Luiz Inácio Lula da Silva

লাল পতাকায় ভাসছে ব্রাজিলের রাস্তাঘাট! হাল ফেরাতে কেন ভরসা বামপন্থী লুলাতেই?

ডানপন্থী বলসোনারোকে সরিয়ে একযুগ পরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আসনে লুলা। ফেরার লড়াই সহজ ছিল না। লুলা পেয়েছেন ৫০.৯% ভোট, যেখানে বলসোনারো ৪৯.১% ভোট।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৫৪
Share:
০১ ১৫

নাটকীয় বললেও কম বলা হয়। ব্রাজিলে রুদ্ধশ্বাস নির্বাচনে ডানপন্থী জাইর বলসোনারোকে ফটোফিনিশে হারিয়ে তখ্‌তে ফিরলেন লুইস ইনাসিয়ো লুলা দ্য সিলভা। অনুগামীরা ভালবেসে ডাকেন শুধুই ‘লুলা’ নামে। বামপন্থী ট্রে়ড ইউনিয়ন নেতা হিসাবে যাত্রা শুরু তাঁর।

০২ ১৫

ব্রাজিলের ওয়ার্কাস পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা লুলা এর আগেও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ২০০৩ থেকে ২০১০, তাঁর আমলে দেশে বিপুল উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে বলেও দাবি। বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র থেকে সরিয়ে আনার কাজও সাফল্যের সঙ্গে করার কৃতিত্ব লুলাকেই দেন তাঁর অনুগামীরা।

Advertisement
০৩ ১৫

ডানপন্থী জাইর বলসোনারোকে সরিয়ে একযুগ পরে লুলার প্রেসিডেন্টের আসনে ফেরার লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না। ফলাফল বলছে, লুলা পেয়েছেন ৫০.৯ শতাংশ ভোট, যেখানে বলসোনারো পেয়েছেন ৪৯.১ শতাংশ ভোট।

০৪ ১৫

ভোটের ফলেই পরিষ্কার, প্রায় অর্ধেক ভোটদাতা এখনও রয়েছেন বলসোনারোর পক্ষেই। তা হলে কেবল মাত্র দরিদ্র, নিপীড়িতদের অধিকারের লড়াই লড়ে আসা বামপন্থী লুলা কী করবেন? কারণ, কোভিড পরবর্তী অধ্যায়ে ব্রাজিলের অর্থনীতির কোমরভাঙা অবস্থা। সর্বোপরি, এখনও হার স্বীকার করেননি ‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’ বলসোনারো।

০৫ ১৫

তার জবাবও লুলা নিজেই দিয়েছেন। প্রচারে লুলা দ্ব্যর্থহীন ভাবে বার বার বলেছেন, ডান বা বাম নয়, তাঁর প্রথম লক্ষ্য দেশে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে যাওয়া জনগণকে এক পঙ্‌ক্তিতে আনা। এবং অবশ্যই, যাঁরা তাঁকে ভোট দিয়েছেন, শুধু তাঁদেরই নয়, জনগণের নেতা হিসেবে সবার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া।

০৬ ১৫

প্রচারে গিয়ে লুলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমাজন ধ্বংস রোধ করবেন তিনি। যে আমাজন ধ্বংসের অভিযোগে বিদ্ধ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বলসোনারো। যদিও লুলার প্রাথমিক লক্ষ্য হবে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশে খিদে-সমস্যা মোকাবিলা। বৈষম্য ঘোচানো।

০৭ ১৫

কিন্তু তৃতীয় দফায় লুলার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইকে নাটকীয় বললেও কম বলা হয়। ৭৬ বছরের বাম ট্রেড ইউনিয়ন নেতা লুলার এই জয় ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর কাছেও ছিল জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ।

০৮ ১৫

লুলার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টে সেই অভিযোগ প্রমাণিতও হয়। ফলশ্রুতিস্বরূপ, ৫৮০ দিন জেলে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার উপরও। এই কারণে ২০১৮-এর ভোটে অংশ নিতে পারেননি তিনি।

