ছবি: পিয়ালী বালা
প্রিয়তোষ বুঝতে পারছেন না হৃষিতা কী বলতে চাইছে। বললেন, ‘‘তুমি হয়তো ঠিকই বলছ। কিন্তু এ সব নিয়ে কেউ ভাবে কই?’’
‘‘একদম ঠিক। লোকে ভাবে, এ সব ব্যাপারে ইনভলভড হয়ে আমার কী লাভ? সে হিসেব করে। অন্য বাড়ির কেচ্ছা খোঁজে। কিন্তু টিটান-টুইটির মতো যে টিনএজাররা আছে তাদের মন বোঝে না। আর দোষই বা দেবেন কাকে? ছেলেমেয়েগুলোর সারা দিন স্কুল-কলেজ, টিউশন। বাড়ি ফিরে ক্লান্ত। রিক্রিয়েশন বলতে টিভি, কখনও-সখনও সুইমিং পুল। সারা সপ্তাহে তাদের ফুসরত বোধহয় এই রবিবার সকালবেলাতেই থাকে। অনেক কিছু করতে চায় তারা, কিন্তু কী করে করবে বুঝতে পারে না।’’
একটু দম নিয়ে হৃষিতা আবার শুরু করল, ‘‘আমরা দু’জনে একটা চেষ্টা করব ভেবেছি। জানি না কতটা সফল হতে পারব। তবে চেষ্টাটা তো কাউকে শুরু করতে হয়, সেটাই করব। এই ছাদটা আমাদের সকলের। আমরা ঠিক করেছি, এই ছাদে রবিবার রবিবার সকালে জ্যাম সেশন শুরু করব।’’
প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘জ্যাম সেশন মানে?’’
‘‘ইনফর্মাল গান, বাজনা, আড্ডা বলতে পারেন। ছেলেমেয়েরা হইহই করে যা ইচ্ছে তা-ই করবে। প্রতিবেশী বিরক্ত হবে না। লুকিয়ে সিসিটিভিতে ছবি তুলে কেচ্ছা হবে না।’’
হৃষিতা থামার পর রৌনক বলল, ‘‘ও আসলে খুব উত্তেজিত হয়ে আছে। বিশেষ করে টুইটির ব্যাপারটার পর কিছু করতে চায়। টিটানের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনিও রাজি হয়েছেন রবিবার সকালে ওকে আমার কাছে গিটার শিখতে পাঠাতে। তাতে ওর উৎসাহ আরও বেড়েছে।’’
হৃষিতা উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করল, ‘‘টিটানের নামটা এখনও কিন্তু কাউকে জানানো হয়নি। জানি না এর পিছনে কী পলিটিক্স আছে। কোন তুরুপের তাস হয়ে আছে ছেলেটা। তবে ওর ওপর অত্যাচার হলে আমরা থাকব ওর সঙ্গে।’’
ঘটনাটা জানা নেই প্রিয়তোষের। টুইটির ব্যাপারে মলয় কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিল। শোনার প্রবৃত্তি হয়নি। টিটানকেও চেনেন না। তবে রৌনকের ওই আশ্চর্য ফ্ল্যাটের মধ্যে আরও একটা চরিত্র সংযোজন হল ভেবে মনটা ভাল হয়ে গেল।
আশীর্বাদের ভঙ্গিতে হাত তুলে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘তোমাদের প্রয়াস সফল হোক।’’
‘‘আপনি থাকবেন তো আমাদের সঙ্গে?’’
‘‘মানে?’’
‘‘আপনি এক জন রাইটার। আমাদের জ্যাম সেশনে আপনি কত গল্প বলতে পারবেন!’’
ছেলেমেয়ে দু’টোর মুখ দেখে হঠাৎ চোখটা জ্বালা করে উঠল প্রিয়তোষের। অস্ফুট গলায় বললেন, ‘‘পরের রবিবারই যে আমি আমেরিকায় চলে যাচ্ছি!’’
২৪
আজ বছরের শেষ রবিবার। বছরের শেষ দিনও। ঘটনাক্রমে আজকেই নিউটাউনের এলিফ্যান্টা হাউসিং সোসাইটিতে প্রিয়তোষেরও শেষ দিন। সন্ধেয় ফ্লাইট। এখান থেকে মুম্বই, মাঝরাতে বড় প্লেনে চেপে আমেরিকা। পিকলু অনেক হিসেব করে টিকিট কেটেছে। দুবাইতে সাত ঘণ্টার একটা স্টপওভার আছে। বোনের বাড়ি থেকে হিথরো হয়ে সুতপার ফিরতি ফ্লাইটেও দুবাইতে স্টপওভার। কিছু ক্ষণের জন্য দেখা হবে দু’জনের।
মোবাইলটা বাজছিল। ঈপ্সিতা। ফোন ধরতেই বলল, ‘‘সেজমামা! ভেবেছিলাম আজ এয়ারপোর্টে তোমাকে সি-অফ করতে যাব। কিন্তু বন্ধুরা নিউ ইয়ার্স ইভ-এর পার্টিতে যাওয়ার জন্য অ্যায়সা ধরেছে, আসতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।’’
‘‘তোর আর আসার দরকার নেই। তার পর কী করে ফিরবি সেই চিন্তাও থাকবে।’’
‘‘শোনো, তোমাকে দু’টো ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট আর থ্রিলিং কথা বলার আছে। কাল মামি ফোন করেছিল। হিল্লি দিল্লি লন্ডন নিউ ইয়র্ক করে লাস্ট মোমেন্টে তোমার মাধুরী দীক্ষিতের কনফি টলেছে, বুঝেছ! আমাকে বলছে, নতুন জায়গায় একা একা কী করে থাকব? তুই তোর পিজি ছেড়ে এখানে চলে আয়। ক’দিন পর তো এমনিতেই সবাই মুক্তরামবাবু স্ট্রিটের বাড়িতে চলে যাব। উফ, বকবক করে মাথাটা পুরো ফালুদা করে দিয়েছে।’’
প্রিয়তোষ খুব খুশি হলেন, ‘‘আমাকেও বলেছে। আমি বলেছিলাম তোর সঙ্গে কথা বলতে। খুব ভাল হবে। আমিও শান্তিতে থাকব।’’
‘‘ভাবছি আর ঘেঁটে যাচ্ছি সেজমামা। মামির সঙ্গে থাকা মানেই গার্জেনগিরি শুরু হবে। ন’টার পর ফিরলে মুখটা হাঁড়ির মতো করে থাকবে। নাইট ক্লাব থেকে ন’টার মধ্যে ফিরে আসা যায় বলো?’’
‘‘হুম!’’ মেকি গম্ভীর হয়ে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘তুই এক কাজ করিস। নাইট ক্লাবে সঙ্গে করে আমার মাধুরী দীক্ষিতকেও নিয়ে যাস। এমনিতেও এর পর তোর মামিকে আর চিনতে পারব কি না জানি না।’’
‘‘কেন?’’
‘‘তোর সঙ্গে থেকে থেকে তোর মামির মুখের যা ভাষা হবে…’’
‘‘তুমিও না! চিল্যাক্স সেজমামা। তোমার মাধুরী দীক্ষিত কী ছিল আর কী হইল। যে তোমাকে ছাড়া মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে হাতিবাগান যেতে পারত না, সে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন একা একা ফ্লাই করছে। তবে তোমার ওখানে থাকার একটা অ্যাট্রাকশন আছে। বেশ হ্যান্ডু সব ছেলে আছে ওখানে। চ্যালেঞ্জ, দেখে নিও একটাকে ফাঁসাবই। আচ্ছা জানো তো, ঋদ্ধিমার বিয়েটা ভেঙে গিয়েছে।’’
‘‘কে ঋদ্ধিমা?’’
‘‘আরে মনে নেই? সেই তোমার জন্মদিনের সেলিব্রেশনের দিন আমার যে বন্ধুটার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ধুতি-পাঞ্জাবি পরা একটা ছেলের সঙ্গে এসেছিল। তোমাদের কমপ্লেক্সেই তো থাকে।’’
প্রিয়তোষের মনে পড়ল। তখন চিনতেন না। পরে ছেলেটাকে চিনেছেন। তীর্থময় গাঙ্গুলির ছেলে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কেন?’’
‘‘এ সবের কি আর কেউ আসল কারণ বলে! যা বুঝলাম, ছেলেটাই ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।’’
এ সব ব্যাপারে আগ্রহ নেই প্রিয়তোষের। বললেন, ‘‘তুই তা হলে কবে থেকে আসছিস?’’
‘‘পরের রবিবার শিফট করব। কিন্তু সেজমামা, একটা জিনিস তুমি ভেবে দেখেছ? নিউ ইয়ারে তুমি আকাশে থাকবে। কী থ্রিলিং!’’
প্রিয়তোষের খেয়াল হল, ‘‘তুই দু’টো থ্রিলিং খবর বলছিলি। আর একটা কী?’’
ঈপ্সিতার গলার স্বরটা পালটে গেল, ‘‘আরেব্বাস, তোমাকে তো আসল খবরটাই দেওয়া হয়নি। আজকের কাগজটা দেখেছ?’’
‘‘হ্যাঁ, কেন?’’
‘‘কার গল্প বেরিয়েছে? তোমার সেই কস্তুরীর!’’
প্রিয়তোষ খুব অবাক হয়ে খবরের কাগজটা টেনে নিলেন। ঈপ্সিতার বকবক শুনতে শুনতে রবিবারের ক্রোড়পত্রটা উলটে দেখলেন। না, এই কাগজে আজ ‘সীমান্ত’ নামের একটা গল্প বেরিয়েছে। লেখক শ্রীকুমার পাল। বিহ্বল গলায় বললেন, ‘‘কোন কাগজে? তুই ঠিক দেখেছিস?’’
‘‘আরে, আমাদের পিজিতে তো রবিবার অনেকগুলো কাগজ নেয়। সকালে ঘুমচোখে এক বার চোখ বুলিয়ে নিই, কোনও হ্যান্ডু পাত্রের অ্যাড বেরিয়েছে কি না। সেটা দেখতে গিয়েই কোন একটা কাগজে যেন দেখলাম। কস্তুরী গুপ্ত।’’
ঈপ্সিতা ফোনের মধ্যেই গলা চড়াল, ‘‘চিন্টি ডার্লিং, কাগজগুলো আর এক বার নিয়ে আয়!’’
প্রিয়তোষের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কস্তুরী পৃথিবীতে এক জনই না কি?’’
‘‘না রে বাবা। আমিও কী আগে নামটা খেয়াল করেছি? গল্পের ছবিটা দেখেই মটকায় টিউবলাইটটা জ্বলে উঠল।’’
‘‘কী আছে ছবিটায়?’’
‘‘একটা কেকের ছবি। তোমার জন্মদিনে আমরা যে পিকচার-কেকটা নিয়ে গিয়েছিলাম, অনেকটা সেটার মতো। এমনকী ‘অপেক্ষা’ কথাটাও লেখা আছে। সেটা খ্যাচাং করে ছুরি দিয়ে কাটা হচ্ছে। বুঝেছি এ তোমার সেই সিক্রেট গার্লফ্রেন্ড ছাড়া হয় না। কনসেপ্ট আমার। তুমি গল্প করে বলেছ নিশ্চয়ই। সিন বাই সিন পুরো ঝেড়ে লিখে দিয়েছে। গল্পটার নাম আবার কী দিয়েছে জানো? মোহভঙ্গ। এটা একটা নাম হল? বাদ দাও।’’
‘‘কাগজটা পেলি?’’
‘‘দাঁড়াও। চিন্টিটা রবিবার কাজের চাপে পাগল পাগল হয়ে থাকে। কেউ আবার বাথরুমে কাগজটা নিয়ে ঢুকে গেলে তো হয়ে গেল।’’
ফোন ছেড়ে দেওয়ার পরও প্রিয়তোষ ভিতরে একটা তীব্র ছটফটানি টের পেলেন। শপিং মলের বাইরে খবরের কাগজওয়ালা ছেলেটা বলেছিল আজ বসবে না। পিকনিকে যাবে। তা হলে কোথায় খোঁজ করবেন? পাঁচটা মাস অনন্ত অপেক্ষার পর বছরের শেষ দিনে কোথায় ছেপে বেরল গল্পটা?
কলিং বেলটা বেজে উঠল। দরজা খুলে প্রিয়তোষ দেখলেন, রৌনক আর হৃষিতা।
‘‘এসো।’’
ঝলমলে মুখ করে হৃষিতা বলতে আরম্ভ করল, “একটা দারুণ ব্যাপার হয়েছে। সবাই চেয়েছে আমাদের জ্যামিং সেশনটা আজ বর্ষবরণের রাত থেকে শুরু হোক। নীহার সরখেল, সোমনাথ বিশ্বাসদের ইন্টারফেয়ার করতে দেওয়া হয়নি। প্রদীপ বর্মন পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে কমিউনিটি হলটা ডেকোরেট করে দিতে। সবাই খুব এক্সাইটেড। আমাদের রবিবারের জ্যামিং রেগুলারলি চলবে। আপনি আজই চলে যাচ্ছেন। খুব মিস করব আপনাকে। তাই দেখা করতে এলাম।’’
বছরের শেষ দিনে একটার পর একটা খবর সত্যিই যেন গোটা বছরের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিল। ইপ্সি আর সুতপা একসঙ্গে থাকবে। কস্তুরীর গল্প কাগজে বেরল, রৌনক-হৃষিতা আর একটা ভাল খবর দিচ্ছে। প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘আমি তো ছ’মাস পরেই ফিরে আসব। তখন রবিবার রবিবার মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে সকালবেলায় চলে আসব এখানে। আমার ভাগ্নি ঈপ্সিতার সঙ্গে তোমাদের আলাপ তো হয়েই গিয়েছে। ও এখানে এসে আমার স্ত্রীর সঙ্গে থাকবে। খুব জলি মেয়ে। ওকে তোমাদের উদ্যোগের কথা বলে দেব। শ্রীতমা বলে আর একটি মেয়ে এখানে সমীরণের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতে আসছে। ওকে কাল রাতে বলেছি। খুব উৎসাহ দেখিয়েছে। দেখবে, এ ভাবেই তোমাদের উদ্যোগটা অনেক বড় হয়ে যাবে। দাঁড়াও, একটা জিনিস তোমাদের দিয়ে যাই।’’
প্রিয়তোষ একটা ফাইল হাতে নিয়ে ফিরে এলেন। ফাইলটা হৃষিতার হাতে দিয়ে বললেন, ‘‘এগুলোতে আমার লেখা গল্প আছে। কিছু শেষ হয়েছে, কিছু অসমাপ্ত। তোমাদের মনে হলে তোমাদের আড্ডায় এগুলো পড়তে পারো।’’
ফাইলটার ওপর হাত বুলিয়ে হৃষিতা বলল, ‘‘থ্যাংক ইউ সো মাচ। আপনার ফিরে আসার দিকে আমরা তাকিয়ে থাকব।’’
‘‘তোমরাও খুব ভাল থেকো, আনন্দে থেকো। নতুন বছরে তোমাদের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।’’
ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রিয়তোষ বারান্দায় এলেন। বাতাসে একটা হিমেল ঠান্ডা। নীচে সবুজ চিনে ঘাসের গালিচার মধ্যে টলটলে নীল সুইমিং পুল। কেয়ারি করা গাছগাছালি। পাঁচিল ঘেঁষে ওয়াক ওয়ে। এ সব এক দিন অচেনা ছিল। আজ সেখান থেকে ভেসে আসছে শিশিরভেজা মাটির গন্ধ। এই গন্ধ হয়তো আমেরিকায় থাকবে না। থাকবে না মুক্তারামবাবু স্ট্রিটেও। এক ঘনঘোর বর্ষার দিনে এখানে অসংখ্য অচেনা স্রোতের মধ্যে যে ভাললাগাটার জন্ম হয়েছিল, আজ সেটা হিমেল হাওয়া আর উষ্ণ রোদ্দুরে মাখা নিটোল ভালবাসা হয়ে গিয়েছে। অসংখ্য অচেনা স্রোত প্রিয়তোষকে মায়াডোরে বেঁধে ফেলেছে। একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে সেই পিছুটান থেকে মুক্তি পেতে।
টিউউ... টিউউ... টিউটিউ... একটা পাখি ডেকে উঠল কোথাও।
মুখে হাসি ফুটে উঠল প্রিয়তোষের। কস্তুরীর গল্পটা আর পড়তে ইচ্ছে করছে না। কস্তুরী আজ থেকে এক চরিত্র। নতুন বছরে আমেরিকায় বসে অনেক গল্প লিখবেন ওকে নিয়ে। অন্য রবিবারের মতো পাখিটাকে আর খোঁজার চেষ্টা করলেন না। নিজের মনে ফিসফিস করে বললেন, ‘‘ভাল থাকিস। আমি ফিরে এসে আবার তোর ডাক শুনব, তোকে অনেক নতুন নতুন গল্প শোনাব।’’
পাখিটা অজানা জায়গা থেকে আবার ডেকে উঠল, টিউউ... টিউউ... টিউউ...
সমাপ্ত
আগামী সপ্তাহে নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস: নুড়ি পাথরের দিনগুলি প্রচেত গুপ্ত
আধুনিক মনের, ঝকঝকে মেয়ে আহিরী রায়। সবে কলেজে চাকরি পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় হয়ে উঠেছে অল্প দিনে। বাবা কমলেশ এক সময়ের ভাল ছাত্র, বিদেশ থেকে ম্যানেজমেন্ট প়ড়ে এসে বড় কোম্পানির উচ্চপদে চাকরি করছেন। আহিরী তার বাবাকে এক জন খঁুতহীন ভদ্রলোক বলে মনে করে। সত্যি কি তাই? আহিরীর মা নবনীর একটাই ইচ্ছে, মেয়ের ভাল বিয়ে হোক। তিনি গোপনে পাত্র দেখেন। আমেরিকাবাসী এক সুচাকুরে যুবককে বাড়িতেও নিয়ে এসেছেন। তার আহিরীকে পছন্দ। আহিরী পছন্দ করে বিতানকে। সে প্রায় বেকার, কোনও চাকরিতেই মন বসে না। আহিরীর সঙ্গে মেশে, কিন্তু বিয়ের কথা বলে না। আহিরী পড়েছে সংকটে। এ দিকে নবনী তাঁর স্বামীর জীবনের গোপন অতীত জানতে পেরে ব্যথিত, কমলেশ রায়কে ক্ষমা করতে পারছেন না। কমলেশ রায়ের অফিসে জয়েন করেছে সৌহার্দ্য। ছেলেটি স্মার্ট, অভিজ্ঞ। তার চোখদু’টো খুব চেনা লাগে কমলেশের।
কে এই যুবক? কেরিয়ারমুখী, বহু নারীতে আসক্ত সৌহার্দ্য মা অন্তপ্রাণ। মৃত বাবার প্রতি তার তীব্র রাগ। মায়ের অতীত জেনে সে ভয়ংকর ক্রুদ্ধ।
সে প্রতিশোধ নিতে চায়। নদীর পাশে পড়ে থাকা নুড়ি পাথরের মতো ফেলে আসা কিছু দিনের গল্প। যাতে জলের দাগ লাগে, আবার মুছেও যায়।