প্রায় সাড়ে বারোশো কোটি টাকা ব্যয়ে মোদী সরকারের নির্মীয়মাণ সেন্ট্রাল ভিস্তার কেন্দ্রে আছে নতুন সংসদ ভবন। সোমবার সেই সংসদ ভবনের ছাদে বসানো হল ব্রোঞ্জের তৈরি জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ। তার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, এর ওজন ৯৫০০ কিলোগ্রাম, উচ্চতা ৬.৫ মিটার। একে ধরে রাখার জন্য সাড়ে ছ’হাজার কিলোগ্রাম ওজনের ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়েছে। ক্লে মডেলিং, ব্রোঞ্জ ঢালাই, পালিশ হওয়া-সহ মোট আটটি ধাপে এটি তৈরি করা হয়েছে।
নতুন সংসদ ভবনের ছাদে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ তৈরির নকশা থেকে তৈরি প্রক্রিয়া শেষ হতে মোট আটটি ধাপ অতিক্রম করেছেন শিল্পীরা।
প্রথমে কম্পিউটারে ‘গ্রাফিক স্কেচ’ তৈরি হয়। তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল একটি মাটির মডেল। পরের ধাপে সেটি যায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য। সবুজ সংকেত পেতেই এফপিআর মডেল তৈরি হয়।
সেই মডেল থেকে তৈরি হয় ছাঁচ। তার অভ্যন্তরে মোম গলিয়ে ফেলা হয়। তৈরি হয় নকশা। এ ভাবে আট আটটি ধাপ পেরিয়ে তৈরি হয় এই প্রতীক।
দেশের ১০০ জন কারিগর গত ছয় মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতীকের নকশা, কারুকাজ এবং ঢালাই করেছেন।
প্রতীকটি পালিশ করা হয়েছে। তবে তাতে কোনও রং করা হয়নি। বিশুদ্ধ ধাতুর প্রদর্শনীর জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
সোমবার এই প্রতীকটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীও ছিলেন অনুষ্ঠানে।
প্রতীকটির উন্মোচনের পর নির্মাণকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা ইমারত বানাচ্ছেন না ইতিহাস তৈরি করছেন? কী মনে হচ্ছে?” কর্মীরা উত্তর দেন, “ইতিহাস।”
মোদীর দাবি, তাঁরা সংসদ ভবন মানে শুধুমাত্র প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ করছেন না। জাতীয় গৌরবের কাজ করছেন। সেটাই কর্মীদের মনে করিয়ে দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা আমাদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন, এত কম সময়ে কাজ শেষ করে।”
যদিও এই সুবিশাল অশোক স্তম্ভের উদ্বোধনের পরও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। কটাক্ষ করেছেন সীতারাম ইয়েচুরি থেকে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।
‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, “সংবিধানই সংসদ, সরকার এবং বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যে সীমারেখা তৈরি করেছে। সরকারের প্রধান হিসাবে মোদীর নতুন সংসদ ভবনের জন্য তৈরি জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করা উচিত হয়নি। এই উদ্বোধন করা উচিত ছিল লোকসভার স্পিকারের। তা হলে প্রশাসন এবং সংসদের পার্থক্য বজায় থাকত। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।”
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিরও একই কথা বলেন। তাঁর কথায়, “সংবিধান গণতন্ত্রের তিনটি ব্যবস্থাকে পৃথক করেছে। রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন ডাকেন আর প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান। ফলে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের জন্য তৈরি জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করায় স্পষ্টতই সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রী নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন উপলক্ষে পুজো করেন। যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, সংবিধান সব ভারতীয়কে তাঁদের ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে। পাশাপাশি, সংবিধানে এ কথাও বলা আছে যে, সরকারের বা রাষ্ট্রের কোনও একটি বিশেষ ধর্মের প্রচার বা পক্ষপাতের অধিকার নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।