নাম নেহা সিংহ রাঠৌর। পরিচয়— ভোজপুরী গায়িকা। তবে ভোজপুরী গান বললেই যে ধরনের গান মনে পড়ে, তিনি ঠিক সেই ঘরানার সঙ্গীতচর্চা করেন না। ভোজপুরী গান নিয়ে যে চলতি ধারণা রয়েছে, তিনি সেই ধারণা ভেঙে বিপ্লব আনার চেষ্টা করছেন। আর সেই প্রক্রিয়ায় কখনওসখনও ‘হুমকি’রও মুখোমুখি হচ্ছেন।
মঙ্গলবারই এসেছে তেমন ‘শাসানি’। উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন নোটিস পাঠিয়ে নেহার কাছে জানতে চেয়েছে, তার কি কোনও ধারণা আছে, তাঁর গানের কতটা কুপ্রভাব পড়ছে সমাজের উপর? এ ব্যাপারে নেহার বক্তব্যও জানতে চেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। জানিয়েছে, ৩ দিনের মধ্যে জবাব না দিলে আর সেই জবাব সন্তোষজনক না হলে তারা মামলা করতে পারে নেহার বিরুদ্ধে। নেহা নিজের সমাজমাধ্যমে সে কথা জানাতেই হইহই করে উঠেছেন তাঁর গানের ভক্তরা।
বয়স সবে ২৬। এর মধ্যেই সমাজমাধ্যম প্রভাবী হিসাবে নাম করেছেন নেহা। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে লক্ষ লক্ষ অনুরাগী রয়েছে তাঁর। ইউটিউবে রয়েছে নিজের চ্যানেলও। সেই চ্যানেল জনপ্রিয়তার প্রমাণ স্বরূপ ইউটিউবের ‘রুপোলি বোতাম’ ট্রফিও পেয়েছে।
তবে তার গানের খ্যাতি প্রথম লোকের মুখে মুখে ছড়িয়েছিল বিহারের ভোটের সময়। বিহারের ভোট উপলক্ষে একটি গান বেঁধেছিলেন নেহা। যার শিরোনাম ছিল, ‘‘বিহার মে কা বা!’’ ভোজপুরী এই বাক্যবন্ধের অর্থ ‘‘বিহারে হচ্ছেটা কী?’’
রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর রাজ্যবাসীর বেহাল দশার কথা বলা হয়েছিল সেই গানে। সেই গান রাজনৈতিক দলগুলি বাজিয়েছিল বিহারের ভোটের প্রচারেও। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছিলেন নেহা।
সেটা ২০২০ সালের ঘটনা। তবে নেহা অন্য ধারার ভোজপুরী গান বাঁধছেন ২০১৮ সাল থেকেই। বিহারে ভোটের আগেও সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে গান বেঁধেছেন তিনি। সেই সব গানের বিষয়বস্তু হিসাবে ঘুরে ফিরে এসেছে বেকারত্ব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার কথা। পরিবেশ দূষণ এমনকি অতিমারি নিয়েও গান বেঁধেছেন নেহা। আবার তাঁর গানে স্থান পেয়েছে সরকারের সমালোচনাও।
বিহারের ভোটের মতো উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও গান বেঁধেছিলেন নেহা। শিরোনাম— ‘‘ইউপি মে কা বা!’’ তবে সেই গানের যেমন প্রশংসা করেছেন রাজনীতিকরা, তেমনই বহু রাজনৈতিক নেতার নিন্দাও শুনতে হয়েছে তাঁকে।
খাস ভোজপুরী সিনেমার ‘সুপারস্টার’ তথা বিজেপি নেতা রবি কিষণ একবার সম্মুখসমরে নেমেছিলেন নেহার সঙ্গে। নেহার গাওয়া গান ‘ইউপি মে কা বা’ ভাইরাল হতেই তার পাল্টা জবাব দিয়ে একটি গান বেঁধেছিলেন রবিও।
রবির গাওয়া সেই গানও ভাইরাল হয় উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে। রবির জবাবী গানের বক্তব্য ছিল, ‘ইউপি মে সব বা’।
গানের প্রতিবাদী ভাষা, তারকা এবং রাজনীতিকদের সঙ্গে টক্কর, সব মিলিয়ে অল্প সময়েই সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন নেহা। বিভিন্ন ভোটের প্রচারে এমনকি, নানা অনুষ্ঠানেও গানের জন্য ডাক পেতে শুরু করেন ভোজপুরী গায়িকা।
গান বাঁধা, গান গাওয়া চলছিলই। গুজরাতের ভোটের আগে গান বেঁধেছেন। গান বেঁধেছেন মোরবী সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়েও। তবে সম্প্রতি নেহা পুলিশের নোটিস পেয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে।
যোগীর বুলডোজ়ার নীতি, বেআইনি বাড়ি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত এমনকি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেহা তাঁর গানে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ অভিযোগ করেছে, ওই গান উত্তরপ্রদেশের সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করছে। এমনকি, বিশৃঙ্খলাও তৈরি করছে।
বিহারের কৈমুর জেলার মেয়ে নেহা। জন্ম ১৯৯৭ সালে। ভোজপুরী গানে বিপ্লব আনতে চাওয়া এই কন্যা ইতিমধ্যেই ৩০ লক্ষ ভক্ত জুটিয়ে ফেলেছেন।
কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নেহা বিয়েও করেছেন বছর দুই আগে। স্বামীর নাম হিমাংশু সিংহ। তিনি পেশায় একজন লেখক।
তবে নেহার গানের বিপ্লব শেষ পর্যন্ত দীর্ঘজীবী হবে কি না তা আপাতত মুখ্যমন্ত্রী যোগীর প্রশাসনেরই হাতে। কারণ নেহার জবাবে সন্তুষ্ট না হলে খুব শীঘ্রই মামলা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ।