‘খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ হাতি লোফেন যখন তখন’— সুকুমার রায়ের ‘পলোয়ান’ কবিতার মতো তিনি হাতি লুফতেন কি না জানা নেই, তবে এক হাতে মাথার উপর ১২০ কেজি ওজনের বারবেল তুলে ধরতেন প্রায়শই।
শার্ল রিগুলোত, যাঁকে উনিশ শতকের অন্যতম শক্তিশালী মানুষ বলা হত। তিনি একাধারে যেমন একজন ভারোত্তোলক, তেমনই পেশাদার কুস্তিগির, সার্কাসের কর্মী, রেসিং কার চালক।
এক হাতে মাথার উপর প্রায় ১২০ কেজি ওজনের বারবেল তুলে বিশ্বখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। এ হেন মানুষটিকে নিয়ে নানা চিত্তাকর্ষক কাহিনি শুনতে পাওয়া যায়।
১৯০৩ সালে ফ্রান্সের লে ভেজাইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন রিগুলোত। ছোট থেকেই তিনি ভারোত্তোলন চর্চা শুরু করেন।
১৯২৩ সাল থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে তিনি ১২টি বিশ্বরেকর্ড করেন।
ষষ্ঠীচরণের ‘দেহের ওজন উনিশটি মণ, শক্ত যেন লোহার গঠন’। আর রিগুলোতের দেহের গঠন? পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি লম্বা, ওজন ১০৪ কেজি।
তাঁর ছাতির মাপ ৪৯ ইঞ্চি। কব্জি ৩৭ ইঞ্চি। ঘাড় ১৮.৫ ইঞ্চি। সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ ‘বডি বিল্ডার’ গুণময় বাগচীর বাইসেপ ছিল সাড়ে সতেরো ইঞ্চি। রিগুলোতের বাইসেপের মাপও একই।
১৯২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে সোনা জিতেছিলেন তিনি।
১৯২৮ সালে রিগুলোত দু’টি বিশ্বরেকর্ড করেন। এক হাতে এক ঝটকায় ৩৬০ পাউন্ডের একটি গ্লোব বারবেল তোলেন।
১৯৩০ সালে তিনি একটি অ্যাক্সেল দ্বারা সংযুক্ত রেলগাড়ির চাকা তুলে বিশ্ব রেকর্ড করেন।
রিগুলোত হলেন বিশ্বের সেরা এক হাতে এক ঝটকায় বারবেল উত্তোলনকারী। তবে এই সেরা হওয়ার জন্য নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন।
নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য তিনি আবিষ্কার করেন বিশেষ এক ধরনের বারবেল। ‘চ্যালেঞ্জ বারবেল’ নামে এই ব্যয়ামের সরঞ্জামটির দু’পাশে দু’টি গোলকের মাঝে ছিল চার ফুটের একটি রড। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি নিয়ে নিয়মিত অভ্যাসের ফলে তাঁর ভারোত্তোলনের কৌশল আরও উন্নত হয়েছিল।
১৯৩০ সালে তিনি সার্কাসে ভারোত্তোলনের খেলা দেখাতে শুরু করেন। সে সময় তিনি বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেন।
১৯৩৭ সালে তাঁর জীবনে নতুন মোড় আসে। তিনি মোটর সাইকেল প্রতিযোগিতায় নামেন। ২৪ ঘণ্টা একটানা বাইক চালানোর এই প্রতিযোগিতা বোল ডি’অর-এ তিনি জয়ী হন। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বাইক রেস, যা আজও অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ফরাসি বাহিনীর সদস্য হন। কিন্তু বিপদে পড়েন এক নাৎসিকে ঘুষি মেরে। প্রাণ সংশয় দেখা দেয় সেই নাৎসির।
তাঁকে জেলবন্দি করা হয়। তবে বেশি দিন তাঁকে জেলে বন্দি থাকতে হয়নি। তাঁর প্রবল শক্তি দিয়ে জেলের গরাদ বেঁকিয়ে পালিয়ে আসনে। শুধু তাই নয়, নাৎসি কারাগার থেকে অন্যদেরও পালাতে সাহাষ্য করেন।
পরবর্তী কালে তিনি একটি ফরাসি সংস্থার স্পোর্টস ডিরেক্টর হন। ১৯৬২ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
নাৎসি কারাগার থেকে রিগুলোতকে সে দিন তাঁর ক্রীড়াবিদ হিসাবে দক্ষতাই বাঁচিয়েছিল।
পরবর্তী কালে ক্রীড়াবিদ হিসাবে তাঁর মেয়ে ড্যানি রিগুলোতও খ্যাতি লাভ করেন। ‘ফিগার স্কেটিং’ প্রতিযোগিতায় তিনি খুব ছোট থেকেই দক্ষতা অর্জন করেন।
ড্যানি ১৯৬০ সালে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু বাবার মতো সোনা পাননি। ১৩ নম্বর স্থানেই তাঁকে শেষ করতে হয়েছিল।