০৯ ১৫

পরে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট তাঁর শাস্তির রায়কে বাতিল করে। আবার ভোটের লড়াইয়ে ফিরতে পারেন লুলা। আর ফিরেই বাজিমাত। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, মূলত বৈষম্য হঠিয়ে দেশকে উন্নয়নের রাস্তায় আনার প্রতিশ্রুতি এবং পূর্ববর্তী লুলা জমানার কৃতকর্মের যোগফল, এই জয়। করোনার ধাক্কায় থরহরি কম্প ব্রাজিলের অর্থনীতিকে লুলাই পারবেন পথে আনতে, এই বিশ্বাস জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, মূলত দু’দফায় লুলাকে দেশকে নেতৃত্ব দিতে দেখে এবং অনেকাংশে বলসোনারোকে নিয়ে দেখা স্বপ্নভঙ্গের পর।

১০ ১৫

ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক নেতা হিসেবে বামপন্থী রাজনীতিতে হাতেখড়ি লুলার। তার পর ক্রমশ উত্থান। এই লুলাকেই এখন বামপন্থীর মুখোশ ছেড়ে হয়ে উঠতে হবে সর্বজনীন নেতা। যেখানে বামের পাশেই সহাবস্থান করবে উগ্র দক্ষিণপন্থীরাও। লুলাকে কি পারবেন এই বিভেদের বাতাবরণ দূর করতে?

১১ ১৫

বলসোনারোর ৪ বছরের শাসনকালে সবচেয়ে বড় সঙ্কট ছিল করোনা অতিমারি। ব্রাজিলে করোনার দাপটে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭ লক্ষ মানুষ। এটাই সরকারি হিসাব। কিন্তু রিও ডি জেনেইরোর পথেঘাটে ঘুরলেই স্পষ্ট হয়, আদত সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। ব্রাজিলবাসী সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরোতে চান।

১২ ১৫

করোনার ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়ে বলসোনারোর অতি-জাতীয়তাবাদের দর্শনও। সেখানেই বাজিমাত করলেন লুলা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ২০১০-এ যে ব্রাজিলকে ছেড়ে গিয়েছিলেন তিনি, আজ যা হাতে পেলেন, তাতে কতটা পার্থক্য? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই ব্রাজিলে ফারাক প্রচুর। আজ পরিস্থিতি আরও কঠিন।

১৩ ১৫

বামপন্থার চিরকালীন ধারা বা ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থান— আজ ব্রাজিল চালাতে গিয়ে কেবল এই দু’য়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে পারবেন না লুলা, তা পরিষ্কার। এখন তাঁকে গ্রহণ করতেই হবে সর্বজনীনতার পথ। যে পথে বাম ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকে হতে হবে তুলনায় অনেক মধ্যপন্থী।

১৪ ১৫

প্রথম দুই দফায় লুলা দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার পাশাপাশি বিশ্ব মঞ্চেও ব্রাজিলের অনন্যতা তুলে ধরেছিলেন। এ বার কী হবে? বয়স বেড়েছে, অভিজ্ঞতায় আরও পোক্ত হয়েছেন জেলখাটা লুলা। পারবেন কি নড়বড়ে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে আমাজনের তাজা জলের ঝাপটা দিতে? নাটকীয় ভোট জয়ের থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ সত্তরোর্ধ্ব বামনেতার কাছে।

১৫ ১৫

লাতিন আমেরিকায় আবার স্বমহিমায় ‘পিঙ্ক টাইড’। লুলার জয়ে ব্রাজিলও সেই ‘পিঙ্ক টাইড’-এর তালিকায় কলম্বিয়া, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং পেরুর সঙ্গে একাসনে বসে পড়ল। বস্তুত, এই সবক’টি দেশেই বর্তমানে বামপন্থীদের সরকার। ১৯৯৮-এ ভেনেজুয়েলায় উগো চাভেজের জয়ের পর থেকে লাতিন আমেরিকার একের পর এক দেশে বামপন্থী বা বামঘেঁষা সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। তাকেই বলা হয় ‘পিঙ্ক টাইড’। করোনা পরবর্তী কালে আবার কি সেই ‘পিঙ্ক টাইড’-এর আগমন? লুলায় ভর করে বুক বাঁধছে পেলে-রোনাল্ডো-নেইমারের দেশ।

সব ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement