নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় আবির্ভাব সলমন খানের। হিন্দি ফিল্মজগতে কাজ শুরু করার চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন সলমন। বলি অভিনেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই ছিলেন তিনি। অনুরাগীর সংখ্যাও কম ছিল না তাঁর। এমনকি, ইন্ডাস্ট্রির নায়িকারাও তাঁর ক্যারিশমায় মুগ্ধ ছিলেন। যে ‘ভাইজান’-এর সঙ্গে ‘সদা সিঙ্গল’ তকমা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, তিনি কেরিয়ারের শুরুর দিকে বলিপাড়ার এক নায়িকার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
ছাপা হয়ে গিয়েছিল সলমনের বিয়ের কার্ডও। কিন্তু অভিনেতার পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই সেই বিয়ে ভেঙে যায়। সেই নায়িকা আর কেউ নন। বলিউড জগতের অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানি। সঙ্গীতার সঙ্গে বিয়ের পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল সলমনের।
সলমন এবং সঙ্গীতা প্রায় একই সময় অভিনয় শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের পরিচয় আগে থেকেই ছিল। ১৬ বছর বয়স থেকে মডেলিং পেশায় ছিলেন সঙ্গীতা। সেই সূত্রেই তাঁর আলাপ হয় সলমনের সঙ্গে।
বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হলেও সলমনকে ধীরে ধীরে ভালবেসে ফেলেন সঙ্গীতা। বিপরীত দিক থেকেও সাড়া পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সাল নাগাদ সলমন এবং সঙ্গীতা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বলিপাড়ায় তাঁদের নিয়ে আলোচনাও কম হত না।
সম্পর্কে থাকার আট বছর পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সলমন এবং সঙ্গীতা। সেই সময় সঙ্গীতার কেরিয়ার নিভু নিভু। সলমন তখন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠছিলেন। অভিনেতাকে বিয়ে করে সংসার করবেন— এই ছিল সঙ্গীতার ইচ্ছা। কিন্তু বিয়ের এক মাস আগে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
সলমনকে নিয়ে সঙ্গীতার মনে হঠাৎ সন্দেহ জেগে ওঠে। সলমন তাঁকে ছাড়াও অন্য কারও সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন বলে সন্দেহ করেন তিনি। তাই সলমনের ব্যাপারে খুঁটিনাটি খোঁজখবর রাখতে শুরু করেন সঙ্গীতা।
বিয়ের এক মাস আগে সঙ্গীতা জানতে পারেন, তাঁদের সম্পর্কে তৃতীয় এক ব্যক্তি এসে পড়েছেন। পাকিস্তানি-আমেরিকান অভিনেত্রী সোমি আলির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে রয়েছেন সলমন।
সলমনের অভিনয় দেখে নাকি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সোমি। শুধুমাত্র সলমনের সঙ্গে দেখা করবেন বলে বলিউডে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুধু তাই নয়, সলমনকে মনে মনে বিয়ে করার পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন সোমি। তাই ফ্লোরিডা থেকে সোজা চলে আসেন টিনসেল নগরীতে।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে বলিপাড়ায় কাজ শুরু করেন সোমি। ইন্ডাস্ট্রিতে এসে মিঠুন চক্রবর্তী, সইফ আলি খান, সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দের মতো তারকার সঙ্গে কাজ করে ফেলেছিলেন তিনি।
কাজের সূত্রে সলমনের সঙ্গে আলাপ হয় সোমির। সঙ্গীতার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও সোমির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সলমন।
সোমির সঙ্গে সলমনের সম্পর্কের কথা জানার পর মন ভেঙে যায় সঙ্গীতার। ১৯৯৪ সালের ২৭ মে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সলমন এবং সঙ্গীতার। কিন্তু সোমির ব্যাপারে জানার পর এপ্রিল মাসেই বিয়ে ভেঙে দেন সঙ্গীতা।
পরে অবশ্য সোমির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায় সলমনের। অন্য দিকে সলমনের সঙ্গে বিচ্ছেদের দু’বছরের মধ্যে ক্রিকেটার মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে বিয়ে করেন সঙ্গীতা। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর মুম্বইয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।
বিয়ের ১৪ বছর পর ২০১০ সালে আজহারের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় সঙ্গীতার। তবে, সলমনের সঙ্গে সঙ্গীতার বন্ধুত্বে কোনও ছেদ পড়েনি।
পুরনো এক সাক্ষাৎকারে সঙ্গীতা বলেন, ‘‘জীবন স্থিতিশীল নয়। সারা জীবনের সঙ্গী কেউ হতে পারে না। কিন্তু সম্পর্কের সুতো আদতে ছিঁড়ে যায় না। যোগাযোগ থেকেই যায়। স্কুলের বন্ধু হোক বা প্রেমিক, অনুভূতিগুলো থেকেই যায়।’’
সলমনের সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে সঙ্গীতা বলেন, ‘‘কারও সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মানেই তাঁর উপর রাগ বা অভিমান করে থাকার কোনও মানে হয় না। এমন একটা সময় ছিল, যখন আমি খুব বোকা ছিলাম। শিশুর মতো ছিলাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমিও পরিণত হয়েছি। জীবন যে অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ, তা বুঝতে শিখেছি।’’
সলমনের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে অভিনেতার বোন অর্পিতা খানের বাড়িতে সঙ্গীতা অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গীতা যখন অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছিলেন, সেই সময় তাঁকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে দিয়েছিলেন সলমন। এই দৃশ্য পাপারাৎজিদের ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ায় আবার বলিপাড়ায় তাঁদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু তাতে কান দেননি সলমন।
কর্ণ জোহরের টক শোয়ে এসে পরোক্ষ ভাবে সঙ্গীতাকে নিয়ে কথা বলেন সলমন। তিনি বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন আমি সত্যিই বিয়ে করতে চাইতাম। কিন্তু সবাই মনে করত যে, আমি প্রেমিক হিসাবেই ঠিক আছি। আমায় বিয়ে করা মানে সারা জীবন সহ্য করা। তা খুব কঠিন কাজ।’’
এখন অবশ্য অভিনয় জগত থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন সঙ্গীতা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছে বহু প্রস্তাব এলেও তিনি সব খারিজ করে দিয়েছেন। অভিনয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত নেননি তিনি।
বর্তমানে সঙ্গীতাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। শরীরচর্চার দিকে মন দিয়েছেন তিনি। যোগাসন করেন, নিয়মিত জিমে যান তিনি।
মাঝেমধ্যেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন সঙ্গীতা। অবসর সময়ে আঁকতে ভালবাসেন। ইনস্টাগ্রামে প্রায়শই নিজের ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে সঙ্গীতার অনুরাগী সংখ্যা ৩৯ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়েছে।