নিজের দেশে বসেই নাকি আমেরিকার উপর নজরদারি চালাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ প্রশাসক কিম জং উন! হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন কিংবা আমেরিকার বিমানঘাঁটি— কিছুই নাকি বাদ যাচ্ছে না এই নজরদারির তালিকা থেকে।
আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া অবশ্য উত্তর কোরিয়ার এই নজরদারি সংক্রান্ত দাবি নিয়ে সন্দিহান। তাদের বক্তব্য, নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে আবারও একটি ভুয়ো দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া।
কিন্তু প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার দূরে বসে কী করে আমেরিকার উপর নজরদারি চালানোর কথা বলছেন কিম এবং তাঁর পারিষদেরা? এই দাবির নেপথ্যে রয়েছে একটি নজরদার উপগ্রহ বা ‘স্পাই স্যাটেলাইট’।
মহাকাশে একটি নজরদার উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া। সেই উপগ্রহ থেকে কোন কোন জায়গার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে, মঙ্গলবার তার একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমে।
সেই তালিকায় কেবল হোয়াইট হাউস কিংবা আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের ঘাঁটি পেন্টাগনই নয়, আছে উত্তর কোরিয়ার পড়শি দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু অংশও। দক্ষিণ কোরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর বুসানের উপর নাকি নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে কিমের দেশ।
কিন্তু কেন এই নজরদারি? উত্তর কোরিয়ার তরফে বলা হচ্ছে, নিয়মিত নজরদারির ফলে ওই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যে কোনও ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে অবহিত থাকবে তারা। যে কোনও পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানাও সম্ভব হবে।
মোট কথা সামরিক এবং রণকৌশলগত দিক থেকে আমেরিকা, পশ্চিমি শক্তিবর্গ এবং ওয়াশিংটন-‘ঘনিষ্ঠ’ দক্ষিণ কোরিয়ার উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে উত্তর কোরিয়া। আমেরিকা অবশ্য নজরদারি সংক্রান্ত দাবির সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিবিসি আমেরিকার এক শীর্ষ সেনা আধিকারিককে উদ্ধৃত করে লিখেছে, “হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের বহু ছবি সমাজমাধ্যমেই পাওয়া যায়। ওই ছবি তোলার জন্য মহাকাশে নজরদার উপগ্রহ পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে না।”
আমেরিকার আরও দাবি, গুগ্ল আর্থের সাহায্যে যে কেউ ঘরে বসে হোয়াইট হাউস দেখতে পারেন। তাই প্রযুক্তিগত দিক থেকে উত্তর কোরিয়া বড় কোনও কাজ করেছে, এমনটা মানতে রাজি নয় জো বাইডেনের প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার দাবি করছেন যে, উত্তর কোরিয়ার নজরদার উপগ্রহটিতে যে সব ক্যামেরা লাগানো আছে, সেগুলি খুবই মাঝারি মানের। তাই ওই ক্যামেরাগুলিতে তোলা ছবি রণকৌশলগত ভাবে খুব একটা কাজে আসবে না বলেই দাবি করছেন ওই বিশেষজ্ঞরা।
জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ারও দাবি, আবারও একটি ‘আজগুবি’ দাবি করে বাজার গরম করতে চেয়েছে উত্তর কোরিয়া। নজরদার উপগ্রহের ক্যামেরায় ওঠা ছবি উত্তর কোরিয়া প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে না কেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দেশগুলি।
তবে মহাকাশে গোয়েন্দা উপগ্রহ পাঠিয়ে কিম এক ঢিলে অনেকগুলি পাখি মারতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক দিন ধরেই শক্তিশালী নজরদার ক্যামেরার মাধ্যমে কোরিয়া উপদ্বীপ-সহ বিস্তীর্ণ অংশে নজরদারি চালাচ্ছে আমেরিকা। এ বার তার পাল্টা পদক্ষেপ করার দাবি করছে উত্তর আমেরিকা।
তা ছাড়া দেশের ঘরোয়া রাজনীতিতেও কিম নম্বর তুলতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর আমলে যে দেশে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি হয়েছে, সেটাই প্রমাণ করতে চান কিম। মোটের উপর একদলীয় শাসন হলেও উত্তর কোরিয়ায় স্থানীয় স্তরে একটি নির্বাচন চলছে। সেখানে নিজের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য বজায় রাখতে চান কিম।
আবার বেশ কিছু সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার নজরদার উপগ্রহ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে আমেরিকা। তারা উত্তর কোরিয়াকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন কিমের বোন কিম ইয়ো জং।