বাঙালি পরিচালকের হাত ধরে অভিনয় জগতে আসা। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘মৃগয়া’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় মিঠুন চক্রবর্তীকে। আশির দশকে হিন্দি এবং বাংলা ফিল্মজগতে একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। কিন্তু তারকাদের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ বি গ্রেড ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি।
১৯৮৮ এবং ১৯৮৯ সাল— এই দুই বছর বলিপাড়ার যে অভিনেতাদের ছবি মুক্তি পেয়েছিল, তাঁদের মধ্যে দর্শককে সর্বাধিক ছবি দিয়েছিলেন মিঠুন। কিন্তু অভিনেতার জীবনে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একরকম বাধ্য হয়েই বি গ্রেড ছবিতে কাজ করা শুরু করেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাবার কেরিয়ারের চড়াই-উতরাই নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন মিঠুন-পুত্র মহাক্ষয় ওরফে মিমো চক্রবর্তী। মিমো জানান, তাঁর বাবা এমন এক কঠিন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন যে নিরুপায় হয়ে বি গ্রেড ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
আশির দশকে কেরিয়ারের শীর্ষে থাকা মিঠুন হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই ব্যবসা চালানোর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে। এমনটাই দাবি করেন মিঠুন-পুত্র।
হিন্দি ছবি ছাড়াও মিঠুন যখন দক্ষিণের কোনও ছবিতে অভিনয় করতেন, সেই ছবিগুলির শুটিং চলার সময় তারকা-সহ কর্মীদলের সকল সদস্য মিঠুনের হোটেলে গিয়ে থাকতেন। সেখান থেকে উপার্জন করতেন অভিনেতা।
২০০০ সালের গোড়ার দিকে হোটেল চালানোর জন্য মিঠুনের উপার্জনের বেশির ভাগ অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছিল। হোটেলের পাশাপাশি মিঠুনকে সংসারের খরচও চালাতে হত।
মিমো জানান, হোটেলের জন্য খরচ করার পর সংসার চালানোর মতো হাতে কিছুই থাকত না মিঠুনের। তাই বাধ্য হয়ে কম বাজেটের বি গ্রেড ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন মিঠুন।
মিমোর দাবি, অভিনয় জগতের বড় মাপের তারকা হয়েও নিচু স্তরের ছবিতে কাজ করার আগে দু’বারও ভাবেননি মিঠুন। মিঠুন তখন তাঁর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাই বিনা বাক্যব্যয়ে যে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন, সে ছবিতেই কাজ করছিলেন মিঠুন।
মিঠুনকে দিয়ে বি গ্রেড ছবিতে অভিনয় করিয়ে আখেরে লাভ হয়েছিল ছবি নির্মাতাদেরই। মিমো বলেন, ‘‘যদি কোনও প্রযোজক ৭০ লক্ষ টাকা দিয়ে ছবি বানাতেন, তবে ছবিমুক্তির পর তা এক কোটি টাকার ব্যবসা করত।’’
স্ত্রী এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই যে মিঠুন কম বাজেটের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তা অকপটে স্বীকার করেন মিমো। তিনি বলেন, ‘‘বাবা এখনও যেখানে কাজের সুযোগ পান, তাই করেন। এখনও আমাদের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য কাজ করে যান বাবা। এই কারণে বাবাকে নিয়ে আমি খুব গর্ববোধ করি।’’
মিমো জানান, মিঠুন কেরিয়ারের শুরুর দিকে খুব কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মিঠুন-পুত্রের দাবি, ‘‘বাবার রুমমেট নাকি এক বার ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলেন বাবাকে। এক বেলা খাবার খাওয়ারও পয়সা ছিল না বাবার কাছে।’’
কেরিয়ারের গোড়ায় নাকি শৌচালয়ও পরিষ্কার করতে হয়েছে মিঠুনকে। মিমো সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মাথার উপর ছাদ ছিল না বলে জিম লাগোয়া শৌচালয় ব্যবহার করতেন বাবা। কিন্তু তার জন্যও শর্ত ছিল। বাবাকে দিয়ে শৌচালয় পরিষ্কার করাতেন জিমের মালিক। তার বদলে ওই শৌচালয় ব্যবহার করতেন বাবা।’’
মিমো জানান, মিঠুনের কেরিয়ারের উত্থান-পতনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল তাঁর স্ত্রীর উপর। মিমো বলেন, ‘‘বাবাকে চোখের সামনে মেগাস্টার হতে দেখেছিলেন মা। মা বলতেন বাবার কোনও ছবি যদি ফ্লপ হত তা হলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তেন তিনি।’’