ছবি: কুনাল বর্মণ।
লম্বা বারান্দার ও পারের রাস্তায় ছবি আর শব্দের খেলা চলছে। শোওয়ার ঘরের সঙ্গে লাগোয়া সেই বারান্দা। প্রখর গ্রীষ্মের দুপুরে ঝিম ধরা পুরনো শতকের উত্তর কলকাতার পাড়া। প্রখর রোদের তাপ এড়াতে বারান্দার দিকের খড়খড়িওয়ালা দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুপুরে। গড়পারের সেই রাস্তায় ভিড় কমে এলেও ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই। ‘জার্মানওয়ালা দো আনা, জাপানওয়ালা দো আনা’ হাঁকতে হাঁকতে ঠেলাগাড়িতে রংবেরঙের জিনিস চলেছে। আবার সপ্তাহের নির্দিষ্ট কোনও দিনে আসছে মিসেস উড-এর বাক্সওয়ালা। ভিতরে ঠাসা মেমসাহেবের তৈরি কেক, পেস্ট্রি।
এই কায়া-পৃথিবীর সঙ্গোপনে একটি ছায়ার জগৎও তৈরি হয়েছে। সেই খড়খড়িওয়ালা জানলা-দরজার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়ছে উল্টো দিকের দেওয়ালে। দিনের একটি বিশেষ সময়ে দেওয়ালের অনেকটা জুড়ে রাস্তার উল্টো ছবি তৈরি হচ্ছে ছায়ায়। আর সেই অপূর্ব আলো-ছায়ায় তন্ময় হয়ে থাকা একটি পাঁচ বছরের শিশু তার দেওয়ালে দেখতে পাচ্ছে রাস্তার লোকের নানা রকম হাঁটার গতি, গাড়ির চলন, রিকশা, সাইকেলের নড়াচড়া। তৈরি হচ্ছে বিনে পয়সার এক বায়োস্কোপ। শুধু গড়পারের বাড়ির দেওয়ালে এই ছায়ার খেলাই তো নয়, পরবর্তী কালে বকুলবাগানের বাড়ির সদর দরজায় একটা ছোট্ট ফুটোও খুঁজে পায় শিশুটি। জানলা বন্ধ করে সেই ফুটোর সামনে ঘষা কাচ ধরলে বাইরের দৃশ্য তাতে ফুটে উঠতে দেখে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছে সে।
নিয়তি ছাড়া কে-ই বা জানত, একাকী নির্জন সেই সব দুপুরের কাছে দেশ তথা বিশ্ব-সিনেমা ঋণী হয়ে থাকবে চিরকাল! সেই সব ঘোর-লাগা দুপুর তৈরি করে দেবে সাত রাজার কাছেও না-মেলা এক মানিকসদৃশ দেখার চোখ। যে চোখ দিয়ে গোটা বিশ্ব দেখবে মানবজীবনের অপূর্ব সব পাঁচালি। দেখতেই থাকবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে অনন্ত হয়ে যাবে সেই সব ফ্রেম।
*****
বিরাট বৈঠকখানায় বিছিয়ে রাখা হয়েছে সাদা ফরাশ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে অতিথি-অভ্যাগতরা। চলছে গানের আসর। উনিশ শতকের লখনউয়ে বইছে মাতাল চৈত্র পবন। অতুলপ্রসাদ সেনগুপ্ত কিছু ক্ষণ আগে শেষ করেছেন তাঁর সদ্য লেখা গান, ‘একা মোর গানের তরী ভাসিয়েছিলাম নয়নজলে…’ শুনে আবেগে হায় হায় করে উঠেছেন শ্রোতারা। দীর্ঘ নীরবতা কাটিয়ে এর পর দরবারি ধরেছেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। মাইহার থেকে বিশেষ দাওয়াত দিয়ে তাঁকে নিয়ে এসেছেন অতুলপ্রসাদ সেন। মেজাজে বাজাচ্ছেন উস্তাদজি। মধ্য ও মন্দ্র সপ্তকে বিস্তার পাচ্ছে রাগ।
তখন একটি শিশু ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরাট সেই বাড়ির এ ঘর ও ঘর, ছাদ, সিঁড়ি। অপার্থিব সেই সুর কানে নিয়ে। যে সুর যার কান-ছাড়া হবে না ইহজন্মে। কলকাতার একটি বিধবাদের স্কুল, বিদ্যাসাগর বাণীভবনের সেলাই ও গানের ক্লাস থেকে ছুটি নিয়ে ওই শিশুপুত্রটিকে তাঁর মা নিয়ে এসেছেন লখনউয়ে, প্রতিভাবান ব্যারিস্টার এই মাসতুতো ভাইয়ের বাড়ি। এ রকম প্রতি বছরই আসেন মা সুপ্রভা, ছেলে মানিককে নিয়ে। মানিক তাঁর ব্লটিং পেপারের মতো মন নিয়ে শুষে নেয় এই সব স্বর্গীয় গানবাজনা। সামনে থেকে শোনে আলাউদ্দিনকে। মা-মাসিদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে অবাক চোখে দেখতে থাকে টাঙ্গার চলন, লখনউয়ের গলি রাস্তা মোড় ভুলভুলাইয়া, রুমি দরওয়াজ়া, বড়া ইমামবড়া, কাইজারবাগ, লাখু ফটক। সব দেখে-শোনে, ফেলে না কিছুই। মস্তিষ্কের রহস্যময় ধূসরে তা প্রোথিত হয়ে থাকে বরাবরের জন্য।
*****
ছেলের অপার কৌতূহল আর মায়ের প্রবাদপ্রতিম মনের জোর। ১৯২৬ সালে ক্ষণজন্মা প্রতিভা সুকুমার রায়ের মৃত্যুর পর এই তো ছিল সম্বল। গড়পারের স্মৃতিময় বাড়ি ছেড়ে পাঁচ বছরের ছেলের হাত ধরে এই সম্বল নিয়েই বকুলবাগানে ভাইয়ের বাড়ির আশ্রয়ে আসা। সে বড় চাট্টিখানি কথা নয়। সেই বাড়ি ছেড়ে আসা, যেখানে অহোরাত্র প্রেসের ঘটাংঘট শব্দ, চাকপিল তেলের গন্ধ আর পুরনো বেয়ারা রামদহিনের হাঁকডাক। যদিও সেই ভিটে ত্যাগের জন্য আলাদা করে কোনও দুঃখবোধের বয়স সত্যজিতের ছিল না। না হলে কেনই বা লিখবেন, “আমার মনে হয় না, সে বয়সে বড় বাড়ি থেকে ছোট বাড়ি, বা ভালো অবস্থা থেকে সাধারণ অবস্থায় গেলে মনে বিশেষ কষ্ট হয়।” হয়তো তিনি তাঁর অসামান্য মননে, সুর ছায়া ছবির মতোইসেই দুঃখকে শুষে নিয়েছিলেন। ক্রমশ নিজের অজান্তেই হয়ে উঠছিলেন অপুর ‘অল্টার ইগো’। যে অপু বিধবা মায়ের হাত ধরে সম্পূর্ণ অজানা এক বাসস্থানে এসে উঠেছিল। তৈরি হয়েছিল ‘অপরাজিত’ এক জীবন।
সেই জীবনে এসেছে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলের হাই বেঞ্চ। গভীর দাগ রেখে গিয়েছে মায়ের হাত ধরে কলকাতা বা বাংলার বাইরে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি দীর্ঘ ছুটি কাটাতে যাওয়ার স্মৃতি। সুকুমারের বোন, সত্যজিতের মেজো পিসি পুণ্যলতা চক্রবর্তীর স্বামী অরুণনাথ চক্রবর্তী ব্রিটিশ আমলের ডাকসাইটে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলা বিহার ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় তিনি বদলি হয়ে কাজ করেছেন। মায়ের সঙ্গে সেই সব জায়গা সত্যজিৎ ঘুরে বেড়িয়েছেন। গিয়েছেন মজফ্ফরপুর, দারভাঙায়।
তবে শৈশবের এই ‘আউটডোর’-এ বোধহয় সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা, যার ঘোর থেকে তিনি ইহজীবনে বেরোতে চাননি। কলকাতার বাড়িতে ফিরে টাঙানো উপেন্দ্রকিশোর রায়ের আঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছেন চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাকে। পরিণত বয়সে বিশ্বজয় করে লিখছেন, দেশে এবং বিশ্বের বহু প্রান্তে অনেক সৌন্দর্য দেখেছেন, কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের মতো সুন্দর কিছু কোথাও আর পাননি। তাঁর দুই মেসোমশাই কর্মরত ছিলেন দার্জিলিং-এ। সত্যজিতের যখন সাত বছর, তিনি পালা করে মায়ের সঙ্গে এই দুই বাড়িতে কিছু দিন করে কাটিয়েছিলেন। তাঁরা সেখানে থাকাকালীনই দার্জিলিং-এর মহারানি গার্লস স্কুলে দরখাস্ত করে পড়ানোর চাকরি নিয়ে নেন সুপ্রভা। সেই সঙ্গে সাত বছরের মানিক সেখানে ভর্তিও হয়ে যান! নামে গার্লস স্কুল হলেও আদতে বাচ্চাদের কো-এডুকেশনই ছিল সেটি। সত্যজিতের স্মৃতিচারণে, “অদ্ভুত স্কুল, ক্লাসে ক্লাসে ভাগ নেই, আমি একটা বড় হলঘরের এক জায়গায় এসে পড়ছি, দূরে ওই কোণে দেখতে পাচ্ছি, আরেকটা ক্লাসে মা অঙ্ক কষাচ্ছেন। ক’দিন পড়েছিলাম ওই স্কুলে তা মনে নেই। সত্যিই কিছু পড়েছিলাম, না চুপচাপ বসিয়ে রাখা হত আমাকে যতক্ষণ না মা-র ছুটি হয় তাও মনে নেই।”
*****
মিউজ়িক ড্রয়িংয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ইস্কুলে। ব্যাপারটা হল, এক জন ছাত্র গান গাইবে, আর স্টেজের উপর রাখা ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে আর এক ছাত্র ছবি আঁকবে। যে প্রতি বছর সাফল্যের সঙ্গে সেটি করত, সেই উঁচু ক্লাসের হরিপদ ম্যাট্রিক পাশ করে স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর খোঁজা হচ্ছে আঁকিয়ে। ড্রয়িং টিচার চাইছেন, প্রতিভাবান হরিপদর ছেড়ে যাওয়া শূন্যস্থানটি নিক সত্যজিৎ। সে আশুবাবুর প্রিয় ছাত্র। কারণটা সত্যজিৎ নিজেই লিখেছেন, “যে জিনিসটা ছেলেবয়স থেকে বেশ ভালোই পারতাম সেটা হল ছবি আঁকা। সেই কারণে ইস্কুলে ঢোকার অল্পদিনের মধ্যেই আমি ড্রয়িং মাস্টার আশুবাবুর প্রিয়পাত্র হয়ে পড়েছিলাম।... একবার আমার একটা ছবিতে আশুবাবু নম্বর দিলেন 10+F। সবাই ঝুঁকে পড়ে খাতা দেখে বলল, প্লাস এফ কেন স্যার? আশুবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, এফ হল ফার্স্ট।”
তো এ হেন ফার্স্টবয়কে আশুবাবু তো চাইবেনই। তা ছাড়া ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরই রায়বাড়ির আভিজাত্য এবং পরিচিতি যে স্কুলে গোপন থাকল না, তা সত্যজিৎ লিখেছেন। তাঁর সহপাঠীরা মজা করে বলতেন, “হ্যাঁ রে মানিক, অমল বলছিল পঞ্চম জর্জ নাকি তোর দাদু, সত্যি নাকি!” বাবা সুকুমার রায়, ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়, সেই আমলের বিখ্যাত রেকর্ড-শিল্পী কনক দাশ মাসি, বাংলার প্রখ্যাত ক্রিকেটার কার্তিক বসু যাঁর কাকা, তাঁকে একটু ঠাট্টা শুনতে হবে বইকি!
কিন্তু মিউজ়িক ড্রয়িং-এ গোল বাধল অন্য জায়গায়। আজ ভাবলে অবাকই লাগে, সেই অল্পবয়সে প্রবল স্টেজ-ভীতি ছিল এই বিশ্ববন্দিত পরিচালকের, বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চ যিনি আলো করেছেন পরবর্তী জীবনে। সত্যজিতের কথায়, “আমার মতো স্টেজভীতি সচরাচর দেখা যায় না। কোনো বিষয়ে প্রাইজ পাচ্ছি শুনে আমার গায়ে জ্বর আসে, কারণ অতগুলো লোকের সামনে আমার নাম ডাকা হবে, আমি জায়গা ছেড়ে উঠে গিয়ে হোমরা-চোমরা কারুর হাত থেকে প্রাইজ নেবো, তারপর আবার হেঁটে আমার জায়গায় ফিরে আসব, এটা আমার কাছে একটা আতঙ্কের ব্যাপার।”
ভাবা যায়!
*****
গভীর অনুরাগ বিশ্বসাহিত্যে, আই সি-তে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পর চেয়েছিলেন ইংরেজি নিয়ে কলেজে পড়বেন। বাদ সাধলেন পিতৃবন্ধু, বিখ্যাত রাশিবিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। জানতে চাইলেন, কোন বিষয় নিয়ে তিনি বি এ পড়তে চান। সত্যজিৎ বলেছিলেন ইংরেজির কথা। কিন্তু প্রশান্ত তাঁকে পরামর্শ দেন, অর্থনীতি নিয়ে পড়লে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে তাঁর যে কাগজ (সংখ্যা) রয়েছে, সেখানে আড়াইশো টাকা মাইনের চাকরি তিনি মানিককে দিতে পারবেন। হয়তো পিতার অকালপ্রয়াণের পর সত্যজিতের পরিবারের কথা ভেবেই এই প্রস্তাব প্রশান্তচন্দ্র দেন, অভিভাবক হিসেবে। তাঁর নির্দেশ অমান্য করতে পারেননি সত্যজিৎ, কিন্তু বরাবরই মনে হয়েছে অর্থনীতি পড়াটা তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত।
১৯৮৪-তে ভারত সরকারের প্রযোজনায় সত্যজিতের উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। সেখানে সত্যজিৎ জানিয়েছিলেন, কলেজ জীবনে পড়া অর্থনীতি তাঁর বিশেষ কোনও কাজ লাগেনি। বিষয়টির প্রতি তাঁর আকর্ষণও ছিল না। লাগবেই বা কী করে! পাঠ্যবই শিকেয় তুলে তখন পড়ছেন ‘পিকচার গোয়ার’ আর ‘ফোটোপ্লে’। হেড্ডা হপার আর লুয়েলা পার্সনস-এর লেখা হলিউডি গুজবে মজে রয়েছেন। প্রিয় অভিনেত্রী ডিয়েনা ডার্বিনের সোপ্রানো কণ্ঠের কাজে বুঁদ। কলেজজীবনের শুরুতেই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে সত্যজিতের নজর ঘোরে পরিচালকদের দিকে। পুদভকিনের লেখা দু’টি বই তাঁকে এই বীক্ষণ দিয়েছিল। আগ্রহ তৈরি করেছিল জন ফোর্ড, ফ্রাঙ্ক কাপরা, উইলিয়াম ওয়াইলার, আর্নস্ট লুবশের মতো পরিচালকদের প্রতি। গ্রাহক হন আমেরিকার ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ পত্রিকার। সমান্তরাল ভাবে আগ্রহ তৈরি হয় পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী সঙ্গীতের উপর। হাতখরচের পয়সা জমিয়ে রেকর্ড কেনা শুরু করেন তিনি। চাইকোভস্কির পিয়ানো কনচের্তো, ভোর্জ়াকের নিউ ওয়র্ল্ড সিম্ফনি-র সঙ্গে পরিচয়ে অভিভূত হন যুবক সত্যজিৎ। অল্প দামে পাওয়া যায় বলে চোরাবাজার থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড কিনতেন। এইচএমভি পরে বার করে বিঠোভেনের এগমন্ট ও কোরিয়োলান ওভারচার্স। ‘অপুর পাঁচালি’ গ্রন্থে সত্যজিৎ নিজে লিখেছেন, “ফিল্ম আর পাশ্চাত্য সঙ্গীত, এ দুটি ব্যাপারে এত সময় চলে যেত যে, পড়াশোনায় তখন আর বিশেষ মন দিতে পারিনি। ট্রিগোনোমেট্রি, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির দাপট সহ্য করে বিজ্ঞান নিয়ে আমার কলেজের প্রথম দুটো বছর কোনও রকমে কাটিয়ে দিই।” ইকনমিক্স নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “ইকনমিক্স আমার একটুও ভাল লাগত না। স্রেফ মুখস্থবিদ্যার জোরে একটা সেকেন্ড ক্লাস অনার্স পেয়ে পাশ করি।”
প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সুবোধকুমার সেনগুপ্ত তাঁর রচিত ‘তে হি নো দিবসাঃ’ বইয়ে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন যা পড়লে মজাই লাগে। তিনি লিখেছেন, “আর একটি ছেলে আমাকে বিস্মিত করিয়াছে অন্যভাবে। এই ছেলেটি ইংরেজিতে খুব ভাল ছিল।... মনে করিয়াছিলাম, সে ইংরেজি অনার্স পড়িবে, কিন্তু তাহা পড়িল না। বেশ কিছুদিন পর একদিন গড়ের মাঠে তাহার সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞাসা করিলাম, এখন সে কী করিতেছে। উত্তর পাইলাম, আর্ট শিখিতেছি। মনটা দমিয়া গেল, এমন একজন মেধাবী ছেলের এই দুর্মতি, ইহার নাম সত্যজিৎ রায়। বলিহারি আমার মাস্টারি বুদ্ধির।”
*****
কলাভবনে ভর্তিও মায়ের সঙ্গে গিয়েই। সুকুমার রায়ের পুত্র হিসাবে একটা বাড়তি পরিচয় ছিলই। ছাত্রাবাসে তাঁর ঘরে একটি বড় মাপের খাট করে রেখেছিলেন নন্দলাল বসু। তিনি সত্যজিতের দৈর্ঘ্যের কথা জানতেন। নন্দলাল বসুকে সুপ্রভাদেবী বলেছিলেন, “আমার ছেলের কিন্তু আপনাদের আর্ট মোটেই পছন্দ নয়!” নন্দলাল বসু একটু মুচকি হেসে বলেছিলেন, “ঠিক আছে, দেখা যাবে।”
সত্যজিৎ যখন শান্তিনিকেতনের কলাভবনের ছাত্র, তখন অধ্যক্ষ ছিলেন নন্দলাল বসু। মাস্টারমশাইদের মধ্যে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেজ। সেই ১৯৪০ সালে সত্যজিতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কলাভবনের ওই বর্ষেরই আর এক ছাত্র, মহারাষ্ট্র থেকে আসা দিনকর রামরাও কৌশিকের (দিনু) সঙ্গে। অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য তাঁর মানিক এবং দিনুর পত্রাবলিকে কেন্দ্র করে যে গ্রন্থটি লিখেছেন (‘এক দুর্লভ মানিক’) সেখানে সেই তরুণ সত্যজিৎকে দেখা যায়। লম্বা ঋজু চেহারার উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ যুবক। “পাঁচজনে মিলেমিশে আড্ডা বা তাস দাবা খেলে সময় নষ্ট করার মানুষ সে ছিল না। সর্বদা হাঁটত দৃপ্ত ভঙ্গিতে, পদচারণা ছিল সুনিয়মিত এবং বলিষ্ঠ, কখনও লক্ষ্যহীন ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়নি। কখনও সে চলেছে স্টুডিয়োর পথে, কখনও মিউজিয়মে কখন-ও বা লাইব্রেরিতে। আর, দুপুরে আর রাত্রে কিচেনের হলঘরে খেতে যাওয়ার ব্যাপারটা তো ছিলই। প্রায় প্রতি মঙ্গলবারই কলকাতায় চলে যেত আর বুধবার সন্ধ্যায় বইপত্রে ব্যাগ বোঝাই করে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসত। তার মধ্যে থাকত অজস্র নতুন বই, কারেন্ট ইংরেজি জার্নাল আর গ্রামোফোনের রেকর্ড।”
ছাত্রাবাস থেকে কিচেনে খেতে যাওয়া নিয়ে একটি বিধুর স্মৃতিচারণ করেছেন অমিত্রসূদন তাঁর ওই বইতে। সত্যজিতের জনা পাঁচেকের একটি দল ছিল যারা এক সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে খেতে যেতেন দুপুরে ও রাতে। সবারই সদ্য যুবাবস্থা, দুপুর বারোটার সময় থেকেই পেট চোঁ চোঁ। কলাভবনের এই পাঁচ জনের ছাত্রের দলটি অনেকেরই নজর কেড়েছিল তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তি এবং স্বাতন্ত্র্যের কারণে। মানিক ছিলেন সবচেয়ে লম্বা এবং আলাদা, তাই তাঁকে ঘিরে যুবতীদের আগ্রহ কম ছিল না। এরই মধ্যে একটি মেয়ের আগ্রহ একটু বেশি রকমই দেখা গেল। তাঁরা হেঁটে যাওয়ার সময় সেই মেয়েটি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নানা কৌশল করে। দিনের পর দিন এটা চলতে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েন সত্যজিৎ। তিনি এক দিন বন্ধুদের বলেন— “দাঁড়াও ব্যবস্থা করতে হবে!” একটি বড় ড্রয়িং শিটে আঁকলেন ওই মেয়েটির কার্টুন! কিচেনের সামনে তা সেঁটে দেওয়া হল। এর পর ভগ্নহৃদয় মেয়েটিকে আর কখনও তাঁদের ধারেকাছে দেখা যায়নি। কেন প্রথম যৌবনের ধর্মকে অস্বীকার করে তিনি মেয়েটির প্রতি নিষ্ঠুর হলেন, তা আর জানা যায়নি!
*****
শান্তিনিকেতন থেকে পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় যে দিন ফিরে আসেন সত্যজিৎ, সে দিন জাপানিরা কলকাতায় বোমা বর্ষণ করে। তাঁর মনে হয়, শান্ত নিস্তরঙ্গ পরিবেশ থেকে এক ঘটনাবহুল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের ফ্রেমে ঢুকে পড়লেন যেন। রাস্তাঘাটে ভরে রয়েছে আমেরিকান সেনা। বোমার ভয়ে হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়ছে। ব্ল্যাকআউটের সাইরেনের শব্দ শহরকে চিরে দিচ্ছে রাতে। হলিউডের টাটকা নতুন সিনেমাগুলি সেই সময় কলকাতাতেও রিলিজ় করানো হচ্ছিল। সেই ছবির ভান্ডার খুলে গিয়েছে সামনে, সঙ্গে চাকরি জোটানোর চিন্তাটাও মাথার ভিতর রয়েছে।
আসলে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর আর শান্তিনিকেতনের নিস্তরঙ্গ জীবনে মন বসছিল না তাঁর। কলাভবনের প্রথাগত চিত্রকলার পাঠক্রম শেষ করলেন না। শিক্ষক নন্দলাল বসুকে জানিয়ে দিলেন, পেন্টার হওয়ার কোনও আগ্রহ তাঁর নেই, তিনি চান বাণিজ্যিক শিল্পী হতে। ফলে কোর্স শেষ না করেই তাঁর শান্তিনিকেতন ছাড়ায় কোনও আপত্তি সে দিন করেননি নন্দলাল। তবে মনে মনে প্রিয় ছাত্রের এই সিদ্ধান্তে তখন তিনি খুশি হয়েছিলেন কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। উৎসাহ তিনি যথেষ্টই দিয়েছিলেন মানিককে। বলেছিলেন, আড়াই বছরের মধ্যে তাঁর আঁকার দক্ষতা অনেকটাই বেড়েছে। জাপানি ক্যালিগ্রাফিক তুলির ব্যবহারেও পারদর্শিতা বেড়েছে। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হওয়ার পথে প্রিয় ছাত্রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তখনকার মতো বিদায় দিয়েছিলেন।
*****
কুশীলব: ‘অপুর সংসার’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুর।
শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে আসার চার মাস বাদে ১৯৪৩ সালের এপ্রিল মাসে বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারের কাজ যোগ দেন সত্যজিৎ। মাসমাইনেছিল ৬৫ টাকা, সঙ্গে পনেরো টাকা মাগগি ভাতা। ‘অপুর পাঁচালি’ গ্রন্থে সত্যজিৎ লিখছেন, “খবরের কাগজের পাতা ওলটাতে-ওলটাতে সেই সময়ে লক্ষ্য করি যে, কিছু কিছু বিজ্ঞাপনের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে যে-রকম মিল দেখা যায়, তেমন মিল। পরে আবিষ্কার করি যে, ও-সব বিজ্ঞাপন একই প্রতিষ্ঠানের তৈরি। ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান, নাম ডি জে কিমার অ্যান্ড কোম্পানি।... বিজ্ঞাপনগুলি যে একজন বাঙালি শিল্পীর হাতের কাজ, সেটাও শিগগিরই জানা গেল। আরও খোঁজখবর করে জানতে পারলাম যে, এই বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের কলকাতা আপিসের ম্যানেজার এক বাঙালি ভদ্রলোক। নাম ডি. কে. গুপ্ত।
এও জানা গেল যে, ইনি যাঁর বড় ভাই তাঁকে আমরা অনেকদিন যাবৎ চিনি। এদিকে আবার গুপ্ত-পরিবারের বন্ধু ললিত মিত্র মশাই আমার মামারও বন্ধু বটেন। এই ললিত মিত্রই আমাকে একদিন ডি. কে. গুপ্তর কাছে নিয়ে গেলেন। পরিচয় হিসাবে বলা হল যে, আমি সুকুমার রায়ের ছেলে। কথাটা শুনবামাত্র ডি কে গুপ্তর চোখ যে কেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, সেটা আমি পরে বুঝতে পারি।”
প্রথমেই তাঁকে ডি কে জানিয়ে দিয়েছিলেন, মাইনে যা দেওয়া হবে তা খুবই কম, কিন্তু যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে টাকার জন্য কিছু আটকাবে না। পরে অকপটে সত্যজিৎ স্বীকার করেছেন, তিন বছর তিনি শান্তিনিকেতনে মহারথীদের ছায়ায় আঁকা শিখেছেন ঠিকই, কিন্তু বিজ্ঞাপনের লে-আউট করার শিক্ষা তাঁর হয় কিমারের অফিসেই।
এখানে কাজ করতেই করতেই একটি ঘটনা ঘটে যা সত্যজিতের জীবনের সবচেয়ে বড় বাঁক-বদল এনে দেয়। ডি কে গুপ্ত শুধুমাত্র ব্রিটিশ সংস্থার বিজ্ঞাপন জগতের কর্ণধারই ছিলেন না, তাঁর সাহেবি মেজাজের আড়ালে ছিল বাংলা সাহিত্য তথা কবিতার প্রতি গভীর টানও। কিমারের কর্তা থাকা অবস্থাতেই তিনি ‘সিগনেট প্রেস’ নাম দিয়ে একটি প্রকাশনা সংস্থা তৈরি করলেন। সত্যজিতের প্রতিভার সম্যক পরিচয় তিনি তত দিনে পেয়ে গিয়েছেন, তাঁকে দিলেন বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরির কাজ। তাঁর প্রকাশনায় সে সময়ের কবিদের একের পর এক বই প্রকাশিত হতে থাকে আর চার দিকে হইচই পড়ে যায়। বিশুদ্ধ বঙ্গীয় মোটিফ-এর অলঙ্কৃত প্রচ্ছদ, হাতের লেখার ছাঁদের গ্রন্থ নাম, সেই সঙ্গে কখনও তুলি বা কলমে আঁকা ছবি— বইয়ে এ কাজ সর্বপ্রথম করেন সত্যজিৎ। তখন তিনি একই সঙ্গে করছেন বিজ্ঞাপনের লেআউটের কাজ এবং বইয়ের প্রচ্ছদ।
কবিতার পর কিছু দিনের মধ্যেই গদ্য প্রকাশ শুরু করেন ডি কে, এবং ১৯৪৪ সালেই তিনি স্থির করে রেখেছিলেন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের পাঁচালী’ বইখানার সংক্ষিপ্ত কিশোরপাঠ্য সংস্করণ বের করবেন। পাশ্চাত্য সঙ্গীত, সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রে ডুবে থাকা সত্যজিৎ তখন ভাল করে রবীন্দ্রনাথও পড়েননি। ‘পথের পাঁচালী’ তো নয়ই। তাঁকে একচোট বকুনি দিয়ে মূল বইয়ের এক কপি হাতে ধরালেন ডি কে, জানালেন পড়ে ফেলতে। কারণ তার সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ছবি তাঁকেই আঁকতে হবে। পড়তে পড়তে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হতে থাকলেন সত্যজিৎ। এক অদৃশ্য কাশবনের মধ্যে দিয়ে অনাগত ট্রেন-যাত্রার ছবি ভেসে উঠল তাঁর দিগন্তে।
ডি কে বা সত্যজিৎ, দু’জনের কেউই তখনও জানতেন না, ইতিহাসের সূচনা হল নিঃশব্দে!
*****
‘অপুর সংসার’-এ অভিনয় করার ঠিক তিরিশ বছর পর অপুর সেই বিখ্যাত চিলেকোঠার ছাদে ফিরে গিয়েছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। সঙ্গে ছিলেন পরিচালিকা ক্যাথরিন বার্জ, উনি তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপর তথ্যচিত্র তৈরি করছেন।
শর্মিলা জানাচ্ছেন, “শ্যুটিং-এর তিরিশ বছর পর গিয়ে দেখি অবিকল একই রকম রয়েছে সেই ছাদ এবং চিলেকোঠা, যেন সময় এতটুকুও দাগ বসাতে পারেনি। সত্যি কথা বলতে কী যখন ওই ছবিতে অভিনয় করেছি তখন কী আর বয়স, মাত্র তেরো, সবটা বুঝে উঠতে পারিনি। পূর্ণ বয়সে গিয়ে যখন সেখানে দাঁড়াই আমার যেন চোখ খুলে যায়। যে সাউন্ডস্কেপটা সেখানে পাই তা ঠিক তিন দশক আগের মতোই। একইরকম হৈচৈ আরতার সঙ্গে ট্রেন যাওয়ার শব্দ। এ যেন চিরন্তন। প্রত্যেকবার অপু যখন এই ছাদে এসে দাঁড়াত তখন তার মনোজগতের আঁচ যেন এতদিন বাদে স্পষ্ট হল আমার কাছে।”
সত্যজিৎ প্রসঙ্গে যে কোনও ঋতুতেই স্মৃতির বর্ষা শুরু হয় ‘অপুর সংসার’-এর অপর্ণার। ‘অপুর সংসার’ থেকে ‘নায়ক’-এ পৌঁছনোটাও তো তাঁর এক যাত্রাপথের মতো। শর্মিলার কথায়, “নায়ক ছবিতে যখন অভিনয় করি তখন অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছি। সাহসও হয়েছে মানিকদাকে এটা ওটা প্রশ্ন করার! উনি ছবি শুরুর আগে বললেন, ‘রিংকু তোমায় চশমা পরতে হবে। নয়তো উত্তমের বিপরীতে তোমাকে একটু ছোটই দেখাবে।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে বলাম, ঠিক আছে চশমা পরব। কিন্তু আমার চরিত্রটি কাছের জিনিস না দূরেরজিনিস দেখতে সমস্যা? মানিকদা বোধহয় আমার এহেন পাকামি দেখে একটু থমকেই গেলেন! ভাবলেন, রিংকুও আমাকে এই সব খুঁটিনাটি নিয়ে প্রশ্ন করছে! তারপরব্যারিটোনে বললেন ‘তুমি যেটা ইচ্ছা বেছে নিতে পার!’”
সত্যজিতকে নিয়ে আলোচনায় একটি প্রশ্ন তোলেন শর্মিলা। এবং খুঁজেও নিলেন উত্তর। তাঁর ১০২তম জন্মদিনেও যা সমসাময়িক। শর্মিলার কথায়, “আজ এমন একটা সময়ে আমরা বাস করছি যখন সব কিছুই টুইটারে আসে, ফেসবুকে পোস্ট হয়, আর এক লহমায় মিলিয়ে যায়। তাও আজও কেন সত্যজিৎ একই রকম দরকারি, একই রকম প্রাসঙ্গিক? আসলে আমার যেটা মনে হয়, তাঁর শিকড় ছিল বাংলার সংস্কৃতির গভীরে, আর দৃষ্টি ছিল আন্তর্জাতিক আকাশে। উনি একই সঙ্গে বাঙালি এবং আন্তর্জাতিক। তাঁর ছবিতে নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক ভিত রয়েছে, অথচ তিনি অবলীলায় অন্য ভাষা এবং সংস্কৃতির বেড়া টপকে এগিয়েছেন। আর বোধহয় সে জন্যই আজও বিশ্বের বহু জায়গায় তাঁর ছবি চললে হলে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। অপূর্ব সব ফ্রেমের পর ফ্রেম গড়ে সত্যজিৎ রায় আসলে বাংলা এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে একটা সেতু তৈরি করেছিলেন। ওই সেতুতে গিয়ে দাঁড়িয়েছি আমি অনেক বার। অপু ট্রিলজি-র প্রিন্ট রেস্টোর করার পরে আমেরিকায় যখন দেখানো হল, আমাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে ডাকা হয়। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা। দর্শকেরা উচ্ছ্বসিত। ছবি শেষ হওয়ার পরেও হাততালি থামতে চায় না।”
গড়পারের শৈশবে এক জাদু-দুপুরে যে আলোছায়ার খেলা শুরু হয়েছিল গত শতকের গোড়ার দিকে, সে খেলা আজও চলছে নিরন্তর।