তিনি ফিল্মি ঘরানার নন। কোনও ‘গডফাদার’-ও নেই। তা সত্ত্বেও অতি সহজেই বলিউডে ঢোকার টিকিট পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম ছবিতেই নায়িকা! তা-ও আবার সলমন খানের বিপরীতে কাজের সুযোগ।
অভিষেকে এ হেন সুযোগ পেলেও তার ফায়দা তুলতে ব্যর্থ জারিন খান। বলিউডে প্রায় ১২ বছর কাটানোর পরে কেন ছাপ ফেলতে পারলেন না? এত দিন পর ‘আসল’ কারণ জানিয়েছেন জারিন।
ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার পর থেকেই জারিনের সঙ্গে একটা তকমা লেগে গিয়েছিল। তিনি ক্যাটরিনা কইফের মতো দেখতে! তবে এত বছর বলিউডে কেটে গেলেও নায়িকা হিসাবে ক্যাটের সাফল্যের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি জারিন।
বলিউডি নায়িকা হওয়ার সুযোগ আচমকাই পেয়ে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের এই বাসিন্দা। সলমনের শ্যুটিং দেখতে তাঁর ছবি ‘যুবরাজ’-এর সেটে গিয়েছিলেন। সেটা ২০০৮ সাল।
‘যুবরাজ’-এর পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গে শ্যুটিং করার পাশাপাশি নিজের পরের ছবি ‘বীর’-এর নায়িকা পেয়ে গিয়েছিলেন সলমন। তিনিই জারিন!
জারিনকে সেটে দেখামাত্র তাঁকে অভিনয়ের অফার দিয়েছিলেন সলমন। পরে সলমন বলেছিলেন, ‘‘মনে হয়েছিল, ওঁকে একেবারে আমার পরের ছবির নায়িকার মতো দেখতে। ঠিক যেন ‘বীর’-এর মিষ্টি রাজকুমারী।’’
স্বপ্নের অভিষেক হলেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল জারিনের ‘বীর’। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে।
সমালোচক তরণ আদর্শের মন্তব্য ছিল, ‘‘গোটা ছবিতে একটাই অভিব্যক্তি সাঁটা ছিল জারিনের মুখে।’’
সাফল্য অধরা থাকলেও চেষ্টা করে গিয়েছেন জারিন। ব্লকবাস্টার ছবি ‘রেডি’-তে একটি আইটেম গানে মুখ দেখানোর পর অবশ্য ‘হাউসফুল-২’ পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম দিনেই সে ছবি বিপুল মুনাফা কামিয়ে নেয়। তার পর থেকে হিন্দি ছবিতে বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি। তামিল বা তেলুগু ছবিতে কাজ করেছেন। তবে সেখানেও অধরা সাফল্য।
সম্প্রতি নিজের কেরিয়ার নিয়ে মুখ খুলেছেন জারিন। এত বছরেও কেন ছাপ ফেলতে পারেননি? একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জারিনের দাবি, ‘‘এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, এ ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে খুব স্পেশাল হতে হবে। সমস্ত ফিল্মি পার্টিতে যাওয়া বা লোকজনের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করাটা জানাও জরুরি। এ সব পার্টি যে আমাদের কাজের জন্য কতটা জরুরি, তা-ও দেখেছি। তবে কী ভাবে নেটওয়ার্কিং করতে হয়, তা কেরিয়ারের গোড়ায় জানতাম না।’’
৩৪ বছরের জারিন জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের কেউ সিনেমায় অভিনয় করেননি। এমনকি, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। ফলে বলিউডে কাজ পেতে অসুবিধা হয়েছে।
জারিনের মতে, ‘‘আজকালকার ট্রেন্ডই হল, সকলেই সকলের বন্ধু। আর সকলেই নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমি কখনও ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা করিনি। ফলে কাজের সুযোগ হারিয়েছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বলিউডে লোকজন যদি নিজেদের বন্ধুদেরই ছবিতে সুপারিশ করতে থাকেন, তবে আমাদের মতো মানুষ কী ভাবে কাজ পাবেন?’’
জারিনের দাবি, অভিনেতা হিসাবে তাঁর যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে পারেনি বলিউড। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির বহু মানুষজন ব্যক্তিগত ভাবে আমার পরিচিত নন। সে কারণে আমার অভিনয়দক্ষতা নিয়ে কিছুই জানেন না। তাঁরা আমাকে শুধুমাত্র পর্দায় দেখেছেন। তার উপরেই ভিত্তি করেন আমার প্রতিভার বিচার করেন।’’
জারিনের মতে, ‘‘অভিনেতা হিসাবে বলিউডে যথেষ্ট সুযোগ পাইনি। তা ছাড়া, ইন্ডাস্ট্রির লোকজন আমাকে সুযোগ দিতেও খুব আগ্রহী নন। তাঁরা আমাকে একটি সুন্দর মুখ হিসাবেই চেনে। তার বাইরে তাকাতে রাজি নন।’’
গত বছর একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য অন্য রকমের কাজ করেছেন জারিন। নায়িকার খোলস ছেড়ে চরিত্রনির্ভর ‘হম ভি অকেলে তুম ভি অকেলে’-তে মুখ দেখিয়েছেন। সমকামী মানসী দুবের চরিত্রে তিনি মন্দ নন— এ কথা বলেছেন অনেকে।
জারিনের আকুতি, ‘‘আমার অডিশন নিন। একটা সুযোগ দিন। ‘হম ভি অকেলে তুম ভি অকেলে’-তে আমার চরিত্রের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে, তা ভাল লেগেছে। ওই ছবিতে আমি শুধুমাত্র হট, সুন্দর মুখ নই। আমি কী করতে পারি, তা দেখাতে পেরেছি।’’