কয়েক দিনের ব্যবধানে পর পর অভিনেত্রী বা মডেলদের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে টলিপাড়ার অন্দরমহলে জোর চর্চা। কেন অকালে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন তাঁরা, নেপথ্যেই বা কী? পেশাগত চাপ, নেশা, সম্পর্কের টানাপড়েন নাকি রয়েছে অন্য কোনও কারণ?
কসবায় উঠতি মডেল সরস্বতী দাসের মৃত্যু আবার এই প্রশ্ন তুলে দিল। রবিবার নিজের বাড়ি থেকে সরস্বতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
১৯ বছর বয়সি সরস্বতী সম্প্রতি কয়েকটি ফটোশ্যুটের কাজ করেছিলেন। কিন্তু কেন তিনি আত্মঘাতী হলেন, জানতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সোমবার তাঁর ফোনটি আনলক করে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। পাশাপাশি, কথা বলা হচ্ছে সরস্বতীর পরিচিত কিছু ব্যক্তির সঙ্গেও।
সরস্বতীর ফেসবুক প্রোফাইলে বিভিন্ন ছবি রয়েছে। কোনও ছবির ক্যাপশনে হৃদয়ভাঙার কথা লিখছেন। কোনও ছবির ক্যাপশনে আসছে মায়ের স্নেহের কথা।
সরস্বতীর একটি ফেসবুক পোস্ট বলছে, ‘যেটা খুব সহজেই পাওয়া যায়, সেটা হল ধোঁকা, যেটা খুব কষ্ট করে পাওয়া যায় সেটা হল সম্মান, যেটা হৃদয় থেকে পাওয়া যায় না সেটা হল ভালবাসা...।’
পরিবার সূত্রে খবর, মামাবাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন সরস্বতী। মেকআপের পাশাপাশি নানা ভিডিও শ্যুটের কাজও করেছেন। এ ছাড়াও প্রাইভেট টিউশনও করতেন। আঁকা শেখাতেন।
রাতেও পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা কেউ টের পাননি সরস্বতী এমন কাজ করে ফেলবেন।
স্বপ্ন দেখতেন, মডেলিং করবেন। যে কারণেই নানা ফটোশ্যুট করতেন। রিল বানানোর শখ ছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। তাঁর সন্ধান পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, সরস্বতীর ঘর থেকে একটি চিরকুট মিলেছে। তাতে লেখা, ‘মা, আমি তোমায় খুব ভালবাসি।’ প্রায় একই বয়ানের একটি পোস্টও রয়েছে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে। যেখানে মাকে ভালবাসার কথা একটি ছড়া উদ্ধৃত করে লিখেছেন সরস্বতী।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পাশের পাড়ার এক তরুণের সঙ্গে সরস্বতীর সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের টানাপড়েন থেকেই কি আত্মহনন, না কি এর নেপথ্যে রয়েছে আরও অন্য কারণ, তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
মৃত সরস্বতীর মামা বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে দেখতাম, ও দরজা বন্ধ করে কাঁদত। কেন বুঝতে পারতাম না।’’
এক প্রতিবেশী বলেন, রবিবার রাতে মেয়েটিকে কাঁদতে কাঁদতে ফিরতে দেখেছিলেন তিনি। প্রণয়ঘটিত কোনও সমস্যার জন্যই এই পরিণতি কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
সরস্বতীর মা এবং দিদিমা আয়ার কাজ করেন। প্রতিবেশীরা সরস্বতীর পরিবারে কোনও সমস্যার কথা উল্লেখ করেননি।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কী কারণে আত্মহনন? পেশাদারি চাপ, সম্পর্কের টানাপড়েন, নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু—সে নিয়েই এখন ভাবছেন তদন্তকারীরা।
সম্প্রতি পাটুলির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীর ঝুলন্ত দেহ। জানা যায়, সদ্য প্রয়াত অভিনেত্রী-মডেল বিদিশা দে মজুমদারের বন্ধু ছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রে দাবি ছিল, বান্ধবীর মৃত্যুর পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন মঞ্জুষা। আবার বিদিশার প্রয়াণের দিন দশেক আগেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দে-র। পর পর এমন মৃত্যু নিয়ে স্বভাবতই চিন্তিত টলিপাড়া।