বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পরমাণু বোমা হিসাবে নজির গড়ে ফেললেও পরিকল্পনামাফিক সফল হতে পারেনি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত হলেও বোমা তৈরির গোড়াতেই ছিল গলদ। তাই জন্মের পরেই মৃত্যু হয় এই বোমার।
পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আকারে ছোট পরমাণু বোমা তৈরির পরিকল্পনা করেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা।
কম ওজনের একটি পরমাণু বোমা তৈরি করতে চেয়েছিলেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। ওজন কম হলেও শক্তিশালী বোমা তৈরির প্রাথমিক খসড়াও বানিয়ে ফেলেন তাঁরা।
১৯৫৭ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানীরা এমন এক পরমাণু বোমা তৈরি করেন যার ওজন মাত্র ২৩ কিলোগ্রাম।
এই পরমাণু বোমা ছোড়ার পর খুব কম পরিসরে বিপুল অভিঘাত হত। এই বোমা যে জায়গা থেকে ছোড়া হত, তার পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা পর্যন্ত বোমার অভিঘাত লক্ষ করা যেত।
ওজন কম হওয়ার কারণে তেপায়া থেকে পরমাণু বোমা ছোড়া যেত। তেপায়ার সামনে লাগানো রকেট লঞ্চারের মাধ্যমে ছোড়া হত এই বোমা।
কম ওজনের এই পরমাণু বোমার শক্তি ছিল ২০ টন টিএনটি বিস্ফোরণের সমান।
দু’ধরনের পরমাণু বোমা বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এম২৮ নামে একটি পরমাণু বোমার ওজন ছিল হালকা।
১২০ মিলিমিটার ক্যালিবারযুক্ত ছিল এম২৮ পরমাণু বোমা। এর অভিঘাতের বিস্তার ছিল প্রায় সাড়ে ১২ বর্গকিমি এলাকা।
দ্বিতীয় ধরনের বোমার নাম ছিল এম২৯। ১৫৫ মিলিমিটার ক্যালিবারযুক্ত এই বোমা ওজনে ছিল সামান্য ভারী।
আমেরিকার বিজ্ঞানীদের মতে, এম২৯ বোমার অভিঘাতের বিস্তার ছিল চার কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা।
এম২৮ এবং এম২৯ বোমার প্রক্ষেপ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যেত উচ্চতার মাধ্যমে। তেপায়ার তলার দিকে লাগানো একটি রেগুলেটরের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের উচ্চতা প্রয়োজনমতো কমানো অথবা বাড়ানো যেত।
রেগুলেটরের মাধ্যমে ‘ডিটোনেশন হাইট’ নিয়ন্ত্রণ করে ৩০০ মিটার অথবা ৮০০ মিটারের ঘরে কাঁটা নিয়ে যাওয়া যেত। সাধারণত এই কাজ করতেন দু’জন সৈন্য।
১০ মিনিটের মধ্যে সফল ভাবে বোমা ছুড়তে পারতেন দুই সৈন্য। জিপের উপর থেকেও এই বোমা ছোড়া যেত।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে কম ওজনের পরমাণু বোমার খামতিও ছিল বিরাট। বোমা তৈরির সময় তার অভিঘাতের বিস্তার ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছিল।
কিন্তু বোমা ছোড়া হলে তা সাধারণত দুই অথবা চার কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই ফাটত। এর ফলে শত্রুদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে মারা পড়তেন নিজেদের সৈন্যও।
হালকা পরমাণু বোমা তৈরিতে সফল হলেও এই সমস্যার কারণেই শেষ পর্যন্ত তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।