খুনের পর দু’দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও মডেল দিব্যা পাহুজার দেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তা হলে কোথায় গেল মডেলের দেহ? কোথায় লোপাট করা হল? অভিযুক্তদের জেরা করে এখনও সেই তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে দিব্যার দেহ খুঁজে বার করাই এখন পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
গত ২ জানুয়ারি হরিয়ানার গুরুগ্রামের একটি হোটেলে গিয়েছিলেন দিব্যা। সেই রাতেই তাঁকে খুনের অভিযোগ ওঠে হোটেল মালিক অভিজিৎ সিংহ এবং তাঁর হোটেলের দুই কর্মী ওমপ্রকাশ এবং হেমরাজের বিরুদ্ধে। সেই রাতেই লোপাট করে দেওয়া হয় দিব্যার দেহ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় অভিজিৎ এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কে এই দিব্যা পাহুজা? কেনই বা তাঁর খুন নিয়ে এত হইচই? গুরুগ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণী মডেলকে নিয়েই এখন গোটা হরিয়ানায় চর্চা চলছে।
গুরুগ্রামের বলদেব নগরের বাসিন্দা দিব্যা। নিম্নবিত্ত পরিবার। বাবা প্রতিবন্ধী। পেশায় তিনি এক জন সব্জি এবং ফল বিক্রেতা। বাবা-মা ছাড়াও পরিবারে দিব্যার এক বোনও রয়েছেন।
স্কুলে পড়াকালীনই সুদর্শনা দিব্যার পরিচয় হয়েছিল গুরুগ্রামের গ্যাংস্টার সন্দীপ গোডালের সঙ্গে। তার পর তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।
স্কুলের গণ্ডি পেরোলেও কলেজের গণ্ডি টপকাতে পারেননি দিব্যা। বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন। পাশাপাশি মডেলিংয়ের কাজও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে কলেজ ছেড়ে দেন। তার পর পুরোপুরি মডেলিংকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন। তাঁর জীবনও ছিল বর্ণময়।
মডেলিংকে পেশা হিসাবে বেছে নিলেও গ্যাংস্টার সন্দীপের সঙ্গে কিন্তু দিব্যার ঘনিষ্ঠতা কমেনি তো বটেই, বরং আরও বাড়ে। সন্দীপের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, অপহরণ, খুন-সহ বেশ কিছু মামলা ঝুলছিল। গুরুগ্রাম পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’ তালিকাতেও তাঁর নাম ছিল।
সাল ২০১৬। পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পায়, মুম্বই বিমানবন্দরের কাছে একটি হোটেলে রয়েছেন সন্দীপ এবং দিব্যা।
সেই খবর পেয়েই গুরুগ্রাম পুলিশের একটি দল মুম্বই পৌঁছয়। তার পর হোটেলেই পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় সন্দীপের। সেই এনকাউন্টার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
ভুয়ো এনকাউন্টার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনও অভিযোগ ওঠে, সন্দীপকে ফাঁদে ফেলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন দিব্যা। সেই ঘটনার পর গ্রেফতারও হন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, গ্যাংস্টার সন্দীপের ছায়াসঙ্গী হিসাবেই থাকতেন দিব্যা। তিনি যখনই সন্দীপের সঙ্গে থাকতেন, মায়ের সঙ্গে ফোনে ‘কোড ওয়ার্ড’-এ কথা বলতেন। তার মধ্যে একটি হল— ‘মা আমার শরীর ঠিক নেই। ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।’ তার মানে সন্দীপ তাঁর আশপাশে নেই। আরও একটি হল— ‘মা, ওষুধ নিয়ে এসেছি। খেয়ে নেব।’ তার মানে, সন্দীপ তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন।
২০১৬ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। গত সাত বছর ধরে মুম্বইয়ের বায়কুলা জেলই ছিল দিব্যার ঠিকানা। জেলে ঢোকার পর তাঁর সঙ্গে কী কী হয়েছে, এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন দিব্যা। তিনি জানিয়েছিলেন, বায়কুলা জেলে ঢোকার পরই তাঁকে বিবস্ত্র করে তল্লাশি করা হয়। জেলে থাকাকালীন তাঁর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল।
২০২৩ সালের জুনে জেল থেকে জামিন পান দিব্যা। জামিন পাওয়ার পর তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, “আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করব।” কিন্তু তার পর আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে পেরেছিলেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় গুরুগ্রামের অভিযুক্ত হোটেল মালিক অভিজিৎ তাদের কাছে দাবি করেছেন, দিব্যার মোবাইলে তাঁর অনেক অশ্লীল ছবি ছিল। সেই ছবি দেখিয়ে বার বার ব্ল্যাকমেল করতেন দিব্যা।
দিব্যার কাছে মোবাইলের পাসওয়ার্ডও চেয়েছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু সেই পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় দিব্যাকে গুলি করে খুন করেছেন বলে পুলিশকে জানান অভিজিৎ। কিন্তু অভিজিতের এই দাবির সত্যতা কতটা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
হোটেল মালিক অভিজিতের সঙ্গে দিব্যার কী সম্পর্ক ছিল তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অভিজিৎ পুলিশের কাছে আরও দাবি করেছেন যে, দিব্যার দেহ লোপাট করার জন্য দুই সঙ্গীকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় সেই দেহ লোপাট করা হয়েছে, সেই তথ্য এখনও বার করতে পারেনি পুলিশ।