকে থেকে বসুন্ধরা-ময়নার মধ্যে যে ফিমেল বন্ডিং দেখালেন, তার দরুন নাটকের পুরুষতান্ত্রিক স্বর কতক মোলায়েম হল। ইচ্ছে করেই ঘাঁটতে থাকলেন কালানুক্রম। দেখতে দেখতে জমজমাট হল দ্য গ্রেট বেঙ্গল অপেরার খাসতালুক। আর প্রিয়নাথ মল্লিকের মধ্যে মিহি সুঁইফোঁড়ে বুনে দিলেন পুরো ইয়ং বেঙ্গল প্রজন্মকে। যে বেণীমাধবকে ধীরোদাত্ত গুণান্বিত করে গড়ার গরজ দেখাননি উৎপল, তাঁর অল্টার ইগো হয়ে রইলেন প্রিয়নাথ। আজকের পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের বৃদ্ধ প্রপিতামহ যেন!

এঁদের উল্টো পিঠে কাদের রাখলেন উৎপল? চলমান অশরীরীর মতো নাটক জুড়ে রইলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রশক্তির প্রতীক তথা লালবাজারের ডেপুটি কমিশনার ল্যামবার্ট। যাঁকে আড়ালে রেখেই স্টেট ভার্সেস পাবলিক থিয়েটারের ধিকিধিকি আগুন থেকে থেকে খুঁচিয়ে দিতে লাগলেন উৎপল। আর মাঝখানে রইলেন মধ্যস্বত্বভোগী বানিয়া-মুৎসুদ্দি শ্রেণির প্রতিনিধি বীরকৃষ্ণ দাঁ। কম্প্রাদোর বুর্জোয়ার এক ধ্রুপদী নিদর্শন।

মোটের ওপর এই লোকবল সম্বল করে একশো বছর আগেকার কলকাতার সাধারণ রঙ্গালয়ের জায়মান সংস্কৃতির জোরের দিক কমজোরির দিক, আলোর দিক আবছায়ার দিক— এ সবের তত্ত্বতালাশ করলেন উৎপল। ভাষার মিশেল ঘটালেন যথেচ্ছ। এমন এক সমন্বয়ী নাট্যভাষে জারিয়ে নিলেন ‘টিনের তলোয়ার’-কে যে, যত দিন গেল, তার নান্দনিক উৎকর্ষের পারদ উপরের দিকে চড়তেই লাগল, কখনও স্থির বা নিম্নগামী হল না।

জোয়ারের পর জেগে থাকা চরের মতো রইল কিছু খেতাব, কিছু গপ্পোগাছা। গ্রামোফোন কোম্পানির রেকর্ড করা এক বর্ণাঢ্য ধ্বনিচিত্র। জব্বার প্যাটেলের তথ্যচিত্রে ধরা তিন মিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ডের অবিনশ্বর মহিমা। এবং অনন্ত সুখস্মৃতি। ‘টিনের তলোয়ার’ একটা প্রতীক হয়ে উঠল। আমাদের বাগ্‌ধারায় ঢুকে পড়ল ‘ছেড়ে কলকেতা বোন হবো পগারপার’, ‘আমি মড়া কেন যে এটা ধরলাম’ বা ‘মথুর, জীবন থেকে কিছুই পেলি নে রে’।

শুধু প্রযোজনার গুণে এই নাটক আজকের ধোপে কতটা টিকবে, তা আর জানা সম্ভব নয়। তবে আজও বাংলাভাষী বিশ্বে ‘টিনের তলোয়ার’-এর একটা জায়গা আছে। পঞ্চাশ বছর আগেকার পিপলস লিটল থিয়েটার-এর মতো মজবুত ও একবগ্গা নাটকের দল এখন আর না থাকলেও, স্টুডেন্টস প্রোডাকশনের খবর আসে, মূলত বাংলাদেশ থেকে। হাল আমলে কলকাতায় ক্যালকাটা পারফর্মার্স-এর নামে ‘টিনের তলোয়ার’ হয়েছে, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়। অতিমারির দাপট শুরু হওয়ার ঠিক আগে নৈহাটিতে হয়েছে, মুরারি মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়।
নাটকটা যে সেকেলে হয়ে যায়নি এ সব তার আভাস, এই মাত্র।

তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ‘টিনের তলোয়ার’ নিয়ে যাবতীয় স্তবস্তুতি অতিকথা-অতিরঞ্জন এই উপাদেয় কালচারাল প্রডাক্টকে তার পুঙ্খানুপুঙ্খে জানতে দেয়নি। অনেক দিন আগে কলেজ-ইউভার্সিটির সিলেবাসে ঢুকে গেছে বলে টীকাটিপ্পনী সম্বলিত দু’-চারটে বই যা দেখেছি, তা শিক্ষার্থীবোধক পরীক্ষাতোষক বটিকামাত্র, তাতে উৎপল-প্রতিভার সামগ্রিক মূল্যায়নের ফুরসত নেই। আরও আক্ষেপ, ‘টিনের তলোয়ার’-এর লিখিত পাঠের বিশ্লেষণেই আমাদের যত উৎসাহ, তা যে প্রসেনিয়াম থিয়েটারের ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ও বটে, এ টনক আমাদের নড়েনি।

হাতের কাছে ‘টিনের তলোয়ার’-এর যে পাঠ মজুত, সে দিকে নজর দিলে এই হাঁড়ির হাল খোলতাই হয়। জাতীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে বেরোনো ‘টিনের তলোয়ার’-এর গায়ে এখন আর লাইনোটাইপের আঘ্রাণ নেই। মিত্র ও ঘোষের বার করা রচনাবলির সৌজন্যে ‘টিনের তলোয়ার’-এর যে চেহারা আমাদের হাতে এসেছে, তাতে আবার এলোপাথাড়ি চুনকামের গন্ধ। তুখোড় সম্পাদনার চিহ্ন বড় একটা নেই, সম্ভবত কোনও শুচিবায়ুগ্রস্ত প্রুফরিডারের খপ্পরে পড়ে ভ্যাবাচ্যাকা দশা তার। সেখানে মথুরের সেই অন্তর্ঘাতী উচ্চারণ ‘আমি কলকেতার তলায় থাকি’তে ‘কলকেতা’ হয়ে যায় ‘কলকাতা’, ময়নার গানে ‘থেটার’ হয়ে যায় ‘থিয়েটার’, এমনকি বসুন্ধরার মুখের ‘অর্দ্ধেন্দুশেখর মুস্তোফী’ হয়ে যায় ‘অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি’! না হয় ‘মুস্তোফী’র দীর্ঘত্বও লোপ পেল, তা বলে
‘মুস্তোফী’ কেন ‘মুস্তাফি’ হবে? অবিশ্যি শান্তিপুরি মুড়োঝাঁটার কল্যাণে ‘বুড় শালিক’ যেখানে ‘বুড়ো শালিখ’ হয়ে গেছে, সেখানে এমন তরবেতর আমাদের গা-সওয়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ সব করে যে উৎপল দত্তর গাধার খাটুনির যৎকিঞ্চিৎ দাম দেওয়া হচ্ছে না, সেটা কিন্তু ভেবে দেখার মতো। যে অসীম অধ্যবসায়ে উনিশ শতকের কলকাতার পাঁচমিশেলি ভাষাবিশ্বকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন উৎপল, তার কদর করব না?

স্রেফ ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গুলে খেলেই করলেই তাঁর দিব্যি চলে যেত। তা তিনি করেওছিলেন। কালীপ্রসন্ন সিংহের বই বেরোয় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে। আর উৎপল করছেন কী? ১৮৭৫-৭৬-এর কলকাতার ‘এক ধরনের ব্যাপকতর পাবলিক স্ফিয়ার’ তৈরি করছেন। কী দিয়ে? মূলত মুখের ভাষা দিয়ে। এক অদ্ভুত পাঁচমিশেলি জবানকে মান্যতা দিচ্ছেন নাটকে।

মনে রাখা প্রয়োজন, এই ভাষা তাঁর করতলগত আমলকি ছিল না। তিনি আদতে বরিশালের ছেলে। তার পর যতই শিলং বহরমপুরের বাতাস তাঁর শৈশব কৈশোরের ওপর দিয়ে বয়ে যাক না কেন, মোকাম কলকাতার যে চিৎপুর, বৌবাজার, শোভাবাজার মহল্লা ‘টিনের তলোয়ার’-এর চারণভূমি, যেখানকার ভাষা তাঁর জ্ঞানোদয়মাত্র শোনা নয়। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, ৬ নং বিডন স্ট্রিটের মিনার্ভা থিয়েটারে বছরদশেক ছড়ি ঘোরানো ও সেখানে অষ্টপ্রহর কাটানোর সুবাদে গরানহাটা মহল্লাকে তিনি হাতের তালুর মতো চিনতেন, তার কথ্যভাষার বিশিষ্ট সুর তাঁকে কানে বসে গেছিল, তবু একশো বছরের একটা তফাত থেকেই যায়।

সেটাকে তিনি ভরাট করলেন কী করে? শুধু লেখাপড়া করে। তখনও বটতলা সাহিত্য জাতে ওঠেনি। একশো-সওয়াশো বছর আগেকার সে সব লেখা এখন পুনর্মুদ্রণ আর পুনর্মূল্যায়নের দৌলতে চাইলেই দেখে নেওয়া যায়। ‘টিনের তলোয়ার’ লেখার সময় সে উপায় ছিল না উৎপলের। তাঁকে ভরসা করতে হয়েছিল হাতে গোনা কিছু নমুনার ওপর। একটা ভরসার জায়গা ছিল ‘গিরিশ রচনাবলী’। রথীন্দ্রনাথ রায় ও দেবীপদ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘গিরিশ রচনাবলী’র প্রথম খণ্ড বেরিয়েছিল ১৯৬৯-এর অগস্টে, সাহিত্য সংসদ থেকে। ‘টিনের তলোয়ার’ লেখার আগে সেটা আগাপাশতলা অধ্যয়ন করেছিলেন উৎপল। তাতে ‘বেল্লিক-বাজার’-এর মতো নাটকও ছিল। খতিয়ে দেখলে বোঝা যায় এর অনেক প্রভাব আছে ‘টিনের তলোয়ার’-এ। সংলাপের ঠমক-ছমকে তো বটেই!

‘টিনের তলোয়ার’ কেন মাস্টারপিস, তা বোঝার জন্য যা চাই, তাকে ইংরেজিতে ‘অথরাইজ়ড এডিশন’ বলে। খোদ সৃষ্টিকর্তার সিলমোহর লাগানো সংস্করণ। সে জন্য প্রথমেই দরকার মূল পাণ্ডুলিপি। নিদেনপক্ষে ‘টিনের তলোয়ার’-এর রিহার্সাল কপি। এর কোনওটাই দুষ্প্রাপ্য হওয়ার কথা নয়। পিপলস লিটল থিয়েটার-এর মহাফেজখানা বহাল তবিয়তেই আছে। বরাতজোর হলে লাইট আর সাউন্ড অপারেশনের মার্কামারা কপিও মজুত থাকা সম্ভব। এর থেকে খালি অথরাইজ়ড এডিশন নয়, একটা পারফরম্যান্স স্ক্রিপ্ট অবধি খাড়া করা যেতে পারে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের নাট্যচর্চায় পারফরম্যান্স স্ক্রিপ্ট তৈরির ব্যাপারটা এখনও দানা বাঁধেনি। ছেপে বার করা তো দূরস্থান!

কিন্তু ‘টিনের তলোয়ার’-এর বেলায় ওই শূন্যস্থান পূরণের উপায় এখনও হাতের কাছে মজুত। পিপলস লিটল থিয়েটার-এর পোড়খাওয়া সদস্যরা আছেন। তা ছাড়া পগারের এ পার-ও পার থাকা দু’জন তো আছেনই— অসিত বসু আর ছন্দা চট্টোপাধ্যায়। দু’জনেই ‘টিনের তলোয়ার’-এর আদি প্রযোজনার সঙ্গে এ কালের মিসিং লিঙ্ক। ময়না-সাজা ছন্দা কতক উৎপলের হাতে গড়া। ‘টিনের তলোয়ার’-এর রিভিউ লিখতে বসে নামী কাগজের নাট্য সমালোচক এর মধ্যে জর্জ বার্নার্ড শ’র ‘পিগম্যালিয়ন’ খুঁজে পেয়েছিলেন, অভিনেত্রী হিসেবে ছন্দার হয়ে ওঠার বৃত্তান্ত আনুপূর্বিক জানা থাকলে তাঁর মধ্যে এলিজা ডুলিটলকে জলজ্যান্ত দেখতে পেতেন! ছন্দা এ নিয়ে পরে ইতিউতি বলেছেন। আর শোভা সেন তো লিখেই গেছেন— ‘উৎপল পড়া পড়ানোর মতো করে ওকে প্রতিটি লাইন ধরে ধরে শিখিয়েছে।’ ছন্দা যদি ‘টিনের তলোয়ার’-এর মধ্যমণি হন, তো প্রিয়নাথ মল্লিকের পার্ট করা অসিত বসু এর সিপাহসালার।

সবার শেষে চাই অরুণ নাগ বা সুকান্ত চৌধুরীর মতো তন্নিষ্ঠ সম্পাদক। যিনি নানা রকমের জট ছাড়িয়ে একটা প্রামাণ্য পাঠ আমাদের সামনে রাখবেন। বিশদ টীকা যোজন করবেন, যাতে ‘টিনের তলোয়ার’-এর ছত্রে ছত্রে গুঁজে রাখা কালচারাল কোড আর ইন্টারটেক্সচুয়ালিটির দেদার মজা আমাদের অনুভবে আসবে। ‘তলাখাঁকতি’, ‘পুনকে বেটি’, ‘ছক্কর কেরাঞ্চি’র সাঁটের কথা মালুম হবে।

মরচে পড়েনি। তামাদিও হয়নি। কিন্তু ‘টিনের তলোয়ার’-এর পঞ্চাশ বছরে তাকে তুলে নেওয়ার হিম্মত আছে কোনও বাহাদুরের? সুযোগ্য পুনর্নির্মাণ হলে তা যে ফের ধারে-ভারে কাটবে, এ হলফ করে বলা যায়। কারণ এ দেশে গণতন্ত্র এক রকম আছে বটে, কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে শিল্প ও শিল্পীর সম্বন্ধ এখনও সম্মানজনক মাত্রায় পৌঁছয়নি। নানাবিধ খুড়োর কল ঝুলিয়ে দিল্লিশাহি তামাম কলাকার মহলকে ট্যাঁকে পুরে ফেলেছেন। মাঝখান থেকে বীরকৃষ্ণ দাঁ-র নাতিপুতিরা পঙ্গপালের মতো এসে পুরো বিনোদনবিশ্বের ইজারা নিয়ে বসে গেছেন। ‘কমিশনের ব্যাবসা, চোটার কারবার’ আরও ফুলেফেঁপে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে যে জাতীয়তাবাদের রকমফের, নয়া নাগরিকত্ব আইনের ফন্দিফিকির নিয়ে উঁচু গলায় কিছু বলতেই পারছে না আমাদের থিয়েটার। এমন সময় ‘সাচ্চা বুলি আমরা বলি/ ভয় করি না তাই’ বলে জুড়ির দল থিয়েটার কাঁপিয়ে দিলে, যথার্থ সুবর্ণজয়ন্তী স্মরণ হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement