আমার শৈশব কেটেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামে। জীবনের প্রথম ষোলোটি বছর একটা মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালের ঘরে বড় হয়েছি। আমার গ্রামে তখনও, এমনকী এখনও, বিদ্যুৎ যায়নি। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব বর্ষাকালগুলির কথা, যখন এক হাঁটু জলকাদা ঠেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে স্কুল যেতাম। সারা দিন মাঠে চাষবাস করে এসে বাবা-মা কী ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়তেন! প্রচণ্ড বৃষ্টিতে খড়ের চাল ফুঁড়ে জল এসে পড়ত বিছানায়, বইয়ের তাকে। বই ভিজে গেলে আমার খুব কান্না পেত। বাবা অত রাতে খড়ের চালে উঠে পুরনো ত্রিপল টাঙিয়ে, জল আটকাতেন।
আজ থেকে চোদ্দো বছর আগে, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় এলাম। তখন থেকেই অল্প অল্প করে আমি টের পেতে থাকি, এ সমাজে আমাকে সমান জায়গা দেওয়া হয় না। নিচু চোখে দেখা হয়। যে আবাসিক মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য আমি ভর্তি হই, সেখানে তখন মাসে ১২০০ টাকা বেতন দিতে হত। সেই সময় আমার একটা পাঁচশো টাকার নোট হাতে নিয়ে দেখারও সুযোগ হয়নি। মনে পড়ে, অ্যাপ্লিকেশনে বাৎসরিক আয়ের জায়গায় লিখেছিলাম ‘৯০০০ টাকা’। যিনি ফর্ম জমা নিচ্ছিলেন তিনি বলেছিলেন, ‘এই ছেলে, তুমি বোধহয় ভুল লিখেছ, এটা ৯০০০০ হবে?’ এই প্রতিষ্ঠান আমাকে ‘ফুল কনসেশন’-এ পড়ার সুযোগ দিলেও একটা অদ্ভুত হীনম্মন্যতা আমাকে গ্রাস করতে থাকে নানা কারণে। মাসের শুরুতে আমার হস্টেলের রুমমেটরা যখন ফি-জ জমা দিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করত ‘তুই জমা দিয়েছিস?’, কিংবা তাদের বাবা-মায়েরা যখন গাড়ি করে দেখা করতে আসতেন, তাঁদের হাতে আবার সন্তানের জন্য দামি খাবার, জামাকাপড়, আরও কত কী, অথবা যখন আমার সেই বন্ধুগুলো শহুরে সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র প্যাশনেট আলোচনা করত নিজেদের মধ্যে, তখন আমার নিজেকে খুব একলা মনে হত। মনে হত, আমি এখানে ‘বিলং’ করি না, আমার জায়গা অন্য কোথাও, হয়তো অনেক নীচেই কোথাও! সহপাঠীদের থেকে তখন একটা অদ্ভুত দুরত্ব তৈরি হত। তখন ভাবতাম, এই ভেদাভেদটা নিশ্চয়ই ধনী-দরিদ্র, গ্রাম-শহর— এই বৈষম্যকে ভিত্তি করে। এখন বুঝি, এই বৈষম্যের আরও অনেক কারণ ছিল। মূলত দুটো কারণে আমি এই সময় ভেঙে পড়িনি। অনেক মাস্টারমশাই আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন, তাঁদের এক জন আমার সমস্ত বেদনার কথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মন দিয়ে শুনতেন। দুই, এই পরিস্থিতিটা আমার মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার ও ঘুরে দাঁড়ানোর এক তীব্র জেদ তৈরি করে।
উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করে, কলকাতার এক নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্সের ভর্তি-পরীক্ষায় বসি। পরীক্ষা মোটামুটি হয়েছিল। কিন্তু রেজাল্ট বেরোতে বেশ দেরি হচ্ছিল। এ দিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রায় শেষের দিকে। তখন, যেখানে অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়েছি, সেখানকার বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বললাম। উনি কথা বললেন বটে, কিন্তু এ-ও জানিয়ে দিলেন, আমি এ রকম একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার যোগ্য নই। কিন্তু কয়েক দিন বাদে রেজাল্ট বেরল, দেখা গেল, রিজার্ভড ক্যাটিগরিতে আমার নাম বেরিয়েছে। ভর্তি হতে গেলাম। সেই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হল। উনি যারপরনাই অখুশি হলেন আমাকে দেখে। মুখ ভর্তি বিরক্তি। আমার নিজেকে খুব অপমানিত লাগল। সেই সঙ্গে অবশ্য চাড় দিল, নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ। ফার্স্ট সেমেস্টারেই আমি ফার্স্ট ক্লাস পেলাম। কয়েক সেমেস্টার পর তো এক বার ফার্স্টও হলাম। সেই শিক্ষক পরে খুব সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু শুরুর সেই ক্ষতটা এখনও টাটায়।
এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পড়তে সাহিত্যের একটা থিয়োরি আমার খুব ভাল লেগে গেল। সেইটা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা শুরু করলাম। কিন্তু যে অধ্যাপক এই বিষয়টি দেখভাল করতেন, তিনি আমাকে নানা ভাবে অপমান করা শুরু করলেন। আমার সহপাঠীদের সামনেই বলতে লাগলেন, ‘ও এ সব পড়ে কী করবে? ওর যোগ্যতাই নেই!’ যদিও আমি অনেক ভেবেও বুঝতে পারতাম না, আমি কেন যোগ্য নই। রোজ রোজ এই হ্যাটা দেওয়া কথাবার্তা শুনতে শুনতে, ওঁর সহাস্য অপমান সইতে সইতে, খুব হতাশ লাগত। আমার মাথায় ফের জেদ চেপে গেল, আমি ওঁর সাহায্য ছাড়াই ওই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম।
এই নিয়ে লিখে ও বলে আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রচুর প্রশংসা পেলাম। এই ধরনের অবহেলা ও বঞ্চনা আমি আরও কয়েক জনের কাছ থেকে পেয়েছি। তবে এত কিছুর মধ্যেও এখানে পড়াশোনা করতে পেরেছি, কারণ প্রথম দিকে না হলেও পরের দিকে, মানে সাফল্য পাওয়ার পরে, বেশ কিছু মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশ্য সাফল্য পাওয়ার আগে এঁদের অনেকেই পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি!
মাস্টার্স পড়বার সময় বিদেশে রিসার্চের জন্য আবেদন করি। রেকমেন্ডেশনের জন্য এক জন শিক্ষকের কাছে গেলে, আমার সহপাঠীদের সামনেই উনি আমাকে গালাগাল করতে থাকলেন। বললেন, আমার মতো এক জন ছাত্র বিদেশে অ্যাপ্লাই করার স্বপ্ন দেখি কোন সাহসে? সে দিন করিডরে, কয়েক জন বন্ধুর সামনে দাঁড়িয়ে আমি যেন লজ্জায়-অপমানে মাটিতে মিশে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে কেঁদেছিলাম একা, অঝোরে। পরে সেই শিক্ষকও তাঁর আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন, সাহায্যও করেছিলেন নানা ভাবে। আজ বিদেশ থেকে অনেক আমন্ত্রণ পাই, বক্তৃতা দেওয়ার। কিন্তু সে দিনের সেই করিডর, সেই অপমান, কোথায় একটা যেন লেপটে আছে।
অপমান সুতীব্র হতে থাকে, যখন আমি এই শহরেরই একটি খুব নামজাদা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার চাকরি পাই। চাকরিটি পাই পুরোপুরি নিজের যোগ্যতায়। মাধ্যমিক থেকে এম ফিল পর্যন্ত সব পরীক্ষাতেই কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছি। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রচুর ফেলোশিপ ও স্কলারশিপ পেয়েছি। প্রচুর গবেষণাপত্র লিখেছি এবং এই চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে একটি কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে দু’বছর পড়িয়েছি। ভারতের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পূর্ণ যোগ্যতা আমার আছে।
এ সব সত্ত্বেও চাকরি পাওয়ার পর পরই নানা জাত-পাত ভিত্তিক ‘ডিসক্রিমিনেশন’-এর অভিজ্ঞতা শুরু হয়। যাদেরকে খুব কাছের লোক মনে করতাম, এই চাকরি পাওয়ার পর তারা হঠাৎ অদ্ভুত রকম উদাসীন হয়ে গেল। যারা নিজেরাই আমাকে আগে নানা সাফল্যের ঘটনায় অভিনন্দন জানাত, বা আমার ওপর নির্ভর করত নানা ভাবে, তাদের মধ্যে ক’জন হঠাৎ বলতে শুরু করল, ওর তো ‘সংরক্ষণ’ আছে, তাই চাকরিটা পেয়েছে। অনেকে হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল।
আরও আছে। শিক্ষিত মহলের অনেকে, যারা আমাকে আদপে চেনেই না, তারা বলতে শুরু করল: এই প্রতিষ্ঠানটা বেশ ঠিকঠাক চলছিল, তার পর সুন্দরবন থেকে কে একটা এল, এ বার এটা নিশ্চিত ডুববে। একটি ছাত্রী পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়ে সোশাল মিডিয়াতে ঘটা করে লিখল: এক জন তপসিলি জাতিভুক্ত গণ্ডমূর্খ তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ফুটবল খেলেছে! যদিও তার কম নম্বর পাওয়ার ব্যাপারে আমার কোনওই হাত ছিল না। কয়েক জন ছাত্র বলা শুরু করল, এই লোকটি এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঐতিহ্য’ নষ্ট করছে।
এক দিন ক্যাম্পাসে যখন ক্লাস নিতে যাচ্ছি, আমাকে একটা কুকুর কামড়াল। কুকুরটা বোধহয় অসুস্থ ছিল। কারণ এমনিই আমাকে কামড়ে দিল, আমার তরফ থেকে কোনও ‘প্রোভোকেশন’ ছিল না। আমি সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবে কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটা জানালাম। তার পরই ঘটনা নানা মোড় নিতে থাকে। আমি অ্যানিম্যাল রাইটস কমিশন থেকে একটি চিঠি পাই: আমি নাকি কুকুরে কামড়ানোর মিথ্যে অভিযোগে ক্যাম্পাস থেকে কুকুর তাড়ানোর বন্দোবস্ত করছি। আমি নাকি কুকুরগুলোকে খাঁচায় রাখার পরামর্শ দিয়েছি। এই চিঠিতে আমাকে অ্যারেস্ট করারও হুমকি দেওয়া হয়। এবং সত্যি সত্যি, ক্যাম্পাসের মধ্যেই, কয়েক দিন পর পুলিশ এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এ সবের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক জন ছাত্রছাত্রী সোশাল মিডিয়ায় ও নিজেদের মধ্যে নানা ভাবে আমার নিন্দা করতে থাকে। বলে, আমি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দূষণ করছি। বলে, আমার মতো মানুষকে কুকুরে কামড়ানোই উচিত। বলতে থাকে, তপসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তরা কুকুরের থেকেও নিকৃষ্ট।
কিন্তু আমার জন্য আরও, আরও অপমান অবশিষ্ট ছিল এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে। কিছু দিন আগেই জানতে পারি, যে কুকুরটা আমাকে কামড়েছিল, সেই কুকুরটির নামে আমাকে ডাকা হচ্ছে— আবার অনেক ছাত্রছাত্রী সেই কুকুরটাকে আমার নামে ডাকছে! এক জন শিক্ষকের পক্ষে, সংগ্রাম করতে করতে কেন্দ্রে উঠে আসা এক জন প্রান্তিক মানুষের পক্ষে, এর থেকে নিকৃষ্ট অপমান আর কী হতে পারে!
এ-সব লড়াইয়ের মধ্যেই এক দিন ঘটে যায় মন খানখান করে দেওয়া আর একটা ঘটনা। যে মানুষটাকে ভালবাসতাম ব্যক্তিগত জীবনে, সে-ও ভয় পেতে থাকে, আমার সঙ্গে জীবন যাপন করতে সে হয়তো পুরোপুরি ‘পেরে উঠবে’ না। এই শহরে আমার কোনও বাড়ি নেই। কোনও সামাজিক স্টেটাস নেই। আমার পরিবারে অন্য কেউ উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবর্ণ, চাকরিরত নয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। জলাতঙ্কের ইঞ্জেকশনের কারণে জ্বর। সর্বসমক্ষে নিন্দা। সর্বোপরি পুলিশ অ্যাকশনের ভয়— এ সব কিছু মিলিয়ে এক ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রণায় কয়েকটা মাস আমার কেটেছে। সত্যি বলতে কী, তখনই আমার প্রথম সন্দেহ হয়, এ ভাবে আমি সত্যি কত দিন বেঁচে থাকতে পারব। আর কত, কত লড়াই আমাকে করতে হবে।
হায়দরাবাদের হস্টেল থেকে বিতাড়িত, অপমানিত, অবহেলিত রোহিত ভুমেলা যখন এই শীতে খোলা আকাশের নীচে রাতের পর রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকেও কি ঠিক এমনই কোনও নৈরাশ্য ভর করেছিল?
আমার মনে পড়ছে একটা ইমেজ। বাবাসাহেব আম্বেদকরের একটা বিশাল প্রতিকৃতি পাশে নিয়ে রোহিত হস্টেল থেকে বেরিয়ে আসছেন। আমার কাছে এই ইমেজটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এই ইমেজ আর বাবাসাহেবের আদর্শ ও চিন্তা আঁকড়ে ছিলেন বলেই যত দিন বেঁচেছিলেন, রোহিত মাথা উঁচু করে বেঁচেছিলেন।
এই সব অপমান সহ্য করতে করতে, বেঁচে থাকার জন্য, সম্মানের জন্য আর কত লড়াই করতে হবে— এই সব ভাবতে ভাবতে, আমার হাতে এসে পড়ে বাবাসাহেব আম্বেদকরের 'Annihilation of Caste' ও অন্যান্য লেখা। জানতে পারি এক অলিখিত ‘ডিসক্রিমিনেশন’-এর ইতিহাস। খুঁজে পাই আমার ক্রমাগত অপমানের কারণ, যাকে এক কথায় বলা যায় ‘কাস্টিজম’। বুঝতে পারি, আমার জীবনের সব থেকে মুল্যবান লড়াই এখনও বাকি। বুঝতে পারি, এই লড়াই শুধু আমার নিজের অস্তিত্বের জন্য নয়, এ লড়াই কোটি কোটি মানুষের এক জন হয়ে তাদেরই পাশে দাঁড়ানোর লড়াই। আর তখনই রোহিতের মত আমিও ‘দলিত’ হয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করা শুরু করি ‘দলিত’ মানুষের অধিকার নিয়ে।
আর ঠিক এই ‘দলিত’ হয়ে নিজের জন্য ও সহ-‘দলিত’দের জন্য প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে রোহিত ও আমার মতো মানুষের আত্মহত্যার বীজ। এ এক অদ্ভুত লড়াই। এ লড়াই থেকে দূরে থাকা একজন অবহেলিত, ন্যায়পরায়ণ, সংগ্রামী মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এই লড়াইয়ে নামলে ব্যক্তি-স্বার্থ আর সমষ্টি-স্বার্থ পুরোপুরি এক হয়ে যায়। আর তাতে সেই ব্যক্তির ঘটে আত্মহনন। যখন গোটা জীবন এক জন মানুষকে সামাজিক একটা ব্যাধির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে যেতে হয়, নিজের ব্যক্তিগত ভাল-লাগার কাজকর্মগুলোকে, ভালবাসার মানুষগুলোকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে, আর সবাই যখন তাকে দলিত-বিপ্লবী বলে ‘ট্যাগ’ করে দেয়, তখন এই একটি পরিচয় তার বৃহত্তর সত্তাকে খুন করে ফেলে। তার নিজস্ব জীবনে নেমে আসে এক চরম শূন্যতা।
রোহিত লিখেছেন, তিনি কার্ল সাগান-এর ঘরানার বিজ্ঞান-লেখক হতে চেয়েছিলেন। রোহিতের মতো আমারও জীবনে নিজস্ব কিছু ইচ্ছে আছে। কিন্তু আজ যখন আমি নিজের অপমানের কথা, আমাদের অপমানের কথা লিখতে লিখতে দলিত-বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত হচ্ছি, তখন ভয় হয়— কখনও কি মানুষ পুরোপুরি আমার নাম-পদবি-সংরক্ষণের বাইরে বেরিয়ে আমাকে দেখবে? আমি কখনও পুরোপুরি আমার দলিত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে, আর পাঁচ জন মানুষের মত বাঁচতে পারব?