Kota

কমছে পড়ুয়াদের সংখ্যা, বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কোচিং সেন্টার! শ্রী হারিয়ে ‘ভূতের শহর’ হচ্ছে কোটা

একসময় ভারতের ‘কোচিং শিক্ষার রাজধানী’ হিসাবে পরিচিত ছিল রাজস্থানের কোটা শহর। সারা বছর শহরের রাস্তাঘাটে থিক থিক করত ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৮
Share:
০১ ২১
Kota

ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেরিয়ার গড়তে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার পড়ুয়া কোটায় যান। সেখানে কোচিং সেন্টারে জয়েন্ট এন্ট্রান্স এবং অন্যান্য প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রস্তুত করানো হয়।

০২ ২১
Kota

একসময় ভারতের ‘কোচিং শিক্ষার রাজধানী’ হিসাবে পরিচিত ছিল রাজস্থানের কোটা শহর। সারা বছর শহরের রাস্তাঘাট থিক থিক করত ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ে।

Advertisement
০৩ ২১
Kota

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়তে আসা পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণের জন্য কোটায় নামীদামি কোচিং সেন্টার যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

০৪ ২১

কিন্তু বিগত দু’-তিন বছরে সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। বিগত কয়েক বছরে কোটায় ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে আসা পড়ুয়াদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। তুলনামূলক কম ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হওয়ার কারণে পাততাড়ি গোটাচ্ছে অনেক ছোট কোচিং সেন্টার। পড়ুয়াদের অভাবে খাঁ খাঁ করছে হস্টেলগুলি।

০৫ ২১

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেখানে আগে প্রতি বছর ২-২.৫ লক্ষ পড়ুয়া কোটায় পড়তে আসত, সেখানে গত বছর সেই সংখ্যা নেমে গিয়েছে ৮৫ হাজার থেকে ১ লক্ষে।

০৬ ২১

কোটা শহরের অর্থনীতি নির্ভর করে কোচিং সেন্টার এবং তার অনুসারী ব্যবসার উপর। তবে বিগত দু’বছরে শহরে প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে কোটা এবং সর্বোপরি রাজস্থানের অর্থনীতিতে।

০৭ ২১

পড়ুয়াদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রাজস্বও হ্রাস পেয়েছে। যেখানে আগে কোটা থেকে বছরে ছয়-সাড়ে ছয় হাজার কোটির রাজস্ব আদায় হত, সেখানে গত বছর তা কমে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

০৮ ২১

বর্তমানে কোটার কোচিং হাবের বেশির ভাগ অংশই নিস্তব্ধ। কোটা হস্টেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নবীন মিত্তল জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার পড়ুয়া রয়েছেন কোটায়। আগের বছরগুলির তুলনায় এই সংখ্যা ২৫-৩০ শতাংশ কম।

০৯ ২১

ফলে কোরাল পার্কের মতো ব্যস্ত এলাকার হস্টেল মালিকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আগে যেখানে ওই সব এলাকায় হস্টেলের ভাড়া মাসে ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল, এখন তা ২-২.৫ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।

১০ ২১

কিন্তু কেন ধীরে ধীরে ভূতুড়ে শহরে পরিণত হচ্ছে কোটা? কেন ভর্তি হচ্ছে না কোটার কোচিং সেন্টার এবং হস্টেলের কক্ষগুলি? তা হলে কি কোটায় কোচিং শিল্প ধীরে ধীরে অস্তমিত?

১১ ২১

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোটার হাল ধীরে ধীরে বেহাল হওয়ার অন্যতম কারণ পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান ঘটনা। প্রতি বছর কোটা থেকে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার খবর আসে।

১২ ২১

২০২৩ সালে ২৩ জনের আত্মহত্যার অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছিল কোটায়। ২০২৪ সালে মোট ১৭ জন আত্মঘাতী হয়েছেন। চলতি বছর ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে জনা সাতেক পড়ুয়ার।

১৩ ২১

বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত পড়াশোনার চাপ সামলাতে না পারার কারণেই আত্মঘাতী হচ্ছেন পড়ুয়ারা। এর ফলে অভিভাবকদের অনেকেই সন্তানদের কোচিংয়ের জন্য কোটায় পাঠাতে রাজি হচ্ছেন না।

১৪ ২১

পাশাপাশি, শিক্ষা মন্ত্রকের কোচিং সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকার কারণেও কোটার অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে। এর আগে ১২-১৩ বছর বয়সি অনেক পড়ুয়ার বাবা-মাও সন্তানদের কোটায় পাঠাতেন প্রশিক্ষণ নিতে। কিন্তু নতুন ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৬ বছরের কম বয়সি ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করতে পারবে না কোচিং সেন্টারগুলি।

১৫ ২১

রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ারের অবশ্য দাবি, ‘প্রণয়ঘটিত’ কারণেই পড়ুয়ারা আত্মঘাতী হচ্ছেন। মন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যদিও তিনি অভিভাবকদের এ-ও অনুরোধ করেছিলেন, সন্তানদের কম চাপ দিতে।

১৬ ২১

কোটায় ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়া শুধু হস্টেল নয়, স্থানীয় অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। কোটায় প্রায় চার হাজার হস্টেল এবং ৪০ হাজার পেইং গেস্টহাউস রয়েছে। এগুলির মালিক জীবিকার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের উপর নির্ভর করেন। সেগুলি বর্তমানে ক্ষতির মুখে পড়েছে।

১৭ ২১

তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম কোটার কোরাল পার্ক এলাকা। একসময় ওই এলাকায় ৩০০-র বেশি বিলাসবহুল হস্টেল ছিল। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ওই এলাকার ২২ হাজার হস্টেলকক্ষের মধ্যে মাত্র আট হাজার ভর্তি ছিল।

১৮ ২১

রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায়ী তথা কোরাল পার্ক সোসাইটির সভাপতি সুনীল আগরওয়াল গত বছর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, তাঁর মাসিক আয় ৩ লক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।

১৯ ২১

ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়া শুধু হস্টেল নয়, কোচিং সেন্টারগুলিকেও প্রভাবিত করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের অভাবে অনেক কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পড়ুয়াদের সংখ্যা কমায় অটোচালক থেকে শুরু করে চা-বিক্রেতা, অনেক স্থানীয় ব্যবসায়ীও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

২০ ২১

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আবার কি কখনও শ্রীবৃদ্ধি হবে কোটার? বর্তমান সঙ্কট সত্ত্বেও, কোটার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী অনেকেই।

২১ ২১

‘ইউনাইটেড কাউন্সিল অফ রাজস্থান ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর জ়োনাল চেয়ারপার্সন গোবিন্দরাম মিত্তলের বিশ্বাস, কোটার অনন্য শিক্ষামূলক মডেল পড়ুয়াদের সব সময়ই আকর্ষণ করবে। মাস দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “এখানকার পরিবেশ অতুলনীয়। এক বার সব কিছু স্থিতিশীল হয়ে গেলে, পড়ুয়ারা আবার ফিরে আসবেন।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement