পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানার বিমান নির্মাতা সংস্থা মিকোয়ান-গুরেভিচ (সংক্ষেপে মিগ) অ্যারোস্পেস কর্পোরেশনের নকশায় ১৯৫৫ সালে তৈরি হয়েছিল মিগ-২১ যুদ্ধবিমান।
১৯৬২ সালে চিন যুদ্ধে বিপর্যয়ের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আধুনিক যুদ্ধবিমানের খোঁজ শুরু করে। তখনই ‘নজর’ পড়ে নয়া মিত্র দেশ সোভিয়েতের মিগ-২১-এর দিকে।
কয়েক দফা পরীক্ষার পর ১৯৬৩-র শেষ পর্বে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসে সোভিয়েতে তৈরি যুদ্ধবিমানটির প্রথম পর্যায়ের সংস্করণ মিগ-২১ এফএল।
প্রায় ছ’দশক ধরে ভারতীয় বায়ুসেনার কর্মরত রয়েছে মিগ-২১। ভারতীয় বায়ুসেনার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কর্মরত যুদ্ধবিমান।
সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মোট ৮৭৪টি মিগ-২১ কিনেছে ভারত। মস্কোর প্রযুক্তিগত সহায়তায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান নির্মাণকারী সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেড’ (হ্যাল) বানিয়েছে ৬৫৭টি।
আমদানি করা মিগ-২১ এফএল মডেল অবসর নিলেও এখনও ভারতীয় বায়ুসেনায় কর্মরত হ্যালের তৈরি মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমানের চারটি স্কোয়াড্রন।
আশির দশকের গোড়া থেকেই মিগ-২১ ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ বলে ভারতীয় বায়ুসেনা মহলে পরিচিতি পেতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ‘উড়ন্ত কফিন’ নামে চিহ্নিত হয় এই যুদ্ধবিমান।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ৬০ বছরে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রায় ৪০০টি মিগ-২১ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। গত আড়াই দশকে ২০০ বারেরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ পর্যন্ত ভারতীয় বায়ুসেনার প্রায় ২০০ জন পাইলটের মিগ-২১ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। এই রুশ যুদ্ধবিমান ভেঙে মারা গিয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি সাধারণ নাগরিক।
২০১৯ সালের একটি আলোচনাসভায় মিগ-২১ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের উদ্দেশে তৎকালীন বায়ুসেনা প্রধান বিএস ধানোয়া বলেছিলেন, ‘‘এত পুরনো গাড়িও কেউ চালায় না।’’
গত কয়েক বছরে মিগ-২১ ভেঙে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে গুপ্ত, স্কোয়াড্রন লিডার অভিনব চৌধুরির মতো পাইলটের মৃত্যুর পরে মিগ-২১ পুরোপুরি বাতিলের দাবি ওঠে বায়ুসেনার অন্দরে।
পুরনো মিগ-২১ ব্যবহার বন্ধ হলেও ২০০০ সালে আধুনিকীরণ করা বাইসন সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলির চারটি স্কোয়াড্রন এখনও রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনায়।
বালাকোট-কাণ্ডের পরে ২০১৯-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কাশ্মীরে ভারতের আকাশে ঢুকে পড়েছিল। সে সময় মিগ-২১ নিয়েই ডগফাইট শুরু করেছিলেন শ্রীনগর স্কোয়াড্রনের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান।
অভিনন্দনের সেই ৫১ নম্বর স্কোয়াড্রন ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছে। গত ২৮ জুলাই রাজস্থানে মিগ-২১ দুর্ঘটনায় উইং কমান্ডার এম রানা এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আদিত্য বলের মৃত্যুর জেরে এই সিদ্ধান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের।
২০২৫ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে অবসরে পাঠানো হবে অন্য তিনটি মিগ-২১ স্কোয়াড্রনকেও। সেই স্থান নিতে শুরু করেছে দেশীয় প্রযুক্তিতে হ্যালের তৈরি হাল্কা যুদ্ধবিমান তেজস।
মিগ-২১-এর পরে, আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আনা হলেও অনেক বছর আগেই মিগ-২৩, মিগ-২৫ এবং মিগ-২৭-এর মতো যুদ্ধবিমানকে অবসরে পাঠিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
ভারতীয় বায়ুসেনায় এখনও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে মিগ-২৯ ইউপিজি। ভারতীয় নৌসেনার বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজে ব্যবহৃত হয় মিগ-২৯কে মডেলটি।
সাময়িক ভাবে মিগ-২১-এর শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য তেজসের বিকল্প হিসেবে রাশিয়া থেকে কিছু সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করেছে বায়ুসেনা। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রাথমিক ছাড়পত্রও মিলেছে।