Shantiniketan

Surendranath Kar: শান্তিনিকেতনের প্রায় সব স্থাপত্যেই তাঁর শিল্পচিন্তা

তিনি সুরেন্দ্রনাথ কর। গৃহনির্মাণ থেকে নাটকের সজ্জা, তিনিই ছিলেন কবির প্রধান আস্থাভাজন।

Advertisement

পীতম সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৬:৪৯
Share:

স্থপতি: সুরেন্দ্রনাথ কর

১৩৪২ বঙ্গাব্দের ২৭ বৈশাখ। শান্তিনিকেতনে কবির ৭৫তম জন্মোৎসব পালনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকায়। আম্রকুঞ্জে কবি উপস্থিত হতেই শঙ্খধ্বনি হল— ‘উদ্বোধন সঙ্গীতের পর পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী ও পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদ প্রার্থনা করিয়া সংস্কৃত স্তোত্র পাঠ করেন।’ অনুষ্ঠানের পর একটি শোভাযাত্রা ‘নবনির্ম্মিত কুটীর “শ্যামলী”র’ দিকে যাত্রা করে। কারণ এবার থেকে নতুন আবাস ‘শ্যামলী’তে রবীন্দ্রনাথ থাকতে শুরু করবেন। গৃহপ্রবেশের আগে বলেছিলেন, ‘পরিকল্পনাকারীগণ ইহাকে একটি সুন্দর কলা শিল্পের নিদর্শনে পরিণত করেছেন।’ একটি কবিতায় এই গৃহের স্থাপত্যশিল্পীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেন। কবিতাটির কয়েকটি পঙ্‌ক্তি, ‘হে সুরেন্দ্র, গুণী তুমি, / তোমারে আদেশ দিল, ধ্যানে তব, মোর মাতৃভূমি—

Advertisement

অপরূপ রূপ দিতে শ্যাম স্নিগ্ধ তাঁর মমতারে / অপূর্ব্ব নৈপুণ্যবলে।’

স্বয়ং কবি যাকে ‘গুণী তুমি’ বলে স্বীকার করেছেন, তিনি শান্তিনিকেতন আশ্রমের রবীন্দ্রপরিকর স্থপতি সুরেন্দ্রনাথ কর। ১২৮৮ বঙ্গাব্দে তরুণ রবীন্দ্রনাথ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কাছে চন্দননগরে গিয়ে কিছু দিন থাকেন। তখন রবীন্দ্রনাথের চোখে একটি অন্য ধারার মাটির ঘর নজর কাড়ে। শান্তিনিকেতনে তিনি এমন একটি মাটির বাড়ি তৈরি করিয়ে সেখানে থাকার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নের কথা তিনি কলাভবনের শিক্ষক-শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ করকে বলেছিলেন। এমনভাবে গড়তে হবে যাতে ইঁট পাথরের অহঙ্কারও লজ্জা পায়। মাটির ঘরকে অপরূপ করে তোলার কবির এই অভিলাষ পূরণ করতে নেমে পড়েছিলেন কবির বিশ্বস্ত সহচর সুরেন্দ্রনাথ।

Advertisement

সুরেন্দ্রনাথের মামাতো দাদা নন্দলাল বসুর কাছেই তাঁর চিত্রবিদ্যার প্রাথমিক শিক্ষা। ১৮৯২ সালের ৫ মার্চ বিহারের মুঙ্গের জেলার হাবেলি খড়্গপুরে নন্দলাল বসুর পিসির কোলে জন্মেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ। ১১ বছর বয়সে মামাতো দাদার হাত ধরেই মুঙ্গের থেকে সোজা কলকাতায়। সুরেন্দ্রনাথ ‘নতুনদা’ বলে ডাকতেন নন্দলালকে।

১৯১১ সাল। সুরেন্দ্রনাথ তখন উনিশ বছরের যুবক। নন্দলাল তাঁকে নিয়ে গেলেন অবনীন্দ্রনাথের কাছে। অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে পরামর্শ দেন, ‘দাদার মতো ছবি-আঁকার লাইনে ঢুকে পড়ো! দেখবে ভাল লাগবে।’ এর পর অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে ছবি আঁকা শেখান। সেই সময়ে আঁকা তাঁর বেশ কিছু ছবি তৎকালীন বড়লাট লর্ড কারমাইকেল কিনেছিলেন। মুগা কাপড়ের উপর ব্রাশের লাইনে সামান্য রঙের ছোঁয়ায় আঁকা সাঁওতাল পুরুষ ও তার সঙ্গিনীর ঘরে ফেরার ‘কমরেড’ নামক ছবিটি বিখ্যাত হয়েছিল।

এর চার বছর পর জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান মন্দির তৈরির সময় এই দাদা-ভাইয়ের শরণাপন্ন হন। এই মন্দিরেই শুরু হল তাঁদের স্বতন্ত্র কাজ। ধৈর্যসহকারে আঁকতে লাগলেন অজন্তার মতো নকশা, খোঁপায় ফুল লাগাতে মগ্ন নারীর ছবিসহ একটি নিসর্গ চিত্র। নন্দলালও সেখানে ফ্রেসকো আঁকতে ব্যস্ত। হঠাৎ দ্বারভাঙ্গা থেকে খবর এল বাবা অসুস্থ, কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেলেন নন্দলাল। ‘নতুনদা’র অসমাপ্ত কাজও শেষ করলেন সুরেন্দ্রনাথ।

এর পর ১৯১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে কবি জোড়াসাঁকো বাড়ির ‘বিচিত্রা’য় অল্পবয়সি সুরেন্দ্রনাথকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘পূব বাংলায় কোনোদিন গিয়েছ কি?’ প্রশ্ন করেই আর অপেক্ষা করেননি উত্তরের জন্য। নিজেই বললেন, ‘আমি যাচ্ছি, কুষ্টিয়া হয়ে শিলাইদহে,—সেখানে থাকব কয়েকদিন, তারপর বোটে করে পদ্মায়। তুমিও যেতে পারো আমার সঙ্গে।’ তরুণ শিল্পীর চোখে স্বপ্নের মায়া তৈরি করে দিয়ে কবি বলেছিলেন, ‘চমৎকার জায়গা — খোলা আকাশের নিচে বোটে ভেসে বেড়াব। তোমার ভাল লাগবে।’ কবির এমন আমন্ত্রণ কি দূরে সরিয়ে রাখা যায়! সুরেন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণের ভাষায়— ‘পরদিন নতুনদার মত নিয়ে গুরুদেবের সঙ্গ নিলুম। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া হয়ে শিলাইদহ।’ সেখানে তিন-চারদিন ছিলেন। শিলাইদহে জমিদারির কাজ মিটিয়ে কবি তরুণ চিত্রশিল্পীকে সঙ্গে করে বোটে করে গড়াই নদী হয়ে পদ্মার এক চরের ধারে নোঙর করলেন। মুঙ্গের থেকে কলকাতা হয়ে সোজা একেবারে পদ্মার ওপর অবারিত আকাশের নীচে। তরুণ সুরেন্দ্রনাথ সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন এমন, ‘পদ্মার জলরাশির বিস্তার, প্রকাণ্ড খোলা আকাশ, পদ্মার চরে ঝাউবন, জ্যোৎস্নায় উদ্ভাসিত পদ্মার চর, আকাশ-ছাওয়া বুনো হাঁসের দল।’ সঙ্গে পদ্মায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের রঙের খেলা দেখে তিনি মুগ্ধ। পূর্ব বাংলায় ভ্রমণের দিন ফুরিয়ে আসার কালে কবি প্রস্তাব দিলেন, ‘তুমি শান্তিনিকেতনে এসো। ওখানেও এমনি খোলা আকাশের নীচে অবারিত মাঠ, খোয়াই, আশেপাশে সব সাঁওতাল আমাদের প্রতিবেশী— তোমার ভালই লাগবে।’ এও বললেন প্রয়োজনে সুরেন্দ্রনাথের বাবার অনুমতি চেয়ে কবি চিঠি লিখতেও রাজি। পরদিন নন্দলাল কবির কাছে এলে তিনি গুরুদেবের দেওয়া প্রস্তাবের কথাটা পাড়লেন। প্রস্তাব শুনে তাঁর নতুনদা তাঁকে উৎসাহিত করলেন। সুরেন্দ্রনাথ সেখানেই কবিকে জানালেন ‘শান্তিনিকেতনে যাব’।

১৯১৭ সালে সুরেন্দ্রনাথ চলে এলেন শান্তিনিকেতনে। আশ্রম তখন প্রায় ধূ ধূ প্রান্তর। চার দিক খোলা। গাছপালাও কম। ‘দেহলী’তে কবি থাকতেন। ‘দেহলী’র সংলগ্ন ‘নতুন বাড়ি’তে থাকতেন আশ্রমের অধ্যাপকরা। আর ছিল বর্তমান ‘সিংহসদন’-এর স্থানে খড়ের চাল আর মাটির দেয়ালের পরপর ‘সতীশ কুটির’, ‘মোহিত কুটির’। উল্টো দিকে মাটির দেয়ালে টালির চালের ‘আদিকুটির’। এই উদার প্রান্তরে সুরেন্দ্রনাথ এসে পড়লেন। শুরু হল তাঁর কাজ। প্রথমেই তৈরি করলেন ‘শিশুবিভাগ’, পরে নাম হয় ‘সন্তোষালয়’। এর পর তৈরি করলেন লাইব্রেরির উত্তরে বড় কুয়ো ও সংলগ্ন স্নানাগার। তখনকার শান্তিনিকেতনে বাড়িঘর সবই একান্ত প্রয়োজনেই তৈরি হত, কারণ আর্থিক সংস্থান ছিল সীমিত। ১৯১৯ সালে একতলা ‘দ্বারিক’ দোতলা হলে কলাভবনের যাত্রা শুরু হল। সুরেন্দ্রনাথ যোগ দিলেন শিক্ষক হিসেবে।

১৯২৪ সালে ইউরোপ সফরকালে কবি তাঁর এই তরুণ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চললেন। ইটালিতে থাকাকালীন মাইকেল এঞ্জেলোর বিখ্যাত কাজ দেখা ছিল তাঁর অনন্য অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া ইউরোপে লিথোগ্রাফের কাজ দেখে উৎসাহিত হয়ে দেশে ফিরে তিনি কলাভবনে লিথোগ্রাফ শেখাতে শুরু করে দেন। তিন বছর পর আবার কবির সঙ্গী হয়ে পাড়ি দিলেন ইন্দোনেশিয়াসহ মালয়, জাভা, সুমাত্রায়। সুরেন্দ্রনাথ এই সফর থেকে অনেক কিছু শিখে আসেন। ওখানকার নারী ও পুরুষদের সাজপোশাক, গৃহসজ্জা, মঞ্চসজ্জায় বাটিকের ব্যবহার তাঁকে আকর্ষণ করে। ওখানকার আসবাবপত্র, দীপদান, বিভিন্ন আকৃতির পাত্রের স্কেচ এঁকে নিয়ে এসেছিলেন, পরে উত্তরায়ণের অভ্যন্তরের সজ্জায় সে সব কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন নাটকে, গীতিনাট্যে, নৃত্যনাট্যের মঞ্চসজ্জাসহ কলাকুশলীদের বেশবিন্যাসেও সেই ডিজ়াইন ব্যবহার করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ সুরেন্দ্রনাথের সৌন্দর্যবোধে বরাবর উৎসাহ দিয়েছেন। সুরেন্দ্রনাথকে একটি চিঠিতে কবি লিখছেন, ‘সুরেন, উৎসবের সময় লাল রঙে কাপড় রাঙাবার উল্লেখ আছে— সেই সময় অন্তত লাল চাদর সবাইকেই পরিয়ে দিতে হবে। ভিতরে বসন্তী উপরে লাল।’ এর পর লিখলেন, ‘আমার কাপড় সম্বন্ধে কিছু স্থির করেছ?’ নিজের জন্য কবি বাসন্তী ও লাল রঙের কাপড়ের কথা ভেবে রাখতে বলেছিলেন এই শিল্পীকে।

কবির এই অনুজ সহচরটি রবীন্দ্রনাথের যৌবনের সুহৃদ শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের কন্যা, শান্তিনিকেতনের খ্যাতনামা গায়িকা রমা মজুমদার ওরফে নুটুকে প্রেম নিবেদন করেন। অবশেষে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ কবির জন্মতিথিতে দু’জনে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। রবীন্দ্রনাথ এই বিয়েতে আশীর্বাণী দিয়ে ‘পরিণয়’ নামাঙ্কিত একটি কবিতা লেখেন। একটি ‘নামপত্রী’ও লিখে দেন, ‘শুভদিনে, হে রমা, সুরমা তব নাম/ সুরেন্দ্রের নামে গাঁথিলাম।’ এর তিন বছরের মাথায় তাঁদের ঘরে পুত্রসন্তান জন্মালে কবি চিঠি লিখে শিশুকে শুধু আশীর্বাদই দেননি, সঙ্গে ‘তোমার ছেলের নামের তালিকা পাঠাই’ বলে ছ’টি নাম পাঠিয়ে বেছে নিতে বলেছিলেন। দুঃখের কথা, সেই বছরের মাঘ মাসে রমা কর মজুমদার স্বামী-পুত্র-পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরলোকে পাড়ি দেন।

শান্তিনিকেতনের স্থাপত্যে সিংহসদন থেকে কলাভবনের নন্দন, তার অদূরেই মাটি ও আলকাতরায় মেশানো বাড়িটিসহ দিনান্তিকা, চিনাভবন, হিন্দীভবন, সংগীতভবন, রতনকুঠি, উত্তরায়ণ চত্বরের উদয়ন, কোণার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ, উদীচী এবং তৎসংলগ্ন বাগান সবেতেই সুরেন্দ্রনাথের স্পর্শ রয়েছে।

সুরেন্দ্রনাথের অসংখ্য কীর্তি আজও সারা দেশের মনোহরণ করে। পরের দিকে আঁকা ছেড়ে স্থাপত্যের দিকেই ঝুঁকে ছিলেন। শুধু তো বিশ্বভারতীর স্থাপত্য নয়, দেশের বিভিন্ন স্থাপত্যেও তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছিলেন। উদয়ন বাড়িটি দেখে ধনপতি আম্বালাল সারাভাই আমদাবাদে তাঁর বিরাট প্রাসাদের নকশার দায়িত্ব তাঁকে দিয়ে করিয়েছিলেন। এ ছাড়াও বোকারো তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়া হলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাসস্থানের জন্য টাউনশিপটির নকশাটি সুরেন্দ্রনাথেরই করা। সব কিছু পরেও তিনি ছিলেন নীরব কর্মী। সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজটি এমন শর্তে করেছিলেন যে, সেখানে যেন কোনও ভাবেই তাঁর নাম উল্লেখ না করা হয়। মহাজাতি সদনের স্থাপত্যের নকশাতেও সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন অদ্বিতীয়।

কবি সুরেন্দ্রনাথকে দু’টি গ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন— ‘রাশিয়ার চিঠি’ এবং ‘আরোগ্য’। ১৯৩৫-৪৭ বিশ্বভারতীর সচিবের কাজ সামলেছেন, পরে ১৯৫১-৫৫ কলাভবনের অধ্যক্ষের পদে কাজ করেন। শেষ বয়সে দুর্গাপুরে পুত্রের কাছে চলে যান। সেই সময়ে স্থানীয় এক বৃদ্ধ বন্ধু সুরেন্দ্রনাথকে রোজ শ্রীমদ্ভগবতগীতা পাঠ করার জন্য অনুরোধ করতেন। এক দিন সুরেন্দ্রনাথ ধীরভাবে হেসে বলেছিলেন, ‘আমি গুরুদেবকে ছুঁয়েছি, তাঁর কবিতা পড়েছি, আমার অন্য কিছু প্রয়োজন নেই।’

তথ্যঋণ ও কৃতজ্ঞতা: ১) কবির আবাস ১: সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য, সিগনেট প্রেস। ২) আর্কিটেকচার অফ শান্তিনিকেতন/ টেগোর’স কনসেপ্ট অফ স্পেস : শমিত দাস, ২০১৩, নিয়োগী বুকস্। ৩) রবীন্দ্রপরিকর সুরেন্দ্রনাথ কর (১৮৯২-১৯৭০)/ জন্মশতবর্ষে নিবেদিত শ্রদ্ধার্ঘ্য: সম্পাদনা শোভন সোম, অনুষ্টুপ।
৪) রাজ্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার।
৫) রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ (২) আনন্দবাজার পত্রিকা-চিত্তরঞ্জন
বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement