ছবি কুণাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: পুরনো আবর্জনা রাখার অত্যন্ত নোংরা একটি ঘরে অমরেন্দ্রনাথকে লুকিয়ে রেখে পুলিশের চোখে ধুলো দেয় ঝাঁকড়ি। পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার আনন্দে বাকি সময়টা বোন-ভগ্নিপতির সঙ্গে গল্প করেই কাটিয়ে দিলেন অমরেন্দ্রনাথ। অন্য দিকে জেল থেকে ফিরে ক্রমশ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় থিতু হয়েছেন নীলমণি। রমানাথ এ সময়ে এক দিন তাঁকে মনে করালেন, কনকের বিয়েটা আর দেরি করা যাবে না। ফেলে রাখা যাবে না উমানাথের বিয়ের কথাবার্তাও। নীলমণি ঠিক করেন, পরের দিনই সামতাবেড়ে যাবেন উমানাথের জন্য মেয়ে দেখতে। রাতে কথাপ্রসঙ্গে স্ত্রী বিভাবতী নীলমণিকে জানান, অল্প দূরেই ভূতের বাড়িতে পুলিশ এসেছিল। বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জামের সঙ্গে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক জন স্ত্রীলোককেও। খবর শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন নীলমণি। ভূতের বাড়ির স্ত্রীলোকটির নাম নৃপময়ী। সে নীলমণির পূর্বপরিচিতা।
কোনও এক কাজের ছুতোয় তার বাড়ি গিয়েছিলেন নীলমণি। মেয়েটির নাম জানতে নয়, তাকে দেখতে। আরও গভীর ভাবে তাকে জানতে। আর যাওয়া হয়নি ও বাড়িতে। গভীর ভাবে জানাও হয়নি নৃপময়ীকে। দেশকে ভালবাসতে গিয়ে নৃপময়ীর জন্য ভালবাসাটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। এক দিন শুনলেন নৃপময়ীর বাবা মারা গেছেন। নৃপময়ীর বাবা ব্রাহ্ম ছিলেন। পেশায় ডাক্তার। ব্রাহ্মসমাজের অনেকে এসেছিলেন। নীলমণিও গিয়েছিলেন এক সময়ে। নৃপময়ী তাকে অগ্রাহ্য করেছিল। যেন বলতে চাইছিল— কেন এলে তুমি। সেই শেষ যাওয়া ও বাড়িতে। তার পর আর যাননি।
এর পর নৃপময়ী হাজারিবাগে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। অযত্নে, অবহেলায় বাড়িটা একটু একটু করে ভূতের বাড়ি হয়ে গেল।
এই ভূতটাই যে নৃপময়ী, সেটা নীলমণি জেনেছিলেন অনেক পরে। উত্তরপাড়ায় অমরেন্দ্রনাথের বাড়িতে একটা গোপন সভা চলছিল। একমাত্র এক জন মহিলা বিপ্লবী সকলেরই নজর কাড়ছিলেন। অমরেন্দ্রনাথ সকলের সঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দিলেন। বললেন, “উনি অনেক ধরনের সামাজিক ও বৈপ্লবিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, আধুনিক শক্তিশালী বোমা তৈরির কলাকৌশলও ওঁর জানা আছে। আমার পরিচিত দু’-এক জনকে নিজের হাতে বোমা তৈরির কলাকৌশল ও প্রয়োগ পদ্ধতি উনি শিখিয়েছেন। নীলমণির বয়স আরও একটু কম হলে বলতাম, যোগিনী মা-র কাছে বোমা তৈরি করাটা শিখে নিতে। একই গ্রামের মানুষ যখন ওরা।”
নীলমণি এত ক্ষণ ভাল করে লক্ষ করেননি। বেলঘরে থাকে শুনে তাকালেন মহিলার দিকে। চমকে উঠলেন। দীর্ঘ দুটো দশক পেরিয়ে গেছে। চেহারার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তবু যোগিনী মায়ের মধ্যে তাঁর যৌবনের নৃপময়ীকে খুঁজে পেতে কষ্ট হল না নীলমণির।
“কী গো, তুমি যে চুপ মেরে গেলে!” বিভাবতী বলল, “মেয়েছেলেটাকে চিনতে নাকি তুমি?”
অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসেন নীলমণি। উত্তর দেন, “না না, আমি চিনব কী করে?”
“কী সব্বনেশে কাণ্ড! মেয়েমানুষ বোমা তৈরি করত!” কথাটা বলেই বিভাবতী আবার শুয়ে পড়ে।
নীলমণি কোনও উত্তর না দিয়ে লেখা চিঠিগুলো খামে ভরেন। অনেক রাত হল। তাঁকে এ বার শুতে হবে। ভোর ভোর বেরিয়ে যাবেন সামতাবেড়ের উদ্দেশে। এক গ্লাস জল খেয়ে যখন বিছানায় শুতে গেলেন নীলমণি, তখন বিভাবতী ঘুমোচ্ছে।
২৪
গৌহাটি থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে একটা ছোট্ট গ্রাম বিজয়নগর। সুন্দর, ছিমছাম। মানুষজনের বাস এখানে খুব কম। তাই কোলাহলও শুনতে পাওয়া যায় না।
আত্মগোপনের এমন সুন্দর জায়গা পেয়ে অমরেন্দ্রনাথ উল্লসিত। আজ সপ্তাহখানেক হল তিনি অসমের এই ছোট্ট গ্রামটিতে এসেছেন। একটা পুরনো পরিত্যক্ত বাড়িতে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সঙ্গে আছে নলিনী ঘোষ, অতুল ঘোষ ও উমাশঙ্কর চাটুজ্জে। আর এক জন আছে, বয়সে তাঁদের থেকে যথেষ্ট ছোট। এগারো-বারো হবে। ছেলেটির নাম জগন্নাথ। সবাই ডাকে জগা বলে। জগন্নাথের বাড়ি যে কোথায়, কেউ জানে না। সম্ভবত আশপাশে কোথাও হবে। এখানে আসার পর থেকে সে-ও ভিড়ে গেছে বিপ্লবী দলটার সঙ্গে।
অমরেন্দ্রনাথের নির্দেশ, কেউ কোনও কারণে বাইরে বেরোতে পারবে না। বাইরে বেরোবে শুধু জগা। সেই নির্দেশ মতো জগা বাজারহাট করে, আবার বাইরের খোঁজখবরও এনে দেয়। এক দিন এসে বলল, তাকে কে নাকি অমরেন্দ্রনাথদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
অমরেন্দ্রনাথ উৎকণ্ঠিত, “তুই কী বললি?”
“আমি বললাম, আমার দেশের বাড়ির লোক। এখানে তো আমার থাকতে দেওয়ার জায়গা নেই, তাই ওখানে রেখেছি।”
“বাহ! তোর তো খুব বুদ্ধি দেখছি!” অতুল ঘোষ মন্তব্য করল।
অমরেন্দ্রনাথ বলেন, “উত্তর জগা ঠিক দিলেও, প্রশ্নকর্তা কিন্তু আমাদের গতিবিধির উপর নজর রাখছে। আমাদের বাড়ি বদল করতে হবে। সম্ভব হলে আজ রাতের মধ্যে। একান্ত না হলে, কাল ভোর হওয়ার আগে।”
নলিনী ঘোষ বলল, “এটা তুমি বেশি ভাবছ অমরদা। এলাকার লোকের কৌতূহল হলে, তারা জিজ্ঞেস করবে না?”
অমরেন্দ্রনাথ মুখে বললেন, “বেশ, দেখা যাক।” কিন্তু তাঁর কুঁচকে থাকা ভুরু বলে দিল, তিনি মোটেই নিশ্চিন্ত হচ্ছেন না।
কৃষ্ণপক্ষের রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার। সামনে কিছুই দেখা যায় না। ভূতের মতো চারটি প্রাণী বসে খুব নিচুস্বরে কথা বলছে। হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে সকলেই সচকিত হয়ে উঠল। এটা যে গুলির শব্দ, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধে হল না। অমরেন্দ্রনাথ নলিনীর দিকে তাকালেন। বললেন, “কী বলেছিলাম?”
গম্ভীর মুখে নলিনী উত্তর দিল, “হ্যাঁ বলেছিলেন, কিন্তু এখন করণীয় কী?”
অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “এখন লড়াই করে প্রাণ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। খুব সম্ভবত ওরা এ বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। দেখো, এখন পর পর গুলি করছে। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হয়তো এ বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়বে। পিস্তল নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যাও সকলে। আর সময় পাবে না।”
“আপনি লড়াই করুন, অমরদা। আমরা দেখি, যদি অন্য ব্যবস্থা কিছু করা যায়...” নলিনী বলল।
“কী ব্যবস্থা? পালাবে তো? কী করে?”
“অন্ধকার রাস্তায় ঠিক পালিয়ে যেতে পারব। আমাদের ছোটোখাটো চেহারা। কিন্তু আপনি পারবেন না। আপনার দীর্ঘ চেহারা ওদের চোখে ঠিক ধরা পড়ে যাবে। তার চেয়ে আপনি লড়াই করুন, আর আমরা সেই সুযোগে পালাই।”
অমরেন্দ্রনাথের মুখে একটু হাসি দেখা যায়। বলেন, “ঠিকই বলেছ নলিনী। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে, তোমরা দেখো, কী ভাবে, কোন দিক দিয়ে পালাবে।”
অমরেন্দ্রনাথের এই কথাটির জন্যই যেন ওরা অপেক্ষা করছিল। তার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নলিনী, অতুল ও উমাশঙ্কর পাঁচিল টপকে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। খুব কাছ থেকে অমরেন্দ্রনাথের দিকে একটা গুলি ছুটে এল। পাল্টা গুলি অমরেন্দ্রনাথও চালালেন আড়াল থেকে। তার পর মুহুর্মুহু গুলি ছুটে আসতে লাগল। তাঁর ছোট মাউজ়ার পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ে গেলেন অমরেন্দ্রনাথও। কিন্তু কত ক্ষণ? কত ক্ষণ লড়াই চালাতে পারবেন তিনি? ছোট্ট একটা মাউজ়ার পিস্তল নিয়ে একা একটা পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কত ক্ষণ লড়াই করা যায়?
অমরেন্দ্রনাথ ঠিক করলেন, পালাবেন তিনিও। পুলিশ বাহিনী তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। এক দিকে ঘন জঙ্গল। সেখানে বাহিনী নেই। কিন্তু আছে বন্য জন্তু। অনেক দিন গভীর রাতে তাদের ডাক অমরেন্দ্রনাথের কানে এসেছে। অমরেন্দ্রনাথ ঠিক করলেন, ওই জঙ্গলের পথেই পালাবেন। ইংরেজ পুলিশের হাতে মরার চেয়ে বনের জন্তুদের আক্রমণে মরা ঢের ভাল। একটা গুলি তাঁর পাঁজরের পাশ দিয়ে চলে গিয়ে উল্টো দিকের দেওয়ালে লাগল। অমরেন্দ্রনাথ বুঝলেন, ওরা বাড়িটার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। আর বিলম্ব করা ঠিক হবে না। তিনি পাঁচিল টপকে জঙ্গলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ঘন জঙ্গল। কিছুই দেখা যায় না। পকেটে টর্চ আছে। কিন্তু জ্বালাতে ভরসা হল না, যদি পুলিশের নজরে পড়ে যায়। অন্ধকার হাতড়েই তিনি কোনও রকমে হেঁটে চললেন।
কত ক্ষণ এই ভাবে হাঁটলেন, জানা নেই। এক সময় মনে হল, আর পারছেন না। এই পথের বোধহয় শেষ নেই। বৃথা চেষ্টা। অবসন্ন হয়ে বসে পড়লেন অমরেন্দ্রনাথ। চোখটা লেগে গেল। ঘুমিয়েই পড়েছিলেন হয়তো। হঠাৎ একটা বিকট গর্জনে ঘুমটা ভেঙে গেল তাঁর। সভয়ে পিছনে তাকালেন তিনি। দেখলেন, দুটো চোখ আগুনের মতো জ্বলছে তাঁর হাত দশেক পিছনে। পকেটের পিস্তলটা আঁকড়ে ধরলেন অমরেন্দ্রনাথ। পরক্ষণেই ভাবলেন, গুলি করলে জন্তুটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। সুতরাং, একমাত্র উপায় প্রাণপণে দৌড়নো। অমরেন্দ্রনাথ দৌড়তে শুরু করলেন। অনেক ক্ষণ পর মনে হল, জঙ্গল যেন শেষ হয়েছে।
অমরেন্দ্রনাথ পিছনে তাকালেন, না, কিছুই দেখতে পেলেন না তিনি। অবাক হলেন। ভাবলেন, কোথায় গেল সেই ভয়ঙ্কর জন্তুটা! তাড়া তো করেনি! সত্যিই কি তিনি তাকে দেখেছিলেন। নাকি, সবটাই তাঁর মনের ভুল? কিন্তু, সেই ভয়ঙ্কর গর্জন? সেটাও কি তিনি ভুল শুনেছিলেন?
ভোরের আলো এখনও ভাল করে ফোটেনি। তারই মধ্যে অমরেন্দ্রনাথ দেখলেন, সামনে রেললাইন। একটা ট্রেনও দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় সামনে সিগন্যাল। ট্রেনের কামরার একটা দরজা খোলা পেয়ে অমরেন্দ্রনাথ উঠে পড়লেন। দেখলেন, প্রায় সকলেই ঘুমোচ্ছে। দু’টি লোক জেগে আছে। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। অমরেন্দ্রনাথের কর্ণেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল। তিনি বুঝলেন, লোক দুটি ওই অভিযানেই এসেছিল। এখন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। অভিযানকারী দলের আরও অনেকে নিশ্চয়ই এই ট্রেনে আছে। অমরেন্দ্রনাথ ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন এক পাশে।
ট্রেনের গতি ক্রমশ মন্থর হচ্ছে। হয়তো সামনে কোনও স্টেশন। অমরেন্দ্রনাথ দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ট্রেন থামতেই নেমে গেলেন স্টেশনে। কোন স্টেশন কে জানে! কুয়াশায় ঢেকে গেছে চার দিক। প্ল্যাটফর্মের মাঝামাঝি গেট দিয়ে বেরোনোর মুখে টিকিট-ঘরের কাছে পৌঁছে অমরেন্দ্রনাথ দেখলেন, অনেক লোক ঘুমিয়ে আছে মুড়িসুড়ি দিয়ে। অমরেন্দ্রনাথও তাদের পাশে শুয়ে পড়লেন। ঘুম নয়, ঘুমের ভান করা। হাতে পিস্তলটি শক্ত করে ধরে থাকলেন। বিপদে ওটাই শেষ ভরসা।
হঠাৎ চাদরের আড়াল থেকে দেখলেন, একটি লোক লন্ঠন ঝুলিয়ে আসছে, সঙ্গে দু’জন পুলিশ কনস্টেবল। টিকিটঘরের সামনে এসে লোকগুলো থেমে গেল। নিজেদের মধ্যে কী সব কথা বলল। তার পর একে একে প্রত্যেকটা লোককে ঘুম থেকে জাগিয়ে, জিজ্ঞেস করল কোথা থেকে আসছে, কোথায় যাবে ইত্যাদি। প্রত্যেকেই চাষি। আগের ট্রেনে স্টেশনে নেমে ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছে। আর একটু আলো ফুটলে হাটে যাবে। অমরেন্দ্রনাথ মনে মনে উত্তর তৈরি করে রাখলেন। জিজ্ঞেস করলে ওই এক উত্তরই দেবেন তিনি। কিন্তু তার মুখ দেখলে তো চিনতে পেরে যাবে। মূলত তাকে খুঁজতেই এই তল্লাশি। ট্রেনে আসতে আসতে ওই দুই সহযাত্রীকে বলতে শুনেছেন যে, অসমের সব স্টেশনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন কোনও মতেই অমরেন্দ্রনাথ পালাতে না পারেন।
‘ধরা হয়তো পড়বই’, অমরেন্দ্রনাথ ভাবেন, ‘তবে বিনা যুদ্ধে নয়।’
অমরেন্দ্রনাথ খেয়াল করলেন, সবাই হাটে যাবে শুনে লোকগুলো বিরক্ত হচ্ছে, আর অশ্রাব্য গালিগালাজ করছে। এক সময় অমরেন্দ্রনাথের কাছে এসে এক জন পিছনে লাথি মেরে জিজ্ঞেস করল, “হাটে যাবি নিশ্চয়ই?”
অমরেন্দ্রনাথ চাদর থেকে মুখ বার না করে ঘুম জড়ানো গলায় শুধু একটা শব্দ করল, “হুঁ।”
লোকগুলোর মধ্যে এক জন মন্তব্য করল, “বাস্টার্ড! অল রাস্টিক ফুলস।”
অমরেন্দ্রনাথ চাদরের আড়াল থেকে দেখলেন, ওরা চলে যাচ্ছে। লন্ঠন দুলিয়ে লোকটা আগে হাঁটছে। পিছনে দুই পুলিশ কনস্টেবল। অমরেন্দ্রনাথের মুখে এক চিলতে হাসি দেখা গেল। তার পর বিড়বিড় করে মন্তব্য করলেন, “ইউ বাস্টার্ড ক্লেভার পিপল!”
২৫
বাগবাজারের হরপার্বতীর সঙ্গে খুব ভাব শশিকান্তর। মেধাবী ছাত্র হরপার্বতী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে। কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে গিয়ে আলাপ। শশিকান্তর বিষয় আলাদা হলেও, সে লেখাপড়া-সহ নানা ব্যাপারে হরপার্বতীর পরামর্শ নেয়। শশিকান্তর অবাক লাগে দেখে, হরপার্বতীর অজানা বিষয় কিছু নেই। সব ব্যাপারেই তার অগাধ জ্ঞান। তা সে লেখাপড়াই হোক বা খেলাধুলো, রাজনীতি হোক কিংবা বিনোদন।
মাঝে মাঝে দুজনে নাটক দেখতে যায়। সে দিন স্টার থিয়েটারে নাটক দেখতে গিয়ে খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হল দু’জনের।
ক্রমশ