সত্তর দশকের আগে থেকেই শিশু অভিনেতা হিসাবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা শুরু করে দিয়েছিলেন শ্রীদেবী। তৎকালীন অভিনেত্রীদের মধ্যে সুপারস্টার হিসাবে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু কানাঘুষো শোনা যায় যে, কাজের ক্ষেত্রে নিজের জনপ্রিয়তার প্রভাব খাটাতেন শ্রীদেবী।
নিজের অপছন্দের অভিনেতাদের সঙ্গে নাকি কাজ করতে চাইতেন না শ্রীদেবী। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, অজয় দেবগন একটি ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করবেন শুনে সেই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন শ্রীদেবী। এমনকি, অজয়কে ছবি থেকে বারও করে দেন নায়িকা।
বলি পরিচালক মুকুল আনন্দের পরিচালনায় ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় ‘খুদা গাওয়াহ’ ছবিটি। এই ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় শ্রীদেবী। শ্রীদেবীর পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন এবং দক্ষিণী অভিনেতা নাগার্জুন অক্কিকেনি।
কিন্তু নাগার্জুন প্রথম পছন্দ ছিল না মুকুলের। শ্রীদেবীর কমবয়সি চরিত্রের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য নায়কের সন্ধানে ছিলেন মুকুল। প্রথমে জ্যাকি শ্রফ এবং চাঙ্কি পাণ্ডের কথা ভেবেছিলেন পরিচালক। কিন্তু চরিত্রের সঙ্গে মানাবে না বলে তাঁদের তালিকা থেকে বাদ দেন মুকুল।
অভিনেতাদের খোঁজ চলাকালীন মুকুলের মাথায় আসে অজয় দেবগনের কথা। সেই সময় ‘ফুল অওর কাঁটে’ ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন অজয়।
দর্শকের মনে জায়গা করে নিলেও ‘ফুল অওর কাঁটে’ ছিল অজয়ের প্রথম ছবি। মুকুল যে অজয়কে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবনাচিন্তা করছেন তা জানান শ্রীদেবীকে। কিন্তু অজয়ের নাম শুনেই বেঁকে বসেন শ্রীদেবী।
শ্রীদেবী স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, ‘খুদা গাওয়াহ’ ছবিতে অজয় অভিনয় করলে শ্রীদেবী কাজ করবেন না। নায়িকার এমন আচরণে অবাক হয়ে যান মুকুল। কারণ জিজ্ঞাসা করায় শ্রীদেবী বলেন, ‘‘আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যে স্তরে রয়েছি, সেখানে অজয় পৌঁছতে পারেননি। ওঁর মতো নবাগত অভিনেতার সঙ্গে কাজ করব না আমি।’’
শ্রীদেবীর জন্য অজয়কে তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন মুকুল। শেষমেশ সঞ্জয় দত্তকে প্রস্তাব দেন পরিচালক। মুকুলের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান সঞ্জয়। কিন্তু শুটিংয়ের মাঝপথে কাজ ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, শুটিং শুরুর আগে সঞ্জয়কে যে ভাবে চরিত্রের বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল খুঁজে পাননি অভিনেতা। কাজ শুরু হওয়ার পর সঞ্জয় দেখতে পান যে, ছবিতে তাঁর চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হয়নি।
সঞ্জয়ের দাবি, অমিতাভের যে ধরনের কাজ ছিল, সেই অনুযায়ী তাঁকে মোট ছ’দিন শুটিং সেটে আসতে হত। কিন্তু শুটিং শুরু হওয়ার পর সঞ্জয় লক্ষ করেন, অমিতাভ রোজই সেটে আসছেন। সঞ্জয়ের মতে, ছবিতে তাঁর চরিত্র অপেক্ষা অমিতাভের চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল।
‘খুদা গাওয়াহ’ ছবির কয়েকটি দৃশ্যে শুটিং করার পর মাঝপথে কাজ ছেড়ে চলে যান সঞ্জয়। তার পর বিপদে পড়ে যান মুকুল। শেষে শ্রীদেবীর কাছেই সাহায্য চান তিনি।
কোনও অভিনেতাকে পছন্দ হচ্ছে না দেখে শ্রীদেবী শেষ পর্যন্ত দক্ষিণী অভিনেতা নাগার্জুনের নাম উল্লেখ করেন। শ্রীদেবীর পরামর্শ অনুযায়ী নাগার্জুনকেই প্রস্তাব দেন মুকুল। পরিচালকের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান তিনি। অবশেষে অমিতাভ, শ্রীদেবী এবং নাগার্জুনকে নিয়ে পুরো ছবির শুটিং শেষ করেন মুকুল।
শ্রীদেবীর কথায় যে অজয়কে ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সে কথা অভিনেতার কানে পৌঁছতে সময় লাগেনি। তবে শুধুমাত্র নবাগত হওয়ার কারণে যে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা মানতে পারেননি অজয়। কারণ, তার কয়েক বছরের মধ্যেই নবাগত অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় শ্রীদেবীকে।
তবে কি নবাগত অভিনেতাদের মধ্যে অজয়ের চেয়ে বেশি অক্ষয়কে পছন্দ করতেন শ্রীদেবী? তা নিয়ে বলিপাড়ায় কানাঘুষো চলতে থাকে। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ১৯৯৪ সালে ‘মেরি বিবি কা জবাব নেহি’ ছবির জন্য অক্ষয়ের সঙ্গে শুটিং করেন শ্রীদেবী।
১৯৯৪ সালের আগে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অক্ষয়। তাঁকে নাকি চিনতেন না শ্রীদেবী। ‘মেরি বিবি কা জবাব নেহি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসায় অক্ষয়ের নাম শুনে আপত্তি জানান শ্রীদেবী।
অক্ষয়ের কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন শ্রীদেবীর কোরিয়োগ্রাফার চিনি প্রকাশ। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খিলাড়ি’ ছবিতে অক্ষয়ের অভিনয় শ্রীদেবীকে দেখান চিনি। অক্ষয়ের অভিনয় দেখার পর অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হন শ্রীদেবী।
১৯৯৪ সালে ‘মেরি বিবি কা জবাব নেহি’ ছবির শুটিং করেন অক্ষয় এবং শ্রীদেবী। যদিও শুটিং শেষ হওয়ার দশ বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। কিন্তু এর পর আর অক্ষয়ের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়নি শ্রীদেবীকে।