Lady Nancy Witcher

তিনিই প্রথমা

একশো বছর আগে আজকের দিনেই ব্রিটেনের পার্লামেন্টে আসন গ্রহণ করেন ন্যান্সি অ্যাস্টর। দুনিয়ার আইনসভায় প্রথম নারী। সুবর্ণ বসু ১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তৈরির পর কোনও মহিলা সেখানে পদার্পণ করেননি। গণতন্ত্রের সেই সৌধে প্রথম মহিলার পদক্ষেপ ঘটল পার্লামেন্ট-প্রতিষ্ঠার ৬৫৪ বছর পর— ন্যান্সি অ্যাস্টর! আজকের দুনিয়ায় মিশেল ওবামা থেকে বাংলার নুসরত-মিমি-লকেট, সকলেই বুঝি সেই পয়লা ডিসেম্বরের উত্তরাধিকার।

Advertisement

সুবর্ণ বসু

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৯
Share:

ন্যান্সি অ্যাস্ট

আজকের তারিখটি পৃথিবীর ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। এর গুরুত্ব সম্ভবত ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবসের চেয়েও বেশি। এ দিনই, ১৯১৯ সালের পয়লা ডিসেম্বর, হাউস অব কমন্‌স-এর প্রথম মহিলা সদস্য হিসেবে আসন গ্রহণ করেন লেডি ন্যান্সি উইচার ল্যাংহর্ন অ্যাস্টর।

Advertisement

১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তৈরির পর কোনও মহিলা সেখানে পদার্পণ করেননি। গণতন্ত্রের সেই সৌধে প্রথম মহিলার পদক্ষেপ ঘটল পার্লামেন্ট-প্রতিষ্ঠার ৬৫৪ বছর পর— ন্যান্সি অ্যাস্টর! আজকের দুনিয়ায় মিশেল ওবামা থেকে বাংলার নুসরত-মিমি-লকেট, সকলেই বুঝি সেই পয়লা ডিসেম্বরের উত্তরাধিকার।

আমেরিকার ভার্জিনিয়া প্রদেশে ১৮৭৯ সালের ১৯ মে ন্যান্সির জন্ম। মা-বাবার এগারোটি সন্তানের মধ্যে তিনি অষ্টম। নিউ ইয়র্ক সিটিতে লেখাপড়া করতে গিয়ে ন্যান্সির সঙ্গে প্রেম হয় মার্কিন সোশ্যালাইট দ্বিতীয় রবার্ট গোল্ড শ-এর। ১৮৯৭-এর ২৭ অক্টোবর তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু সেই বিয়ে পাঁচ বছরও টেকেনি, ১৯০৩ সালে বিচ্ছেদ। বাবার কাছে ফিরে এলেন ন্যান্সি।

Advertisement

দু’বছর পর ইংল্যান্ডে চলে এলেন ন্যান্সি। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের চুম্বকে ঘায়েল হল অভিজাত ব্রিটিশ সমাজ। আলাপ হল ধনী পরিবারের সন্তান ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টরের সঙ্গে। অতঃপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হল না তাঁদের।

কনজ়ারভেটিভ পার্টি অব প্লাইমাউথ, সাটন-এর তরফে এমপি ছিলেন ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টর। ১৯১৯ সালে পারিবারিক কারণে তিনি পদত্যাগ করলে, ওই আসনের জন্য প্রার্থী হন ন্যান্সি। তখন তাঁর বয়স ৪০। সকলকে অবাক করে দিয়ে বিপুল ব্যবধানে ভোটে জিতে পার্লামেন্টের সদস্য হলেন তিনি। অ্যাস্টর পরিবারের পরিচিতিই তাঁর সাফল্যের মূলে, এই কথার উত্তরে তাঁর সরস মন্তব্য, ‘‘আমি আমার স্বামীকে ছাপিয়ে গিয়েছি, সব বিবাহিত মহিলারাই তা-ই করেন।’’

নিজস্ব ভঙ্গিতে নারীমুক্তির কথা বারবার বলেছেন ন্যান্সি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা ছেলেদের টেক্কা দেওয়ার কথা বলছি না, সেটা আমরা চিরকালই দিয়ে এসেছি, আমাদের দাবি সমান অধিকার।’’ এ বিষয়ে একবার উইনস্টন চার্চিলের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌যুদ্ধ হয়। ব্লেনহেম প্যালেসে উইনস্টন চার্চিলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও ন্যান্সি নারীমুক্তির নানা অ্যাজেন্ডা তুলে ধরেন। প্রতিটি বক্তব্যেরই বিরোধিতা করেন চার্চিল। হাল ছেড়ে দিয়ে ন্যান্সি বলেন, ‘‘উইনস্টন, তুমি যদি আমার স্বামী হতে, আমি নিশ্চিত তোমার কফিতে বিষ মিশিয়ে দিতাম!’’ চার্চিলও পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি আমার স্ত্রী হতে, আমি কফিটা খেয়ে নিতাম।’’

১৯১৯ সাল থেকে টানা ২৬ বছর পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন ন্যান্সি অ্যাস্টর। ১৯৪৫ সালে অবসর নেওয়ার সময় তাঁর বয়স ৬৬। তার পরও ১৯ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। স্বভাবসিদ্ধ রসবোধ হারাননি মৃত্যুশয্যাতেও। বিছানার চারপাশে মানুষের জমায়েত দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আজ কি আমি মারা যাচ্ছি! না কি আজ আমার জন্মদিন?’’

পঁচাশি পূর্ণ হওয়ার আগেই, ১৯৬৪ সালের ২ মে ন্যান্সি অ্যাস্টরের মৃত্যু হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement