নয়ডার সেক্টর ৫১ মেট্রো স্টেশনের কাছে বার্থডে পার্টির আয়োজন করেছিলেন ইউটিউবার গৌরব তানেজা। তাঁর অনুরাগীদের জন্য ভাড়া করেছিলেন মেট্রোর একটি কোচও। কিন্তু সেই জন্মদিন পালন করতে গিয়েই গ্রেফতার হন গৌরব। যদিও পরে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে বেশ চর্চা চলছে।
শনিবার মেট্রো স্টেশনের কাছে ওই পার্টিতে হাজির হয়েছিলেন কয়েকশো অনুগামী। যার জেরে যানজটের সৃষ্টি হয়। শুধু তাই-ই নয়, পুলিশের দাবি, এত লোক একসঙ্গে এক জায়গায় জড়ো হওয়ায় পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশের দাবি, এই অনুষ্ঠানের জন্য তাদের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেননি গৌরব এবং তাঁর স্ত্রী ঋতু রাঠি।
শনিবারের সেই ঘটনা প্রসঙ্গে গৌরবের দাবি, মেট্রো স্টেশনের সামনে অনুরাগীরা জড়ো হলেও তাঁরা কোনও ক্ষতি করেননি। তাঁদের কারণে কোনও হিংসা ছড়ায়নি। তাঁরা কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেননি। কোনও আপত্তিকর স্লোগান তোলেননি। গৌরবের পাল্টা দাবি, পুলিশের কাছ থেকে এই পার্টির জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল।
যাঁকে নিয়ে এত হইচই, যাঁর এত অনুরাগী, এত অনুগামী, আদতে সেই গৌরব তানেজা কে? কেনই বা এত জনপ্রিয় তিনি?
অনুরাগীদের কাছে গৌরব ‘ফ্লাইং বিস্ট’ নামে জনপ্রিয়। তিনি একাধারে যেমন জনপ্রিয় ইউটিউবার, তেমনই এক জন বডিবিল্ডার, আবার এক জন পাইলটও।
১৯৮৬ সালে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্ম গৌরবের। বাবা ব্যাঙ্ককর্মী, মা স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর স্কুলজীবন কানপুরেই কেটেছে। তার পরই দুবাইয়ে যান উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (বিটস, পিলানি)-এ ভর্তি হন।
কিন্তু গৌরব আরও বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন। দুবাই থেকে ফিরে তিনি আইআইটি পরীক্ষায় বসেন ২০০৪ সালে। সারা ভারতে তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ১৮৪। তার পর খড়গপুর আইআইটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করেন।
শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েই থেমে থাকতে চাননি গৌরব। পাইলটের প্রশিক্ষণ নেন। এর পর ২০১১ সালে তিনি ইন্ডিগো সংস্থায় পাইলট হিসাবে কাজ শুরু করেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গৌরবের কেরিয়ারও বদলাতে শুরু করে। বিটস থেকে আইআইটি। সেখান থেকে পাইলটের চাকরি। সেই চাকরি করলেও মনেপ্রাণে কিন্তু বডিবিল্ডিংয়ের প্রতিই তাঁর আকর্ষণ ছিল অনেক বেশি।
বডি বিল্ডিংয়ে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েন গৌরব। ২০১৩ সালে বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় জেতেন তিনি। তার পর থেকেই নিজের বডিবিল্ডিং এবং শরীরচর্চার ছোট ছোট ভিডিয়ো ইউটিউবে শেয়ার করতে শুরু করেন। বিপুল ভিউ এবং অনুরাগীর সংখ্যা দেখে তিনি ফেসবুকেও সেই সব ভিডিয়ো শেয়ার করতে শুরু করেন।
এখান থেকেই তাঁর জীবন সম্পূর্ণ অন্য দিকে মোড় নেয়। তিনি ভ্লগ করা শুরু করেন। ভারতীয়দের মধ্যে যাঁরা ভ্লগিং করে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে গৌরব অন্যতম। ভ্লগিং করে টাকা উপার্জন করতে শুরু করেন।
২০১৬ সালে গৌরব ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল খোলেন। তার নাম ‘ফিট মাসল টিভি’। কী ভাবে শরীর ফিট রাখতে হয়, কী কী প্রোটিন খাবার খেতে হবে ইত্যাদি শরীরচর্চা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এই চ্যানেলের মাধ্যমে শেয়ার করা শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর এই চ্যানেল বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
২০১৭ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন গৌরব। তিনি এই সময় নিজের একটি ভ্লগিং চ্যানেল শুরু করেন। নাম দেন ‘ফ্লাইং বিস্ট’। এই চ্যানেলের মাধ্যমে পাইলট হিসাবে তাঁর জীবন এবং তাঁর ভ্রমণ সংক্রান্ত না কাহিনি তুলে ধরেন।
গৌরবের ‘ফ্লাইং বিস্ট’ চ্যানেলটি গ্রাহক প্রায় ৭৫ লক্ষ।
২০১৬ সালে গৌরব বিয়ে করেন ঋতু রাঠিকে। তিনিও একজন পাইলট, আবার ভ্লগারও। তাঁদের দুই সন্তান— কিয়ারা এবং পিহু।
গৌরব নিজেকে সার্টিফায়েড নিউট্রিশনিস্ট হিসেবে দাবি করেন। বর্তমানে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
গৌরবের তিনটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে— ফ্লাইং বিস্ট, ফিট মাসল টিভি এবং রাশভরী কে পাপা।
বলিউডের সঙ্গেও যোগ রয়েছে গৌরবের। অজয় দেবগণ, টাইগার শ্রফ, আর মাধবনের মতো তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে তাঁর।
গৌরবের মতোই তাঁর স্ত্রী ঋতু রাঠিও ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয়। গৌরবের ইনস্টাগ্রাম অনুগামী রয়েছে ৩৩ লক্ষ। ঋতুর ১৬ লক্ষ অনুগামী।
হরিয়ানার বাসিন্দা ঋতু। পাইলট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে দাবি তাঁর। কিন্তু সেই বাধা সরিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন পাইলটের প্রশিক্ষণের জন্য। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইন্ডিগো সংস্থায় পাইলট হিসাবে যোগ দেন। ইন্ডিগোতেই পাইলট হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন গৌরবও। এখান থেকেই তাঁদের দাম্পত্যজীবন শুরু।