ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৩
Bengali Serial Novel

অনন্ত পথের যাত্রী

রামানন্দ মুখ তুলে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে মহারাজের দিকে চেয়ে রইলেন। কোনও কথা বললেন না। মহারাজই ফের বললেন, “শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথ মন্দিরের যাবতীয় তত্ত্বাবধানের ভার তোমার উপরে ন্যস্ত থাকবে।”

অবিন সেন

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৩৮
Share:

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

পূর্বানুবৃত্তি: গজপতি মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেবের বিশ্রামের মুহূর্তেই হঠাৎ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন গোবিন্দ বিদ্যাধর। তিনি মহারাজকে বলেন, দক্ষিণের প্রদেশপাল তাঁর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন না। তাঁর বক্তব্য, রাজকার্যে রায় রামানন্দের মন নেই। বর্ষা ভাল না হওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তার উপর কর বসেছে যুদ্ধের জন্য। সব মিলিয়ে প্রজারা বিক্ষুব্ধ। বিদ্যাধরের প্রস্তাব, রাজার ভ্রাতুষ্পুত্র বজ্রদেবকে দক্ষিণের দায়িত্ব অর্পণ করা হোক। শোনামাত্র প্রস্তাব নাকচ করে দেন মহারাজ। বিদ্যাধর মনে মনে বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ না করেই বিদায় নেন। অন্য দিকে নীলাচলে ফিরে এসেছেন মহাপ্রভু। কাশী মিশ্রের গৃহে তাঁর অধিষ্ঠানের ব্যবস্থা হয়েছে। মহাপ্রভু লোক মারফত খবর পাঠাতে বললেন তাঁর জননীকে এবং গৌড়ের সকল ভক্তকে। গুপ্তচর বটুক গোবিন্দ বিদ্যাধরকে সংবাদ দেয়, নদিয়ার মহাপ্রভুর ডাকে রায় রামানন্দও তাঁর দক্ষিণের রাজ্যপাট ছেড়ে ফিরে আসছেন নীলাচলে। মহারাজ নিজেও মহাপ্রভুকে দর্শনের বাসনা প্রকাশ করেছেন। খবরগুলির একটাও মনঃপূত হয় না বিদ্যাধরের। অন্য দিকে রামানন্দ মহারাজ প্রতাপরুদ্রের সঙ্গে দেখা করে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।

মহারাজ কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন। তার পর অনেকটা যেন স্বগতোক্তি করছেন, এমন ভাবে বললেন, “তা তুমি যখন একান্তই চাও না, তখন তোমাকে আর জোর করব না। তবে তোমাকে পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, একটা দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।”

রামানন্দ মুখ তুলে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে মহারাজের দিকে চেয়ে রইলেন। কোনও কথা বললেন না।

মহারাজই ফের বললেন, “শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথ মন্দিরের যাবতীয় তত্ত্বাবধানের ভার তোমার উপরে ন্যস্ত থাকবে।”

রামানন্দ সব রকম বৈষয়িক কার্য থেকেই মুক্তি চাইছিলেন। কিন্তু সর্বক্ষণ শ্রীজগন্নাথদেবের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারবেন জেনে সানন্দে এই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে গেলেন।

রায় রামানন্দ চলে গেলে মহারাজা মনে মনে ভাবতে লাগলেন, দক্ষিণের দায়িত্ব কাকে দেবেন। এমন সময়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন রাজগুরু কাশী মিশ্র।

গজপতি প্রতাপরুদ্রদেব উঠে গিয়ে রাজগুরুকে প্রণাম জানালেন।

কাশী মিশ্র রাজাকে আশীর্বাদ করে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি জগন্নাথবের সমাগত রথযাত্রা বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছেন। কথায় কথায় যখন তিনি জানতে পারলেন, রায় রামানন্দ এখন থেকে মন্দির তত্ত্বাবধানের ভার নেবেন, তখন তিনি অতীব সন্তুষ্ট হলেন। এত দিন এই দায়িত্ব প্রধানত গোবিন্দ বিদ্যাধর আর তাঁর অনুগত সঙ্গীরা সামলাত।

তিনি মুখে বললেন, “আর্যপুত্র, তুমি অতি উত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছ।”

কাশী মিশ্র রথযাত্রার জন্য কবি জীবদেবাচার্যর লেখা কয়েকটি সুন্দর গীতিকা মহারাজকে দেখালে মহারাজের মাথায় সহসা বিদ্যুৎ খেলে গেলো। এই তো উপযুক্ত লোক তিনি পেয়ে গিয়েছেন! কবি জীবদেবাচার্য প্রখর বুদ্ধিমান আর দক্ষ অস্ত্র সঞ্চালক। যে হাতে তাঁর কলম চলে, সেই হাতে তিনি অসিও ঘোরান। জীবদেবাচার্যের কূটনৈতিক বুদ্ধির পরিচয় আগে একাধিক বার পেয়েছেন মহারাজ আর বিস্মিতও হয়েছেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, এই তো উপযুক্ত ব্যক্তির সন্ধানপাওয়া গিয়েছে।

