শয়ে শয়ে অপরাধচক্র বা গ্যাং। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই রয়েছে। আর এই চক্রের সংঘর্ষে জেরবার এল সালভাদোর। শুরু করেছে অপরাধীদের ধরপাকড়। সে কারণে বানিয়ে ফেলেছে বিশাল এক কারাগার। ঘটা করে তার উদ্বোধনও করেছে। সে দেশ দাবি করেছে, দুনিয়ার সব থেকে বড় আর সব থেকে কড়া কারাগার এটি। এখানে চালু রয়েছে কঠোর নিয়ম।
উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের একেবারে মাঝামাঝি রয়েছে ছোট্ট এই দেশ এল সালভাদোর। কিন্তু জনসংখ্যার অনেক বেশি। ছোট্ট এই দেশের জনসংখ্যা ৬৫ লাখেরও বেশি।
১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল এল সালভাদোর। তাতে মারা গিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। একুশ শতকের শুরু থেকে এই দেশে মাথা চাড়া দিয়েছে অপরাধ, চোরাচালান। একের পর এক গোষ্ঠী মাথা তুলেছে। তাদের মাথারা লড়াইয়ে জড়িয়েছেন। অপরাধীর সংখ্যা বেড়েই গিয়েছে দেশে। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে রাখার জায়গা বাড়েনি।
শেষ পর্যন্ত সেই সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ৪০ হাজার বন্দি থাকতে পারেন, এমন জেল তৈরি করেছে তারা। সেই জেলে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। গত মঙ্গলবার উদ্বোধন হয়েছে সেই জেলের।
কেন হঠাৎ এত বিরাট এক জেলের প্রয়োজন হল এল সালভাদোরে? অপরাধের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছিল দেশে। তাতে বিরক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে গত বছর মার্চে মন্ত্রিসভাকে বিশেষ পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন।
সেই নির্দেশের জেরে বিশেষ ক্ষমতা হাতে আসে সরকারের। নাগরিকদের ফোনে আড়ি পাতা বৈধ হয়। পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারি শুরু হয় দেশে। এর ফলে ৬২ হাজার জন ‘অপরাধী’ গ্রেফতার হন।
গোটা দুনিয়ায় এই দেশেই কারারোধের হার সব থেকে বেশি। দেশে মোট প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যার দুই শতাংশই রয়েছেন জেলে।
এল সালভাদোরের সব থেকে বড় জেল ছিল লা এসপেরাঞ্জা। সেখানে থাকতে পারেন ১০ হাজার বন্দি। কিন্তু এখন রয়েছেন ৩৩ হাজার জন। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বিপদ।
এ সব কারণেই তৈরি হল নতুন কারাগার। এল সালভাদোরের কারা বিভাগের প্রধান ওসিরিস লুনা জানিয়েছেন, নতুন কারাগার তৈরি হয়েছে ৪১০ একর জমিতে। পাহারায় থাকছেন ৬০০ জওয়ান এবং ২৫০ জন পুলিশকর্মী।
লুনা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, যাঁরা এল সালভাদোরের বাসিন্দাদের কষ্ট দেবেন, তাঁদের এ বার এই সংশোধনাগারে থাকতে হবে।
২০২১ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ২০টি জেল ছিল। তাতে ৩০ হাজার বন্দি থাকতে পারতেন। কিন্তু আদতে ছিল ৩৫ হাজার ৯৭৬ জন বন্দি।
তার জেরেই নতুন সংশোধনাগার তৈরি হল। প্রেসিডেন্ট বুকেলে জানিয়ে দিয়েছেন, এই জেলে থাকবে কড়া ব্যবস্থা। একটা পাতাও যাতে গলতে না পারে, সেই পদক্ষেপই করা হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রের নজরদারিও থাকছে।
প্রেসিডেন্ট বুকেলে বলেন, ‘‘যৌনকর্মী, প্লে স্টেশন, টিভি, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার থাকবে না জেলে।’’
জেলে বসে যাতে মোবাইলে কথা বলা না যায়, সে জন্য সেখানে থাকবে বিশেষ প্রযুক্তি। রাতদিন বন্দিদের কুঠুরির সামনে টহল দেবেন রক্ষীরা। গোটা জেল চত্বরে বসানো থাকবে কয়েকশো সিসিটিভি ক্যামেরা।
দুনিয়ায় এত বড় জেল আর একটি নেই। তাই ইতিমধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠেছে এল সালভাদোরের এই জেলের। প্রেসিডেন্ট বুকেলের বার্তা, ‘‘দেশে গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এ বার সহজেই জিতব।’’