১৫ বছর বয়সে দক্ষিণী ফিল্মজগতের মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন আসিন থোত্তুমকল। মালয়ালম, তামিল এবং তেলুগু ছবিতে অভিনয় করার পর ২০০৮ সালে বলিজগতেও পা রাখেন অভিনেত্রী। কিন্তু এক বলি অভিনেতার কারণেই আসিনকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে চলে যেতে হয়।
২০০৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন আসিন। প্রথম ছবিতেই আমির খানের নায়িকা হয়ে কাজ করেন তিনি। আমির এবং আসিন অভিনীত ‘গজনী’ ছবিটি বক্স অফিসে বিপুল ব্যবসা করে।
তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আসিনকে। একের পর এক বলিপাড়ার নামী তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। সলমন খান, অজয় দেবগন, অক্ষয় কুমারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান আসিন।
দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আর কাজ পাচ্ছিলেন না আসিন। বলিউডে বড় মাপের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলেও পরের দিকে আর অভিনয়ের প্রস্তাব পেতেন না তিনি।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খিলাড়ি ৭৮৬’ ছবিতে অক্ষয়ের সঙ্গে প্রথম কাজ করেন আসিন। শুটিংয়ের ফাঁকে আসিন অভিনেতাকে জানিয়েছিলেন যে, বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। আসিনের এই কথাটি মনে রেখে দিয়েছিলেন অক্ষয়।
একই বছর মুক্তি পায় ‘হাউসফুল ২’ ছবিটি। ছবির প্রচারের জন্য বিমানে চেপে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে যাচ্ছিলেন অক্ষয় এবং আসিন। সেই সময় রাহুল শর্মা নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে আসিনের আলাপ করিয়ে দেন অক্ষয়।
নিজের বন্ধু বলেই রাহুলের পরিচয় দেন অক্ষয়। প্রথম আলাপেই রাহুলকে দেখে মাটির মানুষ বলে মনে করেছিলেন আসিন। রাহুলের আচরণ পছন্দ হয়েছিল আসিনের। কিন্তু অক্ষয়ের এই বন্ধুর আসল পরিচয় জানতেন না আসিন।
পরে আসিন জানতে পারেন যে, রাহুল আসলে এক নামী মোবাইল সংস্থার মালিক। তাঁর বিমানে চেপেই ছবির প্রচারে যাচ্ছেন আসিনরা। রাহুলের আসল পরিচয় জেনে অবাক হয়ে যান অভিনেত্রী। এত বড় পদে কর্মরত হয়েও কোনও অহঙ্কার নেই রাহুলের, এই আচরণই আসিনের মনে ধরে।
ছবির প্রচারের অনুষ্ঠান চলাকালীন দু’তিন বার রাহুলের সঙ্গে আসিনের কথা হয়। তার পর ফোনে কথা বলা শুরু করেন দু’জনে। কয়েক বার কথা বলার পর আসিনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন রাহুল।
আসিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘রাহুল খুব তাড়াতাড়ি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমার সঙ্গে কথা বলার পরেই ও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, আমাকেই বিয়ে করবে।’’
আসিনকে নিজের মনের কথা জানানোর পর অভিনেত্রীর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। দু’পক্ষের পরিবারের মত নিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।
চার বছর সম্পর্কে থাকার পর রাহুলকে বিয়ে করেন আসিন। অনেকে মনে করেন যে, আসিনের নিজের জীবনের প্রেমকাহিনিও অনেকটা ‘গজনী’ ছবির চিত্রনাট্যের মতো। ছবিতেও দেখা গিয়েছে যে, টেলিকম সংস্থার মালিকের সঙ্গে নায়িকা সম্পর্কে জড়িয়েছিল। কিন্তু সেই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি বড় পর্দায়। কিন্তু আসিনের জীবনে সেই প্রেম পূর্ণতা পেয়ে গড়িয়েছে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত।
দিল্লির একটি বিলাসবহুল হোটেলে আসিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাহুল। বলিপাড়া সূত্রে খবর, নায়িকাকে চমকে দেবেন বলে ‘ট্রেজ়ার হান্ট’ খেলার আয়োজন করেছিলেন রাহুল।
আসিন যখন ‘ট্রেজ়ার হান্ট’-এর অন্তিম পর্বে এসে পৌঁছন, তখন দেখতে পান দক্ষিণী সাজপোশাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছেন রাহুল। হাতে ২০ ক্যারাটের হিরের আংটি। সেই আংটি দিয়েই আসিনকে বিয়ের প্রস্তাব জানান তিনি।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের রাহুলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন আসিন। তাঁদের বিয়ে উপলক্ষে বরপক্ষ এবং কনেপক্ষের দু’দিক থেকেই নিমন্ত্রিত ছিলেন অক্ষয়। বলিপাড়ার সকলেই জানতেন যে, রাহুল এবং আসিনের বিয়েতে ‘ঘটক’ হিসাবেই কাজ করেছিলেন অক্ষয়।
বিয়ে হওয়ার পর অভিনয় জগত থেকে দূরে সরে যান আসিন। বিয়ের এক বছর পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। বলিপাড়ার অনেকেই মজা করে বলেন, ‘‘রাহুলের সঙ্গে অক্ষয় আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন বলে তাঁর জন্য আসিন অভিনয় ছেড়ে দেন।’’
যদিও আসিন এবং রাহুলের প্রেমকাহিনি নিয়ে অক্ষয় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘‘হাউসফুল ২’ ছবির প্রচারে আমরা দিল্লি গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা হঠাৎ লুকোচুরি খেলতে শুরু করি। আমিই ওদের দু’জনকে একটা আলমারির ভিতর ঢুকিয়ে দিই। আর এখন দেখুন, কেমন সংসার করছে দু’জনে।’’
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অল ইজ় ওয়েল’ ছবিতে শেষ বারের মতো অভিনয় করতে দেখা যায় আসিনকে। তার পর আর বড় পর্দায় ফিরে আসেননি তিনি। সংসার নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন আসিন।