কথাগুলি ভাবতে ভাবতেই বোধহয়, তিনি ক্ষণিকের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলেন, তাই রাজগুরুর সমস্ত কথা শুনে উঠতে পারেননি। কাশী মিশ্রও বুঝতে পারলেন, সম্ভবত কোনও কারণে প্রতাপরুদ্রদেব চিন্তিত আছেন। তাই তিনিও আর কথা বাড়ালেন না।

রাজগুরু চলে গেলে, মহারাজা এ বার কবি জীবদেবাচার্যকে ডেকে পাঠালেন।

কিন্তু সেই মুহূর্তে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন গোবিন্দ বিদ্যাধর। উপবেশন করতে করতে বললেন, “মহারাজের জয় হোক।”

তাঁর এই হঠাৎ আগমন প্রতাপরুদ্রদেব বিশেষ পছন্দ করলেন না। তাঁর মুখ অল্প ক্ষণের জন্য ভ্রুকুটিকুটিল হয়ে উঠল। শুধু বললেন, “বিদ্যাধর, তুমি হঠাৎ? কী হেতু?”

গোবিন্দ বিদ্যাধরের মুখে সেই বাঁকা হাসিটা খেলে গেল। বললেন, “আমার কথা তা হলে সত্যি হল তো মহারাজ! বলেছিলাম আপনাকে, রাম রায়ের কাজে মতি নেই। তা মহারাজ, আমি তা হলে বজ্রদেবকে দাক্ষিণাত্যের প্রদেশপাল হিসেবে পাঠিয়ে দিই? শুভকার্যে অনর্থক বিলম্ব...”

মহারাজা প্রতাপরুদ্রদেব তীব্র চোখে তাঁর দিকে তাকালেন। বিদ্যাধরের কথার মধ্যেই গম্ভীর গলায় বললেন, “আমি তোমাকে আগেই বলেছি বিদ্যাধর, এই ব্যাপারে তোমাকে ভাবতে হবে না!”

মহারাজ মনে মনে বিদ্যাধরের কূট বুদ্ধির উপরে ভরসা করেন। উৎকলের রাজকার্যে বিদ্যাধরের উপরে মহারাজের নির্ভরতা অনস্বীকার্য। মহারাজ নিজে কর্নাট যুদ্ধে দাক্ষিণাত্য গমনকালে বিদ্যাধরের উপরেই পুরীর শাসনভার দিয়ে গিয়েছিলেন। তবু, গড়মান্দারণে বিদ্যাধরের ভূমিকায় মহারাজ সন্তুষ্ট হননি এবং সে কারণেই একটু সাবধানী হয়ে গিয়েছেন। স্থির করেছেন, বিদ্যাধরের প্রতি নির্ভরতায় কোথাও একটু সীমারেখা থাকা দরকার। অন্তত সব বিষয়ে বিদ্যাধরের সমস্ত সিদ্ধান্তে তিনি সিলমোহর দেবেন না।

প্রতাপরুদ্রদেব আবার বললেন, “আমি দক্ষিণের প্রদেশপাল নির্বাচন করে ফেলেছি।”

বিদ্যাধর মনের ভিতরেই তাঁর লেলিহান ক্রোধ দমন করে মুখে সেই বঙ্কিম হাসিটিকে লগ্ন করে রেখে বললেন, “তা মহারাজ, কাকে সেই পদে নির্বাচন করেছেন সেটা কি জানতে পারি?”

“নির্বাচন যখন করেছি, তখন নিশ্চিত যথাসময়েই জানতে পারবে। আর শোনো, এখন থেকে জগন্নাথ মন্দিরের যাবতীয় তত্ত্বাবধানের ভার আমি রায় রামানন্দকে দিয়েছি। খেয়াল রাখবে, তাঁর কাছ থেকে যেন কোনও অভিযোগ আমাকে শুনতে না হয়,” স্পষ্ট ভাষায় জানালেন মহারাজ।

তার পর স্থিরদৃষ্টিতে বিদ্যাধরের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সে দু’টি যেন চোখ নয়, দু’টি অঙ্গারবিন্দু ধকধক করে জ্বলছে। মনে মনে তিনি হাসলেন। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি মনের ভিতরে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন, তা তিনি এ বার প্রকাশ করলেন। বললেন, “এখন থেকে উৎকল সাম্রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হলে তুমি। সেই সঙ্গে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব তোমার হাতেই থাকবে।”

বিদ্যাধর খুশি হলেন কি না, তা তাঁর মুখ দেখে বোঝা যায় না। কিন্তু তাঁর দু’চোখের আগুন সহসা স্তিমিত হয়ে আসে।

মহারাজকে অভিবাদন জানিয়ে, কৃত্রিম হেসে বললেন, “যথা আজ্ঞা, মহারাজ।”

সহসা এক কিঙ্কর এসে জানাল, কবি জীবদেবাচার্য এসেছেন। মহারাজ তাঁকে ভিতরে নিয়ে আসতে বললেন। মহারাজকে অবাক করে দিয়ে গোবিন্দ বিদ্যাধর অট্টহাস্য করে উঠলেন। বললেন, “এই তা হলে মহারাজের উপযুক্ত নির্বাচন? কবি কিনা প্রদেশপাল!”

তাঁর হাসি আরও দীর্ঘ হতে গেলে মহারাজা চাপা ক্রোধে চিৎকার করে উঠলেন, “চুপ করো বিদ্যাধর। তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, তুমি তোমার অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করবে না!”

বিদ্যাধর হাসি সংবরণ করলেন। আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন, তখনই কবি জীবদেবাচার্য কক্ষে এসে উপস্থিত হলেন। বিদ্যাধর তাঁর দিকে রোষকষায়িত দৃষ্টি হেনে কক্ষ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন।

মহারাজ কবিকে তাঁর নতুন দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত করলেন। সেই সঙ্গে তিনি কবিকে ‘বাহিনীপতি’ উপাধিতে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত জানালেন। বললেন, “কবি, তোমার উপরে আমার অগাধ আস্থা।”

জীবদেবাচার্য আভূমি নত হয়ে মহারাজকে প্রণাম জানালেন। ভূমিতে উপবেশন করেই বললেন, “মহারাজ, আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আপনার সম্মান আমি রক্ষা করব।”

১৫

রাজকুমারী তুক্কার জীবন বড় নিস্তরঙ্গ ভাবে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছিল। অতুল ঐশ্বর্য-প্রাচুর্যের ভিতরে যেমন সুখের কোনও অভাব ছিল না, তেমন কোনও দুঃখও ছিল না। তবু তুক্কার জীবন কিছুটা অন্য ধারায় প্রবাহিত হয়েছিল। পুরুষতান্ত্রিক রাজপরিবারে মেয়েরা নিতান্তই বাঁধাধরা নিয়মে বেড়ে ওঠে। তারা সামান্য শিক্ষা পায়, স্বাভাবিক হেসেখেলে বড় হয়। তার পর এক দিন কোনও রাজপরিবারে তাঁদের বিবাহ হয়ে যায়। হয়তো তাঁদের জীবনকে পণ্য করে রাজায় রাজায় কূটনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ হয়।

তুক্কার জন্মের সময় তাঁর পিতামহ পুরুষোত্তমদেব সিংহাসনে। খবর পেলেন, এক পৌত্রীর জন্ম হয়েছে। এমন খবর তাঁর কাছে আশ্চর্য কিংবা সুখের ছিল না তেমন। রাজপরিবারে এক কন্যাসন্তানের জন্ম এমন কী বড় বিষয়! পরদিনই তিনি বাহমনীর সুলতানকে পরাজিত করে সন্ধি করতে বাধ্য করলেন। মধ্যরাতে তিনি আরাধ্যা দেবীকে স্বপ্নে দেখলেন। তাঁর মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেল, এই মেয়ে নিশ্চয়ই রাজপরিবারের সৌভাগ্যের রূপ ধরে এসেছে। দ্বিতীয় দিন বহুমূল্য স্বর্ণকঙ্কণ দিয়ে তিনি পৌত্রীর মুখ দেখলেন। স্বর্ণকঙ্কণটি ছিল তাঁর কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক। তিনি সেই সৌভাগ্যের অলঙ্কার দিয়ে নাতনিকে রাজপরিবারে অভিষিক্ত করলেন। মনে মনে ভাবলেন, ‘আহ! কী আশ্চর্য চোখদু’টি, ঠিক যেন দু’টি নীলপদ্ম নন্দনকাননের সরোবরে সদ্য তার পাপড়ি মেলেছে।’ তিনি নাতনির নাম রাখলেন জগমোহিনী। রাজবধূকে বললেন, “দেখো মা, এই স্বর্ণকঙ্কণ যেন কখনও না হারায়। তা হলেই অমঙ্গল নেমে আসবে।”

হয়তো তখন অন্তরীক্ষে বসে বিধাতাপুরুষ মুচকি হেসেছিলেন।

পরবর্তী কালে অবশ্য তুক্কা নামটিই বেশি প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। এহেন পিতামহের অশেষ আশীর্বাদধন্য হয়ে তুক্কার জীবন একটু অন্য মর্যাদায় প্রবাহিত হয়েছে। রাজপরিবারে আরও কয়েক জন রাজকুমারী থাকলেও তুক্কা ছিল সকলের থেকে আলাদা। বালিকাবয়স থেকেই তিনি প্রভূত বুদ্ধি আর মেধার অধিকারিণী, সেই সঙ্গে সাহিত্য আর গণিতেরও প্রবল অনুরাগিণী। সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রে যেমন তাঁর পারদর্শিতা, তেমনই অসিচালনাতেও তিনি বড় বড় যোদ্ধাদের পর্যুদস্ত করতে পারেন। তাঁর বিশেষ সঙ্গীত ও কাব্যচর্চার জন্য মহারাজ প্রাসাদের সীমানা থেকে কিছুটা দূরে সমুদ্রের কাছাকাছি একটি বাগানবাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন। যাতে নিভৃতে সেখানে সাহিত্য-সঙ্গীতের সাধনা করতে পারেন তাঁর আদরের তুক্কা।

এক দিন অপরাহ্ণে সেই নিভৃত সাধনাগৃহের বাতায়নে দাঁড়িয়েছিলেন তুক্কা। বর্ষা সবে শুরু হয়েছে। এই বছর বর্ষা যেন একটু দেরি করে এল। বিকেলের যেটুকু আলো ছিল, তাও ঢেকে দিয়ে সারা আকাশে কালো মেঘ দখলদারি ফলিয়েছে। রাজকুমারীর জীবনে তো দুঃখ ছিল না। আপন খেয়ালে কাব্যসঙ্গীত নিয়ে সখীদের সঙ্গে হাসি-খেলায় দিব্যি কাটছিল জীবন। কিন্তু এ তাঁর কী হল! কারণে-অকারণে মন তাঁর দুঃখী আর রিক্ত হয়ে যায় যেন। মনে হয়, কী যেন এক অতৃপ্তি তাঁকে গ্রাস করে নিচ্ছে ক্রমশ।

কেন এমন হয়? রাজকুমারী কি এর কারণ বুঝতে পারেন?

না, তিনি তা বুঝতে পারেন না। এত দিন অন্যেরা বলত, “আহা, এমন রূপ যেন ভূভারতে নেই!” তিনি এ সবে আমল দিতেন না। নিজের রূপ নিয়ে তাঁর যেন অবহেলাই ছিল। এখন তাঁর বার বার ঘরের বিশাল আরশিটার সামনে বসতে ইচ্ছে করে। শুধু কি নিজের চোখ দিয়ে তিনি দেখেন? না, নিজের চোখের ভিতর দিয়ে অন্য কোনও দুই চোখের অসীম মুগ্ধতা তিনি দেখতে পান!

এত দিন তবু কোথাও একটা আড়াল ছিল, কিন্তু সেই দিন অমন বর্ষণের রাতে ওই ভাবে নৃসিংহ তাঁর কাছে এসে হাজির হওয়ার পর থেকে দ্বিধা-সঙ্কোচের সমস্ত প্রাচীর যেন ধসে পড়েছে।

মনে মনে ভাবেন, তাঁদের দু’জনের মন যেন একটি গ্রন্থিতে বাঁধা হয়ে গিয়েছে। আবার মনে হয়, এর শেষ কোথায়?

তাঁর পিতা, মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেব কি তাঁদের দু’জনের এই সম্পর্ক মেনে নেবেন? তুক্কা এও জানেন, সে সম্ভাবনা বড়ই ক্ষীণ। রাজকন্যা হয়ে এক বণিকের কণ্ঠে তিনি মালা দেবেন, এ কথা মহারাজের পক্ষে মেনে নেওয়া নিতান্তই দুরূহ। তা ছাড়া তাঁদের জাতি আলাদা। ভিন্ন জাতে কন্যার বিবাহ দিলে সমাজের গণ্যমান্য উচ্চবর্ণের মানুষেরা বিদ্রোহ করবেন, এই আশঙ্কা প্রবল।

তবে তুক্কা কী করবেন? তাঁর মন যে ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোনও নিয়ন্ত্রণই তাঁর মন মানতে চাইছে না। তিনি ক্রমশ বড় দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ক্ষুদ্র বৃক্ষশাখা যেন প্রবল ঝড়ের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে মাথা নত করে ফেলেছে। নৃসিংহকে এখন দূরে সরিয়ে দেবেন, এই সাধ্য তাঁর আর নেই।

ফলে ভীষণ এক দোলাচলের অনিশ্চয়তায় তাঁর দিন কাটে আজকাল। মনের এই অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে তাঁর মুখে। মুখটি যেন এখন তাঁর ম্লান। চোখের কোলে আকাশের কৃষ্ণকায় মেঘের ছায়া এসে লেগেছে। উদাস নয়নে মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে তাঁর দু’চোখ জলে ভরে উঠল।

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন